তেলের মূল্যবৃদ্ধি মানুষকে আতঙ্কিত করেছে

শরমিন্দ নীলোর্মি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারী ও উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ে কাজ করছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ, দ্রব্যমূল্য, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, বিকল্প জ্বালানি, অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ইত্যাদি নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনোজ দে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরমিন্দ নীলোর্মি
ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: গত কয়েক মাসে নিত্যপণ্যের দাম এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী। নাজুক এ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হলো। করোনায় নতুন করে মানুষ দরিদ্র হয়েছে, সেই সঙ্গে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের আয় কমেছে। এ পরিস্থিতিতে সামাজিক অস্থিরতার শঙ্কা আছে কি?

শরমিন্দ নীলোর্মি: বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার পরও আমরা দীর্ঘদিন দাম কমিয়ে সমন্বয় করিনি। এর পেছনে একটা যুক্তি ছিল, যদি হঠাৎ তেলের দাম বেড়ে যায়, তবে সেই বাড়তি অর্থ প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে আমাদের কাজে লাগবে। এ যুক্তি নিছক একটা যুক্তিই থেকে গেল। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হলো, শতকরা হিসাবে যা ২০ শতাংশের বেশি। করোনার পরে দ্রব্যের বাড়তি দামের একটা প্রবাহ চলছে। এ প্রবণতার মধ্যে তেলের দাম বাড়ায় মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্কের ছাপ ফেলল।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তাহলে বিকল্প কী হতে পারত?

শরমিন্দ নীলোর্মি: তেলের দাম সমন্বয় না করার কারণে বাড়তি যে সংস্থান থাকবে বলে মনে করা হয়েছিল, সেটার প্রতিফলন কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি না। দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে সরকার নিজেও বিভিন্ন দ্রব্যের দাম সমন্বয় করে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাজার পর্যবেক্ষণ করতে পারত। সামনে বোরো উঠবে। বোরোর সেচ পুরো ডিজেলনির্ভর। এতে চালের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে, পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। অন্যান্য খাদ্য ও পণ্য সরবরাহের খরচ বেড়ে যাবে। এর প্রভাব বাজারে পড়তে বাধ্য। মানুষের বাজারে অধিগম্যতা আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। জ্বালানি তেলে এখন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভর্তুকি দেওয়া জরুরি বলে আমি মনে করি। সরকার কিন্তু অনেক জায়গায় ভর্তুকি দেয়। জ্বালানি তেলে আগের যে অর্থের সংস্থান রয়েছে, সেটার সঙ্গে কম গুরুত্বপূর্ণ খাত থেকে অর্থ এনে এ ভর্তুকি দেওয়া যেত। মানুষকে আশ্বস্ত করার দায় সরকারের রয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনা-পরবর্তী বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চ্যালেঞ্জ কী বলে মনে করছেন?

শরমিন্দ নীলোর্মি: বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ তিনটি—স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনা মহামারি আমাদের স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর চিত্রকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেল। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে স্বাস্থ্যে যে গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন, সেটার প্রতিফলন তো আমরা দেখছি না।

শরমিন্দ নীলোর্মি: এখন দেশের জন্য অগ্রাধিকার হচ্ছে মানুষকে সুস্থ রাখা। কোভিড-১৯ টিকাদানে অনেক দেশের তুলনায় আমরা পিছিয়ে, অনেক দেশের তুলনায় আবার এগিয়েও। ব্যবস্থাপনার দিক থেকে, জনগোষ্ঠীর বড় অংশকে দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা যাতে দেওয়া যায়, সেই জায়গাটায় প্রধানভাবে নজর দিতে হবে। যে দেশের মানুষ অ্যাপভিত্তিক কার্যক্রমের সঙ্গে পরিচিত নয়, সেই দেশে অ্যাপভিত্তিক কার্যক্রমে মানুষের প্রবেশগম্যতা খুব সহজ নয়। বিকল্প আরও ব্যবস্থা রাখা দরকার। টিকাদানে একটি বড় দুর্বলতা হলো ঝুঁকির বিবেচনায় যাঁরা বয়স্ক নাগরিক, প্রতিবন্ধী কিংবা যাঁদের কোমরবডিটি আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে তেমন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। যাঁরা এরই মধ্যে কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের তথ্যভান্ডার সরকারের কাছে আছে। অনেকের ক্ষেত্রে পোস্ট-কোভিড স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছেন। সরকারের তরফ থেকে পোস্ট-কোভিড স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

