জুলাই গণ–অভ্যুত্থান নিয়ে সম্প্রতি আপনি একটি বক্তব্য দিয়েছেন, যেখানে অভ্যুত্থান–পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বাংলাদেশের কথা এসেছে। অভ্যুত্থানের ফলে বাংলাদেশের কী পরিবর্তন দেখছেন?
স্বপন আদনান: এ প্রশ্নের সাদা–কালো উত্তর দেওয়া যাবে না। আশা ও হতাশা—দুটোই আছে। আপনি আমাকে যে প্রশ্ন করছেন, সেটার উত্তর দিতে আমাকে এখন চিন্তা করতে হচ্ছে না; এ কথা বলার জন্য আমার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে—এ রকম দুর্ভাবনা থেকে আমরা এখন অনেকটাই মুক্ত। যে স্বৈরাচারী বা কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি, সেটা কিন্তু একটা বড় ঘটনা।
কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন, অর্থাৎ রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতাকাঠামো—এগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে এটাকে বিপ্লব বলার কোনো সুযোগ নেই।
বিভিন্ন কমিশনের মাধ্যমে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলো প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। এগুলো কোনো বিপ্লবী চিন্তা না হলেও গঠনমূলক।
এটি কি নিছক একটি স্বৈরাচারী সরকারের পতন? গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আর্থসামাজিক বা রাষ্ট্রের কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন কি হয়েছে?
স্বপন আদনান: কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন, অর্থাৎ রাষ্ট্র, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, ক্ষমতাকাঠামো—এগুলোর কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে এটাকে বিপ্লব বলার কোনো সুযোগ নেই। তবে এটাকে শুধু রেজিম চেঞ্জও বলা যাবে না, এটা রেজিম চেঞ্জ বা শাসক বদলের চেয়ে বেশি কিছু। সেই বেশিটা এই অর্থে, যে পরিমাণ দমন-পীড়ন করা হয়েছে, হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন—১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পরে বাংলাদেশে এমনটা কখনো হয়নি।
এ পরিমাণ আঘাতের ফলে সমাজের গাঁথুনি নড়বড়ে বা ঢিলা হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো যদি বিবেচনায় রাখি, তাহলে বলতে হবে একধরনের পরিবর্তন হয়েছে। সেটা কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন নয়; কিন্তু অভ্যুত্থানভিত্তিক কিছু কিছু ক্ষমতাকাঠামোয় ভিন্নতা এসেছে। ক্ষমতাকাঠামোর কিছু পরিপূরক সংস্থা, যেমন মিডিয়া, সেখানে পরিবর্তন এসেছে। আমরা আগে মিডিয়ায় যা শুনতাম, এখন তা শুনি না; হয়তো আগের চেয়ে কিছুটা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি।
মার্ক্সীয় বিশ্লেষণের জায়গা থেকে রাজনৈতিক-অর্থনীতির ভাষায় আমি যদি এই গণ-অভ্যুত্থানকে ব্যাখ্যা করি, তাহলে এটা কোনো বুর্জোয়া বিপ্লবও নয়, এটাকে পাতি বুর্জোয়া আন্দোলন বলা যেতে পারে। চাকরির সুযোগ পাব, টাকা বানাব—এ রকম পাতি বুর্জোয়া ছোটখাটো আকাঙ্ক্ষা থেকেই আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল; শুরুর দিকে রাষ্ট্রের কাঠামো পরিবর্তন তো দূরের কথা, সরকার পতনের কথাও বলা হয়নি।
রাষ্ট্র সংস্কারের যে বিষয়, সেটা ৫ আগস্টের পরে বিভিন্ন আলোচনা, বির্তক বা ডিসকোর্সের মধ্যে এসেছে। কিন্তু সেটা এখনো কথোপকনের পর্যায়েই আছে। কারণ, এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি; এমনকি সরকারও সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেনি।
এবারের গণ–অভ্যুত্থানটা হয়েছে শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। অভ্যুত্থানের প্রায় ১০ মাস পর বাংলাদেশের চিত্রটা কেমন দেখছেন? বৈষম্য কমানোর কোনো তৎপরতা কি দৃশ্যমান হচ্ছে?
