সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মুজিবুল হকের সাক্ষাৎকার

বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘তুমি ফিরে এসেছ, আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম’

সিএসপি কর্মকর্তা মুজিবুল হক ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিরক্ষাসচিব। এর আগেও তিনি প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে অবসর নেন। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি তাঁর জীবনাবসান ঘটে। সাংবাদিকতার সূত্রেই তাঁর সঙ্গে একসময় ঘনিষ্ঠতা হয়। ২০০৭ সালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে মুজিবুল হক কিছু কথা বলেছিলেন। তার ভিত্তিতে  প্রথম আলোর পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হলো:

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

মুজিবুল হক
প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয় কখন? প্রথম দিকের স্মৃতি কি মনে আছে?

মুজিবুল হক: আমাদের ছাত্রাবস্থায় তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল দূরবর্তী। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় খালাস পেয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে এলেন, তখন আমি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের শিক্ষাসচিব। একদিন আমি তাঁকে টেলিফোন করলাম। তিনি বললেন, ‘মুজিবুল হক কেমন আছ?’ আমি বললাম, ‘ভালো আছি।’ এরপর জিজ্ঞেস করি, আপনি কেমন আছেন? তিনি বললেন, ‘ভালো আছি। ওরা আমাকে আটকে রাখতে পারেনি।’ আমি স্বরাষ্ট্রসচিব থাকাকালে মাঝেমধ্যে তাঁর নামে ওয়ারেন্ট যেত। আমি খুব বিব্রত হতাম।

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: উনসত্তরের আগের কোনো ঘটনা মনে পড়ে?

মুজিবুল হক: ষাটের দশকে চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন মার্কেটের জনসভায় তাঁর বক্তৃতা এখনো আমার মনে আছে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যেখানে যাই, মোনায়েম খান টিকটিকি লাগায়। বেশি টিকটিকি লাগাইয়ো না। বাউড়াইয়া (পিটিয়ে) সব ঠিক করে দেব।’ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অনেক আগে থেকে স্বাধিকার আন্দোলনে বাঙালি আমলা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। মামলায় তিন সিএসপি অফিসার আসামি ছিলেন— রুহুল কুদ্দুস,  শামসুর রহমান খান ও আহমেদ ফজলুর রহমান। বাঙালি কর্মকর্তারা এই মামলাকে বাঙালি দমনে সরকারের ষড়যন্ত্র বলে মনে করতেন। ’৬৬–তেই ছয় দফার আন্দোলন পরিচিতি পায়। এতে দেশের দুই অংশের বৈষম্য ও পূর্ব পাকিস্তানিদের ওপর শোষণের বিষয়টি সামনে আনায় শেখ সাহেব তখন তাঁদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা।

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে বের হওয়ার পূর্বাপর ঘটনা?

মুজিবুল হক: ১৯৬৯–এর গণ–অভ্যুত্থানের ঢেউ পশ্চিম পাকিস্তানেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন এবং ক্ষমতার দৃশ্যপটে আসেন ইয়াহিয়া খান। ১৯৭০ সালে নির্বাচনের সময় আমি প্রাদেশিক সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিব। নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব এসে পড়ে পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ওপর। আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধায়নে নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব ছিল আমাদের। পূর্বাঞ্চলের সামরিক আইন প্রশাসক ছিলেন লে. জেনারেল ইয়াকুব খান ও গভর্নর অ্যাডমিরাল এস এম আহসান। দুজনই ব্যতিক্রমী মানুষ ও বাঙালিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। দুজনই নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বললেন। সামরিক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আমার সঙ্গে লিয়াজোঁ করতেন তৎকালীন ব্রিগেডিয়ার সাইদ (যিনি অল্প দিনের মধ্যে মেজর জেনারেল হয়ে আইএসআইয়ের প্রধান হয়েছিলেন)।

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো বাধার মুখোমুখি হয়েছিলেন কি?