কোভিড আমাদের একটা জেগে ওঠার ঘণ্টাধ্বনি শুনিয়েছে। এটাকে আমরা সুযোগ হিসেবে নিতে পারতাম। মানুষকে সুস্থ না রাখা গেলে অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। অর্থনীতির পরিভাষায় এটাকে আমরা সুযোগ ব্যয় বলি। অন্যান্য খাতে খরচ কমিয়ে স্বাস্থ্যসেবায় খরচ করতে হবে। বাজেটে সেটার প্রতিফলন দরকার। বাজেটে টিকা কেনা থেকে শুরু করে কোভিড ব্যবস্থাপনায় টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় সংহত ও উন্নত করার কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এটা করা গেলে পরবর্তীকালে আবার করোনার মতো ঝুঁকি এলে আমরা সেটা মোকাবিলা করতে পারতাম। স্বাস্থ্য খাতে প্রকৃত বাজেট বাড়াতে হবে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আমরা এখনো সস্তা শ্রমের বৃত্তে বন্দী। এ থেকে বেরিয়ে আসতে কী করণীয়?

শরমিন্দ নীলোর্মি: কর্মসংস্থানকে এখন বড় অগ্রাধিকার দিয়ে ভাবতে হবে। প্রতিবছর দেশে-বিদেশে এত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, এ রকম মডেলের বাইরে যেতে হবে। ২০৪০ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম-মধ্য আয়ের দেশে পৌঁছাতে চাই। এখন মধ্যম-মধ্য আয়ের দেশ মানে কী? এর মানে হচ্ছে আমাদের দেশের কোনো নারী কিংবা পুরুষ তখন মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে সস্তা শ্রম দেবেন না। পোশাকশিল্পের মতো শ্রমঘন শিল্প এখন যে সস্তা শ্রমে চলছে, সেই সুবিধা তখন থাকবে না। কৃষিতেও এখনই সস্তা শ্রমের সুযোগ কম। মধ্যম-মধ্য আয়ের দেশ হতে গেলে আমাদের হাই-এন্ড পণ্য উৎপাদনের দিকে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে ৪০ লাখ নারী এখন যে পোশাকশিল্পে কাজ করেন, সেই সংখ্যা অনেক কমে যাবে। এই যে যাঁরা বাদ পড়বেন এবং যাঁরা নতুন করে শ্রমবাজারে যুক্ত হবেন, তাঁদের কী হবে? এ ক্ষেত্রে উৎপাদনের বৈচিত্র্য আনার বিকল্প নেই। আমরা বলছি মধ্যম-মধ্য আয়ের দেশ হব, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে রোডম্যাপটা দেখতে পাচ্ছি না। এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগ ও সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: প্রায় দুই বছরের ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বজুড়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের একটা প্রতিযোগিতা আমরা দেখছি। এ প্রতিযোগিতায় জ্বালানি তেলসহ কাঁচামালের দাম অনেক বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের বাজারেও পড়ছে। এ অবস্থায় কী করণীয়?

শরমিন্দ নীলোর্মি: আমি এটাকে প্রতিযোগিতা না বলে প্রবণতা বলতে চাই। এ প্রবণতা হচ্ছে নিজ দেশের অর্থনীতিটাকে ভালো রাখা। এটার একটা স্বাভাবিক গতি আছে। এখন যেটা হচ্ছে সেটা ত্বরান্বিত অর্থনীতির বিকাশ। উৎপাদনের পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। শ্রমবাজার বিস্তৃত করার চেষ্টা চলছে। ফলে বিভিন্ন দেশের কাঁচামালের ওপরে চাপ পড়েছে। এ জন্য অস্থিরতাও দেখা যাচ্ছে।

