টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের ও নতুন অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। বাজেটে নতুনত্ব কী খুঁজে পাওয়া গেল? বাজেট নিয়ে মোটাদাগে আপনার মূল্যায়ন কী?
সেলিম রায়হান: এবারের বাজেটে প্রত্যাশাটা অনেক বেশি ছিল। আমাদের অর্থনৈতিক সংকট বা সমস্যা যেটা বলি, সেটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তারপর দেশে দীর্ঘ সময়জুড়ে যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ক্রমান্বয়ে পতন, রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে অধারাবাহিকতা—সবকিছু মিলিয়ে প্রত্যাশা ছিল এবারের বাজেটে এ বিষয়গুলো মোকাবিলার একটা সুস্পষ্ট পথনির্দেশ থাকবে। কিন্তু সমস্যাগুলো মোকাবিলার জন্য বাজেটে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট নয়। বলা চলে বাজেটে প্রত্যাশা যা ছিল, তা অবশ্যই পূরণ হয়নি।
বরং প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের যে লক্ষ্যমাত্রার কথা বলা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবসম্মত মনে হয়নি। কর খাতের ক্ষেত্রে বাজেটে এমন কিছু পণ্য ও সেবার ওপর অতিরিক্ত কর ধার্য করতে দেখলাম (মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহারসহ আরও কিছু পরিষেবা) যেগুলোর সরাসরি প্রভাব নিম্ন আয়ের মানুষ ও মধ্যবিত্তদের ওপর গিয়ে পড়বে।
অথচ কর খাতের সংস্কারের কথা যদি বলি, তাহলে বেশি জোর দেওয়া দরকার আমাদের আয়করের ওপর, যাতে ধনী ও অতিধনীরা বেশি করে কর দেন। বাজেটে একটা চেষ্টা দেখলাম সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। এটা ভালো উদ্যোগ। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, ধনী ও অতিধনীদের একটা বিশাল একটা অংশ কর দেন না। এর মানে হলো তাঁরা করের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছেন। করহার বাড়ানো হলেও যতক্ষণ পর্যন্ত না তাঁদের করের আওতায় আনা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আয়করের পরিমাণ বাড়ানো যাবে না। আমাদের জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব আয় খুবই কম। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনাতেও সেটা অনেক কম।
আমাদের প্রথম প্রত্যাশাটা ছিল এবারের বাজেটের অগ্রাধিকার হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ। বিশেষ করে কীভাবে মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও বাজার ব্যবস্থাপনার মধ্যে ভারসাম্য এনে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে একটা বড় ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করা যায়, সেই রূপরেখাটা দরকার ছিল। দ্বিতীয় প্রত্যাশাটা ছিল, কর খাত সংস্কারের জন্য উদ্যোগগুলো আরও শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট হবে। কিন্তু সরকার সে পথে হাঁটেনি। বরং সহজ পথ হিসেবে বিদ্যমান যে করব্যবস্থা, সেটাকেই বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় প্রত্যাশা ছিল আর্থিক খাতে সংস্কারের জন্য বড় উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশেষ করে ঋণখেলাপি কীভাবে কমবে, ব্যাংকিং খাতে কীভাবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে, এ দুটি জায়গায় শক্ত সিদ্ধান্ত আসবে। কিন্তু দুই জায়গাতেই খুব সুস্পষ্ট কিছু দেখা গেল না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর খাত সংস্কার ও আর্থিক খাতের সংস্কার—তিন ক্ষেত্রেই বাজেট প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি।
দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির শক্ত জোয়াল মানুষের ঘাড়ে চেপে বসে আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বলেছিল, মূল্যস্ফীতি ৬-এর ঘরে নেমে আসবে। বাজেট ঘোষণার সময় অর্থমন্ত্রী আশাবাদ জানিয়েছেন, এ বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। এই আশাবাদ কতটা বাস্তবসম্মত।
সেলিম রায়হান: টানা দুই বছরের উচ্চ মূল্যস্ফীতি ৯-১০-এর কাছাকাছি। মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার কিছু কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন সুদের হার বাড়িয়েছে। এবারের বাজেটে কিছু কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর শুল্ক কমানো হয়েছে। কিন্তু এরপরও তো মূল্যস্ফীতি কমছে না। এর পেছনে দুটো কারণ আছে। প্রথমটা হলো, দীর্ঘ সময় ধরে সঠিক পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়নি। বিশেষ করে মুদ্রানীতি ও সুদের হারের কথা বলা যায়। দীর্ঘ সময় ধরে সুদের হার ছয়-নয়ে স্থির করে রাখা হয়েছিল।
