ডেঙ্গু পরিস্থিতি এবার আরও ভয়াবহ হতে পারে

ড. কবিরুল বাশার। কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক। মশা বিষয়ে জাপানের কানাজোয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছেন। মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করেছেন। আসন্ন বর্ষায় ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব কেমন হতে পারে, কীভাবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়, গত বছরের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে সতর্কতা ও আগাম প্রস্তুতির বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাফসান গালিব

ড. কবিরুল বাশার
প্রথম আলো:

সামনেই বর্ষাকাল। তাপপ্রবাহ শেষে টানা কয়েক দিন বৃষ্টিও হলো। আবারও ডেঙ্গুর বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। গতবারের অভিজ্ঞতা থেকে এবারের ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইছি। কোনো পূর্বাভাস দেওয়া যায় কি না?

কবিরুল বাশার: মশা প্রজননের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা যদি ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে হয়, তখন যেকোনো মশার প্রজনন কমে যায়। তাপপ্রবাহে মশার প্রজনন কমলেও বৃষ্টিপাত হলেই মশার প্রজনন বাড়তে শুরু করবে। আমাদের দেশে সাধারণত জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর—এই কয়েক মাস ডেঙ্গুর জন্য উচ্চ ঝুঁকি থাকে। এ সময়টাতে বৃষ্টি হয়, মশার প্রজননের জন্যও তাপমাত্রা উপযুক্ত থাকে। তাই আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতি পারছি, এ বছর বৃষ্টি শুরু হলে এডিস মশার প্রজনন বাড়তে থাকবে।

ইতিমধ্যে কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার পর মাঠপর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব আমরা লক্ষ করছি। কয়েকটি জেলায় কাজ করে আমরা এডিস ঘনত্ব গতবারের তুলনায় বেশি পেয়েছি। জেলাগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, চাঁদপুর, বরিশাল, বরগুনা, গাজীপুর ও ঢাকা। মশার ঘনত্ব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বৃষ্টি—এই কয়েক প্যারামিটারকে বিশ্লেষণ করে ফোরকাস্টিং মডেল থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ডেঙ্গু পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে এবার আরও বেশি ভয়াবহ হতে পারে, যদি সময়মতো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়।

প্রথম আলো:

সম্প্রতি দিল্লিতে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়াবিদদের একটি সম্মেলনে আশঙ্কা করা হয়েছে যে এবার বর্ষায় বাংলাদেশে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। তা যদি ঘটে, তাহলে ডেঙ্গুর পরিস্থিতি কেমন রূপ নিতে পারে?

কবিরুল বাশার: অতিবৃষ্টি এডিস মশার ঘনত্বকে কমিয়ে দেয়। তবে থেমে থেমে বৃষ্টি এডিস মশার ঘনত্বকে বাড়ায়। এখন বৃষ্টি কোন ধরনের হচ্ছে, সেটির ওপর নির্ভর করবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে এবং তা কী রূপ নিতে পারে। আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল এখন অনেক উন্নত ও আধুনিক হয়েছে। সেসব মডেল বিশ্লেষণ করে এবারের বৃষ্টিপাত কেমন হবে, সেই ধারণা থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া যেতে পারে।

প্রথম আলো:

একসময় ডেঙ্গু-আতঙ্ক শুধু ঢাকাকে কেন্দ্র করেই ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে গত বছর আমরা সারা দেশে ছড়িয়ে যেতে দেখলাম। এমনটি কেন হলো?

