সুনামগঞ্জে সাংবাদিক নির্যাতন

সম্পাদকীয়

বাংলাদেশে গত দেড় দশকে ২৩ জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছেন; আহত হয়েছেন ৫৬১ জন। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে পড়ে, যখন সাংবাদিকেরা শারীরিকভাবে আক্রান্ত হন। সাধারণত সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীরা রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হয়ে থাকেন কিংবা প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁদের সুসম্পর্ক থাকে। ফলে সাংবাদিকদের হত্যা কিংবা নির্যাতনের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হয় না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে থেকেই যায়; সাংবাদিক নির্যাতন করলে শাস্তি পেতে হবে না, এমন মানসিকতা সাংবাদিক নির্যাতনকারীদের মনে আরও সাহস জোগায়।

গত সোমবার সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে যাদুকাটা নদীর তীর কেটে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের হাতে কামাল হোসেন নামের এক সাংবাদিক নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁকে দা দিয়ে আঘাত করা হয়েছে এবং তাঁর ক্যামেরা ও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। বেদম প্রহার করার পর তাঁকে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছিল, শেষে পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করেছে।

নদীর তীর কেটে বালু তোলা বেআইনি কাজ; এর খবর সংগ্রহ করতে এক পেশাদার সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ওপর হামলা চালাতে পেরেছেন সম্ভবত এই আত্মবিশ্বাস থেকে যে সাংবাদিক মারলে কিছুই হবে না। আবার মাহমুদ আলী শাহ নামের যে ব্যক্তির নেতৃত্বে তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে, তিনি ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধপ্রবণ ব্যক্তিদের এটি একটি বহুলব্যবহৃত অপকৌশল। বিষয়টি যেন এমন যে সাংবাদিক চাঁদা চেয়েছেন, তাই তাঁকে মারধর করা হয়েছে এবং এর মধ্য দিয়ে ওই ব্যক্তিদের বেআইনি কাজের অপরাধ জায়েজ হয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে সারা দেশেই সাধারণভাবে এই প্রবণতা কাজ করে। আইনের যথাযথ প্রয়োগের সংস্কৃতি শক্তিশালী হলে এমন মানসিকতা গড়ে ওঠা সম্ভব ছিল না।

সাংবাদিক কামাল হোসেনের ওপর এই হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পরদিন পুলিশ চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে, কিন্তু মামলার এজাহারে উল্লিখিত পাঁচ আসামির কাউকে তো নয়ই, বরং যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁরা বালু তোলা শ্রমিক। স্থানীয় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ধরনের গৎবাঁধা আশ্বাস কোনো কাজের কথা নয়। আমরা অবিলম্বে দেখতে চাই, আসামিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। সেই সঙ্গে যাদুকাটা নদীর তীর ক্ষতিগ্রস্ত করে বালু তোলার অবৈধ তৎপরতা এই মুহূর্তে বন্ধ করা হোক।