শিক্ষার সংকট সমাধানে পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নিতে হবে

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মনজুর আহমদের কর্মজীবনের শুরু ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। কাজ করেছেন জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোতে। তিনি চীন, জাপান ও ইথিওপিয়ায় জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফেও কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। করোনায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে খোলা ও ক্ষতি পোষানো যায়, তা নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ

  • সারা দেশে একসঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার ভাবনা বাদ দিয়ে ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে।

  • চলমান শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো দরকার।

  • শিক্ষা উদ্ধার কার্যক্রমে বিশেষভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা দিতে কর্মসূচি চালু করতে হবে।

  • করোনাকালে নানা রকম বৈষম্য, ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, শিক্ষকদের সংখ্যা ও যোগ্যতার ঘাটতি চরমরূপে দৃশ্যমান হয়েছে।

অধ্যাপক মনজুর আহমদ

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনা পরিস্থিতির কারণে ১৪ মাসের বেশি সময় ধরে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে প্রকৃত অর্থে কী কী ক্ষতি হচ্ছে?

মনজুর আহমদ: দীর্ঘ বন্ধে শিক্ষার ক্ষতির ব্যাপকতা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের প্রায় বছরব্যাপী শিক্ষা দুর্যোগকেও ছাড়িয়ে গেছে। এই ক্ষতি বহুমাত্রিক। ধারণা করছি, শিক্ষার দীর্ঘ বিরতির কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝরে যাবে। শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহও বাড়বে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাঠ্যবিষয় সামলানোর জন্য প্রস্তুত থাকবে না। অনেকে শিক্ষণ ঘাটতির ঝুঁকিতে পড়বে। স্বাভাবিক অবস্থাতেও শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ শ্রেণি নির্ধারিত মূল দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। এখন এটি আরও বাড়বে। ক্ষতির পরিমাণ ও ধরন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর নিরূপণ করতে হবে। তখনই প্রকৃত ক্ষতির হিসাব জানা যাবে।

প্রশ্ন :

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কবে খুলবে, তা এখনো অনিশ্চিত। এ অবস্থায় কী করা উচিত বলে মনে করেন।

মনজুর আহমদ: বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা প্রশাসন বিপাকে আছে। প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থীর জীবন থেকে একটি শিক্ষাবর্ষ হারিয়ে গেছে। আরেকটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় অর্ধেক শেষ হতে যাচ্ছে। এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তৃতীয় ঢেউ আসবে কি না, এলেও তা কত তীব্র হবে, সেটিও কেউ জানে না। কিন্তু অনির্দিষ্ট সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধও রাখা যায় না। এ জন্য এখন দুটি বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রথমত, সারা দেশে একসঙ্গে একই দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার ভাবনা বাদ দিতে হবে। ধাপে ধাপে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে হবে। প্রথমে অপেক্ষাকৃত কম সংক্রমণ এলাকা বা সংক্রমণ নেই এমন ১০০টির মতো উপজেলায় বিদ্যালয় খোলা যেতে পারে। অন্তত দুই সপ্তাহ এগুলো পর্যবেক্ষণ করে এর পরিস্থিতি দেখে অন্যান্য এলাকার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সবশেষে ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওপরের শ্রেণিগুলো প্রথমে চালু করে পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির কাজ শুরু করা যায়।

দ্বিতীয়ত, খোলার আগেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এই বিষয়ে শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু করোনার পরীক্ষা, সংক্রমিতদের চিকিৎসা দেওয়া, আলাদা রাখার (কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশন) এবং সংক্রমিতদের সংস্পর্শে আসা মানুষকে চিহ্নিত করার জন্য স্থানীয় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষের কোনো সমন্বিত কার্যক্রমের কথা জানা যায়নি। করোনা বা করোনার মতো অন্য সংক্রমণের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘকাল, এমনকি স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাই শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সমন্বিত ও স্থায়ী ব্যবস্থার দিকে এগোতে হবে। সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের টিকার আওতায় আনতে হবে। একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে, যাতে আগামী দুই বছরে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার এই কার্যক্রম সারা দেশে চালু করা যায়।

প্রশ্ন :

কিন্তু দীর্ঘ বন্ধের ফলে শিক্ষার যে মারাত্মক ক্ষতি হলো, সেটি পোষানো হবে কীভাবে?