কবিরুল বাশার: অপরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাবের বড় একটি সম্পর্ক রয়েছে। ঢাকা সে কারণে ‘ডেঙ্গুর শহর’ হয়ে উঠেছে। যেটি বিশ্বে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা আরও অন্যান্য শহরের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে। এখন ঢাকা শহরের মতো অপরিকল্পিত নগরায়ণের প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যান্য শহর, জেলা, উপজেলা শহরগুলোয়ও। এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অপরিকল্পিত নগরায়ণ আমরা দেখতে পাচ্ছি। গত বছর দেশের ৬৪টি জেলাতেই এমনকি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমরা ডেঙ্গু বিস্তার লাভ করতে দেখেছি।

পানির সরবরাহ নিশ্চিত না করে যেভাবে জেলা-উপজেলাগুলোয় নগরায়ণ ঘটছে, তা ডেঙ্গুর বিস্তৃতি ঘটাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শহরে আমরা দেখেছি, নগরায়ণ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পানি সরবরাহ না থাকায় মানুষ বাসাবাড়িতে ড্রামে বালতি বা অন্যান্য পাত্রে পানি জমিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছে এবং সেখানে এডিস মশার প্রজনন ঘটছে। যার কারণে ডেঙ্গু এখন আর শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক নেই, সেটি ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে।

প্রথম আলো:

গত বছর ডেঙ্গুর বড় একটি কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠেছিল কক্সবাজার। সেটি কেন? বিষয়টির কারণ অনুসন্ধান ও গবেষণায় কী উঠে এসেছে আসলে?

কবিরুল বাশার: গত বছরের শুরুর দিকেই আমি কক্সবাজার গিয়েছিলাম। সেখানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, এখানকার ডেঙ্গু পরিস্থিতি খুব খারাপ হতে পারে। বিষয়টি তখনই আমি নানা জায়গায় বলেছিও। পরে সেটিই আমরা দেখলাম। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সঙ্গে ঢাকাসহ দেশের যেসব জায়গায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব আছে, সেসবের যথেষ্ট যোগাযোগ আছে। রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে সরকারি-বেসরকারি অনেক মানুষ কাজ করেন, যাঁরা এসব শহর থেকে সেখানে যান এবং ক্যাম্প থেকে ঢাকাসহ এসব শহরে আসেনও।

যাহোক, কোনো না কোনোভাবে ডেঙ্গু রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঢুকেছে। শরণার্থীশিবিরেও আমরা একই জিনিস দেখেছি, যা জেলা-উপজেলার ক্ষেত্রে ঘটেছে। শরণার্থীশিবিরেও পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নেই। ফলে লাখ লাখ মানুষের চাহিদা মেটানোর জন্য সেখানেও পানি জমিয়ে রাখা হয় ঘরে ঘরে। সেখান প্রচুর এডিস মশার প্রজনন ঘটছে, সেটিও আমরা লক্ষ করেছি। তো শরণার্থীশিবির থেকেই ডেঙ্গু বিস্তৃত হয় পর্যটননগরী কক্সবাজারে। এ বছরও কক্সবাজারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। আমরা আশঙ্কা করছি, এবারও শহরটিতে অনেক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতে পারেন। কারণ, কক্সবাজারে মশার ঘনত্ব আমরা এমন ইনডেক্সে পেয়েছি, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

প্রথম আলো:

ঢাকায় ডেঙ্গুর কারণ যে এডিস মশা, তার নাম এডিস ইজিপ্ট। এই মশা সম্পর্কে জানতে চাই। গোটা দেশেই একই ধরনের মশাই কি ডেঙ্গুর কারণ?

কবিরুল বাশার: শুধু ঢাকায় নয়, সারা পৃথিবীতেই এডিস ইজিপ্ট মশাই ডেঙ্গুর প্রধান বাহক। ধারণা করা হয়, ৯৫ শতাংশ ডেঙ্গুর কারণ এ মশা। এটিকে শহর বা নগরের মশা বলা হয়। ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য আরেকটি মশা আছে এশিয়ান টাইগার মশা। এই মশা গ্রামাঞ্চলে যেখানে গাছগাছালি বা ঝোপঝাড় বেশি, সেখানে হয়। এটিকে বলা হয় গ্রামের মশা। গত বছর ডেঙ্গুপ্রবণ কিছু কিছু জেলা-উপজেলায় মাঠপর্যায়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখি, সেখানে এডিস ইজিপ্টের অস্তিত্ব আমরা পাইনি। এশিয়ান টাইগার মশা আমরা পেয়েছি। এখন আমাদের গবেষণা করে দেখতে হবে এশিয়ান টাইগার মশার ব্যাকটেরিয়াল ক্যাপাসিটি বেড়েছে কি না। যদি সেটি বেড়ে যায়, তাহলে এ মশাকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। কারণ, গ্রামাঞ্চলের গাছের কোটরে এ মশার প্রজনন বেশি হয়। এ মশা গ্রামাঞ্চলে ডেঙ্গু ছড়ানোর জন্য কতটা দায়ী এবং ভবিষ্যতে এটি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, তা দ্রুত গবেষণা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।

