আপনি একসময় ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন। গত বছরের আগস্টে সেনাবাহিনী যে ভূমিকা রেখেছে, তাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
মাহফুজুর রহমান: দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বৃহত্তর অংশ সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। আগস্ট তার সাক্ষী। সেনাবাহিনীর কমান্ড চেইন, বাহিনীর বৃহত্তর অংশ ও বৃহত্তর ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার প্রতি সংবেদনশীলতা প্রদর্শন ও প্রতিরক্ষা নীতিনির্দেশনা অনুযায়ী জনমুখী সশস্ত্র বাহিনীর মর্ম অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সাধুবাদ জানাই। এ প্রসঙ্গে বলি, ক্ষুদ্র একটা অংশের অতীত অপকর্ম প্রতিরোধের জন্য সামরিক বাহিনীকেও সংস্কারের আওতায় আনা প্রয়োজন, যাতে বাহিনীকে ভবিষ্যতে কেউ ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীও মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সমাজে উদ্বেগ আছে। এ কাজে সশস্ত্র বাহিনী সফল হচ্ছে না বলে কি মনে করেন?
মাহফুজুর রহমান: অতীতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা হলে চোখে পড়ার মতো উন্নতি হতো। অভ্যুত্থানের পর সশস্ত্র বাহিনী মাঠে থাকার পরও সে রকম স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি ফিরে আসেনি বলে উদ্বেগের বিষয়টি উঠে এসেছে। সশস্ত্র বাহিনী অতীতে বেসামরিক প্রশাসনের সহায়ক শক্তি হিসেবে মাঠে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি দেখাতে সক্ষম হতো। বর্তমানে পুলিশ বাহিনী, আনসার বাহিনী এখনো পুরো মাত্রায় কার্যকর হতে পারেনি। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে অপরাধীরা অপরাধের মাত্রা বৃদ্ধি করেছে।
সেনাবাহিনী তাদের নিজস্ব দায়িত্বের পর ৩০ হাজারের মতো জনবল মাঠে মোতায়েন করতে সক্ষম। দুই লাখ পুলিশের কার্যকারিতা ৩০ হাজার দিয়ে পূরণ কষ্টসাধ্য। গুরুতর অপরাধী বা দাগি অপরাধীদের শনাক্ত ও অপরাধের আগেই তাদের পাকড়াও করার ক্ষেত্রে পুলিশ ও র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। মাঠে তারাও পুরো মাত্রায় নেই। আগে এ ধরনের মোতায়েনে ডিজিএফআই ও এনএসআই থেকে তথ্য সহায়তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাওয়া যেত। খুব সম্ভবত তারা এখন রক্ষণশীলতা অবলম্বন করছে। তারা ব্যাকফুটে আছে। সশস্ত্র বাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা ব্যবহারের বিষয়েও সম্ভবত রক্ষণশীলতা অবলম্বন করছে, যেন এই ক্ষমতার ভুল প্রয়োগ না হয়। এত সব সীমাবদ্ধতায় সন্তুষ্টি লেভেলে ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়া স্বাভাবিক।
আইনশৃঙ্খলা ভালো না থাকলে দেশের অর্থনীতিতেও নেতিবাচক ছাপ পড়ে। এই দুই সংকট সামাল দিতে করণীয় কী?
মাহফুজুর রহমান: অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলার পরিসর আরও বড়। অর্থনীতি সব সময় অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি দ্বারা প্রভাবিত। আইনশৃঙ্খলাও কেবল আর অভ্যন্তরীণ বিষয় নেই।
এ সময়ে করণীয় হলো, প্রথমত, দেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত সবার সমঝোতা। সরকারপ্রধানকেই ‘ইউনিটি অব কমান্ড’ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদকে কার্যকর করতে হবে। বর্তমান সরকারের ধরন ও অবস্থা বিবেচনা করে কনসালটেটিভ ডিসিশন মেকিং প্রসেস অনুসরণ করা উচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সমঝোতা, সমন্বয় ও সহযোগিতা জরুরি। রপ্তানিমুখী শিল্প ও সংস্থাগুলোকে শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা জরুরি। সেখানে বিশৃঙ্খলা কঠোরভাবে দমন করা উচিত।
আমরা একটা নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে আছি। আমাদের প্রতিপক্ষ অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তথ্যযুদ্ধ চালাচ্ছে। যা আমাদের অস্থিতিশীল করছে। সত্য ও সততা দিয়ে আমাদের পাল্টা ভাষ্য তুলে ধরতে হবে। আমরা যদি দেশ পুনর্গঠন ও বিনির্মাণে ব্যর্থ হই, তা যাদের কারণে হোক, ভয়াবহ পরিণতি আমাদের সবার জন্য অপেক্ষা করছে।
আপনি ভূরাজনীতি বিষয়েও একজন বিশেষজ্ঞ। আপনার কি মনে হয় বাংলাদেশের চলমান অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের সঙ্গে ভূরাজনীতির কোনো সংযোগ আছে?
