সুন্দরবনে আবার আগুন

মাত্র তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে সুন্দরবনে দ্বিতীয়বার আগুন লাগার ঘটনা উদ্বেগজনক। দুবারের আগুনই মানবসৃষ্ট বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন। গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ির অন্তর্গত বনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যায়। আগুন বিচ্ছিন্নভাবে বনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ির দুই একর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে বন বিভাগের লোকজন এবং স্থানীয় কয়েক শ মানুষ আগুন নেভানোর কাজে দ্রুত নেমে পড়েন। দুপুরের পর যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিস।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় আগুন লেগে প্রায় চার শতক বনভূমি পুড়ে যায়। সোমবারের আগুনে পাঁচ একরের মতো বনভূমি পুড়ে গেছে বলে সুন্দরবন রক্ষা কমিটি জানিয়েছে। বন বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই দশকে ২৩ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগের ২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ‘৭১ একর’ বনভূমির নানা গাছ, গুল্ম-লতা পুড়ে গেছে। এসব ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি নাশকতা, অসচেতনতা, অবহেলায় ফেলে দেওয়া বিড়ি বা সিগারেট থেকে আগুনের উৎপত্তি বলে উল্লেখ করেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের নথি থেকে জানা গেছে, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার; একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুবার; ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুবার; ২০০৬ সালে তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার; ২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলী ও ডুমুরিয়ায় তিনবার; ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার; ২০১১ সালে নাংলীতে দুবার; ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার; ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার এবং ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগেছিল লোকালয় থেকে এক মাইল ভেতরে। আর এবারে আগুন লেগেছে চার মাইল ভেতরে। এই দুর্গম এলাকায় গিয়ে যদি কেউ নাশকতা করতে পারে, তাহলে পুরো সুন্দরবনের নিরাপত্তা কোথায়? একশ্রেণির দুর্বৃত্ত আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে থাকে, যাতে ভেতরের জলাশয় থেকে বর্ষার মৌসুমে মাছ ধরা যায়। এ কারণে বর্ষার আগেই বেশি আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। সুন্দরবন জাতীয় সম্পদ, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। এই সম্পদ যারা ধ্বংস করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

বরাবরের মতো এবারেও আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি হয়েছে। নির্ধারিত সময় পর তারা প্রতিবেদনও জমা দেবে, সুপারিশ করবে। কিন্তু সেই সুপারিশ কখনো আলোর মুখ দেখবে বলে মনে হয় না। দায়ী ব্যক্তিরা চিহ্নিত হবে না। সুন্দরবন রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও এগিয়ে আসতে হবে। ভারানি টহল ফাঁড়ির নিকটবর্তী মরা ভোলা নদী অনেক আগেই মরে গেছে। ১৯৯৬-৯৭ সালে একবার নদী খনন করে নদীর পাড়েই মাটি রেখে দেওয়া হয়। এ কারণে নদীটি আবার ভরাট হয়ে যায়। কেবল মরা ভোলা নদী নয়, সুন্দরবনের ভেতরে আরও যেসব নদী শুকিয়ে গেছে, সেগুলো খননের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী ও জলাশয় শুকিয়ে গেলে সুন্দরবনকে বাঁচানো যাবে না।

বন বিভাগ লোকবলস্বল্পতার দোহাই দেয়। কিন্তু তারা স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করলে কম লোকবল ও কম অর্থ খরচ করেও সুন্দরবন সুরক্ষা সম্ভব।