প্রথম আলো:

 ঢাকা শহরে মশা বেড়েছে, আপনাদের গবেষণাতেই তা দেখা গেছে। নগরবাসী মশার উপদ্রবে নাকাল। ঢাকার এক সিটি মেয়র তো যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে মশকনিধন কার্যক্রম দেখে বলেছিলেন, ঢাকায় তিনি মশা নিয়ে গবেষণার জন্য দ্রুত একটি ল্যাব স্থাপন করবেন। সেটি সম্পর্কে কিছু জানেন কি না?

কবিরুল বাশার: ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে বছরের কিছু সময়ে মশার উপদ্রব আমরা দেখি। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কিউরেক্স মশা বেড়ে যায়। তবে এখন মশার উপদ্রব তেমন একটা নেই। আর এডিস মশা খুব বেশি পরিমাণে থাকে না। অল্প পরিমাণে থাকে এবং এ অল্প মশাই ডেঙ্গু রোগের জন্য মারাত্মকভাবে ভূমিকা রাখে। মশার পরিমাণ বেশি বা কম, সেটি বিষয় নয়, ডেঙ্গু ভাইরাসপ্রাপ্ত হলে মশাটি তখন ভাইরাস ছড়াতে থাকে। এডিস মশা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের বাসাবাড়িতে থাকে। ফলে সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন থাকতে হবে।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্র সফর করে দেখেছেন যে সেখানে গবেষণা করে একেকটি জায়গায় মশার প্রজাতি, প্রজাতির ঘনত্ব ও প্রজাতিবৈচিত্র্যভেদে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে মশা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমেরিকার সফরে মশা নিয়ে এ ধরনের গবেষণার বিষয়টি অনুধাবন করেছেন। এরপর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছেন। আমরা ঢাকার উত্তর সিটির পাঁচটি স্থানে সেন্টিনাল সার্ভিল্যান্স সাইট তৈরি করে নিয়মিতভাবে মশা নিয়ে গবেষণা করছি। সাপ্তাহিকভাবে তথ্য-উপাত্ত আমরা উত্তর সিটিকে প্রদান করছি। দেশে মশা নিয়ন্ত্রণে এই প্রথম সম্পূর্ণ একটি সার্ভিল্যান্স প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে। আশা করি, এ গবেষণার তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা আরও গতিশীল করা যাবে। দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনেরও উচিত হবে মশা নিয়ে এ ধরনের গবেষণা কর্মসূচি চালু করা।

প্রথম আলো:

দেখা যাচ্ছে, ডেঙ্গুর ধরন পাল্টেছে। এডিস মশার চরিত্রও পরিবর্তন হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কী বলবেন?

কবিরুল বাশার: আগে বলা হতো, শুধু দিনের বেলায় এডিস মশা কামড়াত। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, এডিস মশা এখন দিনে ও রাতে উভয় সময়েই কামড়ায়। ফলে দুই সময়েই আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। এ ছাড়া আমরা জানতাম, এডিস মশা শুধু পরিষ্কার পানি থেকে জন্মায়, এটিও এখন আর সত্য নয়। গবেষণায় আমরা পেয়েছি, এডিস মশা নোংরা পানিতে এমনকি নালা-নর্দমায়ও এর প্রজনন হচ্ছে এবং আমরা তা প্রমাণও করেছি। বিষয়টি অবশ্যই ডেঙ্গু মোকাবিলা আরও কঠিনতর করে তুলবে। কারণ, শুধু পরিষ্কার পানি নয়, নোংরা পানিতে এডিস মশার প্রজনন নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে এখন।

প্রথম আলো:

কলকাতার তাপমাত্রা, জনসংখ্যা, অবকাঠামো অনেকটা ঢাকার কাছাকাছি। কলকাতা ডেঙ্গু মোকাবিলায় সফলতা দেখাতে পারলেও আমরা পারছি না কেন? কলকাতা থেকে আমাদের কী শেখার আছে?