মাহফুজুর রহমান: দেশের অভ্যন্তরীণ টানাপোড়েনের সঙ্গে ভূরাজনীতির সংযোগ অমূলক নয়। ভারত মহাসাগর ২১ শতকের জনমিতিক ও কৌশলগত এক ভরকেন্দ্র। ভারত মহাসাগর, ভারত ভূখণ্ড দিয়ে দুই ভাগে বিভক্ত। যার একটা আরব সাগর, অন্যটা বঙ্গোপসাগর। আরব সাগরের মাথায় ইরান ও পাকিস্তান। তারা স্বস্তিতে নেই। বঙ্গোপসাগরের মাথায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। আমরাও স্বস্তিতে নেই। এসব কাকতালীয় নয়।
কোয়াড (আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত) ও আওকাস (অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও আমেরিকা) জোট চীনকে পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে বেঁধে রাখতে চাইছে। আর চীন ‘বেল্ট ও রোড’ উদ্যোগের মাধ্যমে (বিআরআই) মিয়ানমার ও পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ চীনের জ্বালানি করিডরের (মিয়ানমার-চীন) বাফার আর ভারতের নিরাপত্তা প্রভাবিত অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। আমেরিকা ইন্দো-প্যাসিফিক আইডিয়ার দ্বারা বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ ২১ শতকের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার অংশ হয়ে গেছে।
ছোট দেশগুলোকে বাগে আনতে আঞ্চলিক বা বিশ্ব শক্তিরা তিনটা পরিস্থিতি তৈরি করে; নিরাপত্তা উদ্বেগ, গণতান্ত্রিক পরিবেশের সংকট ও অস্থিরতা। সম্ভবত বাংলাদেশ সেই পরিস্থিতির শিকার।
বাংলাদেশ সম্প্রতি মিয়ানমারের আরাকানে জাতিসংঘকে মানবিক করিডর দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনার কথা জানিয়েছে। এটা কীভাবে হতে পারে বা হওয়া কতটা সঠিক বলে আপনার অভিমত?
মাহফুজুর রহমান: ‘মানবিক করিডর’ শব্দ আমাদের কাছে একটা নেগেটিভ আইডিয়া হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে। আমি মনে করি, এর পজিটিভ দিকও শক্তিশালী হতে পারে, যদি আমরা বিচক্ষণতার সঙ্গে দর-কষাকষি করতে পারি।
আপনি প্রতিবেশীর দুঃখ-বেদনার সময় যদি উদাসীন থাকেন, তার আনন্দ ও সুখের সময় সে আপনাকে মনে রাখবে না। তবে সেই মানবিক সাহায্য হতে হবে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে ও বাংলাদেশের পরিকল্পনায়, শুধু জাতিসংঘের সহায়তায়। প্রশ্ন হলো, আরাকানবাসী কোন স্বার্থে আপনার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা বা আপনার মাদক সমস্যা, মানব পাচার, অস্ত্র চোরাচালান ইত্যাদি অপ্রচলিত নিরাপত্তা সমস্যা নিয়ে কথা বলবে?
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াজনিত সমস্যার সমাধানে আপনার তরফ থেকে কোনো প্রস্তাব আছে কি না?
