সুনামগঞ্জে বাড়িঘরে হামলা

সম্পাদকীয়

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক যুবকের একটি স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সুনামগঞ্জের শাল্লায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। যে স্ট্যাটাস নিয়ে হামলার ঘটনা, তাতে ধর্ম সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি, বলা হয়েছে ব্যক্তি সম্পর্কে।

প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, শাল্লার ধারাইন নদের দক্ষিণ পারে হিন্দুপ্রধান নোয়াগাঁও গ্রামের অবস্থান। নদের উত্তর পার বরাম হাওরের পারে শাল্লা উপজেলার কাশিপুর ও দিরাই উপজেলার নাসনি, চন্দ্রপুর গ্রাম মুসলিম–অধ্যুষিত। শত শত বছরে ধরে এসব গ্রামে হিন্দু–মুসলমান পাশাপাশি বাস করলেও কখনো সংঘাত কিংবা হামলার ঘটনা ঘটেনি। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তি ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করে আসছে। গত সোমবার দিরাইয়ে হেফাজতে ইসলাম শানে রিসালাত নামে এক সমাবেশের আয়োজন করে। সেখানে একজন বক্তার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঝুমন দাশ নামের এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে স্ট্যাটাস দেন, তা হেফাজতের দৃষ্টিতে আপত্তিকর মনে হয়েছে। তারা পরদিন এর প্রতিবাদে সমাবেশও করেছে। প্রশাসন বিষয়টি দ্রুত আমলে নিয়ে ঝুমন দাশকে গ্রেপ্তার করে। এরপর হেফাজতের নেতা ও হবিবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদারের মধ্যে শান্তি বৈঠক হয়। উভয় পক্ষই সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হয়। কিন্তু এরপরও ৭০–৮০ জনের একটি দল গিয়ে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা করে, যাতে ৯০টি ঘরবাড়ি ও ১০–১২টি মন্দির ভাঙচুর হয়। হামলার হাত থেকে রেহাই পেতে লোকজন অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। হামলাকারীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি চেয়ারম্যানের বাড়িও।

হামলার পর জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ ও র‍্যাব সদস্যরা পাহারা দিচ্ছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল চন্দ্র দাশ বলেছেন, ‘আমরা ভাবতেও পারিনি, এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে।’ হেফাজতের একজন স্থানীয় নেতাও এ হামলার নিন্দা করে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করেছেন। কেউ কারও সম্পর্কে অপমানকর বক্তব্য দিয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান আছে। শাল্লার ঘটনায় সরকার ব্যবস্থাও নিয়েছে। তারপরও যেভাবে সদলবল সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা হলো, তা সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী। এর আগে রামু, নাসিরনগরেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ এনে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

আইন হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। শাল্লার বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো যাতে নিজ ঘরবাড়িতে ফিরে যেতে পারে, সরকারের উচিত সে বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।