সিলেটে ধর্ষণের ঘটনা

ঘটনাটি এতটাই পৈশাচিক যে নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া কঠিন। যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্ঞানের আলো বিতরণ করে থাকে, সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রাবাসের ভেতরে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, এটা গা শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। পত্রিকার খবর অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে এমসি কলেজের প্রধান ফটকের সামনে নিজেদের গাড়িতে বসে গল্প করছিলেন স্বামী-স্ত্রী। পাঁচজন যুবক তাঁদের গাড়িটি ঘিরে ধরে তাঁদের নামান। তিনজন তরুণীকে টেনে ছাত্রাবাসের ৭ নম্বর ব্লকের একটি কক্ষে নিয়ে যান। স্বামীকে গাড়িতে আটকে রাখেন দুজন। পরে রাত ১০টায় পুলিশ গিয়ে সেখান থেকে স্বামী-স্ত্রীকে উদ্ধার করে।

২০১২ সালে ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের পর ছাত্রাবাসের ওই কক্ষ ছাত্রলীগের দখলে ছিল। ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে শুক্রবার রাতে শাহপরান থানার একদল পুলিশ তত্ত্বাবধায়কের বাংলোর পাশের কক্ষে তল্লাশি চালিয়ে একটি পাইপগান, চারটি রামদা ও দুটি লোহার পাইপ উদ্ধার করে। তবে এই সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। করোনা পরিস্থিতিতে ছাত্রাবাস বন্ধ ছিল। তাহলে ওই কক্ষ কীভাবে ছাত্রলীগের কর্মীরা দখল করে রাখলেন? কলেজের অধ্যক্ষ বলেছেন, ‘শুনেছি নেতারা (ছাত্রলীগ নেতা) সেখানে ছিল। এর বাইরে আর কিছু আমি জানি না। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে পুলিশ ও র‌্যাবকে বলেছি।’ তাঁর এ বক্তব্য দখলদারদের পক্ষে সাফাই ছাড়া কিছু নয়। তিনি যখন শুনলেন ছাত্রলীগের নেতারা কক্ষটি দখল করে রেখেছেন, তখন তা দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিলেন না কেন?

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণের ঘটনায় নয়জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ছয়জন হলেন সাইফুর রহমান (২৮), তারেকুল ইসলাম (২৮), শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি (২৫), অর্জুন লস্কর (২৫), রবিউল ইসলাম (২৫) ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুম (২৫)। তারেক ও রবিউল বহিরাগত। বাকিরা এমসি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। অন্যদিকে ছাত্রাবাসে ‘ছাত্রলীগের দখলে থাকা’ কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে মামলা হয়েছে। এর একমাত্র আসামি ছাত্রলীগের কর্মী এম সাইফুর রহমান।

সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রলীগের কর্মীরা বহু বছর ধরে মাস্তানি ও সন্ত্রাস চালালেও কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি। ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগের আগে শিবিরের সঙ্গে ভাগাভাগি করে দখলবাজি করতেন। আর অগ্নিসংযোগের পর তাঁদের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, ইয়াবা ব্যবসা, সেবনসহ এমন কোনো অপরাধ ছিল না, যা তাঁরা করেননি। ক্ষমতার ছত্রচ্ছায়ায় থেকেই তাঁরা এসব করে আসছিলেন। অন্যান্য ঘটনায় ছাত্রলীগের কোনো কর্মীর অপকর্ম ধরা পড়লে সংগঠন থেকে বহিষ্কারের আদেশ আসে। কিন্তু সিলেট ছাত্রলীগের কর্মীদের বহিষ্কারেরও কেউ নেই।

কলেজ কর্তৃপক্ষের প্রশ্রয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতায় সেখানকার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা স্বেচ্ছাচারী ও এক নিয়ন্ত্রণহীন শক্তিতে পরিণত হয়েছেন। ছাত্রলীগ ও এর অভিভাবক প্রতিষ্ঠান আওয়ামী লীগের নেতারা কথায় কথায় বিরোধী দলকে গণতন্ত্রের পথে আসার সদুপদেশ দেন। তাঁদের সদুপদেশ ঘর থেকে শুরু করলে হয়তো সিলেটের ছাত্রলীগের কর্মীরা খুন–ধর্ষণের মতো অপকর্মে জড়িত হয়ে পড়তেন না এবং এভাবে একজন নারী গণধর্ষণের শিকার হতেন না। করোনাকালেও মানুষ যদি কোনো কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে এ রকম পৈশাচিকতার শিকার হন, তাহলে নিরাপত্তা কোথায়?

সর্বশেষ খবর, আক্রান্ত তরুণী মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত অবস্থায় আছেন। এ অবস্থায় তাঁর উপযুক্ত চিকিৎসার পাশাপাশি মানসিক শুশ্রূষা জরুরি। তাঁর চিকিৎসার খরচ সরকারকেই বহন করতে হবে।

ঘটনার দুই দিন পরও অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। অবিলম্বে দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।