মাহফুজুর রহমান: সমস্যা দুই ধরনের। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ফলে সমস্যা এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়াসংক্রান্ত সমস্যা।
সমাধানে ত্রিমাত্রিক কার্যক্রম প্রয়োজন। প্রথমত, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করা; শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। লিডারশিপ গড়ে তোলা।
আমেরিকা রোহিঙ্গাদের নির্যাতনকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তার অধীনে কিছু সুবিধা আছে। সেগুলো পেতে সাহায্য করা।
ক্যাম্পের নিরাপত্তা জোরদার করা। আরাকান থেকে আর যেন রোহিঙ্গা বিতাড়ন করা না হয়, সে জন্য কঠোর অবস্থান ও ব্যবস্থা নেওয়া। এ ছাড়া রাখাইন সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা তৈরি করাও একটা কাজ। এ কাজে আমরা বাংলাদেশের রাখাইন ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।
এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে সমঝোতা ও সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট থাকা। এ কাজে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম দেশগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলা ও সমস্যা সমাধানে তাদের সংশ্লিষ্ট রাখা।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোহিঙ্গা ইস্যুকে সব সময় জীবিত রাখা এবং তিন দেশের জংশন এলাকায় সমন্বিত অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, যাতে সংঘাতের সংস্কৃতি থেকে ওই এলাকার জনগণ বের হয়ে আসতে পারে।
বাংলাদেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে ভারতের দিক থেকে একধরনের শীতল এবং কখনো কখনো আক্রমণাত্মক আচরণ দেখা যাচ্ছে। এটা কী তাদের দিক থেকে কোনো বিশেষ বার্তা?
মাহফুজুর রহমান: ভারতকে একটা জাতির চেয়েও একটা সভ্যতা বলাই সঠিক হবে। ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে যখন হত্যা করা হয়, তখনই তাদের শাসকগোষ্ঠী সেটা ঢাকার রাজনৈতিক অবাধ্যতা হিসেবে দেখেছিল। তার পরিণতি আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখেছি। শেখ হাসিনার বিতাড়নও তাদের কাছে রাজনৈতিক অবাধ্যতা ও অপমানজনক হিসেবে পরিগণিত হয়েছে।
আঞ্চলিক শক্তির কিছু ইগো থাকে, সেই লাইন অতিক্রম করলে খেয়ালি আচরণ করে। এর সঙ্গে ভারতের বিদেশনীতি আমাদের বুঝতে হবে কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র দ্বারা প্রভাবিত। তাদের সমাজের মানস গঠনও বুঝতে হবে, যা জাতি ও বর্ণ দ্বারা প্রভাবিত। বাংলাদেশ আর বেলজিয়ামের সঙ্গে ভারত একই রকম ব্যবহার করবে না, যদিও দুটিই স্বাধীন দেশ। আর বুঝতে হবে বর্তমানে কারা ক্ষমতায় আছে, তাদের। বাংলাদেশ যেন চীনের দিকে মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকে না পড়ে, দিল্লি ঢাকাকে সেই সতর্কবার্তা দিচ্ছে।
বাংলাদেশের করণীয় হচ্ছে বেইজিং ও দিল্লির সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে চলা আর দুই আঞ্চলিক শক্তির রেড লাইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা। এসবের জন্য প্রয়োজন প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ভারত ও চায়না ডেস্ক এবং ভারত ও চায়নাবিশেষজ্ঞ রাখা। আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে ম্যানেজ করবে মেধাবী জনবল, যারা জাতীয় স্বার্থটাও বুঝবে।
ভারতের পুশ ইন কর্মসূচি কি আরও বাড়তি সামরিক চেহারা নিয়ে হাজির হতে পারে বলে মনে করেন?
মাহফুজুর রহমান: ভারতের নিরাপত্তা বিবেচনা শুধু তাদের রাজনৈতিক বর্ডারের সঙ্গে সীমাবদ্ধ নয়। বাংলাদেশ সেই নিরাপত্তাবলয়ের অংশ। ভারতের মূল চাওয়া (বটম লাইন) বাংলাদেশ যেন সম্পূর্ণভাবে বেইজিং এর প্রভাবে চলে না যায়। পুশ ইন কর্মসূচি বাংলাদেশকে চাপে রাখার অনেক কর্মসূচির একটি। বাংলাদেশের ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে সহিংসতার মাত্রা কমবেশি হতে পারে। একটা বিষয় বোঝা দরকার, বাংলাদেশ চীনের উন্নয়ন সহযোগী, কৌশলগত সহযোগী নয়। পাকিস্তান চীনের কৌশলগত সহযোগী। ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বে শেষোক্ত দেশের প্রতি চীনের অবস্থান ও সমর্থন দেখেছি আমরা। বাংলাদেশ-ভারত দ্বন্দ্বে জড়ালে বাংলাদেশ তেমন অবস্থানে চীনকে পাবে না।
বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ভেতর সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কেও টানাপোড়েনের আলামত দেখছি আমরা। এটাকে আপনি কি সাময়িক বলবেন?