মূল্যস্ফীতি যখন ক্রমান্বয়ে বাড়ছিল, তখন যদি সুদের হারটা ফ্লেক্সিবল করা যেত, তাহলে কিছুটা হলেও মুদ্রানীতির কার্যকর ভূমিকা আমরা দেখতে পেতাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হলো, তখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে। ফলে সুদের হার বাড়ানো হলেও সেটা মূল্যস্ফীতি কমাতে খুব বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তার বড় কারণ হলো, এরই মধ্যে একটা বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর প্রকৃত আয় মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক কমে গেছে। সুতরাং, সুদের হার বাড়ালে তারা তাদের চাহিদাকে আরও সংকুচিত করবে, সেই সুযোগটা কমে গেছে। সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা সংকুচিত করার নীতিটা এক বা দেড় বছর আগে নেওয়া হলে সেটা কার্যকর হতে পারত। দেরিতে নেওয়ার এর কার্যকারিতা অনেকটাই কমে গেছে।
দ্বিতীয় কারণ হলো, রাজস্বনীতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের করহার কমানোর উদ্যোগটা অনেক দেরিতে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন ধরনের সিন্ডিকেটের কারসাজি কিংবা অন্য সব অসাধু উদ্যোগের ক্ষেত্রে আমরা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখি না। সামগ্রিকভাবে মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি ও অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থাপনা—এই তিন জায়গায় গত দুই বছরের সরকারের সাফল্য দেখিনি। আগামী এক বছরে খুব বেশি সাফল্য দেখব, সেটা আশা করার কোনো কারণ নেই। কারণ, এসব বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগের প্রতিফলন বাজেটে নেই। সুতরাং, এক বছরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এ ব্যাপারে একদমই আশাবাদী হওয়া যাচ্ছে না। কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না, আবার যেসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যেও সমন্বয় নেই, সে কারণে উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়টা দীর্ঘ হবে।
সামাজিক নিরাপত্তা উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা। দারিদ্র্য ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবনে এখন যে নাভিশ্বাস ধরনের সংকট, তা থেকে বেরিয়ে আসতে এই বরাদ্দ কতটা যথেষ্ট হলো?
সেলিম রায়হান: সংকটের কারণে কোভিডের সময় সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। এখন অর্থনীতি খুবই সংকটজনক অবস্থায় আছে। বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায়, এমনকি পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ থেকেও বেরিয়ে এসেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা এখন একটা বড় ধরনের সমস্যা। বিশেষ এ পরিস্থিতিতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার একধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করতেই পারত। সে ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ মূলত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিটাকে আরও ব্যাপক করত, কর্মসূচির পরিসরটা বাড়াত।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বিশাল একটা জনগোষ্ঠীর প্রকৃত আয় কমে গেছে, তাদের জীবনযাত্রায় বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তাদের জন্য এ ধরনের প্রণোদনা কিছুটা হলেও স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারত। এবারের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দটা যথেষ্ট নয়। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি আরও ব্যাপকভাবে বাড়ানো দরকার। প্রয়োজনে অন্যান্য খাতের খরচগুলো কাটছাঁট করে সেই টাকাটা এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া দরকার।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মধ্যে নানা ধরনের ফাঁকফোকর আছে। পেনশন, সঞ্চয়পত্রে ভর্তুকি—এ সবকিছুও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত। এগুলো বাদ দিয়ে প্রকৃত সামাজিক যোগাযোগ নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছানোর ক্ষেত্রে অতীতে বেশ কিছু ভুল আমরা দেখেছি। যেমন ভুল ব্যক্তিরা তালিকায় যুক্ত হয়েছে, তথ্যভান্ডারটিও ঠিকমতো করা হয়নি। এ সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য পরিসংখান ব্যুরো, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটা সমন্বয় দরকার।
বাজেটে করমুক্ত আয়করসীমা এবারও বাড়ল না। মোবাইলে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার—বাজেটে নতুন কর ও ভ্যাটের বোঝা দীর্ঘ হলো। জ্বালানিতে, বিশেষ করে বিদ্যুতে দফায় দফায় খরচ বাড়বে। এই চাপটা সাধারণ মানুষ কীভাবে বইবে?
