বিশেষ সাক্ষাৎকার

নির্বাচনের সঙ্গে সর্বজনীন পেনশনের কোনো সম্পর্ক নেই

কবিরুল ইজদানী খান

কবিরুল ইজদানী খান, জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব)। চারটি ধরন নিয়ে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের যাত্রা শুরু হয়েছে গত ১৭ আগস্ট। পেনশন স্কিমের আওতায় চাঁদা দিলে কী কী সুবিধা পাওয়া যাবে, কোনো অসুবিধার দিক আছে কি না, এসব নিয়ে তিনি গত ৩০ আগস্ট প্রথম আলোর সঙ্গে সচিবালয়ে কথা বলেছেন। 

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান ফখরুল ইসলাম

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আলোর মুখ দেখতে সর্বজনীন পেনশন স্কিমের এত দেরি হলো কেন?

কবিরুল ইজদানী খান: এটা আসলে উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যাপার। সক্ষমতা অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত এই স্কিমের বাস্তবায়ন যে কঠিন হবে, আমরা জানতাম। এখন আমাদের সক্ষমতা হয়েছে। ফলে ১০ কোটি মানুষের কথা মাথায় রেখে কাজটি শুরু করেছি। এ জায়গায় আসতে অবশ্য অনেক ধাপ পার করতে হয়েছে। শুরুতে নজর দিতে হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে। ২০১৫ সালে প্রণয়ন করা হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষ এখন সামাজিক নিরাপত্তার আওতায়। তবে আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থমন্ত্রী থাকার সময় ২০১৫ সালেই সর্বজনীন পেনশন স্কিম করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় অবস্থানপত্র তৈরি, আইন, বিধি ও জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ হয়। শেষ পর্যন্ত গত ১৭ আগস্ট চালু করা হয় সর্বজনীন পেনশন স্কিম।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: চাইলে আরও আগে করা কি সম্ভব ছিল না?

কবিরুল ইজদানী খান: আমরা কিন্তু বসে থাকিনি। অন্য দেশের পেনশন স্কিমগুলো বিশ্লেষণ করেছি। এ জন্য সময় নিতে হয়েছে। আগে করলে বাস্তবায়ন করা কঠিন হতো। সরকারের বাস্তবায়ন সক্ষমতা ওই পর্যায়ে না এলে এ ধরনের একটি বড় কাজ হাতে নেওয়া সত্যিই অসম্ভব। ভারতে ২০০৪ সালে পেনশন স্কিম চালু হয়; শুধু যাঁরা পেনশন পেতেন, তাঁদের জন্য। ভারতকে পরে সংস্কারের পথে যেতে হয়েছে। ব্যাপক হিসাবকিতাব করে ৭০ বছরের বেশি এবং ১৮ বছরের কম বয়সীদের বাদ দিয়ে আমরা পেনশন স্কিমের কার্যক্রম শুরু করেছি। আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে—শুধু শুরু করা নয়, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াটা যেন ফলপ্রসূ হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশই প্রথম সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সামাজিক সুরক্ষার আওতায় যাঁরা আছেন, তাঁদেরসহ ১০ কোটি সংখ্যাটা খুব উচ্চাভিলাষী হয় না?

কবিরুল ইজদানী খান: উচ্চাভিলাষী কেন বলছেন? এটা একটি স্বেচ্ছাধীন বিষয়। ১৭–১৮ কোটি মানুষের দেশ, আমরা ঠিক করেছি ১০ কোটি মানুষকে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে আরও বেশি মানুষ এর আওতায় আসবেন। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা অর্থনৈতিকভাবে যে জায়গায় পৌঁছাতে চাই, তাতে ১০ কোটিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। একটা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার আওতায় চলবে এটা। উন্নত বিশ্বে যেমন পুরো পেনশন–ব্যবস্থাই চলে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে, একসময় আমাদের এখানেও তা–ই হবে। আপনি যখন একটা জিনিস শুরু করবেন, তখন লক্ষ্যমাত্রা উচ্চ রাখাই ভালো। পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে আমরা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। বিদেশে থাকেন আমাদের এক কোটির বেশি মানুষ। প্রবাসী পুরো জনগোষ্ঠীকেই কিন্তু এ স্কিমের আওতায় আনা সম্ভব। একটি স্কিমে এক ভাই যোগ দিলে পরে তার বোনও যোগ দেবেন—এভাবেই তা বাড়তে থাকবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছরকেই কেন বেছে নিলেন? এ সময়ে তো কারও আয় থাকে না।

