স্থানীয় সরকার সংস্থা

সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মূল কাজ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা। এসব সেবার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিচ্ছন্নতা, ফুটপাত সংস্কার, বায়ুদূষণ রোধ, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ, পার্ক ও খেলার মাঠ দেখভাল করা। কিন্তু এসব কাজ ঠিকঠাকভাবে না করেই একেকটি সিটি করপোরেশন কাগজে-কলমে যে প্রশংসা কুড়িয়েছে, তা বিস্ময়কর। ভালো কাজ করলে প্রশংসা প্রাপ্য, কিন্তু তা না করে যদি কেউ প্রশংসা পেতে চায়, তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়।

সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়ানো, কর্মকাণ্ডে উৎসাহ প্রদান এবং কর্মকৃতি মূল্যায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সব সরকারি দপ্তরে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) চালু করে। সেবা প্রদান ও তা সহজীকরণ, সরকারের নির্দেশনা ও নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন, জনহিতকর কার্যক্রম, বাজেটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নসহ বিভিন্ন বিষয় বাস্তবায়নে এ চুক্তি সম্পাদন হয়ে থাকে।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল কাজ নাগরিক সেবা সহজ ও তা নিশ্চিত করা। কিন্তু প্রথম আলোয় শনিবার প্রকাশিত খবর অনুযায়ী এসব কাজ ঠিকঠাকমতো না করেও কোনো কোনো সিটি করপোরেশন কৃতিত্ব নেওয়ার চেষ্টা করেছে। এর ফলে কর্মসম্পাদন চুক্তি ও এর মূল্যায়নের পুরো বিষয়টি ‘কাগুজে অনুশীলন’ হয়ে পড়ছে। ৯৮ শতাংশ এলাকা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসাসহ নানা কারণ দেখিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। শহরের অধিকাংশ সড়ক খানাখন্দে ভরা থাকলেও রংপুর সিটি করপোরেশন অর্জন দেখিয়েছে শতভাগ। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। তারপরও ৯৪ দশমিক ৫২ নম্বর পেয়েছে ওই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানটি।

এসব মূল্যায়নের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাচ্ছেন না সেখানকার স্থানীয় নাগরিকেরা। এ চুক্তির বড় দুর্বলতা হচ্ছে এপিএ মূল্যায়ন কমিটি সরাসরি বাস্তব পরিস্থিতি বা সেবার মান যাচাই করে নম্বর দেয় না। সংস্থাগুলোর জমা দেওয়া কাগজপত্র ও তথ্যের ভিত্তিতে করা এই মূল্যায়ন যে যথার্থ হয় না, তা বলা বাহুল্য।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কর্মসম্পাদন চুক্তির কিছু সূচক দেওয়া হয়, এর ভিত্তিতেই মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে। ফলে সিটি করপোরেশনের সামগ্রিক নাগরিক সেবার সঙ্গে এই চুক্তির মিল পাওয়া যায় না। এভাবে যেনতেন উপায়ে মূল্যায়ন করে সত্যকে আড়াল করা কেবল অনৈতিক নয়, অমার্জনীয়ও। এসব কাগুজে মূল্যায়ন কোনো কাজে দেবে না। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হলে সরেজমিনে তাদের কাজের মান যাচাই করতে হবে।