হাওরের সড়কটি ইঁদুরের কবলে

সম্পাদকীয়

কিশোরগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় বিশাল হাওর এলাকায় নির্মিত হয়েছে নান্দনিক সড়কটি। যেটিকে বলা হয় অলওয়েদার রোড বা হাওর এলাকায় সব ঋতুর উপযোগী সড়ক। তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনকে সংযুক্ত করেছে এটি। হাওরের পানিবন্দী জীবন-জীবিকাকে করে দিয়েছে সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময়। ৮৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি প্রায় ৩০ কিলোমিটারের সড়কটি এখন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। তবে এর মধ্যে এ সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। সড়কের প্রতিরক্ষা দেয়ালে গর্ত করে ফেলছে ইঁদুর। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, হাওর এলাকা ও নিচু ভূমি হওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক উঁচু করে সড়কটি তৈরি করা হয়। কিন্তু ইঁদুরের উপদ্রবের কারণে সেটির ভিত দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অষ্টগ্রামের এক ইউপি চেয়ারম্যান তাঁর এলাকায় নিজ উদ্যোগে ইঁদুর মারার কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। ইঁদুর মেরে আনার জন্য মানুষকে তিনি নগদ টাকা পুরস্কার দিচ্ছেন। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া গেছে। তাঁর উদ্যোগকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু আরও যেসব ইউনিয়নের ওপর সড়কটি পড়েছে, সেখানে কী হবে। অন্যদিকে, পুরস্কারের লোভে মানুষ বিষপ্রয়োগে ইঁদুর মারা শুরু করলে সেটি আবার হাওরের মাছ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।

হাওরে প্রচুর ইঁদুর থাকে এবং বর্ষায় সেগুলো ধঞ্চেখেতে আশ্রয় নেয়। এবার তারা অলওয়েদার সড়কে আশ্রয় নিয়েছে। কৃষি বিভাগের হিসাবে, উৎপাদিত বোরো ধানের ৫ ভাগ ও আউশের ১৫ ভাগ যায় ইঁদুরের পেটে। তবে ফসলের ক্ষতি মানলেও স্বপ্নের সড়কটির এমন ক্ষতি মানতে পারছেন না স্থানীয় ব্যক্তিরা। তবে প্রথম আলোর প্রতিনিধি জানালেন, সড়ক হওয়ার পর সেটির ওপর শুকানো হয় হাওরের সব ধান। ফলে খাবারের লোভে ঝাঁকে ঝাঁকে ইঁদুর সড়কটিকে প্রধান আশ্রয় বানিয়েছে। সেটি অবশ্যই রোধ করতে হবে।

সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে, তাদেরই দায়িত্ব এটির রক্ষণাবেক্ষণের। স্থানীয় প্রশাসন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এ নিয়ে সওজের কোনো ভাবনা নেই। ইঁদুরের উপদ্রবের কারণে সড়কটির কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, সেটিই এখন পর্যন্ত জানেন না সওজের জেলা কর্মকর্তারা। এ ছাড়া ইঁদুরের উপদ্রব কমানো নিয়ে স্থানীয়ভাবে কৃষি বিভাগের নির্দিষ্ট কর্মসূচি থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়ন না করা এবং এর জন্য বরাদ্দ নয়ছয়ের অভিযোগ আছে। অতএব, হাওর অঞ্চলের বিশাল এ স্থাপনা রক্ষার্থে সম্মিলিত উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এর জন্য প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের কাছে পরামর্শ নেওয়া যায়। সরকারের এ উন্নয়ন ‘ইঁদুরের পেটে’ চলে যাওয়ার আগে দ্রুত ব্যবস্থা নিন।