কবিরুল ইজদানী খান: খুব ভালো প্রশ্ন। আমি একটা উদাহরণ দিই। আয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তো! ধরুন, আপনার ভাই বিদেশে থাকে। তিনি বললেন, তুমি একটা পেনশন স্কিমে যোগ দাও, আমি মাসে মাসে টাকা পাঠাচ্ছি। ঠিক একইভাবে আমি যদি বাবা হিসেবে মনে করি, ১৮ বছর বয়সী আমার ছেলের চাঁদাটা আমিই দেব, সেই সুযোগও রাখা হয়েছে। ছেলে যখন কর্মক্ষম হবেন, তখন তাঁর চাঁদাটা তিনি দেবেন। সঞ্চয়পত্র বা ব্যাংকের ডিপিএসের সঙ্গে এটি মেলানোর দরকার নেই; বরং এর মাধ্যমে সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হবে। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: একটা সমালোচনা কিন্তু আছে, নাম দিয়েছেন সর্বজনীন; কিন্তু বাস্তবে তা অংশগ্রহণমূলক। নাম হওয়া উচিত ছিল বরং ‘অংশগ্রহণমূলক পেনশন স্কিম’।

কবিরুল ইজদানী খান: বিশ্বের পেনশন স্কিমগুলো আমরা যাচাই করেছি। বিশ্বে কেউ বলে ডিফাইন্ড বেনিফিট, কেউ বলে ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি। অনেক নামেই আছে। আমরা বিবেচনায় রেখেছি, আমাদের জন্য কোনটা উত্তম। আমরা আমাদের দেশীয় বাস্তবতায় তা শুরু করেছি। যদি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর কথা চিন্তা করি, নাগরিকদের কাছ থেকে ৬৫ শতাংশ কর সরকার কেটে নেয়। ও রকম করলে তো আর আমাদের হবে না। আমরা বোঝার চেষ্টা করেছি আমাদের সমাজ কোনটাকে মেনে নেবে। পরিবারগুলো কোনটাকে মেনে নেবে। আমাদের পরিবারের সদস্যরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। একজন আয় করেন, অন্যরা তার ওপর নির্ভর করে। ফলে ছেলের চাঁদা বাবা দেবেন, ভাইয়ের চাঁদা ভাই দেবেন—এটা আমাদের দেশের একটা বাস্তবতা।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: জীবন বীমা করপোরেশনের একটা পেনশন স্কিম আছে, যা খারাপ নয়। এ করপোরেশন থেকে আরও কয়েকটা স্কিম বাড়িয়ে কি সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা যেত না?

কবিরুল ইজদানী খান: এ প্রশ্ন আমি আগেও পেয়েছি। জীবন বীমা করপোরেশনের একটা ব্যবসায়িক লক্ষ্য আছে। করপোরেশনের পরিচালন ব্যয় আছে। যে চাঁদাটা পাবে, তা থেকে পরিচালন ব্যয় দিয়ে মুনাফা দেবে। আর যদিও তাদেরটা পেনশন স্কিম, পেনশন পাওয়ার সময় হলে করপোরেশন থেকে পুরো অর্থ তুলে নেওয়া যায়। আমাদের স্কিমে কিন্তু সে সুযোগ নেই। এখানে চাঁদা থেকে পরিচালন ব্যয় কেটে রাখা হবে না। বিনিয়োগ থেকে যে মুনাফা আসবে, তা চাঁদাদাতাকেই দেওয়া হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ৬০ বছর বয়সে ৫০ শতাংশ বা ২৫ শতাংশ হলেও অন্তত এককালীন তুলে নেওয়ার কোনো সুযোগ তো এখনো রাখা যায়?

