সরকারের দ্বৈত নীতি

সম্পাদকীয়

৩০ মার্চ থেকে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সশরীর পাঠদান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্তমন্ত্রণালয় কমিটি বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নেয়। তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা সব শ্রেণিতে একই সঙ্গে পাঠদান শুরু হচ্ছে না। প্রাথমিকের ক্ষেত্রে শুরুতে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে পাঁচ দিন বিদ্যালয়ে আসবে। মাধ্যমিকে দশম ও উচ্চমাধ্যমিকে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয় দিন করে শ্রেণিকক্ষে আনা হবে। অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শুরুর দিকে সপ্তাহে এক দিন, এর কিছুদিন পর সপ্তাহে দুই দিন, এভাবে পর্যায়ক্রমে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসা হবে।

সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। করোনার কারণে প্রায় এক বছর দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সরকার অনলাইনে ক্লাস চালু রাখলেও বাস্তব কারণে সব শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারেননি। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী অনলাইনে পাঠ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত আছেন। তাঁদের এই ক্ষতি সম্পর্কে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা অবহিত বলে মনে হয় না। সরকার প্রথম থেকে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ক্লাস ৩০ মার্চ শুরুর সিদ্ধান্ত নিলেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তা পিছিয়ে দিয়েছে ২৪ মে। প্রায় দুই মাসের ব্যবধান। নিচের পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রেখে ওপরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার যুক্তি কী?

বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনার কারণে সব শ্রেণির শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নিচের দিকের শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও যাঁরা শিক্ষাজীবনের শেষ ধাপে আছেন, তাঁদের পক্ষে তা সম্ভব হবে না। সময়মতো পরীক্ষা না হওয়ার কারণে স্নাতকোত্তর ও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন কেবল প্রলম্বিতই হচ্ছে না, ভবিষ্যৎও হয়ে পড়েছে অনিশ্চিত। এ অবস্থায় সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের পরীক্ষা ও ক্লাস দ্রুত নেওয়া প্রত্যাশিত ছিল। অথচ শিক্ষামন্ত্রী দেশবাসীকে বিপরীত কথাই শোনালেন। তিনি ঘোষণা দিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে ২৪ মে আর ছাত্রাবাস খুলবে ১৭ মে। এর আগে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও স্নাতক পর্যায়ের পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছিল, তাঁর এ ঘোষণার ফলে তারাও পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে।

বিস্ময়কর যে শিক্ষামন্ত্রী স্কুল-কলেজ খোলার পক্ষে যেসব যুক্তি দিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটি প্রলম্বিত করতে তার বিপরীত যুক্তি তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেছেন, রমজান মাসে পুরো সময়ে ছুটি থাকবে না। এ সময় যদি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাসে আসতে সমস্যা না হয়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সমস্যা হবে কেন? কেন তিনি ঈদের পর বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা দিলেন?

স্বাস্থ্যঝুঁকি মেনে যদি ৩০ মার্চ বিদ্যালয় ও কলেজগুলো খুলতে পারে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতেও কোনো সমস্যা দেখি না। এমন তো নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়াদের চেয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কম। আর যদি সরকার রাজনৈতিক জুজুর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় ও হলগুলো খুলতে বিলম্বিত করে থাকে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। শিক্ষাঙ্গন উত্তপ্ত হতে পারে, এই আশঙ্কায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ক্ষেত্রে সরকারের দ্বিমুখী নীতি পরিহার করা উচিত। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ মার্চ খুলে দেওয়া হোক।