স্বপন আদনান: শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পেছনে প্রচণ্ড আবেগ ছিল, উদ্দীপনা ছিল; কাঁদানে গ্যাস–গুলি উপেক্ষা করে তরুণেরা রাস্তায় নেমে এসেছিলেন, তাঁরা জীবনও দিয়েছেন—এগুলো তো নিছক আবেগ দিয়ে হয় না। তাঁদের একটা লক্ষ্য হয়তো ছিল, কিন্তু সেটা অতটা স্পষ্ট নয়। আমি সে সময়ের দলিলপত্র ও সংবাদমাধ্যমে যেসব বক্তৃতা–বিবৃতি দেখেছি, তাতে অভ্যুত্থানের পর কী হবে, সে সম্পর্কে তাঁদের পরিষ্কার ধারণা ছিল বলে মনে হয় না।
আন্দোলনকারীরা বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন, কিন্তু সেটা শুধু চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য, নাকি সামগ্রিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে, তা স্পষ্ট নয়। সমাজে বৈষম্য কমানো খুবই কঠিন কাজ। আমাদের একটি বৈষম্যহীন সমাজ হবে, কোনো অন্যায়-অত্যাচার থাকবে না—এটা অনেকটা ইউটোপীয় ধারণা। তবে বৈষম্যকে একটা সহনীয় মাত্রার রাখার চেষ্টা করা উচিত। সত্যি বলতে কি, সে রকম তৎপরতা এখনো দৃশ্যমান নয়।
কারও কারও ধারণা, বাংলাদেশে বড় ধরনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন শক্তির একটা সম্পর্ক থাকে। এবারের গণ–অভ্যুত্থানেও সে রকম কোনো কিছু ছিল বলে মনে করেন?
স্বপন আদনান: আমি মনে করি, অভ্যুত্থানের শক্তি–সমাবেশ এতটাই প্রবল ছিল, বাইরের সমর্থন না পেলেও স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় নিতে হতো। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও যুক্তরাষ্ট্র বিগত সরকারের দমন–পীড়নের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই অবস্থান নিয়েছিল; ২০২১ সালে র্যাবের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের প্রধান ফলকার টুর্ক বিভিন্ন বিষয়ে সতর্কতা দিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে ছিল।
অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে যাচ্ছে? অনেকেই বলছেন, আমাদের রাষ্ট্র ও রাজনীতি দক্ষিণপন্থার দিকে ঝুঁকছে।
স্বপন আদনান: অভ্যুত্থানের আগেও যে আমরা বামপন্থা কিংবা মধ্যপন্থায় ছিলাম, তেমনটা নয়; আমরা সত্যিকার অর্থে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসনের অধীন ছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকার ছিল নিবর্তনমূলক। সেখান থেকে আমরা যে মধ্যপন্থায় এসেছি, সেটাও বলা যাবে না।
বর্তমান সরকারও কোনো বিপ্লবী সরকার নয়। তারা সীমিত আকারের কিছু সংস্কারের কথা বলছে। সরকার মোটামুটি রক্ষণশীল পথে এগোচ্ছে। বিশ্বব্যাংক–আইএমএফের পরামর্শ মেনে চলছে। বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করছে।
অন্যদিকে সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্মীয় দলগুলোর প্রভাব বেড়েছে। এটা ঠিক যে ডান–বাম–মধ্যপন্থী সবাই একত্র হয়েছিল বলেই স্বৈরাচারী সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের পাশাপাশি মাদ্রাসার ছাত্ররাও আন্দোলনে অংশ নিয়েছে; ইসলামি দল বা সংগঠনগুলোরও বড় ভূমিকা ছিল। এর একটা প্রভাব রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে পড়বে, এটা খুবই স্বাভাবিক।
তবে তাদের সব কথা ও কাজ যে সঠিক বা গ্রহণযোগ্য, তেমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নারীদের, বিশেষ করে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে যেভাবে বিষোদ্গার করা হলো, সেটা আমাদের আতঙ্কিত করেছে। তবে তাদের এসব বক্তব্য বৃহত্তর জনগণ গ্রহণ করেনি বলেই আমার ধারণা। এরপরও ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতিটা নানাভাবে সামনে আসছে।
সংস্কারের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার অনেকগুলো কমিশন গঠন করেছে। সংস্কারের ব্যাপারে আপনি কতটা আশাবাদী?
স্বপন আদনান: বিভিন্ন কমিশনের মাধ্যমে যেসব সুপারিশ এসেছে, সেগুলো প্রয়োজনীয় বলে মনে করি। এগুলো কোনো বিপ্লবী চিন্তা না হলেও গঠনমূলক। এগুলোর বাস্তবায়ন হবে কি না, সেটা নির্ভর করছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের সরকারের ওপর।
আপনি বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজ নিয়ে কাজ করেছেন। গ্রামবাংলার রূপান্তর: সমাজ, অর্থনীতি ও গণআন্দোলন নামে আপনার একটি গবেষণামূলক বইও আছে। গ্রামীণ সমাজে এই অভ্যুত্থানের ঢেউ বা প্রভাব কতটা পড়েছে বলে মনে করেন?