সেলিম রায়হান: দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, সাধারণ মানুষের ওপর চাপ কমার বদলে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এই চাপটা সয়ে নেওয়ার জন্য মানুষের কাছে যেসব পদ্ধতি থাকে, যত দিন যাচ্ছে, সেগুলো নিঃশেষ হয়ে আসছে। যাঁদের হাতে সঞ্চয় ছিল, তাঁরা সেই সঞ্চয় ভেঙে ফেলেছেন। ভোগের ক্ষেত্রে কাটছাঁট করছে। আগে হয়তো তাঁরা বেড়াতে যেতেন, এখন বেড়াতে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। বিনোদনে, চিকিৎসা, শিক্ষায় তাঁরা খরচ কাটছাঁট করছেন। খাবারের ক্ষেত্রে তাঁরা কম পুষ্টিকর খাবার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে তাঁরা টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু এরও একটা শেষ সীমা আছে।
আমি মনে করি, দীর্ঘদিনের মূল্যস্ফীতির কারণে অনেক পরিবারের এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার দশা হয়েছে। গত কয়েক বছরে কর্মসংস্থানের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি আমরা দেখিনি। আবার বিশাল অংশের জনগোষ্ঠীর প্রকৃত আয় কমে গেছে। সরকারের সহায়তাও খুব কার্যকরভাবে অনেক পরিবারের কাছে পৌঁছায়নি। এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়াটাই এবারের বাজেটের কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা হওয়া উচিত ছিল। চাপ সয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অনেক পরিবারের শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতার জন্য সরকারকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বরাবরের মতো এবারও উপেক্ষিত। শিক্ষায় ১২ শতাংশের কাছাকাছি ও স্বাস্থ্যে ৫ শতাংশের বরাদ্দ একটা ঐতিহ্যে পরিণত হতে দেখছি। স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় এত কম বিনিয়োগ আমাদের উন্নয়নযাত্রাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?
সেলিম রায়হান: দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হচ্ছে, সরকার তার পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দের জন্য যে প্রতিজ্ঞা করেছে, সেই প্রতিজ্ঞাটাই সরকার বাজেটে রাখছে না। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির অনুপাতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আরও অনেক বাড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছে সরকার। কিন্তু তার প্রতিফলন বাজেটে দেখা যাচ্ছে না। প্রশ্নটা হলো, সরকার কি নিজের কথা বা প্রতিজ্ঞাটা রাখছে না। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে এত কম বরাদ্দ দিয়ে কোনোভাবেই মানব উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের মতো বিশাল জনবহুল দেশ, স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় এত কম বরাদ্দ দিয়ে কোনোভাবেই জনমিতির লভ্যাংশটা ব্যবহার করতে পারবে না।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে এত কম খরচ ধারাবাহিকভাবে আমরা যদি চালিয়ে যাই, তাহলে আমাদের জন্য ভবিষ্যতে ভয়ংকর একটা বিপর্যয় অপেক্ষা করছে। সেই বিপর্যয়টা হচ্ছে একটা বিশালসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠী সে রকম শিক্ষিত হবে না, সে রকম দক্ষ হবে না, সে রকম উৎপাদনশীল হবে না। সমাজের জন্য সম্পদ না হয়ে একটা বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের নীতিনির্ধারকেরা যদি এই বিষয়টা বুঝে থাকেন আর সেটা বুঝেই যদি তাঁরা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোয় এ ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, তাহলে কেন তাঁরা বাজেটে তার প্রতিফলন দেখাতে পারেন না।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, তাদের যদি অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়াও হয়, তারা সেটা খরচ করতে পারে না। এই দুটি মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো প্রচেষ্টাও আমরা দেখছি না।
১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার ঢালাও সুযোগ দেওয়া হলো। অন্যদিকে বৈধ আয় হলে কর দিতে হবে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। এভাবে দুর্নীতিবাজদের দুহাতে সুযোগ দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক?
সেলিম রায়হান: সরকার বাজেটে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছে। সরকার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স অবস্থানে থাকে, তাহলে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা সাদা করার সুযোগটা তো সাংঘর্ষিক হয়ে গেল। এই নীতি তো দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। দুর্নীতিবাজেরা মনে করবে কালোটাকা তো সাদা করা যায়ই। যতই দুর্নীতি করা হোক না, কর দিয়ে তো কালোটাকা সাদা করা যাবেই। সরকার কোন চিন্তা থেকে এই নীতিটাকে অব্যাহত রাখার কথা ভাবছে, সেটা বোধগম্য নয়।
অতীতেও এটা করা হয়েছে, তাতে খুব বেশি সাফল্য আমরা দেখিনি। আমি মনে করি, সুযোগটা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। সামগ্রিকভাবে আমাদের সংবিধান ও আমাদের নৈতিক অবস্থানের সঙ্গেও এই নীতি সাংঘর্ষিক। সুতরাং এই নীতি থেকে সরকারকে অবশ্যই সরে আসা উচিত। না হলে এটা করদাতাদের নিরুৎসাহিত করবে। সমাজে একটা অনৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত করে দিচ্ছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সেলিম রায়হান: আপনাকেও ধন্যবাদ।