সরকারের চাল কেনা

দেশে সরকারি গুদামে চালের মজুত কমে এসেছে। কারণ, বিগত বোরো মৌসুমে সরকার ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। সরকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ১৮ লাখ টন; কিন্তু মিলমালিকেরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী চাল সরবরাহ করেননি। ধান-চাল সংগ্রহের সময়সীমা এক দফা বাড়ানোর পরও সরকার ১০ লাখ টনের বেশি চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। এর মধ্যে গত দুই মাসে সরকারি গুদামে চালের পরিমাণ কমে ৫ লাখ ৭৭ হাজার টনে নেমেছে। এ রকম পরিস্থিতি কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সরকারি গুদামে চালের মজুত কমে গেলে বাজারে তার প্রভাব পড়ে, চালের দাম বেড়ে যায়। সেই পরিস্থিতি এড়াতে সরকারের চাল সংগ্রহ করা প্রয়োজন।

কিন্তু দেশের ভেতরে সরকার চাল কিনতে পারছে না। কারণ, চালকলের মালিকেরা সরকারের নির্ধারিত দামে চাল সরকারের কাছে বিক্রি করতে রাজি নন। সরকার যে চালের দাম কেজিপ্রতি ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে, মিলমালিকেরা বলছেন, সেই চাল তাঁরা এই দামে বিক্রি করতে পারবেন না; এতে তাঁদের লোকসান হবে। তাই তাঁরা সরকারের প্রতি চালের দাম কেজিপ্রতি ৩৭ থেকে ৪ টাকা বাড়িয়ে ৪১ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, এই দাম না পেলে তাঁরা সরকারের কাছে চাল বিক্রি করবেন না। কিন্তু সরকার তার নির্ধারিত দামেই অটল রয়েছে। ফলে সরকারের দেশের ভেতর থেকে চাল সংগ্রহের পথ বন্ধ হয়ে গেছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।

এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার কারণ চালের বর্তমান বাজার পরিস্থিতি। সরকার যে চালের দাম কেজিপ্রতি ৩৭ টাকা নির্ধারণ করেছে, তা বাজারে ৪২ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে চালকলগুলোর মালিকেরা সরকারের নির্ধারিত দামে চাল সরবরাহ করবেন না, এ অবস্থানে অটল থাকতে পারছেন। তাঁদের এ অবস্থানের যুক্তি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের বেশি দাম পেলে তা কম দামে বিক্রি করেন না। ফলে ৩৭ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি করতে চালকলমালিকদের বাধ্য করার কোনো উপায় সরকারের হাতে নেই। কারণ, এটা মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ।

কিন্তু সরকারি গুদামে চালের মজুত অবশ্যই বাড়ানো প্রয়োজন। এখন তা করার উপায় হলো বিদেশ থেকে আমদানি করা। খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, আমদানি করেই চালের সরকারি মজুত বাড়ানো হবে। খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে খবর বেরিয়েছে, ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। আমরা বলব, যেভাবেই হোক সরকারি গুদামে চালের মজুত যেন যথেষ্ট পরিমাণে বাড়ানো হয়। তবে আমদানি করা চালের দাম যেন দেশের বাজারের চেয়ে বেশি না হয় কিংবা কম দাম খুঁজতে গিয়ে যেন নিম্নমানের চাল আমদানি করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।