সরকারি কর্মচারীদের গৃহঋণ

সরকারি কর্মচারীদের গৃহঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন এনেছে বলে প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়। কোনো নীতিমালাই অপরিবর্তনীয় নয়। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী সেটি পরিবর্তন বা সংশোধন করা যেতে পারে। কিন্তু দেখার বিষয়, সেই সংশোধন বা পরিবর্তন বৃহত্তর মানুষের কল্যাণে আসছে কি না।

সরকারের গৃহঋণ নীতিমালায় বলা হয়, সুদের হার ১০ শতাংশ ধরা হলেও সরকারি কর্মচারীদের দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ পরিশোধ করবে সরকার। সংশোধিত নীতিমালায় ঋণের অঙ্কের পরিমাণ সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ ও সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা করা হয়েছে। এসব নিয়ে আমাদের প্রশ্ন নেই। কিন্তু গৃহঋণ পেতে অন্যদের ১০ শতাংশ সুদ দিতে হলে সরকারি কর্মচারীরা কেন তার অর্ধেক সুদে ঋণ পাবেন? সবার জন্য অভিন্ন সুদহার হওয়া উচিত।

 আমরা মনে করি, বেসরকারি খাতের কর্মচারীসহ সব নাগরিকের জন্যই অভিন্ন সুবিধা থাকা প্রয়োজন। নিজস্ব সামর্থ্যে যাঁরা আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারেন না, তঁাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়াই এই ঋণের উদ্দেশ্য। জাতীয় গৃহ নির্মাণ ঋণদান সংস্থা থেকে সরকারি কর্মকর্তাসহ সব নাগরিকই ঋণ পেয়ে থাকেন। তদুপরি সরকার কি এই নিশ্চয়তা দিতে পারবে যে প্রদেয় ঋণ গৃহনির্মাণ খাতেই ব্যয় হবে? নিজের বাড়ি থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো সরকারি কর্মকর্তা গৃহঋণ নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করেছেন, এমন নজিরও আছে।  

সরকার যুক্তি দেখাতে পারে যে ব্যাংকসহ আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও কম সুদে গৃহঋণ পেয়ে থাকেন। কিন্তু সে জন্য তো জনগণের করের অর্থে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয় না। ওসব প্রতিষ্ঠানের আয় থেকেই তঁারা ঋণ পেয়ে থাকেন।

আমরা মনে করি, তেলা মাথায় তেল দেওয়ার এই নীতি পরিহার করা প্রয়োজন। যে দেশে অধিকাংশ মানুষ মানসম্মত আবাসনসুবিধা থেকে বঞ্চিত, সে দেশে মহলবিশেষের জন্য এই বিশেষ সুযোগ দেওয়ার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না।

অন্যদিকে চাকরির বয়সসীমা যখন কম ছিল, তখন ঋণসুবিধা পেতেন ৫৮ বছর পর্যন্ত। এখন চাকরির বয়সসীমা দুই বছর বাড়ানোর পর ঋণ নেওয়ার সুযোগ কমানোর কোনো যুক্তি আছে বলে মনে করি না। সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা স্থায়ী নিয়োগ পেয়েছেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরও সরকারের কাছে তাঁদের অনেক রকম পাওনা থাকে। তাই ঋণের অর্থ খিয়ানতের কোনো সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। চাকরির একেবারে শেষে এসে কেউ কেউ শেষ কর্মস্থলে বাড়ি বা ফ্ল্যাট নির্মাণ করেন। সে ক্ষেত্রে বয়সসীমা কমানো ঠিক হবে না।