মুজিবুল হক: একটা কথা বলতে চাই, তখন স্বরাষ্ট্র বিভাগের সচিব হিসেবে পুলিশ ও সেনাবাহিনী থেকে পূর্ণ সহযোগিতা পেয়েছি, যে কারণে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পেরেছিলাম। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, ১৯৭০ সালের নির্বাচনটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে।
একটি ঘটনা আমার মনে আছে, নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা চলছিল, আমি মিন্টো রোডের বাসায় গভীর রাত পর্যন্ত টিভিতে তা শুনছিলাম। শুনতে শুনতে মনে হলো, আওয়ামী লীগ জিতে যাচ্ছে এবং এটি বড় ধরনের বিজয় হতে পারে। হঠাৎ আমার চিন্তা হলো, কেউ যদি শেখ সাহেবকে মেরে ফেলে। স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে আমারও তো একটা কর্তব্য আছে। ভোর ছয়টায় গভর্নরকে টেলিফোন করে ঘুম থেকে জাগালাম। আমি তাঁকে শঙ্কার কথা বললাম। তাঁর অনুমতি পেলাম তখনই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য। তিনি ঘুমকাতুরে কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘ইউ থিঙ্ক দা বেস্ট।’ তখনকার আইজিপি ছিলেন তসলিমউদ্দিন আহমদ। তাঁকেও ঘুম থেকে জাগালাম। বললাম, এখনই প্রটোকলের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি বললেন, ‘আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ তিনি শেখ সাহেবের সঙ্গে কথা বলতে বললেন, যাদের পাঠানো হবে, তাদের যেন বের করে না দেওয়া হয়। আমি তাঁর বাসায় ফোন করলাম। সেখানে সবাই জেগে আছেন। যিনি টেলিফোন ধরলেন, বললেন, ‘ধরুন।’ লাইনের ও মাথায় ছিলেন তাজউদ্দীন আহমদ। তিনি আমার  সুপরিচিত। বললেন, ‘নেতা একটু ব্যস্ত আছেন, আমাকে বলেন।’ আমি তাঁকে প্রটোকলের ব্যবস্থা করার কথা বললাম। এরপর তিনি বললেন, ‘ধরুন, আলাপ করে আসি।’ কিছুক্ষণ পর তাজউদ্দীন সাহেব আবার লাইনে এসে বললেন, ‘শেখ সাহেব বলেছেন, মুজিবুল হককে জানিয়ে দাও, ওর টিকটিকির লোকের আমার দরকার নেই। বাংলাদেশের জনতা আমাকে রক্ষা করবে।’

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: তারপর কি আপনারা প্রটোকল দেওয়ার চিন্তা বাদ দিলেন?

মুজিবুল হক: বাদ দিইনি। আমি তাজউদ্দীন সাহেবকে বললাম, আমাদের টিকটিকিরা সামনে আসবে না। তবে তারা চারপাশ থেকে কর্তব্য পালন করবে। তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, ‘ওসব উনি মানবেন না।’ এরপর আমি তসলিম সাহেবের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করলাম, পুলিশ বঙ্গবন্ধুর বাড়ির লেকের ওপারে ক্যাম্প বসিয়ে বাইনোকুলার চোখে লাগিয়ে বসে থাকবে। আর এদিকে গোয়েন্দা বাহিনীর লোকেরা দূর থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে।

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: একাত্তরের মার্চের ঘটনাবলি আপনাকে কতটা আলোড়িত করেছিল?