স্বপন আদনান: আমি গত এপ্রিল মাসে উত্তরবঙ্গের একটি অঞ্চলে গিয়েছিলাম; সেখানকার আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অনেক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করেছি। রাজনীতির বাইরেও গ্রামীণ সমাজে যাঁরা নেতৃস্থানীয় মানুষ, তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তাঁদের কথাবার্তায় মনে হয়েছে, শহরে যেমন আন্দোলন হয়েছে, গ্রামে তা হয়নি।
তবে ৫ আগস্টের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানরা পালিয়েছেন। এটা কিন্তু আগে কখনো হয়নি। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ ছিল। গ্রামে অনেক আওয়ামী লীগ নেতার ঘরবাড়িতে হামলা হয়েছে, আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এগুলোর সব হয়তো রাজনৈতিক কারণে হয়নি, ব্যক্তিগত ক্ষোভের কারণেও হতে পারে।
আরেকটি বিষয় দেখলাম, গ্রামে যাঁরা ধনিক শ্রেণি—মাতব্বর, জোতদার, তাঁরা কিন্তু পালাননি। তাঁদের মধ্যে আওয়ামী লীগ–বিএনপির সমর্থকও আছেন। তাঁদের প্রত্যেকের প্রভাববলয় আছে। গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতাকাঠামো যেখানে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত ছিল, সেখানে পরিবর্তন হয়েছে, অন্য ক্ষেত্রে তা হয়নি।
আপনি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গবেষণা করেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু ও মিয়ানমার সীমান্তে বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা নিয়ে বাংলাদেশে এখন অনেক কথাবার্তা হচ্ছে। এগুলো আপনি কীভাবে দেখছেন?
স্বপন আদনান: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য, যেটাকে আমরা সাধারণত আরাকান বলি, সেখানে রোহিঙ্গারা কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, তারা সংখ্যালঘু। রাখাইনের বৌদ্ধরা হলো সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে একসময় সম্প্রীতির সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে একটি ভয়াবহ দাঙ্গা হয়। সেই সময় বহু রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যা করা হয়, লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে আটক করা হয়।
এরপর রোহিঙ্গাদের মধ্যে একধরনের প্রতিরোধ দেখা যায়। বেশ কিছু সশস্ত্র সংগঠনও তৈরি হয়। এর মধ্যে একটি হলো আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি)। ২০১৬ সালে আরসা পুলিশের একটি তল্লাশিচৌকিতে হামলা করে। এরপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সেখানে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আসে, অভিযান চালায় এবং একধরনের যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়। এর ফলে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়।
তবে আরসার হামলা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর জন্য ছিল একটা অজুহাতমাত্র, তারা আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছিল। এর একটি বড় কারণ, রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের প্রস্তাবিত ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এই কার্ড নিলে রোহিঙ্গাদের স্বীকার করে নিতে হতো যে তারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়।
রোহিঙ্গারা এই কার্ড নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে একধরনের নীরব প্রতিবাদ জানায়। এটা মিয়ানমারের জান্তা সরকারকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। তারা যে শুধু রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছে বা ক্যাম্পে আটকে রেখেছে তা–ই নয়, রোহিঙ্গাদের গ্রাম, বাড়িঘর—সব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। এর ফলে রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফেরত গেলেও তারা তাদের বসতভূমি বা জায়গাজমি ফেরত পাবে—এমন সুযোগ নেই।
গত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং একই সঙ্গে রাখাইনের পরিস্থিতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বামারদের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষেরা সশস্ত্র সংগ্রাম করছে। এর মধ্যে রাখাইনের বৌদ্ধরাও রয়েছে। তারাই হলো আরাকান আর্মি।
আরাকান আর্মি জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইরত থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের সদস্য। এখানে যেটা গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো, চীন একই সঙ্গে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মি—উভয় পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। কারণ, রাখাইনে চীনের অনেক ধরনের অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইন্দো–প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি নীতিতে এ অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি ও শক্তিবৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে। এ ছাড়া ভারতও সেখানে নানাভাবে যুক্ত হয়েছে। এর ফলে রাখাইনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অঞ্চল ভূরাজনীতির একটি হটস্পট হয়ে উঠেছে।
মানবিক করিডর বা চ্যানেল নিয়ে অনেক কথাবার্তা শোনা যাচ্ছে। এটার তাৎপর্য কী?
স্বপন আদনান: করিডর বা চ্যানেলের বিষয়টা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। বলা হচ্ছে, জাতিসংঘ ত্রাণসামগ্রী দেবে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। একটা বিষয় হলো, এই ত্রাণসামগ্রী বাংলাদেশকে যুক্ত করেও দেওয়া যেত। তাহলে বাংলাদেশকে কেন যুক্ত করা হলো, তার একটি যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দরকার। এ ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি বলেই নানা রকম আশঙ্কা ও গুজব তৈরি হয়েছে।
এ রকম আশঙ্কা বা গুজব তৈরি হওয়ার একটি কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি স্পষ্টতই চীনবিরোধী। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই স্ট্র্যাটেজি বা পরিকল্পনার কোনো অংশ হয়েছে কি না, তা আমাদের জানা নেই। তবে এ রকম কোনো পরিকল্পনার অংশ হওয়ার কোনো বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ একটি ছোট রাষ্ট্র। তার ওপর এখন দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়েও অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তা ছাড়া ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে, তাতে চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমাদের খুবই প্রয়োজন। এ রকম অবস্থায় কোনো অ্যাডভেঞ্চারের অংশ হওয়া বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ও বড় ধরনের বিপদের কারণ হতে পারে।