তাজউদ্দীন জন্মশতবার্ষিকীতে মেয়ে শারমিন আহমদের সাক্ষাৎকার

সত্যিকারের বড় নেতা তিনিই, যিনি সবার কষ্ট বোঝেন

মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের কেন্দ্রবিন্দু, বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে শারমিন আহমদের এই সাক্ষাৎকার প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান নিয়েছিলেন ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর। এই সাক্ষাৎকারে তাজউদ্দীন আহমদকে একজন পিতা হিসেবে, একজন নেতা হিসেবে, বিশেষ করে একজন মানুষ হিসেবে আমরা কেমন করে দেখি, সে বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সাক্ষাৎকারটি ঈষৎ সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত। এ বছর ২৩ জুলাই তাজউদ্দিন আহমদের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিন পর্বের এই সাক্ষাৎকারের আজ প্রথম পর্ব প্রকাশিত হলো।

মতিউর রহমান:

আমরা আজ আমাদের স্টুডিওতে এসেছি শারমিন আহমদের সঙ্গে কথা বলতে। শারমিন আহমদ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের বড় মেয়ে। তিনি রিপি নামেও পরিচিত। তাঁর মা জোহরা তাজউদ্দীন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহসভানেত্রী ছিলেন। জোহরা তাজউদ্দীনের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ-সম্পর্ক সত্তরের দশকের শেষ থেকে এবং এটা আমৃত্যু অব্যাহত ছিল। মনে পড়ে, ১৯৯৩ সালের নভেম্বর মাসে আমি জোহরা তাজউদ্দীনের একটা বড় সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তখন তিন দিন ধরে এটা ছাপা হয়েছিল ভোরের কাগজ-এ। সাক্ষাৎকারটা বেশ আলোচিত হয়েছিল। তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে আমার মোট দেখা হয়েছিল তিনবার। তিনি তখন বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রী।

আমাদের বাংলাদেশের রাজনৈতিক চর্চা এবং সাংবাদিকতার চর্চায় তাজউদ্দীন আহমদ ক্রমেই আরও বেশি করে সামনে আসছেন। আমরা প্রথমা থেকে একটা বই প্রকাশ করেছি—তাজউদ্দীন নামে একজন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি যে সবচেয়ে কঠিন একটা সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, এ কথাটা আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি বলা যায়। তাজউদ্দীন আহমদকে একজন পিতা হিসেবে, একজন নেতা হিসেবে, বিশেষ করে একজন মানুষ হিসেবে আমরা কেমন করে দেখি বা ভাবি—এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলব শারমিন আহমদের সঙ্গে।

এই নতুন সময়ে নতুন অবস্থায় আপনার কাছ থেকে আমরা তাজউদ্দীন আহমদের জীবন, তাঁর শিক্ষাজীবন এবং পিতা হিসেবে তাঁর ভূমিকা, নেতা হিসেবে, মানুষ হিসেবে তাঁকে আমরা কীভাবে দেখি—এ বিষয়ে কথা বলব। আমরা জানি, আসলে তাজউদ্দীন আহমদ শৈশব থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন। ম্যাট্রিক পরীক্ষায় সে সময় সারা বাংলাদেশের মধ্যে ১২তম স্থান অধিকার করেছিলেন। পরে তিনি আবার ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকে পরীক্ষা দিলেন। ভুল না হলে তিনি ঢাকা বিভাগ থেকে চতুর্থ হলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্স করলেও মাস্টার্সটা শেষ করা হলো না। পরে জেল থেকে আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। একজন সচেতন রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। আমরা দেখেছি, তিনি সে সময় নানা ধরনের কার্যক্রমে যোগ দিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। এই যে একজন নেতার গড়ে ওঠা, পড়াশোনা—স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে, নিয়মিত ডায়েরি লেখা, বিভিন্ন কাজে যোগ দেওয়া—এভাবে আপনি আপনার পিতাকে কীভাবে দেখেন?