কবিরুল ইজদানী খান: পেনশন নিয়ে বিশ্বব্যাপী চর্চা হয়। আধুনিক পেনশন–ব্যবস্থায় এভাবে এককালীন অর্থ তুলে নেওয়ার বিধান রাখা হয় না। পেনশন মানেই হচ্ছে ভবিষ্যতের সুরক্ষা। এককালীন টাকা নিয়ে গেলে তো সেটা হলো না। নগদ টাকা নিয়ে গেলে তিনি কিন্তু ব্যবসা করতে পারবেন না, কোথাও বিনিয়োগ করাও তার জন্য কঠিন। ফলে একদিকে টাকাটা তিনি হারিয়ে ফেলবেন, অন্যদিকে মাসিক পেনশন তাঁর কমে যাবে। এতে নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বর্তমানে যে সরকারি কর্মচারীরা একটা অংশ (৫০ শতাংশ) তুলে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন, এতে তাঁদের জন্যও কি নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে না?

কবিরুল ইজদানী খান: পেনশনের একটা হচ্ছে ডিফাইন্ড বেনিফিট–পদ্ধতি, আরেকটা হচ্ছে ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউটরি–পদ্ধতি। সরকারি কর্মচারীরটা ডিফাইন্ড বেনিফিট। এর সঙ্গে সর্বজনীন পেনশন স্কিমটা মিলবে না।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: মুনাফা হিসাব করার সময় কি বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার, নাকি ভবিষ্যতে যে তা আরও বাড়তে পারে, তা বিবেচনায় রাখা হবে?

কবিরুল ইজদানী খান: গত কয়েক বছরে বাজেট করার সময় আমরা ৬ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ধরে বাজেট করেছি। দেখা যায়, অর্থবছর শেষে ওই হার ধরে রাখতে পারিনি। না পারারও অনেক কারণ আছে। যেমন আমরা হচ্ছি আমদানিনির্ভর দেশ। যে কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বাড়লে দেশের বাজারেও বাড়ে। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবও যেমন বর্তমান মূল্যস্ফীতিতে আছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। আমরা মনে করি না লম্বা সময় ধরে বর্তমান হারের মূল্যস্ফীতি থাকবে। পেনশনের মুনাফার ক্ষেত্রে আমরা বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ধরেই করেছি।

আপনি খেয়াল করে দেখবেন, প্রবাসী একজন যদি ৪২ বছর ধরে মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমা দেন, তাহলে ৬০ বছর বয়সের পর তিনি প্রতি মাসে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে পাবেন। আমরা মুখে বলব ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হব আর দিন দিন মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকবে, তা কিন্তু হবে না। উন্নত দেশের মূল্যস্ফীতি কমই থাকে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, মূল্যস্ফীতি সমন্বয় হওয়ার পরই চাঁদাদাতারা মাসে মাসে ওই টাকাটা পাবেন। টাকার পরিমাণটা কিন্তু বড়ই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: টাকার অঙ্ক বড় বলছেন, কিন্তু যখন প্রগতি স্কিমে ১০ বছরের জন্য মাসিক চাঁদার পরিমাণ ৫ হাজার টাকা, তখন পেনশন পাওয়া যাবে ৭ হাজার ৬৫১ টাকা করে। মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় সে টাকা বরং কম লাগে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

কবিরুল ইজদানী খান: এটা কিন্তু সূত্রভিত্তিক (ফর্মুলা)। আমার বা অন্য কারও বানানো বিষয় নয়। মুনাফা যখন ধরবেন, ডিসকাউন্টও ধরতে হবে। যখনই চাঁদা হবে লম্বা সময়ের জন্য, তখনই মাসিক পেনশনের পরিমাণ বেশি হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সমাজের ওপর–নিচের বৈষম্য কমিয়ে আনার কোনো ছাপ থাকছে কি এই পেনশন স্কিমগুলোতে?

