সরকারি বরাদ্দের ঘর বিক্রি

চলচ্চিত্রের গুপী-বাঘা ভূতের রাজার কাছে খাওয়া, পরা ও যেখানে খুশি সেখানে যাওয়ার বর চেয়েছিল। বাংলাদেশের ভূমিহীন মানুষ খাওয়া এবং পরা চায়, গুপী-বাঘার শেষোক্ত অভিলাষ তাদের নেই। তবে খাওয়া–পরার বাইরে তারা চায় মাথার ওপর অন্তত এমন একটা চালাবিশিষ্ট পরিকাঠামো থাকুক, যাকে অন্তত বাস্তুবিদ্যার সংজ্ঞায় ঘর বলে চালানো যায়। ‘যেখানে খুশি সেখানে’ না গিয়ে সেই ঘরে তারা একটু থিতু হওয়ার স্বপ্ন দেখে।

সরকার এই ভূমিহীনদের আশ্রয়ের কথা মাথায় রেখে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। জমিজমা নেই, এমন পরিবারগুলোকে খাস জায়গায় ঘর তুলে থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। কিন্তু যখন এগুলো ঘিরে প্রতারণা, জালিয়াতি, অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়, তখন সেবাপ্রার্থীরা বঞ্চিত হয়।

ভোলার লালমোহন উপজেলার লর্ড হার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামে এ ধরনের অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে এমন লোকদের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের আগে থেকেই নিজস্ব জমি ও ঘর আছে। সরকারি ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর তাঁদের কেউ কেউ সেই ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন। রাতারাতি ঘর ভেঙে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ বরাদ্দ পাওয়া ঘরে গরু–ছাগল পালন করছেন। কেউ ভাড়া দিয়ে ভাড়া তুলে খাচ্ছেন। অন্যদিকে সত্যিকারের ভূমিহীনেরা এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে ভাসমান জীবন যাপন করছেন।

প্রথম আলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দুই বছর আগে ভূমিহীন ও দরিদ্রদের জন্য ২০০ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ সুবিধা ভোগের সুযোগ দিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ঘরপ্রতি ২ থেকে ১২ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। তখন অনেক সচ্ছল ব্যক্তি নিয়মবহির্ভূতভাবে ঘর বরাদ্দ নিয়েছিলেন। বরাদ্দ পাওয়ার পর সে ঘর বিক্রি করা শুরু হয়। সেখানে সরকারি বরাদ্দের অন্তত ১২টি ঘর সম্পূর্ণ বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। কিছু ঘরের বেড়া, লোহার ফ্রেমসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম খুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ গুচ্ছগ্রাম বা সরকারি বরাদ্দের ঘর বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।

আশার কথা, এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে এবং অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটি ঘটনাস্থল তদন্তও করেছে। এখন প্রশাসনকে দ্রুত দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে হবে। লালমোহন উপজেলার এ ঘটনা মাথায় রেখে দেশের অন্য সব এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের খোঁজ নিতে হবে।