মনজুর আহমদ: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে কিছুদিনের মধ্যেই করোনা–পূর্ববর্তী রুটিনে ফেরা যাবে এই ভাবনা অবাস্তব। যদি শিক্ষার ক্ষতি যথার্থভাবে পূরণ করে এগোতে হয়, তাহলে গতানুগতিক চিন্তার বাইরে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। সমস্যাটি জটিল ও বহুমুখী। প্রথমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতির প্রকৃত তথ্য যাচাই করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দীর্ঘদিন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত না থাকায় শিক্ষার্থীরা আগে যা শিখেছিল, তা–ও ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এ জন্য সহজ উপায় হবে শ্রেণিভিত্তিক মূল দক্ষতার ভিত্তিতে (প্রাথমিকে বাংলা ও গণিত এবং মাধ্যমিকে বাংলা, গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে) সংক্ষিপ্ত একটি পরীক্ষা নেওয়া। এর ভিত্তিতে প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অন্তত তিনটি দলে বিভক্ত করা দরকার। এক দলে থাকবে বিশেষভাবে পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থী, আরেক দলে থাকবে কিছু পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থী এবং অন্য দলে থাকবে প্রত্যাশিত দক্ষতা অর্জন করা শিক্ষার্থীরা। এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের দক্ষতার স্তর অনুযায়ী ক্ষতি পূরণের কার্যক্রম তৈরি করতে হবে। এ জন্য প্রস্তুতি দরকার, যা এখনই শুরু করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, মূল দক্ষতা অনুযায়ী পাঠ্যক্রম সংক্ষিপ্ত করা হলেও এই বছরের বাকি সময়ে যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ সম্ভব নয়। তাই চলমান (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) শিক্ষাবর্ষের মেয়াদ আগামী বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো দরকার। এভাবে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতি পূরণ করে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে শ্রেণির পাঠ্য সামলানোর জন্য তৈরি করা সম্ভব। পরবর্তী অর্থাৎ ২০২২ সালের শিক্ষাবর্ষ গ্রীষ্মের বিরতির পর মধ্য সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে পারে। এই সুযোগে ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্থায়ীভাবে সেপ্টেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত শিক্ষাবর্ষ চালু হতে পারে। অনেক শিক্ষাবিদ প্রস্তাবিত এই শিক্ষাবর্ষ বাংলাদেশের আবহাওয়ার জন্য উপযুক্ত বলে মত দিয়েছেন। ক্ষতি পোষাতে শিক্ষকদেরও তৈরি করা ও সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষার্থী মূল্যায়নে পরিবর্তন আনতে হবে। পাঠ্যদানে প্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে সক্ষম করতে তুলতে হবে।

প্রশ্ন :

উচ্চশিক্ষার সংকটও মারাত্মক। ভর্তি আটকে গেছে। সেশনজট বাড়ছে। এসব বিষয়ে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়?

মনজুর আহমদ: সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন মাদ্রাসা এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন কেন্দ্রে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন ধারার শিক্ষার্থী রয়েছেন। প্রতিটির পরিস্থিতি ও করণীয় অনেকটা ভিন্ন। সামগ্রিকভাবে কর্তৃপক্ষের বিশেষত, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দুর্বলতা, সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে ব্যর্থতা ও অনেক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা সমস্যাগুলোকে জটিল করেছে। প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার বিষয়ে এসব ব্যর্থতা দেখা গেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে পাঠদান ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নে ইউজিসিকে আরও উৎসাহিত করা উচিত ছিল।

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটকে সেশনজট এড়িয়ে নিয়মিত রুটিনে ফিরে আসার দুটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে পাঠদানে ও শিক্ষার্থী মূল্যায়নে প্রযুক্তি সক্ষমতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা জরুরি। সশরীর ও দূরশিক্ষণের মিশ্রণের কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরূপ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। সময়সীমা বেঁধে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি এসব উদ্যোগের জন্য বাজেট বিবেচনায় উপযুক্ত প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পারে। যারা উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়নে সক্ষমতা দেখাবে, তাদের উৎসাহিত করতে হবে।

প্রশ্ন :

আসন্ন বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য কী অগ্রাধিকার হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

