সামাজিক নিরাপত্তা

৮৮ লাখ ৫০ হাজার সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা দিয়ে থাকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। আমরা জানি, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি, আর যে টাকাটা তাঁদের দেওয়া হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তারপরও এই সামান্য সাহায্য এসব মানুষের জন্য অনেক কিছু। এসব ভাতাগ্রহীতার কেউ অতি বৃদ্ধ, তিন কুলে তাঁকে দেখার কেউ নেই; কেউ অসহায় বিধবা, সন্তানও হয়তো যাঁকে পুছে না; কেউ হয়তো স্বামী পরিত্যক্ত, শ্বশুর বা বাপের বাড়ি কোথাও যাঁর ঠাঁই নাই; কিংবা প্রতিবন্ধী কোনো মানুষ, এই টাকাটাই যাঁর বাঁচার একমাত্র অবলম্বন।

এই শ্রেণির মানুষের জন্য এক মাস ভাতা বন্ধ থাকাও জীবন অচল হওয়ার শামিল। সেখানে ছয় মাস ধরে বন্ধ ছিল ভাতা। আর এমন এক সময়ে বন্ধ ছিল, যখন সুস্থ–সমর্থ উপার্জনক্ষম মানুষেরই চলা দায়। করোনায় চাকরি হারিয়ে, ব্যবসা বন্ধ করে বা আয়-রোজগার কমে তাঁদেরই অবস্থা যেখানে টলমল, সেখানে এই মানুষগুলো কীভাবে পার করছে দুঃসময়? যখন টাকাটা তাঁদের সবচেয়ে দরকার, তখনই কেন বন্ধ হলো ভাতা?

গ্রহীতাদের তথ্য ডিজিটালাইজেশন করার জন্য বন্ধ ছিল ভাতা দেওয়া। আগের প্রক্রিয়ায় বরাদ্দের পুরোটা পেতেন না গ্রহীতা, সামান্য এই টাকাতেও ভাগ বসাত মধ্যস্বত্বভোগী। আর নানাভাবে ভুয়া লোকজন নাম ঢুকিয়ে সুবিধা নিত। এসব বন্ধ করতে তাই সরাসরি জিটুপি (সরকার থেকে ব্যক্তি) পদ্ধতিতে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সমাজসেবা অধিদপ্তর। এ জন্য তারা উপকারভোগীদের ডেটাবেইস তৈরি করা শুরু করে। আর এসব কাজ করার জন্যই বন্ধ রাখা হয় ভাতা প্রদান। কিন্তু তাই বলে ছয় মাস? দুটো কাজ কি একসঙ্গে করা যেত না? কিংবা ভাতাটা অগ্রিম দিয়ে কাজটা কি শুরু করা যেত না?

সুখের কথা, এপ্রিলের শেষ থেকে আবার ভাতা দেওয়া শুরু হয়েছে। ৯ মে পর্যন্ত ৫০ লাখ ভাতাভোগীর ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব ভাতাভোগীই অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসের টাকা পাবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে এই ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট ব্যবস্থার সুফল সুবিধাভোগীরাই পাবেন। আমাদেরও চাওয়া, এই ব্যবস্থায় মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। তালিকাটা নিয়মিত হালনাগাদ রাখা হবে, কেউ মারা গেলে তাঁর নাম বাদ যাবে, ঢুকবে নতুন নতুন প্রকৃত দাবিদারের নাম। প্রযুক্তি অদক্ষতার সুযোগ নিয়ে কেউ তাঁদের বঞ্চিত করবে না। আর করলে দায়ীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।