মাহফুজুর রহমান: বাংলাদেশের আপামর জনগণ ও সামরিক বাহিনীর মাঝে আস্থা ও নির্ভরতার জায়গায় কোনো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। তবে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক যদি মোটাদাগে সমাজের অসামরিক প্রশাসনের সঙ্গে সামরিক প্রশাসনের সম্পর্ক বুঝি, সেখানে সাধারণভাবে সীমিত সম্পর্ক বা সমন্বয়ের অভাব বা দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক অনুমিত হয়েছে, যদিও অফিশিয়ালি দুই পক্ষ তেমনটা স্বীকার করেনি। আমি মনে করি, এটা সাময়িক। দুই প্রশাসনেরই উদ্দেশ্য গণতান্ত্রিক উত্তরণ। তবে সমাজে যেহেতু এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, সে জন্য দুই প্রশাসনের দিক থেকে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করা দরকার।
সামরিক বাহিনীসমূহের চাওয়া যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যারাকে ফিরে যাওয়া আর তাদের প্রাথমিক দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত করা ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী ক্ষমতার ব্যাপারে আগ্রহ কমেছে, এটা তৃতীয় বিশ্বের গণতন্ত্রমুখী একটা রাষ্ট্রের জন্য ইতিবাচক।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সংস্কার প্রশ্নে অনেক কথা হচ্ছে এখন। এখানে সামরিক প্রশাসনের কোনো চাওয়া বা মতামত কি অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আপনি অনুমান করতে পারেন?
মাহফুজুর রহমান: সংস্কার প্রশ্নে সামরিক বাহিনীর অফিশিয়াল অবস্থান কী, সেটা বলা অনুমাননির্ভর হবে। ওই দিকে না গিয়ে বরং বলি অবসরপ্রাপ্ত কমিউনিটি কী ভাবছে। সাধারণভাবে দেশের অপরাপর জনগণের মতো আমরাও মনে করি, ন্যূনতম কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার জরুরি। সংস্কার ও নির্বাচনের প্রস্তুতি পাশাপাশি চলতে পারে। কোনো রূপ সংস্কার ছাড়া নির্বাচনে গেলে আমরা নির্বাচিত সরকার পাব কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক প্রাপ্য সংস্কার পাব কি না, জানি না।
আর ভবিষ্যতে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যেন সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য নিরাপত্তা সেক্টর সংস্কারও অত্যন্ত জরুরি। সেগুলো নিয়ে কেউ কথা বলছে না।
ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সিভিল–মিলিটারি সম্পর্ক কেমন হওয়া দরকার বলে মনে করছেন?
মাহফুজুর রহমান: পাকিস্তান ও মিয়ানমারের মতো দেশে আসলে সামরিক বাহিনী দেশকে নিয়ন্ত্রণ করে। মোদ্দাকথা, সেখানে গণতান্ত্রিক ঘাটতি আছে। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বৃহৎ শক্তি দ্বারা এ–জাতীয় ব্যবস্থার দেশকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। পক্ষান্তরে ভারতের সামরিক বাহিনী আছে গণতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণে। এমন ব্যবস্থায় বৃহৎ শক্তির খবরদারি সহজ নয়। সেই আলোকে আমি মনে করি, বাংলাদেশে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক এমন হবে, যেখানে মিলিটারি রাজনৈতিক দলের বা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নয় বরং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে।
ইদানীং নির্বাচন ও সংস্কার নিয়ে দেশে অনেক কথা হচ্ছে। এ দুইয়ের সমন্বয় ও তার ভিত্তিতে সরকারের আগামী পদক্ষেপ কী রকম হওয়া উচিত?
মাহফুজুর রহমান: আগে বলেছি, সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার ও নির্বাচন প্রস্তুতি পাশাপাশি চলতে পারে। সরকার সব দলের সঙ্গে আলাপ করে সংস্কারের অগ্রাধিকার তালিকা ও নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে পারে। কোন বিষয়ের সংস্কার নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার আগে, কোন সংস্কার নির্বাচন প্রস্তুতির পাশাপাশি চলমান থাকবে, আর কোন সংস্কার নির্বাচন হওয়ার পরও নির্বাচিত সরকার করবে, তেমন তালিকা দেওয়া যেতে পারে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
মাহফুজুর রহমান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।