সোনারগাঁয়ে খাসজমি দখল

সম্পাদকীয়

মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়া ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কে নানামুখী দখল চলছে। সড়কের জায়গায় দোকান হয়েছে, বালু ব্যবসা চলছে। যাঁদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ, তাঁরা কেউ কথা বলতে চান না। প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন এই জায়গা তাঁদের, ফলে তঁারা নিজেদের জায়গায় যা খুশি তা করতে পারেন। তবে এমন দাবি করলেও তাঁদের স্পষ্ট ঘোষণা, তঁারা কাউকে কোনো কাগজপত্র দেখাবেন না। অভিযুক্ত এই দখলদারদের এত শক্তির উৎস কোথায়?

মুন্সিগঞ্জ ও গজারিয়ার মানুষের জন্য এই ফেরিঘাট খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে মেঘনা নদীর দুই পাড়েই ফেরিঘাটের সংযোগ সড়কটি প্রশস্ত করার কাজ শুরু হয়। এই কাজের জন্য ফেরি চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে। এরই সুযোগ নিয়ে মেঘনা নদীর সোনারগাঁয়ের চরকিশোরগঞ্জ অংশে দখলদারেরা খাসজমি দখলে নিয়ে দোকান গড়ে তুলেছেন, বালুর ব্যবসা করছেন। দখলদারেরা এখন সেই জমি নিজেদের বলেও দাবি করছেন!

যে রাস্তা প্রশস্ত করার জন্য ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে, সে রাস্তা যদি দখল হয়ে যায়, তবে এই ফেরিঘাটের ভবিষ্যৎ কী? প্রথম আলোর মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেঘনা নদীর ওই পাড়ে রাস্তার কাজ প্রায় শেষ এবং তারপর এই পারের কাজ শুরু হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই আশঙ্কা খুবই স্বাভাবিক যে ফেরির সংযোগ সড়কের কাজ ও ফেরি চালুর বিষয়টি পিছিয়ে যেতে পারে।

দখলদারেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তাঁদের ভয়ে এলাকাবাসীও কথা বলতে চান না। সরকারি জমির দখল ঠেকানোর কথা যঁাদের, তঁাদের ব্যর্থতা ও দায়িত্বহীনতার কারণেই দখলদারেরা এই মাত্রায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।

সোনারগাঁর ইউএনওর বক্তব্যে এই দায়িত্বহীনতার বিষয়টি পরিষ্কার। তিনি বলেছেন, যাঁরা নদীতীর ও খাসজমিতে স্থাপনা তৈরি নির্মাণ ও বালুর ব্যবসা করছেন, তাঁদের খোঁজ নেওয়া হবে। তাঁদের উচ্ছেদ করা হবে। দিনের পর দিন দখলদারেরা সরকারি জমি দখল করে রেখেছেন এবং এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। আর ইউএনও বলছেন, তিনি ‘খোঁজ’ নেবেন। প্রশাসন তৎপর থাকলে ও দায়িত্বশীল হলে দখল প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।

রাস্তা তৈরি ও সম্প্রসারণের সঙ্গে যেহেতু ফেরিঘাটটি আবার চালুর সম্পর্ক রয়েছে, তাই অবিলম্বে সেখানকার সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ জরুরি। এই ঘাট দিয়ে সহজে যানবাহন চলাচল করতে পারলে মুন্সিগঞ্জ-গজারিয়া ও কুমিল্লা হয়ে চট্টগ্রামসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২০ জেলার যাতায়াত সহজ হবে। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়, আমরা তা দেখার অপেক্ষা করছি।