বৈশ্বিক এ অস্থিরতার মধ্যে আমাদের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের কাজ জারি রাখতে হবে। নিজেদের সম্পদ বা কাঁচামালনির্ভর শিল্প উৎপাদন থেকে আমরা অনেক আগেই সরে এসেছি। আমাদের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আন্তর্জাতিক দূতিয়ালির পথ খোলা রেখে নিজস্ব সম্পদভিত্তিক শিল্প স্থাপনের নীতি নেওয়া হয়েছিল। সে সময়ে বিরূপ একটা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ছিল। পরে আমাদের বাস্তবতার পরিবর্তন হয়েছে। অন্যান্য কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে আমরা শিল্প তৈরি করেছি। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হওয়া মানে তো এটা নয় যে আমরা দেশের কাঁচামাল দিয়ে যে শিল্পায়ন করতে পারি, সেটা নষ্ট করে ফেলব।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বিশ্ববাজারের ওপর নির্ভরশীলতা তো অনেক ক্ষেত্রেই বড় ঝুঁকি তৈরি করছে...

শরমিন্দ নীলোর্মি: খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি তো আছেই। উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা যেমন আমাদের কাঁচামালের ওপর নির্ভর করব, আবার একই সঙ্গে বাইরের কাঁচামালের ওপরও নির্ভরশীলতা থাকবে। তুলনামূলক সুবিধা যেখানে পাব, সেখান থেকেই কাঁচামাল সংগ্রহ করব। ২০০৭ সালে সিডর হওয়ার পরে আমন ধানের সামান্য ক্ষতি (১০ শতাংশের নিচে) হয়েছিল। সে সময়ে চালের দাম বাড়তে শুরু করে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও চালের দাম সে বছরে অনেক বেশি ছিল। সে সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল ছয় বিলিয়ন ডলার। সেই টাকা থেকে চাল আমদানির সিদ্ধান্ত হলো। ভারত, মিয়ানমার, ভিয়েতনামে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পাঠানো হয়েছিল চাল কিনে আনার জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বোরো ওঠার আগে এক মেট্রিক টন চালও আনা যায়নি। এ থেকে শিক্ষণটা হচ্ছে খাদ্যনিরাপত্তার প্রশ্নে নিজেদের উৎপাদনটা নিজেদের করতে হবে। সেই শিক্ষা কতটুকু নেওয়া হয়েছে?

বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার পরও আমরা দীর্ঘদিন দাম কমিয়ে সমন্বয় করিনি। এর পেছনে একটা যুক্তি ছিল, যদি হঠাৎ তেলের দাম বেড়ে যায়, তবে সেই বাড়তি অর্থ প্রথম ধাক্কাটা সামলাতে আমাদের কাজে লাগবে। এ যুক্তি নিছক একটা যুক্তিই থেকে গেল। বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হলো, শতকরার হিসাবে যা ২০ শতাংশের বেশি। করোনার পরে দ্রব্যের বাড়তি দামের একটা প্রবাহ চলছে। এ প্রবণতার মধ্যে তেলের দাম বাড়ায় মানুষের মধ্যে, বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্কের ছাপ ফেলল

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পরিবেশগত ঝুঁকি কমাতে ১০টি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। যেসব কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প আছে, সেগুলোও পরিবেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আবার উন্নয়নের জন্য বিদ্যুতেরও প্রয়োজন। তাহলে বিকল্প কম আছে?

শরমিন্দ নীলোর্মি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর অর্থ হচ্ছে কয়লা পরিবেশের ক্ষতি করে এ বোঝাপড়া থেকে বিকল্প জ্বালানিতে সরকার যেতে চাইছে। তবে এটা শুধু মৌখিক হলে চলবে না। আমাদের কয়লাবিদ্যুতের রোডম্যাপ কী, সেখানে কী কী প্রকল্প ছিল, কোনগুলো বাতিল হলো, সেগুলো পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কয়লা পরিবেশের ক্ষতি করে, আবার এর প্রাপ্যতার জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হয়। দুটিই আমাদের জন্য বড় ঝুঁকি। জ্বালানির নিরাপত্তা শুধু উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়; বিদ্যুতের প্রাপ্যতা, সময়মতো প্রাপ্যতা, গুণগত প্রাপ্যতা—এগুলোও যুক্ত। বিশ্বব্যাংকের সহজে ব্যবসা সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৮তম। শতভাগ বিদ্যুতায়নের বিষয়টা আমরা শুনছি। এটা একটা সূচক। কিন্তু ব্যবসা ও পুঁজি বিনিয়োগের জন্য অন্য সূচকগুলোও সম্পর্কিত। বিদেশি পুঁজি আকর্ষণের ক্ষেত্রে এগুলো বড় বিবেচনার বিষয়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: তাহলে বিকল্প কী?

