সিলেট সিটির সম্প্রসারণ

‘দশে মিলি করি কাজ/ হারি জিতি নাহি লাজ’ বলে যে বাংলা প্রবাদটি আছে, তারই প্রতিফলন দেখা গেল সিলেট শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ৯টি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁরা অতীতে যেমন একসঙ্গে ছিলেন, তেমনি ভবিষ্যতেও একসঙ্গে থাকতে চান।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পরিধি বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসন গত মাসে যে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে, তাতে ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সিটি করপোরেশনকে প্রায় ৫৭ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়। জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী টুকেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের শেখপাড়া, সাহেবেরগাঁও, চরুগাঁও, খালিগাঁও, হায়দরপুর, পীরপুর ও শাহপুর-খুরুমখলা গ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বাদ পড়ে টুকেরগাঁও ও গৌরীপুর গ্রাম।

গত শনিবার সিলেট সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্তি বাস্তবায়ন পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে, একই পঞ্চায়েতভুক্ত ৯টি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে গভীর সামাজিক বন্ধন আছে। তাঁরা শত শত বছর ধরে একসঙ্গে বসবাস করে আসছেন। এত দিন তাঁরা একই প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে ছিলেন। তাই ৯টি গ্রামকেই সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিভাজন করা যাবে না। টুকেরগাঁও বাজারকে সিটি করপোরেশনের বাইরে রাখার কোনো যুক্তি নেই।

জেলা প্রশাসন থেকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রস্তাবিত এলাকা নিয়ে কোনো অভিযোগ, আপত্তি কিংবা পরামর্শ থাকলে ৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে লিখিতভাবে দাখিল করতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী ৯ গ্রামের পক্ষে বাস্তবায়ন পরিষদ আপত্তি জানিয়েছে। এর আগে তারা সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেও তাদের দাবি জানিয়েছে।

১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সিলেট পৌরসভা। ২০০২ সালে সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে এর পরিধি বেড়ে হয় ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার। ২০১৪ সালে আয়তন আরও বড় করার উদ্যোগ নেয় সিসিক। পাঁচ বছর ধরে আটকে থাকা প্রস্তাবটি নিয়ে গত বছরের ১৬ নভেম্বর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।

সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি ভালো। সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের সুযোগ-সুবিধাও বাড়বে। তবে সিটি করপোরেশন কিংবা যেকোনো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সীমানা নির্ধারিত হওয়া উচিত অংশীজন তথা স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতের আলোকে। গায়ের জোরে ওপর থেকে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার ফল কখনো কখনো ভালো হয় না। সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়ানোর ক্ষেত্রে আরও অনেক এলাকা থেকে অভিযোগ ও আপত্তি এসেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সেসব আমলে নেওয়া উচিত।