কবিরুল ইজদানী খান: অবশ্যই ছাপ আছে। একটা উদাহরণ দিই। কেন আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের দিকে গেলাম। সরকারের একটা মৌলিক উদ্দেশ্য আছে এখানে। আগেই বলেছি, ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষকে সামাজিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা বা সাহায্য যা–ই বলি না কেন, সরকার দিয়ে যাচ্ছে। একটু উন্নত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্যের দিক যদি বিশ্লেষণ করি, অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ একটা বড় বিষয়। আমাদেরও এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, শুল্ক ইত্যাদি বাড়াতে হবে। শুল্ক হয়তো একসময় থাকবে না, বাকি দুটি বাড়াতেই হবে। তখন সরকারেরও সক্ষমতা বাড়বে। বিদেশে গেলে আপনি দেখবেন, একটা সহায়তা আসে সরকার থেকে, আরেকটা নিজেদের সঞ্চয়। দুই–তিন ধরনের সহায়তাও দেন কেউ কেউ। যেমন বাচ্চা দুটি থেকে তিনটি হলেও কেউ কেউ সহায়তা পান। রাজ্য থেকে রাজ্য পর্যায়েও ভাতার দিক থেকে পার্থক্য আছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই যে বলা হচ্ছে, পেনশনের এ অর্থ যথেষ্ট নয়। সরকার আরও বেশি সহায়তা দেবে কোথা থেকে, যদি রাজস্ব আয় না বাড়ে?

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সমতা স্কিমে ৫০০ টাকা চাঁদার বিপরীতে সরকার যে আরও ৫০০ টাকা দিচ্ছে, তা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না!

কবিরুল ইজদানী খান: মাত্র তো চালু হলো। ভবিষ্যতে দেখা যাবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: শুধু সোনালী ব্যাংকের সঙ্গেই চুক্তি করলেন। দেশের সব জায়গায় তো সোনালী ব্যাংক নেই। রাষ্ট্রমালিকানাধীন অন্য কোনো ব্যাংকও তো এ পেনশন স্কিম সম্প্রসারণের কাজে আসতে পারে।

কবিরুল ইজদানী খান: অগ্রণী, জনতা, রূপালী ব্যাংকের সঙ্গেও আমরা বৈঠক করেছি। সোনালী ব্যাংকের মতো একইভাবে সেগুলোকে কাজে লাগানো যায় কি না। তবে একটা সুযোগ কিন্তু আছে। ধরুন, আপনার প্রাইম ব্যাংকে হিসাব আছে। প্রাইম ব্যাংককে বলুন, আপনার হিসাব থেকে সোনালী ব্যাংকে আপনার পেনশনের চাঁদা দিয়ে দিতে। তারা সহজেই দিয়ে দেবে। এ জন্য সোনালী ব্যাংকে হিসাব থাকার দরকার নেই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: একটা প্রশ্ন এরই মধ্যে উঠেছে, ২০ বছর বয়সী কেউ টানা আট বছর চাঁদা দিয়ে পরে আর দিলেন না। জমা করা টাকা ফেরত পেতে কি তাঁকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?

কবিরুল ইজদানী খান: আপনি টাকা বলছেন কেন? বলুন পেনশন। মাথায় রাখতে হবে, আপনি পেনশন স্কিমে যোগ দিয়েছেন। একটা উদাহরণ দিই। আমি ২৫ বছর বয়সে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে ১০ বছর পর যদি বলি, চাকরি ছেড়ে দিলাম, এবার আমাকে পেনশন দিন। আমি কি পাব? কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর আমার পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা তৈরি হবে। মাঝপথে কেউ চাঁদা দিতে না পারতে পারেন। জরিমানা দিয়ে পরেও তা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ১২ মাস পর্যন্ত তা কার্যকর থাকবে। বন্ধ হবে না। আমরা কখনোই সুযোগটা বন্ধ করার পক্ষপাতী নই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: ১৮ বছর বয়সে কেউ চাঁদা দেওয়া শুরু করে ৩৫ বছর বয়সে গিয়ে বন্ধ করে দিলেন? তাঁর ক্ষেত্রে বিধান কী?

কবিরুল ইজদানী খান: ৬০ বছরের পর থেকে তিনি পেনশন পাবেন। মাঝখানে আর কোনো বিধান নেই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: গৃহিণী যাঁদের আয় নেই, তাঁরা কি পেনশন স্কিমের আওতায় আসতে পারবেন?