মনজুর আহমদ: শিক্ষা কার্যক্রম নিরাপদে চালু করা এবং যথার্থ ‘শিক্ষা পুনরুদ্ধার’ কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের কথা হয়েছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন। এ জন্য তিনটি বিষয়ে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রাক্-প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বাইরে রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা চালু ও উদ্ধার কর্মসূচির আওতায় আনতে হবে। এ জন্য সরকারি বাজেট থেকে সহায়তা দানের প্রকৃষ্ট উপায় বের করে ‘শিক্ষা উদ্ধার পরিকল্পনাকে’ সফল করতে হবে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট এনজিওগুলোকেও শিক্ষা পুনরুদ্ধারে তাদের নির্দিষ্ট অবদানের জন্য অর্থায়ন করতে হবে। দ্বিতীয়ত, প্রাতিষ্ঠানিক ও শিক্ষার্থী পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারকে উৎসাহিত করার জন্য অবকাঠামো, ডিভাইস সহজলভ্য করা ও এগুলোর সংরক্ষণ ও ধারাবাহিক ব্যবহারের জন্য আর্থিক সংস্থান দরকার। তৃতীয়ত, প্রাথমিক পর্যায়ে দুপুরের খাবারের কর্মসূচির দ্রুত ও ব্যাপক প্রসার করানোকালে ও করোনা–উত্তর সময়ে সহায়ক হবে। মাধ্যমিক পর্যায়েও দরিদ্র এলাকা ও জনগোষ্ঠীর জন্য এই কর্মসূচি প্রসারিত হতে পারে।

প্রশ্ন :

অনেক ভালো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায় বাস্তবায়নের দুর্বলতায়। কার্যকর বাস্তবায়নের জন্য কী করা উচিত বলে মনে করেন?

মনজুর আহমদ: অতি মাত্রায় কেন্দ্রশাসিত প্রশাসন এবং সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন ও সেবার কাজে ব্যবধানের প্রাচীর অনেক ভালো উদ্যোগকে ব্যাহত করে। কেন্দ্র থেকে শুধু নির্দেশনা পাঠিয়ে যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়, সেগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। কেন্দ্রের নির্দেশনাকে কাঠামো হিসেবে ধরে এগুলো প্রতি উপজেলা, ইউনিয়ন ও প্রতিষ্ঠানের জন্য পরিস্থিতি অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনায় রূপান্তর করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এ জন্য স্থানীয় নাগরিক সমাজ, এনজিও, অভিভাবক ও স্থানীয় সরকারকে কার্যকরভাবে সম্পৃক্ত করতে হবে। প্রতি উপজেলায় শিক্ষা কর্মকর্তাসহ অন্যদের নিয়ে কর্মদল গঠন করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য অনুরূপ কর্মদল প্রয়োজন হবে। শিক্ষা উদ্ধার কার্যক্রমে বিশেষভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত সহায়তা দিতে কর্মসূচি চালু করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকার ও সরকারি কর্মকর্তাদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।

প্রশ্ন :

শিক্ষার এই সংকট থেকে সহজে বা দ্রুত উত্তরণ ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না। তাহলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের বাইরে আর কী করা যেতে পারে?

মনজুর আহমদ: করোনা মহামারি নতুন নতুন সমস্যা সৃষ্টি করেছে। আবার করোনার আগেও আমরা ভালো ছিলাম, তা–ও ঠিক নয়।
অধিকাংশ শিক্ষার্থীর গ্রহণযোগ্য দক্ষতা অর্জন না করা, নানা রকম বৈষম্য, প্রতিষ্ঠান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা, শিক্ষকদের সংখ্যা ও যোগ্যতায় ঘাটতি—এসব মহামারির আগে থেকেই ছিল। এখন এসব সমস্যা চরমরূপে দৃশ্যমান হয়েছে। জরুরি যে পদক্ষেপগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলোকে স্থায়ী সমস্যা মোকাবিলার আলোকে দেখতে হবে। চলমান শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে দেওয়া, মূল দক্ষতার ওপর জোর দেওয়াসহ যেসব পদক্ষেপের কথা বলছি, সেগুলো শিক্ষাব্যবস্থা স্থায়ী সংস্কারের জন্য প্রয়োজন। এ জন্য প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা প্রয়োজন। আর শিক্ষার সর্বস্তরে সামগ্রিক অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, দায়বদ্ধতার অভাব এবং অনেক ক্ষেত্রে অনিয়ম ও দুর্নীতি স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়ার মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নেতৃত্ব নির্বাচনে সরকার ভালো উদাহরণ সৃষ্টি করেনি। অনেক ক্ষেত্রে শীর্ষ পর্যায়ের পদগুলো শূন্য থাকে দীর্ঘদিন ধরে। পরিবর্তনের অঙ্গীকার ও দৃঢ় সংকল্পের কোনো বিকল্প নেই। সংকল্প ও সদিচ্ছার উদাহরণ হবে উচ্চপর্যায়ের একটি জাতীয় শিক্ষা পরামর্শক দল গঠন করা। যেটি একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশনে রূপান্তরিত হতে পারে। ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতেও এটি করার কথা রয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা কোনো আগ্রহ দেখাননি। অভূতপূর্ব সংকটে সাহসী ও ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

মনজুর আহমদ: আপনাকে ও প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।