মুজিবুল হক: মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ইয়াকুব খান টিক্কা খানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। এরপর  ৮ মার্চ ভোরে একটি টেলিফোন পেলাম সকাল ১০–১১টার দিকে, নবম ডিভিশনের সদর দপ্তর থেকে। সেখানে একটি সভা হবে। বলা হলো, স্বরাষ্ট্রসচিব হিসেবে আমাকে উপস্থিত থাকতে হবে। গিয়ে দেখি চিফ সেক্রেটারি শফিউল আজম, আইজিপি তসলিম, ডিআইজি মেজবাহউদ্দিন আছেন। আমাকে নিয়ে চারজন বাঙালি। অন্যদিকে আছেন জেনারেল টিক্কা, ইয়াকুব, রাও ফরমান আলী, ব্রিগেডিয়ার সাইদসহ আরও দু–তিনজন উর্দি পরা কর্মকর্তা। টিক্কা খান সভাপতির চেয়ারে। আমি আন্দাজ করলাম, ক্ষমতা হস্তান্তর হয়ে গেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সচিবালয়ে লোকজন আসছে না কেন?’ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘বলুন হোম সেক্রিটারি।’ আমি বললাম, যে পরিবেশ বিরাজ করছে, তাতে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের পক্ষে নিরাপদে অফিসে আসা–যাওয়া সম্ভব নয়। টিক্কা খান চড়া স্বরে বললেন, ‘তাদের অনেকে আজিমপুর কলোনিতে থাকেন। আমি এক ফুট অন্তর সেনাসদস্য মোতায়েন করে দেব। তাহলে তো ভয় থাকবে না।’ আমি টিক্কা খানকে আগে কখনো দেখিনি।  ‘টেরর অব বেলুচিস্তান’ হিসেবে তিনি পরিচিতি ছিলেন। তাঁর কথার জবাবে আমি বললাম, স্যার, সেনা মোতায়েন করে যদি জবরদস্তি করে লোকজন আনাও যায়, অফিসের কাজ করা সম্ভব হবে না। এবার তিনি রাগতস্বরে বললেন, ‘তাহলে কী করে সচিবালয়কে কার্যকর করা যাবে?’ আমি বললাম, এর একমাত্র পথ শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে বললেন, ‘আমি কি একটি কার্যকর সরকারের স্বরাষ্ট্রসচিবের মুখে এই কথা শুনছি (ডু আই হিয়ার ইট ফ্রম দ্য হোম সেক্রেটারি অব আ ফাংশনিং গভর্নমেন্ট)? রাও ফরমান আলী বললেন, ‘জেন্টেলম্যান, চলুন, পাশের ঘরে গিয়ে চা খাই।’ সবাই উঠে সেখানে যেতে থাকলেন।

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: এরপর আপনি কী করলেন?

মুজিবুল হক: ২৫ মার্চে সেনা অভিযান ও গণহত্যার পর ২৭ মার্চ যখন কোনোরকমে সচিবালয় শুরু হলো, আমি অফিসে গেলাম। নিরালা সচিবালয়। সেখানে কর্নেল সাইদও ছিলেন। তাঁকে নির্বাচনের সময় থেকে চিনতাম। তিনি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার সাইদের সহযোগী। তিনি একদিন এসে বললেন, ‘স্যার, আপনার যদি কোনো সাহায্য দরকার হয় বলবেন, আমরা আপনাকে সাহায্য করব।’ এই ফাঁকে তাঁর কাছে জানতে চাইলাম, ‘শেখ মুজিবুর রহমান কোথায়? তিনি কেমন আছেন?’ কর্নেল সাইদ আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, ‘তিনি আমাদের হেফাজতে এবং নিরাপদ আছেন।’

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: এরপর আপনি পাকিস্তান চলে গেলেন কীভাবে?