শরমিন্দ নীলোর্মি: বিকল্প হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করছি। এটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কেউ বলবেন এটা হাই-টেক। হ্যাঁ, এটা হাই-টেক। কেউ বলবেন এটা পরীক্ষিত। হ্যাঁ, এটা পরীক্ষিত, তবে চেরনোবিলের মতো ঘটনা ঘটায়। জাপানের মতো দেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ম্যানেজ করতে পারেনি। আর আমরা কোন দেশে এটা করছি? যে দেশ পৃথিবীর সবচেয়ে জনঘনত্বের দেশগুলোর সামনের কাতারে। এর ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতাও বিদেশি বিশেষজ্ঞনির্ভর। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে। কীভাবে যাবে? তারা কি তাদের সব উন্নয়ন বন্ধ করে দিচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রযুক্তি এখন আছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ক্ষেত্রে আগে যেসব ধারণা ছিল—অনেক জমি লাগবে, অনেক খরচ হবে, কার্যক্ষমতা কম—সেসবের কিন্তু সমাধান দিচ্ছে প্রযুক্তির উন্নয়ন। এমন প্রযুক্তিতে আমাদের যেতে হবে, যেটা থেকে কম জায়গায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এ প্রযুক্তি আনার চেষ্টা আমাদের করতে হবে। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে প্রতিবছর আমরা ১ শতাংশ হারে কৃষিজমি হারাচ্ছি। আবাসনের জন্য যে একতলা-দোতলা ভবন তৈরি হচ্ছে, সেটা তো একটা অপরাধ। নগরায়ণ মানে এ ধরনের অবকাঠামোর উন্নয়ন নয়; নাগরিক সেবা ও সুবিধাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া। অপরিকল্পিত আবাসনের নামে যে পরিমাণ জমি নষ্ট হচ্ছে, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে যেতে সে তুলনায় কতটা জমি লাগবে? সবার আগে জমি ব্যবহারের নীতিমালাটা দরকার। অর্থনৈতিক পরিকল্পনার সঙ্গে সেটা ওতপ্রোতভাবে যুক্ত।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ভালো অবস্থানে আছে বলে বিভিন্ন জরিপ থেকে জানা যায়। বাংলাদেশে অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণের প্রকৃত চিত্রটা আসলে কী?

শরমিন্দ নীলোর্মি: বাংলাদেশ অনেক সূচকে সমপর্যায়ের দেশগুলোর চেয়ে এগিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু, প্রজনন সক্ষমতা—এসব সূচকে আবার সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর তুলনায় আমরা পিছিয়ে আছি। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদনে আমরা ভালো করি। কারণ, এখানে নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বেশি। যেহেতু নেতৃত্বের অনেক জায়গায় নারী আছেন, সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্ব ভালো, সে ক্ষেত্রে আমরা একটু বেশি নম্বর পাই। সেটার প্রভাব পড়ে সামগ্রিক সূচকে। আমাদের শ্রমশক্তি জরিপ সর্বশেষ বের হয়েছে ২০১৭ সালে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এরপর আর জরিপ করেনি। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ৩৬ শতাংশের মতো। তবে এর ৮০ শতাংশের ওপরে অনানুষ্ঠানিক (ইনফরমাল) খাতে। এর ঝুঁকি হচ্ছে যেকোনো সময় চাকরি চলে যেতে পারে। কাজের নিরাপত্তা নেই, যৌন নির্যাতনবিরোধী আইন ঠিকমতো প্রয়োগ করা হয় না। আবার বেশ কয়েক বছর ধরে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ ২৮-৩৬-এর মধ্যেই সীমিত আছে। এটা থেকে কিন্তু উত্তরণ হচ্ছে না।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

শরমিন্দ নীলোর্মি: আপনাকেও ধন্যবাদ।