বিচারহীনতার এক অপসংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের নারীরা

বিয়েতে রাজি না হওয়ায় বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মুঠোফোনে ধর্ষণের হুমকি পেয়ে গত ২১ জানুয়ারি শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সুমি আক্তার (১৬) নামের এক কিশোরী। এক মাসের বেশি সময় মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে এই কিশোরী গত বৃহস্পতিবার সকালে নিজ বাড়িতে মারা গেছে। এ ঘটনায় কিশোরীর মা রাকিব ফকির (৩০) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করলেও তিনি গ্রেপ্তার হননি। নারীর প্রতি এমন সহিংসতার বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বরিশাল জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পুষ্প চক্রবর্তীর সঙ্গে।

প্রশ্ন :

বাবুগঞ্জের কিশোরীর মর্মান্তিক মৃত্যু কী বার্তা দিচ্ছে? কীভাবে দেখছেন ঘটনাটি?

পুষ্প চক্রবর্তী: এমন ঘটনার নিন্দা করতেও এখন আর ইচ্ছে করে না। কারণ, প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা দেখে দেখে আমাদের মনোজগৎ বিষিয়ে উঠেছে। এটা কোনো সভ্য সমাজের লক্ষণ নয় এবং এটা কারও কাম্য হতে পারে না।

প্রশ্ন :

দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে জোরালো প্রতিবাদ আছে। কঠোর আইন আছে। তারপরও কেন বারবার এমন ঘটনা ঘটছে?

পুষ্প চক্রবর্তী: আসলে আইন দ্বারা কোনো অপরাধকে কখনো নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। এ জন্য আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে প্রভাবমুক্ত পরিবেশ প্রয়োজন। কিন্তু সেটা আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি, এটা দুঃখজনক। বিচারহীনতার এক অপসংস্কৃতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন আমাদের নারীরা। এখনো এখানে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নারী অধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। এখনো নারীকে মানুষ নয়, ভোগ্যপণ্য হিসেবে মনে করার এক বাজে দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সামাজিক কাঠামোতে প্রকট। আমরা যখনই মেয়েদের সঙ্গে এমন ন্যক্করজনক নির্যাতনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখি, তখন দেখি একটি শ্রেণি অপরাধীদের বিচার নয় বরং ভুক্তভোগী নারীর নানা দোষ-ত্রুটি খুঁজে বেড়ান। এটা বিচারের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলছে। ফলে নারী নির্যাতনকারী অপরাধীরা খুব কমই বিচারের আওতায় আসছেন। এটি নারীর প্রতি সহিংসতা আরও উসকে দিচ্ছে।

প্রশ্ন :

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কাদের বেশি এগিয়ে আসা উচিত?

পুষ্প চক্রবর্তী: নারী-পুরুষ উভয় পক্ষেরই এগিয়ে আসা উচিত। বিশেষ করে পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে আগে। এটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু গ্রামে নয়, শহরেও; এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আজ মেয়েরা অনিরাপদ। দুই দিন আগে গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীর সঙ্গে যা হয়েছে, এটা কি ভাবা যায়? বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে এক ছাত্রী ও তাঁর স্বামী বখাটেদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।

প্রশ্ন :

এই অবস্থায় কী করণীয় বলে মনে করেন?

পুষ্প চক্রবর্তী: আমি বলব, এটা মানসিক বিকৃতির মহামারি। যত কড়া আইনই হোক, তাতে নারীর সুরক্ষা সম্ভব নয়; যতক্ষণ না এসব আইন প্রভাবমুক্তভাবে অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা যাবে। সরকার নারীর ক্ষমতায়নে স্থানীয় সরকার থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করছে। কিন্তু এর মাধ্যমে বাস্তবে কি নারীর ক্ষমতায়ন হচ্ছে? আমাদের নারীদের সুশিক্ষার পাশাপাশি নেতৃত্ব গুণ, দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জনের মধ্য দিয়ে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে হবে।