কবিরুল বাশার: নিঃসন্দেহে আমাদের পার্শ্ববর্তী কলকাতা শহর দারুণভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে। এ মুহূর্তে আমি কলকাতায় আছি। তাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করছি, তাদের সঙ্গে কথা বলছি, দেখছি, বোঝার চেষ্টা করছি। তারা সুন্দর একটি মডেল তৈরি করেছে। এখানে পৌর করপোরেশনের লোকেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করে। সারা বছর ধরে তারা মশা নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিতে মনোযোগ দিয়েছে। ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরগুলোয় যেভাবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, সেভাবে আসলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। সুফল যে পাওয়া যাচ্ছে না, তা আমরা দেখছিও। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য ইতিমধ্যে কেবি মডেল নামে আমি একটি প্রস্তাব স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ নানা জায়গায় দিয়েছি। সেই মডেল বাস্তবায়ন করা হলে কলকাতার মতো আমরাও সুফল পেতে পারি।

প্রথম আলো:

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিটি মেয়র বা সরকারের উদ্যোগে আমরা শুধু নানা কথার ফুলঝুরি দেখি। আসলে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আসলে সমস্যাটা কোথায়?

কবিরুল বাশার: মশা বা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে যে কার্যক্রমগুলো হচ্ছে, সেসবের সঠিক মূল্যায়ন দরকার আছে। যে কাজগুলো করা হচ্ছে, সেসবের সুফল কেন আসছে না, সেটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন। প্রক্রিয়ায় কি তাহলে কোনো ঘাটতি থেকে যাচ্ছে? মূল্যায়নের মাধ্যমে তাহলে সেই কার্যক্রমে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রয়োজন হলে মনিটরিং ও মূল্যায়নের বিষয়টি তৃতীয় কোনো পক্ষের মাধ্যমেও করানো যেতে পারে। সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জোরালো সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া ডেঙ্গু মোকাবিলা সম্ভব নয়।

প্রথম আলো:

কিন্তু মানুষকে বা নগরবাসীকে সচেতন করতে সিটি করপোরেশান কি যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে?

কবিরুল বাশার: অবশ্যই সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। আগে শুধু টেলিভিশন, রেডিও বা সংবাদপত্রের মাধ্যমে মানুষের প্রতি বার্তা পৌঁছানো যেত। এখন স্মার্টফোন ও ডিজিটাল যুগ, মানুষকে সচেতন করার নানা মাধ্যম তৈরি হয়েছে, যা আগের তুলনায় আরও দ্রুত ও কার্যকর।

এলাকায় এলাকায় গিয়ে সশরীর প্রচারণা চালানো ও কর্মসূচি পালন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সিটি করপোরেশনের উচিত এ ক্ষেত্রে পরিবেশ ও সামাজিক সংগঠন এবং তরুণসমাজকে যুক্ত করা। তবে নগরবাসীর এখানে করণীয় আছে। বাড়িতে বাড়িতে বা এলাকায় এলাকায় সবাই মিলে একযোগে কাজ করে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় এটিই এখন আমাদের করতে হবে। আমরা যদি নিজ নিজ বাড়ি ও বাড়ির আঙিনায় নিশ্চিত করতে পারি যে সেখানে ডেঙ্গুর বাহক মশার প্রজননক্ষেত্র নেই, তাহলে আমাদের পরিবার ডেঙ্গু থেকে মুক্ত থাকবে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নগরবাসীর করণীয় নিয়ে আমি একটি বই লিখেছি। বইটির একটি খসড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছেও পাঠানো হয়েছে। ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে বইটিতে। বইটি জনগণের কাছে গেলে তাঁরাও ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও ডেঙ্গুর বাহক মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

কবিরুল বাশার: আপনাকেও ধন্যবাদ।