সোনারগাঁয়ে জমি–খাল লুট

খাসজমি, খাল এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি অস্ত্রের মুখে লুটে নেওয়ার ঘটনা ডিজিটাল যুগের সঙ্গে একেবারে বেমানান। যাঁরা আমাদের উঠতে–বসতে উন্নতির গল্প শোনান, তাঁদের উচিত এসব ঘটনার দিকে মনোযোগ দেওয়া। এ অবস্থা নির্দেশ করে সমাজে ‘মগের মুল্লুক’ অবস্থা চলছে। এটা কতিপয় দুর্বৃত্তের বিচ্ছিন্ন দুর্বৃত্তপনা নয়। এ অবস্থা একটা অস্বীকৃত নৈরাজ্যের প্রতিফলন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক ব্যাপার হলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব দুর্বৃত্তের বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেয়, তা প্রকারান্তরে তাঁদের প্রতি সমর্থন।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দিনদুপুরে গুলিবর্ষণ ও অস্ত্রের মহড়া দিয়ে জমি ছিনতাই চলছে। বিষয়টি এ রকম নয় যে খাসজমি, খাল এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি দখল দু–চার দিন বা সপ্তাহের ঘটনা। এটা চলে মাসের পর মাস। সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন পাড়ায় কয়েক মাস ধরে শিল্পকারখানা তৈরির নামে জমি লুট চলছে। এদের রুখে দিতে আইনের শাসন অনুপস্থিত। সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি। বিশেষ করে খাসজমি ও খাল আত্মসাতের ঘটনা তো কোনো লুকোছাপার বিষয় নয়। সরকারি প্রশাসনকে এ বিষয়ে পদক্ষপ নিতে হলে কারও দিকে তাকানোর দরকার নেই।

সঠিক তথ্য, নথিপত্র, তদন্ত করা এবং প্রয়োজনে পুলিশ ডেকে নেওয়া—সবটাই প্রশাসনের হাতে। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কথায় পরিষ্কার যে প্রশাসন চিহ্নিত লুটেরা ও দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইঁদুর–বিড়াল খেলার নীতি অনুসরণ করছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম যুক্তি দিয়েছেন, ‘আমি এ উপজেলায় নতুন যোগ দিয়েছি।’ এ উক্তি পরোক্ষভাবে নিশ্চিত করে যে তাঁর পূর্বসূরি যথাদায়িত্ব পালন করেননি, জমি–খালখেকোদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় যথাপদক্ষেপ নেননি। প্রতীয়মান হয় যে তিনি তিন মাস আগে যোগদান করার পরই অভিযোগ জানতে পেরেছেন এবং তদন্ত করে ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের এক লাখ টাকা জরিমানা করেছেন। সব ধরনের কাজ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় এ খবর প্রকাশের পরদিনই যেন প্রশাসনের টনক নড়ল। জমি লুটেরা চক্রের হোতা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করা হয়েছে। অথচ টানা জমি লুট চলেছে অন্তত এক বছর ধরে। প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মূল্যের জমি লুটের বিপরীতে সম্প্রতি মাত্র এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো এ রকম অপরাধে লঘুদণ্ডদান তাঁদের রক্ষা করার চেষ্টার অংশ কি না।

আমরা অবশ্যই সর্বশেষ সরকারি আদেশের ত্বরিত বাস্তবায়ন আশা করি। কিন্তু সেই সঙ্গে এত দিন প্রশাসন কেন নীরব ছিল, সেটা খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করি।