মুজিবুল হক: সচিবালয়ে অনেক পদে পাকিস্তান থেকে লোক নিয়ে আসা হলো। আমার এক হিতাঙ্ক্ষী জানালেন, আপনার জীবন এখানে নিরাপদ নয়। পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি হয়ে যান। তাহলে হয়তো জীবনটা রক্ষা পাবে। আমি স্ত্রী-কন্যাকে নিয়ে করাচি চলে যাই। প্রথমে সেখানে ওএসডি ছিলাম। পরে আমাকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব করা হয়। এরপর বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করায় আমি চাকরিচ্যুত হলাম। এর আগে একটি ঘটনা ঘটে।
মার্চের শুরুতে টিক্কা খান গভর্নর হয়ে এলেও হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বি এ সিদ্দিকী তাঁকে শপথ পড়াননি। কিন্তু ৯ এপ্রিল গভর্নর হাউসে (বর্তমান বঙ্গভবন) তাঁর শপথ হয়। আমিও সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। চা পর্বের সময় তিনি এক কোনায় আমাকে ডেকে নিয়ে বলেন, ‘মি. হোম সেক্রেটারি, বিচারপতি সিদ্দিকী কি আমাকে শপথ করাননি? কীভাবে সরকার পরিচালিত হয়, সেটা মনে রাখবেন।’

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: এরপর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কখন যোগাযোগ হয়?

মুজিবুল হক: ১৯৭৩ সালে ওয়াজিরিস্তান ও আফগানিস্তানের দুর্গম পাহাড়ি পথে পালিয়ে দেশে এলাম। ১৭ মে আমি ঢাকায় আসি। পরদিনই সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। দেখামাত্র তিনি চেয়ার ছেড়ে ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘তুমি ফিরে এসেছ, আমি তোমার অপেক্ষায় ছিলাম।’ তিনি যেভাবে আমাকে গ্রহণ করলেন, তাতে হৃদয়ের উষ্ণতা অনুভব করলাম। তিনি নাকি সংস্থাপনসচিবকে বলেছিলেন, ‘চোরাই পথে হলেও এ কে এম আহসান ও মুজিবুল হককে ঢাকায় নিয়ে এসো। ওদের আমার দরকার।’

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: যোগ দিলেন কোন মন্ত্রণালয়ে?

মুজিবুল হক: আমি জানতে চাইলাম, ‘স্যার, আমাকে তো যোগদান করতে হবে।’ তিনি বললেন, ‘তুমি যে মন্ত্রণালয়ের সচিব হতে চাও, আমাকে বলো, ব্যবস্থা করব।’ আমি বললাম, ‘সেই ব্যবস্থা আমার নয়, আপনি দেশের প্রধানমন্ত্রী, আপনি যা বলবেন, তা-ই শিরোধার্য।’ এরপর তিনি বললেন, ‘কাল এসো।’ পরদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যেতেই  জানালেন, ‘বাংলাদেশে আর্মি, নৌ, বিমান বাহিনী পুরোপুরি সংগঠিত হয়নি। এখানেই তোমাকে প্রয়োজন। তুমি রাজি থাকলে প্রতিরক্ষাসচিব হিসেবে যোগ দাও।’ আমি বললাম, ‘আপনার হুকুমই শিরোধার্য।’ পরদিন আমার পদায়ন হয়ে গেল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে।

প্রশ্ন:

সোহরাব হাসান: বঙ্গবন্ধুই তো প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর সঙ্গে আপনার নিয়মিত দেখাসাক্ষাৎ হতো?

মুজিবুল হক: তাঁর সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দু–তিন দিন দেখা হতো। কেবল প্রতিরক্ষা নয়, অন্যান্য বিষয়েও আলোচনা হতো। আমি তাঁর স্নেহের কথা কখনো ভুলব না। প্রশাসন সম্পর্কে তাঁর যে ধারণা ছিল, তার চেয়ে রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ছিল অনেক বেশি। তিনি খুব সংবেদনশীল মানুষ ছিলেন। যাঁকে একবার আপন মনে করতেন, তাঁকে কখনো দূরে ঠেলে দিতেন না। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কী করে স্বাধীন দেশের উপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়ে উদ্‌গ্রীব ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তান প্রত্যাগত কর্মকর্তা ও জওয়ানরা ফিরে আসার পর সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব ও পরিধি বাড়ল, সেটি ছিল আমার জীবনের অত্যন্ত কর্মমুখর সময়। আর বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য ছিল খুবই আনন্দময়। সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তিনি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পালন করি। এরপর আমাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়।