কবিরুল ইজদানী খান: অবশ্যই পারবেন। এমনকি এক পরিবার থেকে পাঁচজনও যদি পেনশন স্কিমে আসতে চান, সেই সুযোগ আছে। আয় যাঁরই হোক, চাঁদা জমা হবে যাঁর নামে, তিনিই পেনশন পাবেন। এক পরিবারের পাঁচজনের মধ্যে একজন যদি আরেকজনকে নমিনি করেন, তাতেও কোনো সমস্যা নেই। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দেওয়ার কারণে প্রবাসীদের জন্য বাড়তি সুবিধা কী থাকছে?

কবিরুল ইজদানী খান: বাড়তি ২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পাবেন তাঁরা। তারা অর্থ পাঠালে সম্পদ কেনা ও ভোগে ব্যয় হয়ে যায়। এখন সঞ্চয়ের একটা প্রবণতা তৈরি হবে। কেউ দেশে একেবারে চলে এলে পেনশন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রগতি বা সুরক্ষা স্কিমের আওতায় চলে আসতে পারবেন। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কেউ কেউ বলেন সরকার এখন টাকার সংকটে থাকায় পেনশন স্কিম চালু করেছে। 

কবিরুল ইজদানী খান: মানুষ সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখছেন না! তা–ও কি এককালীন টাকা জমা রাখছেন। ১, ২, ৫, ১০ লাখ বা আরও বেশি। তখন কি একবারও মনে হয় যে এই টাকা সরকার নিয়ে নেবে? সরকারের সংকটের সঙ্গে পেনশন স্কিম চালুর কোনো সম্পর্ক নেই। আমি সব জায়গায় বলি, এটা আপনার স্কিম। ৬০ বছর বয়সে আপনার নিরাপত্তা মজবুত করার স্কিম।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নমিনি নিয়ে একধরনের জটিলতা আছে। চাঁদাদাতা মারা গেলে কে পাবেন টাকা? নমিনি না উত্তরাধিকারী?

কবিরুল ইজদানী খান: অবশ্যই নমিনি। ব্যাংকে টাকা রাখলে কাকে নমিনি করা হয়? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্ত্রীকে। পেনশন স্কিমেও তাই। নাবালক সন্তানকেও নমিনি করা যাবে। নমিনিও মারা গেলে উত্তরাধিকারীর প্রশ্নটা আসে। আমরা এমন সব বিধিবিধান করেছি, যাতে এ বিষয়ে পারতপক্ষে আদালত পর্যন্ত যেতে না হয়। 

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: কেমন সাড়া পাচ্ছেন?

কবিরুল ইজদানী খান: সাড়াটা দুই ধরনের। একটা হচ্ছে হিট বা আগ্রহ প্রকাশ। আরেকটা চাঁদা। নেতিবাচক প্রচারণা সত্ত্বেও এক লাখের বেশি আগ্রহ দেখিয়েছেন, আর চাঁদা দিয়েছেন ১০ হাজারের বেশি। যাঁরা আগ্রহ দেখিয়েছেন, আমরা ধরে নিচ্ছি তাঁরা সম্ভাব্য চাঁদাদাতা। সে হিসাবে আশাতীত সাড়া পাচ্ছি। বেসরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সাড়াটা বেশি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সব সরকারই মেয়াদের শেষ দিকে একটা জনপ্রিয় উদ্যোগ নিয়ে থাকে। আগামী সংসদ নির্বাচনের আগে এটাও কি সে রকম কিছু?

কবিরুল ইজদানী খান: চিন্তাটা কিন্তু শুরু হয়েছিল ২০০৮ সালে। সে জন্যই আমি কোথাও কথা বলতে গেলে পটভূমিটা বলি। এ নিয়ে গবেষণা হয়েছে, ধারণাপত্র তৈরি হয়েছে, বিদেশে গিয়ে দেখা হয়েছে। সুতরাং এর সঙ্গে নির্বাচনকে মিলিয়ে দেখার সুযোগ নেই। ভালো জিনিস যখনই আসুক, সেটি ভালো।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ। 

কবিরুল ইজদানী খান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।