শারমিন আহমদ: খুবই চমৎকার প্রশ্ন করেছেন। আপনি তো ইতিমধ্যে পটভূমিটা দিলেন যে একজন নেতা হঠাৎ করেই কিন্তু হয় না। তাঁর জীবনচর্চা, প্রতিদিনের অভ্যাসগুলো থেকে চরিত্রটা গঠন হয়। মনে আছে, আমার বয়স যখন চার-পাঁচ, আব্বু তখনো জেলে যাননি। ’৬৬-তে তো আব্বু জেলে আসা-যাওয়া করছেন, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য জেলে গেলেন ’৬৬ সালের ৮ মে। ’৬৯-এ তিনি মুক্ত হলেন। তার আগের সময়টা কী করতেন? প্রতিদিন ভোরবেলা আমাকে এবং আমার ছোট বোন রিমিকে ডেকে তুলতেন। তারপর সেখান থেকে নামাজ পড়ে সকালবেলায় লেফট-রাইট করতে করতে ধানমন্ডি এলাকার ২১ নম্বর রোডটায় আমরা হাঁটতাম। সেখানে অনেক বকুলগাছ ছিল। আরেকটা জিনিস করতেন, কোনো কাগজ বা আবর্জনা পড়ে থাকলে সেটা তিনি তুলে নিতেন। আমাদের বলতেন, ‘এটা তুলে নাও, এগুলো থাকা উচিত নয়।’

তখন তো আর বুঝি না, আমরা মজা করে তুলে নিতাম আবর্জনাগুলো। তখন তো ডাস্টবিনও ছিল না, একটা জায়গায় নিয়ে ফেলতাম। তারপর বকুল ফুল তুলে মালা গাঁথতাম। তিনি বলতেন, ভোরবেলায় উঠলে সব কাজ সারা যায়। ভালো কাজ করতে হলে সকালে ওঠার অভ্যাসটা করতে হবে। এটা শুধু বলতেনই না, তিনি নিজেও সেই কাজই করেছেন। আরেকটা বিষয় আমি দেখেছিলাম, তিনি কথা দিয়ে কথা রাখতেন। একটা মানুষকে কথা দেওয়ার আগে ১০ বার চিন্তা করতেন, কথাটা আমি রাখতে পারব কি না। আরেকটা ব্যাপার ছিল মানুষের প্রতি, পশুপাখির প্রতি মমত্ববোধ।

মতিউর রহমান:

আপনার বিভিন্ন ভাইবোনের বিভিন্ন লেখায় আমরা পাই, তিনি গাছের চারা লাগাতেন আপনাদের ধানমন্ডির বাসায়। আমগাছ, ফুলগাছসহ অন্যান্য গাছ তিনি নিজে পরিচর্যা করতেন, নিড়ানি দিতেন। এভাবে গাছের ও পশুপাখির যত্ন নিতেন। এটাও দেখা যায় যে আপনার বোনদের নিয়ে তিনি চিড়িয়াখানায় গেলেন পশুপাখি দেখাতে। যে কথা আপনি বলছিলেন যে প্রকৃতির প্রতি...

শারমিন আহমদ: আমরা যখন সকালে হাঁটতাম আব্বুর সাথে, রাস্তার কুকুরগুলোকে আব্বু ঘরে নিয়ে যেতেন। রিমি একটু ভয় পেত। আমি আর আব্বু মিলে ওগুলোকে সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে খাওয়াদাওয়া করাতাম। আমাদের বাসায় পাঁচ-ছয়টা কুকুর দেখাশোনা করা হতো। ওরাই আমাদের সঙ্গী হতো, খেলা করত। আমার মনে হয়, সত্যিকারের বড় নেতা তিনিই, যিনি সার্বিকভাবে সবার কষ্ট বুঝতে পারেন—একটা সমাজে এমনকি একটা কুকুর, বিড়াল বা পাখির কষ্টও যিনি হৃদয়ে ধারণ করেন মানুষের দুঃখ-কষ্টের পাশাপাশি। তিনিই প্রকৃত অর্থে একজন ভালো নেতা।

আজ তরুণ প্রজন্মকে বলি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে—ইন্টেগ্রিটি। ইন্টেগ্রিটির অর্থটা ব্যাপক। তুমি ভালো কাজ করবে—মমত্বের কাজটা, ভালোবাসার কাজটা, সৌন্দর্যের কাজটা। মানুষ না দেখলেও অবারিতভাবে সব সময় সেই কাজটা করে যেতে পারে সে-ই, যার মধ্যে ইন্টেগ্রিটি আছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সৌন্দর্যের বীজ বপন করে যাওয়ার ব্যাপারটা সততার চেয়ে ব্যাপক।
মতিউর রহমান:

আমরা দেখি যে সাধারণ জীবনযাপনের পাশাপাশি তিনি তখন যেকোনো সভা-সমাবেশ, আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকতেন। প্রবীণ ও তরুণদের কাছে নিয়মিত যেতেন, কথাবার্তা বলতেন এবং ছোট-বড় যেকোনো কাজে যুক্ত হতেন। এভাবে তিনি একটা গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। আমরা দেখলাম, তিনি আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তারপর সাংগঠনিক সম্পাদক। তারপর সাধারণ সম্পাদক। তিনি হঠাৎ কারও প্রভাবে, অর্থবলে বা অন্য কোনোভাবে কিন্তু নেতা হয়ে ওঠেননি। একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর ডায়েরিগুলো দেখলে কিন্তু এর প্রমাণ পাওয়া যায়। আমরা তাঁর পাঁচটি ডায়েরি প্রকাশ করেছি এখন পর্যন্ত। তাঁর রাজনৈতিকভাবে গড়ে ওঠার পেছনে আপনার কোনো মন্তব্য বা পর্যালোচনা থাকলে বলতে পারেন।

শারমিন আহমদ: আজ তরুণ প্রজন্মকে বলি, ইংরেজিতে একটা কথা আছে—ইন্টেগ্রিটি। ইন্টেগ্রিটির অর্থটা ব্যাপক। তুমি ভালো কাজ করবে—মমত্বের কাজটা, ভালোবাসার কাজটা, সৌন্দর্যের কাজটা। মানুষ না দেখলেও অবারিতভাবে সব সময় সেই কাজটা করে যেতে পারে সে-ই, যার মধ্যে ইন্টেগ্রিটি আছে। লোকচক্ষুর অন্তরালে সৌন্দর্যের বীজ বপন করে যাওয়ার ব্যাপারটা সততার চেয়ে ব্যাপক।

এখানে আমি একটা বুলবুলি পাখির মৃত্যুর কথাই বলি। আমার বইয়ে উল্লেখ আছে, ’৭০-এর ঘূর্ণিঝড় যখন হলো, আমাদের বাড়িতে অনেক মানুষ আশ্রয় পেল। ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ের পরে। তখন আমাদের বাড়ির বাইরে ঝোলানো টবের মধ্যে মানিপ্ল্যান্টে একটা বুলবুলি পাখি বাসা বেঁধেছিল। আব্বু সব সময় পাখিটাকে যত্ন করতেন। ওটাকে ভেতরে নিয়ে আসতে আব্বু বোধ হয় ভুলে গিয়েছিলেন। যেভাবে হোক পাখিটা মরে গেল। আম্মা আমাকে পাঠিয়েছিলেন আব্বুকে ডাকতে। গিয়ে দেখি, আব্বুর এ রকম করে দুই হাত...হাতের মধ্যে বুলবুলি পাখিটা। আব্বু কিন্তু কাঁদছেন। আমাকে দেখে তিনি একটু বিব্রত হয়ে গেলেন। পরে তিনি সারা দিন ঠিকমতো খাননি। আর ওটাই আফসোস, ‘কী করে আমি ভুললাম।’ তিনি কিন্তু অন্যকে দোষারোপ করলেন না। বললেন না, ‘তোমরা আনতে পারো নাই। আমাকে মনে করাতে পারো নাই।’ অথচ তিনি কিন্তু ব্যস্ত মানুষ। ইলেকশনের কাজে তাঁর ব্যস্ততার কমতি নেই। আব্বু বলছেন, ‘এত লোকের আশ্রয় দিলাম লিলি, আর বুলবুলি পাখির বাসাটা ভেতরে আনতে ভুলে গেলাম।’ আমি অনেক বড় হয়ে বুঝেছি—দিস ইস কলড হিউম্যানিটি। বর্ন লিডার, বর্ন স্টেটসম্যান—যার চোখের আলোটার মধ্যে একটা সামান্য বুলবুলি পাখির বেদনাটাও স্থান পায়।

তাজউদ্দীন আহমদ (১৯২৫—১৯৭৫)
মতিউর রহমান:

এ প্রসঙ্গে একটা ছোট ঘটনা আপনার বইতে আমি আজকে সকালে পড়লাম। গ্রামে ভুলবশত একজন তরুণ কিশোরের মৃত্যু হয়েছিল। আজিজ ছিল তার নাম। সেটা নিয়ে তিনি খুবই দুঃখিত-ব্যথিত হয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসার সকল ব্যবস্থা করেছিলেন, রক্ত দিয়েছিলেন, কিন্তু বাঁচাতে পারেননি। ১৩ আউন্স রক্ত দিয়েছিলেন। এটা নিয়ে পরে অনেক হাঙ্গামা, মামলা-মোকদ্দমা ইত্যাদি বিরোধ হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কিন্তু তিনি মৃত্যুর ঘটনাটাকেও মানিয়ে নিলেন, বুঝিয়ে নিলেন এবং এটা যাতে কোনো বড় বিরোধের দিকে না যায়, সেদিকে চেষ্টা করলেন। মানে একটা সমঝোতার মধ্য দিয়ে সমাধান—এই যে একটা চিন্তাভাবনা, আজকে দুনিয়ায় অনেক কথা হয় যে মানুষের মধ্যে জীবনবোধ, তার মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের থেকে বেরিয়ে আসার পথ কি সমঝোতা?

শারমিন আহমদ: নিশ্চয়ই সমঝোতা এবং ওটা উসকে না দিয়ে...একটা কমন গ্রাউন্ড সৃষ্টি করা ছিল যে একজন ভদ্রলোকের রাইফেল থেকে ভুলবশত গুলি বের হয়ে ছেলেটার গায়ে লেগে যায়। এটাতে যখন মামলা করতে ওরা উদ্যত হচ্ছে, তখন তিনি দুই পক্ষকে বসালেন যে এটা হয়েছে ভুলবশত। পরে দেখা গেল, ওই দুই বৈরী সম্পর্কের মধ্যে তিনি যে ভালোবাসাটা সৃষ্টি করে দিলেন, এখনো তাদের মধ্যে সেই মিলমিশটা আছে। আপনার যদি মনে পড়ে, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়াউর রহমান ছিলেন মেজর এবং একজন সেক্টর কমান্ডার। তিনি তাঁর বাহিনীর নাম দেন ‘জেড ফোর্স’। এতে ওসমানী সাহেব একটু আপসেট হন। তিনি বলেন, ‘তিনি নিজে থেকেই নামটা দিয়েছেন, অথচ এ ব্যাপারে একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া ছিল—কাউকে কিছু না জানিয়ে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হয়নি।’ এটা নিয়ে তো দেখা যাচ্ছে যে জিয়াউর রহমানের সাথে ওসমানী সাহেবের একটা বিরোধ হয়ে যাচ্ছে। আব্বু বললেন, ‘ঠিক আছে, তিনি যদি জেড ফোর্স দেন, আমাদের তো আরও ১০টা সেক্টর আছে, খালেদ মোশাররফকে কে ফোর্স, সফিউল্লাহরটা হোক এস ফোর্স। তাহলে সমতা হয়ে গেল।’ ব্যস, ওইখানেই কিন্তু ওই বিবাদটা থেমে গেল।

প্রথমা প্রকাশন থেকে প্রকাশিত তাজউদ্দীন আহমদের বক্তৃতার সংকলনের প্রচ্ছদ
মতিউর রহমান:

ওখান থেকে যদি আরেকটু বড় করে দেখি, মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকে তাজউদ্দীন আহমদ কুষ্টিয়ার সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতা হয়ে দিল্লি গেলেন। তিনি ৪ এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে বৈঠক করলেন এবং মুক্তিযুদ্ধের সব প্রস্তুতির প্রাথমিক কাজগুলো করে ফেললেন। কী বক্তৃতা হবে, সংবিধান কী হবে ইত্যাদি সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। এরপর আমরা দেখেছি, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়টা আওয়ামী লীগের ভেতরের বেশ বড় একটা অংশ, যারা মুজিব বাহিনী নামে পরিচিত, তারা কিন্তু ক্রমাগতভাবে তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে যে মুক্তিযুদ্ধ চলেছিল, তাকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে, বিরোধিতা করেছে এবং তাঁকে এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। সেখানে আমরা দেখি, তিনি কিন্তু দলমত-নির্বিশেষে বৃহত্তরভাবে সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করেছেন। এটা আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে, শিলিগুড়ি সম্মেলন নিয়ে একটা বই আমরা করেছি ১৯৭১: শিলিগুড়ি সম্মেলন।

শারমিন আহমদ: অধিকাংশ সংসদ সদস্য, জাতীয় পরিষদ সদস্য, প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের নিয়ে সভায় আলোচনা হলো এবং সেখান থেকে কিন্তু তাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বের প্রতি সমর্থন স্বীকৃত হলো এবং তাঁর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হলো।

(সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্ব আগামীকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হবে)