সাক্ষাৎকার

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে যা ঘটবে, সেটা বহন করার মতো শক্তি আমাদের নেই

জুলাই জাতীয় সনদ, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, নির্বাচনে জোট গঠন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন ১২-দলীয় জোটের মুখপাত্র ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের

প্রথম আলো:

অনেক জল্পনা-কল্পনার পর জুলাই সনদ স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবে সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখনো বিতর্ক রয়ে গেছে। এটি রাজনীতিতে নতুন কোনো সংকট তৈরি করবে কি না?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: যেহেতু আমরা দীর্ঘদিন ধরে আলাপ–আলোচনা করে জুলাই সনদ বিষয়ে একমত হতে পেরেছি এবং কিছু কিছু নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে এটাতে স্বাক্ষর করেছি, তাই এটার বাস্তবায়নে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আর আইনগত যে দিকগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে একটা রাস্তা বের করার চেষ্টা করছি।

প্রথম আলো:

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল এনসিপি এখনো জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেনি। এটা আপনি কীভাবে দেখেন?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: সম্ভবত তাঁরা কারও প্ররোচনার শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বয়স এবং অভিজ্ঞতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। তাঁদের যাঁরা গাইড করছেন তাঁরাও তাঁদের সঠিকভাবে গাইড করতে পারছেন না। আশা করি এনসিপি জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে। এ বিষয়ে আমরাও তাদের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করছি।

প্রথম আলো:

শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর না করলে…

শাহাদাত হোসেন সেলিম: খুব একটা প্রভাব পড়বে না এই কারণে, মেজর রাজনৈতিক দলগুলো এই সনদে স্বাক্ষর করেছে।

প্রথম আলো:

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে আপনি বিএনপির পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন, যা অন্যদের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। এটা কি বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: না; প্রশ্নই আসে না। আমরা বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়েছি এ রকম নয়। অনেক ক্ষেত্রে বিএনপির বিরোধিতাও করেছি। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে একটা ঐক্য হয়েছে। সেটা দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এবং যৌক্তিকতার কারণে।

প্রথম আলো:

ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের দুটি শরিক জোট ও পাঁচটি দল বিএনপির কাছে ১০৬টি আসন চেয়েছে। আরও অনেকে চাইতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। এসব জোট ও দল যে পরিমাণ আসন চেয়েছে, তাতে বিএনপির জন্যই খুব বেশি আসন থাকে না। বিষয়টি নিয়ে অনেকে রসিকতাও করছেন। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: আমাদের অনেকের মধ্যেই হয়তো নির্বাচন করার ইচ্ছা আছে। বিএনপিকে যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে নাম থাকলে অনেকে খুশি হবে, সে জন্য দেওয়া হয়েছে। এসব কারণে সংখ্যাটা বেড়ে গেছে। এতে আমরাও বিব্রত বোধ করছি। তবে আমরা মনে করি, যার নির্বাচনে জিতে আসার সম্ভাবনা আছে, তাদের বিষয়েই বিএনপি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেবে এবং সেই সিদ্ধান্তকে আমরা প্রত্যেকে স্বাগত জানাব।

আমরা চাই না অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা নির্বাচন করুন। তাতে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হবে। নির্বাচনী এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে। সেখানে কেউ নির্বাচন করলে কী হবে না হবে—এই বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করছি না।
প্রথম আলো:

শোনা যাচ্ছে, বিএনপির পক্ষ থেকে আপনাকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে মাঠে কাজ করার জন্য। এটি নিশ্চিত কি না?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: ইতিমধ্যে বিএনপির একেবারে দায়িত্বশীল নেতাদের পক্ষ থেকে আমাকে এবং আমার নির্বাচনী এলাকার অনেককে ডেকে মোটামুটি একটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে এবং আমাকে নির্বাচনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলেছেন। আমি সেই হিসেবে কাজ করছি।

প্রথম আলো:

মাঠে কাজ করার ক্ষেত্রে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সহযোগিতা পাচ্ছেন কি না?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের নেতৃত্বে যাঁরা আছেন, তাদের পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছি। এ ব্যাপারে আমি সন্তুষ্ট।

প্রথম আলো:

ধরুন, এনসিপি থেকে, স্বতন্ত্র কিংবা বিএনপির সঙ্গে জোট করে কোনো উপদেষ্টা যদি আপনার আসনে নির্বাচন করেন, তাতে পরিস্থিতি কী হবে?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: আমরা চাই না অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উপদেষ্টা নির্বাচন করুন। তাতে এই সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হবে। নির্বাচনী এলাকায় আমার জনপ্রিয়তা আছে। সেখানে কেউ নির্বাচন করলে কী হবে না হবে—এই বিষয় নিয়ে কোনো চিন্তা করছি না।

প্রথম আলো:

অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তবে অনেকেই নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান। নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা আছে কি না, আপনি কী মনে করেন?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি হয়ে যাচ্ছে, তারা যদি আন্তরিক না হয়, সে ক্ষেত্রে একটা শঙ্কা তো থেকেই যায়। তারপরও আমার মনে হয় ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে যা ঘটবে, সেটা বহন করার মতো শক্তি আমাদের নেই।

প্রথম আলো:

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে গত মঙ্গলবারের বৈঠকে বিএনপি দাবি জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যেতে হবে। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

শাহাদাত হোসেন সেলিম: এই দাবি যথার্থ মনে করছি। কারণ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য সরকারকে পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূমিকায় যাওয়া দরকার।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

শাহাদাত হোসেন সেলিম: আপনাকে ধন্যবাদ, প্রথম আলোকেও ধন্যবাদ।