সর্বাত্মক লকডাউনের বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়

দেশের অন্যান্য স্থানে কোভিড পরিস্থিতি মোটামুটি স্থিতিশীল থাকলেও সীমান্তবর্তী জেলাগুলো থেকে উদ্বেগজনক খবর আসছে। ইতিমধ্যে সেখানে সংক্রমণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে শয্যা ও অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। করোনা রোগী বাড়ার প্রেক্ষাপটে সীমান্তবর্তী আরও সাতটি জেলা ‘লকডাউন’ করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ কমিটি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আগেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। বিশেষজ্ঞ কমিটি নতুন করে যে সাত জেলায় লকডাউনের সুপারিশ করেছে, সেগুলো হলো নওগাঁ, নাটোর, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া ও খুলনা।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নওগাঁ, নাটোর, কুষ্টিয়া ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। ফলে জটিল করোনা রোগীদের আইসিইউ সুবিধা থাকা পার্শ্ববর্তী কোনো জেলায় স্থানান্তর করতে হচ্ছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও যশোর জেলায় এখনো কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু হয়নি।

গত মাসে ভারতে করোনা সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়, যার ঢেউ এসে পড়ে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্যগুলোয়ও। একপর্যায়ে সরকার স্থলসীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করে; যদিও জরুরি পণ্য পরিবহনের কারণে সেই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি। ফলে ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোয় সংক্রমণ তুলনামূলক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গত বুধবারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৭ থেকে ২৩ মে—এই এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় ২২টি জেলায় নতুন রোগী বাড়ার হার শতভাগ বা তার বেশি ছিল। এর মধ্যে ১৫টি জেলা সীমান্তবর্তী।

বিশেষজ্ঞ কমিটি পশ্চিম সীমান্তের সাত জেলায় নতুন করে লকডাউন দেওয়ার সুপারিশ করলেও পূর্ব সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর বিষয়ে কিছু বলেনি। সেসব জেলায় প্রশাসনের তৎপরতাও অপেক্ষাকৃত কম। পূর্ব সীমান্তবর্তী কুমিল্লা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজারেও ভারতফেরত বেশ কিছু নাগরিক সংক্রমিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকারের উচিত এদিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং সংক্রমণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করেছে। কিন্তু পূর্ব সীমান্তের কোনো রাজ্য সরকার সে রকম কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে পূর্ব সীমান্তে আশঙ্কা থেকেই যায়।

ভারতে সংক্রমণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার সময়ই বিশেষজ্ঞরা সীমান্ত বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রথম দিকে সরকার বিষয়টি তেমন আমলে নেয়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বেশ কিছু নাগরিকের করোনা ধরা পড়ার পরই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। এ ছাড়া ভারতফেরত নাগরিকদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্তও পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। অনেকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন এড়িয়ে নিজ নিজ বাড়িতে চলে গেছেন।

যাঁরা ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নতুন সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। সীমান্তবর্তী এলাকায় যতটা সম্ভব বেশিসংখ্যক মানুষের করোনা পরীক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। গতকাল প্রথম আলোয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জ প্রশাসনের উদ্যোগে যে ভ্রাম্যমাণ র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার ছবি ছাপা হয়েছে, তা উৎসাহব্যঞ্জক। আমরা তাদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। অন্যান্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকেও অনুরূপ সক্রিয়তা প্রত্যাশিত। পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পরীক্ষার বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী উল্লিখিত সাত জেলায় অবিলম্বে লকডাউন জারি করা হোক। পুরো জেলা না হলেও এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা যেতে পারে।