আওয়ামী লীগ সরকার আবারও একটি একতরফা নির্বাচন করতে যাচ্ছে, আপনার মতামত কী?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: এখানে আমাদের মনে রাখা উচিত যে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আয়োজন করেনি। নির্বাচন কমিশন একটি স্বাধীন ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচনের আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দল অংশগ্রহণ করছে। তাই এটি একতরফা নির্বাচন নয়। এমনকি এবার দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধেও নির্বাচনে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ রাখা হয়েছে, যা নতুন একটি রাজনৈতিক দর্শন। এ উদ্যোগ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করবে এবং গণতান্ত্রিক ধারাকে আরও সুসংহত ও শক্তিশালী করবে।
বিএনপিকে ছাড়াই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট হতে যাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন, এই নির্বাচন জাতীয় বা আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা নিশ্চিতভাবেই দেশের ভেতরে ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করবে। সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনে হবে। এখন ডিজিটাল যুগ, কীভাবে ও কেমন নির্বাচন হচ্ছে, তা দেখার সুযোগ সবার রয়েছে। তা ছাড়া দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকও থাকবেন। তাই এই নির্বাচন অবশ্যই দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে।
বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, তা কীভাবে দেখছেন?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: বিএনপি যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, তা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বিএনপি যেমন একটি রাজনৈতিক দল, তেমনি কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলও রয়েছে। জনগণের কাছে জনপ্রিয়তা যাচাই, রাষ্ট্র ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে একটি রাজনৈতিক দলের নিজেদেরই দায়িত্ব নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। আমি মনে করি, বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত ছিল। নিবন্ধিত দলগুলোর অধিকাংশই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে।
২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অভিজ্ঞতা রয়েছে, তাতে কোন ভরসায় তারা নির্বাচনে অংশ নিত?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাঝপথে তারা সরে দাঁড়ায় এবং নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। চলে যায়। আমি মনে করি, বিএনপির এই সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ ভুল ছিল। ওই নির্বাচনে তাদের থাকা উচিত ছিল।
বিএনপির এক দফার আন্দোলন সম্পর্কে আপনার মত কী?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে এক দফার আন্দোলন করে আসছে। দিন-তারিখ দিয়ে সরকার পতনের আলটিমেটামও দিয়েছে। জনগণ এগুলো সমর্থন করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে চাপ অব্যাহত রেখেছে। সরকারের ওপর বা দেশের অর্থনীতির ওপর এর কতটা চাপ পড়তে পারে?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিল যে নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তখন স্পষ্টভাবে বলেছেন, নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হবে। এ বিষয়ে তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই চাপের কোনো বিষয় আসলে এখানে নেই। নির্বাচনের কারণে অর্থনীতির ওপর প্রভাব পড়বে—কথাটি ঠিক নয়। দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারও ওপর নির্ভরশীল নয়। অর্থনীতির ওপর এর কোনো প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না।
সরকার বিরোধী নেতা-কর্মীদের যে কায়দায় আটক করছে বা গায়েবি মামলার যে অভিযোগ, একজন আইনজীবী হিসেবে তা কীভাবে দেখছেন? পুলিশ বা বিচারপ্রক্রিয়া এখানে কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে?
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: প্রকৃতপক্ষে আইনের দৃষ্টিতে গায়েবি মামলা বলতে কিছু নেই। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালে জ্বলাও-পোড়াও, পেট্রলবোমা বিস্ফোরণ করে মানুষ হত্যা এবং সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জায়গায় অনেক মামলা হয়। অনেক আসামি তখন জামিন নিয়ে পলাতক হন। তাঁদের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, বিচার হচ্ছে। এবারও বিএনপি-জামায়াত আগের মতো জ্বালাও-পোড়াও করছে, সেসব মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এবারও তারা মানুষ হত্যা করেছে, পেট্রলবোমা মেরেছে, গাড়িতে আগুন দিয়েছে—এগুলো সবাই দেখেছে। এগুলো সরাসরি ফৌজদারি অপরাধ। তাই রাষ্ট্রের দায়িত্ব অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুততম সময়ে বিচার সম্পন্ন করা। এসব আসামিকে যদি গ্রেপ্তার না করা হয়, বিচারের মুখোমুখি না করা হয়, তাহলে পুলিশ বা বিচারপ্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হবে। একজন অপরাধ করবে, অপরাধের শাস্তি পাবে না—এটি তো কখনো হতে পারে না।
ধন্যবাদ।
মোমতাজ উদ্দিন ফকির: আপনাকেও ধন্যবাদ।