সিলেটে কিশোর গ্যাং

কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির সমস্যা কয়েক বছর ধরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। মনোবিজ্ঞানী ও আচরণবিশারদেরা বলে থাকেন, যখন পরিবার ও সমাজ শিশু-কিশোরদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বাড়ে। এই কথা সব সমাজের জন্যই কমবেশি প্রযোজ্য। বাংলাদেশে রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও অন্যান্য বড় শহরে সংঘবদ্ধ কিশোর দলগুলোর অপরাধ প্রবণতার পেছনে কাজ করে আরও একটি বিষয়। সেটা হলো প্রাপ্তবয়স্ক পেশাদার অপরাধী এবং রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসী-মাস্তানেরা কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা উসকে দেয়; নিজেদের স্বার্থে অপ্রাপ্তবয়স্ক, স্বভাবত আবেগপ্রবণ ছেলেদের ব্যবহার করে।

সর্বশেষ সিলেট থেকে খবর এল, ওই শহরে অপরাধপ্রবণ কিশোরদের সংঘবদ্ধ দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সন্ধ্যা নামলেই শহরটির অপেক্ষাকৃত জনবিরল জায়গাগুলোতে তারা দল বেঁধে অবস্থান নেয়; ছিনতাই, মাদক সেবন, মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ইত্যাদি অপরাধ করে। আর মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে তাদের আড্ডা চলে; সেখানে তারা মেয়েদের উদ্দেশে কটূক্তি ছুড়ে দেয়। পথেঘাটে দল বেঁধে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করাও তাদের আরেক বিনোদন। এ ছাড়া শহরটিতে যখন কেউ ঘরবাড়ি ও অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করেন, তখন তারা তাঁদের কাছে চাঁদা দাবি করে; চাঁদা না পেলে নির্মাণকাজে বাধা দেয়। তাদের এই জবরদস্তির পেছনে শক্তি জোগায় প্রাপ্তবয়স্ক চাঁদাবাজেরা, যারা বরাবরের মতোই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। কিশোর গ্যাংগুলোর মধ্যে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা চলে, এ থেকে তাদের মধ্যে মারামারিও বেধে যায়।

সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুর্বৃত্তদের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে সেখানকার নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা গত শনিবার এক সভায় মিলিত হয়েছিলেন; সেখানে বক্তারা বলেছেন, শহরটির পাড়া-মহল্লায় কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব দিন দিন বেড়ে চলেছে। সমস্যা হলো, কিশোরেরা অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ফৌজদারি আইনের আওতায় তাদের প্রচলিত বিচারের মুখোমুখি করা যায় না। কিন্তু তারা যেসব অপরাধে লিপ্ত হয়, সেগুলো শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ বটে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য তাদের শোধনমূলক ব্যবস্থা সরকারের তরফে আছে। কিন্তু সেই ব্যবস্থা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। প্রাপ্তবয়স্ক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাসংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তদের সঙ্গে কিশোরদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করাই কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। সে জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের দায়দায়িত্ব আছে। অপরাধপ্রবণ কিশোরেরা যেন রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের পৃষ্ঠপোষকতা না পায়, সেটা নিশ্চিত করা একান্ত জরুরি।

আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত অপরাধপ্রবণ কিশোরদের সংঘবদ্ধ তৎপরতার বিরুদ্ধে ঘন ঘন অভিযান চালানো; কিশোর গ্যাংগুলো ভেঙে দেওয়া; এবং তাদের অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা এবং বোঝানো। পরিবারগুলোরও জরুরি কর্তব্য ছেলেদের দিকে নজর দেওয়া; তাদেরকে অপরাধপ্রবণতা থেকে ফিরিয়ে পড়াশোনা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য সৃজনশীল কাজে উৎসাহিত করা।