স্থলবন্দর উন্নয়ন

গত এক দশকে দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে মানুষ ও পণ্য পরিবহন বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে স্থলবন্দর সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন বন্দর প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু ৬ অক্টোবর প্রথম আলোয় স্থলবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, তা কেবল হতাশাব্যাঞ্জক নয়, উদ্বেগজনকও।

দেশে ২৪টি স্থলবন্দর আছে বলে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে। কিন্তু এর সব কটি এখনো চালু করা সম্ভব হয়নি। গত ১০ বছরে যে নতুন ১০টি স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তার একটি চালু করা গেছে। বাকি ৯টিরই কাজ অসমাপ্ত। প্রথম আলো প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, স্থলবন্দরের উন্নয়নে গৃহীত সাতটি প্রকল্পের একটিও সময়মতো শেষ হবে না। সাতটি প্রকল্পের মধ্যে বাল্লা, গোবড়াকুড়া-কড়ইতলী, বিলোনিয়া স্থলবন্দরের মূল কাজ শুরু হয়নি। কাজের বাস্তবায়ন মাত্র ১ থেকে ৩০ শতাংশ। এমনকি কোনো কোনোটির (যেমন সিলেটের শেওলা ও রামগড়) জমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়নি। অথচ আগামী বছরের জুনে এগুলোর কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু সরকার যদি সময়মতো কাজই শুরু করতে না পারে, পরিকল্পনা নিয়ে কী লাভ?

অন্যান্য দেশে প্রকল্প নেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আর আমাদের এখানে প্রকল্প নেওয়ার পর জমি অধিগ্রহণের
তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। এতে জমি বেচাকেনার জন্য দালাল চক্র জুটে যায়। দামও বেড়ে যায়। এটি কেবল স্থলবন্দরের ক্ষেত্রে নয়, সরকারের প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় এভাবে বাড়ানো হয়। বন্দর প্রতিষ্ঠার ঘোষণা কিংবা প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর যদি জমি অধিগ্রহণ করতে ৮ থেকে ১০ বছর চলে যায়, তাহলে সেই প্রকল্পের অর্থ কী? জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ বা একনেকের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বাস্তবে প্রকল্পের কাজ শুরু করার মধ্যে যে বিস্তর ফারাক, সেটিও সংশ্লিষ্টদের বুঝতে হবে। আর বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করলেই হবে না, পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য সংযোগ সড়কের কাজও শেষ করতে হবে। কারোনাকালে স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন সীমিত। কিন্তু করোনার পর যখন ব্যবসা-বাণিজ্য স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তখন পণ্য ও যাত্রী পরিবহন বাড়বে। অতএব, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।

উন্নয়ন প্রকল্প সময়মতো শেষ না করার অন্যতম উদ্দেশ্য থাকে ব্যয় বাড়ানো। সরকারের অন্যান্য প্রকল্পের মতো স্থলবন্দরের ক্ষেত্রেও সেটি হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এসব প্রকল্পের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকতে হবে।