সেতুর জন্য আর কত অপেক্ষা

সম্পাদকীয়

একটি সেতুর জন্য দুর্ভোগে পড়া রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের চার বাসিন্দার কথায় তাঁদের ক্ষোভ, কষ্ট, বঞ্চনা ও হতাশার অনুভূতি লক্ষ করা যায়। মোসলেম উদ্দিনের (৭০) ক্ষোভ—সেতু বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে ভোট নেওয়ার পর স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আর এলাকায় যাননি। তোজাম্মেল হকের (৪৮) মতে, দেশে অনেক উন্নয়ন হলেও তাঁদের একটি সেতু না থাকায় যাতায়াতে কষ্ট হচ্ছে, ফসলের ভালো দাম পাচ্ছেন না তাঁরা। এন্তাজ আলীর (৫৫) আশঙ্কা, রাতে স্বজনদের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেবেন কীভাবে? অবশ্য মুদিদোকানি সামছুল হক কাউকে দোষ না দিয়ে বলেছেন, তাঁদের ‘পোড়া কপাল’।

রংপুরের তারাগঞ্জের চিকলী নদীর শাইলবাড়ি ঘাটে সেতু না থাকার প্রতিক্রিয়ায় চারজন স্থানীয় বাসিন্দার এসব অনুভূতি দুঃখজনক। যখন স্বাভাবিক নিয়মে কিছু ঘটে না, তখন মানুষ নিজের ভাগ্যকে দোষ দেয়, যেমন দিলেন সামছুল হক। স্থানীয় ওই ব্যবসায়ীর মতো আশপাশের আরও ১২ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষকে একটি সেতু না থাকায় যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

দেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে, তখন স্থানীয় উদ্যোগে তৈরি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোতে চরম ঝুঁকিতে লোকজন পারাপারের বিষয়টি অপ্রত্যাশিত। ওই সাঁকো দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। সেতুটি থাকলে উপজেলা সদরে যেতে তাঁদের পথ হতো ৭ কিলোমিটার, এখন পার হতে হয় ১১ কিলোমিটার।

স্থানীয় পর্যায়ে সেতুটির নির্মাণ খরচ প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। এটির দৈর্ঘ্য ৬০ মিটার, প্রস্থ ৩ দশমিক ৫ মিটার। এখানে টাকার চেয়ে সদিচ্ছার ঘাটতিই যে মুখ্য তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এখনকার উন্নয়নযজ্ঞে সাড়ে তিন কোটি টাকার একটি সেতুর জন্য বছরের পর বছর মানুষের দুর্ভোগ মেনে নেওয়া যায় না। সেতুটি নির্মাণের দাবি ওঠে মুক্তিযুদ্ধের পর। তারপর শুধুই দাবি আর আলোচনা হয়েছে। স্থানীয় নেতারা সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়ে নৌকা, ধানের শীষ বা লাঙ্গল মার্কায় ভোট নিয়েছেন, তারপর জনগুরুত্বপূর্ণ এই কাজ আর করেননি বা করতে পারেননি। এ দায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। কারণ, তাঁরা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে বিষয়টি আনতে পারেননি। আবার স্থানীয় প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের মাঠপর্যায়ের প্রকৌশলীরাও এ দায় এড়াতে পারেন না।

দ্রুত সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এলাকাবাসীর প্রতি তাঁদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবেন—এটাই প্রত্যাশা।