ছাত্রলীগের নেতিবাচক ভাবমূর্তির কারণ সংবাদমাধ্যম

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহসাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘাত, ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি, প্রশাসন ও ছাত্ররাজনীতির সীমারেখা, বিরোধী মত ও ছাত্রদলের সঙ্গে সহাবস্থান—এসব বিষয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রথম আলোর সঙ্গে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মনোজ দে

সাদ্দাম হোসেন

প্রশ্ন :

৭৫ বছরে পা রাখল ছাত্রলীগ। সামনে নির্বাচন। বেশ কঠিন সময়ে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব পেয়েছেন। চ্যালেঞ্জটাকে কীভাবে দেখছেন?

সাদ্দাম হোসেন: ছাত্রলীগ সময়ের চ্যালেঞ্জ অনুধাবন করতে পারে। অনেক ঐতিহ্যবাহী ছাত্রসংগঠনের প্রাসঙ্গিকতা কমে গেলেও ছাত্রলীগের আবেদন ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রশ্নে ছাত্র-জনতার মধ্যে অভূতপূর্ব ঐক্য তৈরি হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা তৈরি করেছি। প্রযুক্তির প্রবেশগম্যতাকে ব্যবহার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। অর্থনৈতিক এই রূপান্তরের জন্য শিক্ষাব্যবস্থায়ও রূপান্তর প্রয়োজন। সে জন্য ছাত্রলীগ স্মার্ট ক্যাম্পাস ও গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কাজ করতে চায়। এটিই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রশ্ন :

শিক্ষার্থীদের প্রত্যক্ষ ভোটে ডাকসুর সহসাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগে মনোনীত না হয়ে যদি নির্বাচিত সভাপতি হতেন, তাতে কি গণতান্ত্রিক চর্চা সমুন্নত থাকত না?

সাদ্দাম হোসেন: সরকার গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ তৈরি হয়, ক্যাম্পাস ডেমোক্রেসি যাতে প্রতিষ্ঠা পায়, সেই অঙ্গীকারও করেছে। এর প্রমাণ হলো, যে নির্বাচন কেউই দিতে চায় না, সেই ডাকসু নির্বাচন আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। ছাত্রলীগে কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব নির্বাচিত হচ্ছে। অন্যবারের মতো এবারেও কাউন্সিলররা মতৈক্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব অর্পণ করেন। আমরা মনে করি, এটা গণতান্ত্রিক অনুশীলনের অংশ।

প্রশ্ন :

কাউন্সিলে ভোটাভুটি তো হয়নি। ৭৫ বছরেও ছাত্রলীগে নেতৃত্ব নির্বাচনে কেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতি চালু করা গেল না?

সাদ্দাম হোসেন: গঠনতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। দেশে-বিদেশে অনেক সামাজিক গণতন্ত্রী দলের অনুশীলনেও দেখি, কখনো সাবজেক্ট কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, কখনো কাউন্সিলররা ভোটে যান, আবার আবার কখনো মতৈক্যের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচিত হয়। ছাত্রলীগের কাউন্সিলরদের মতামতের আলোকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি নানাভাবে তাঁর রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে, মতামত নিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এটি অবশ্যই একটি প্রকৃষ্ট প্রক্রিয়া।

প্রশ্ন :

অনেকে মনে করেন, জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি বা যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তাদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ছাত্ররাজনীতি তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। আপনি কী বলবেন?

সাদ্দাম হোসেন: বৈশ্বিক ছাত্র আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি দেখলেও দেখা যাবে, মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছাত্রসংগঠনের যূথবদ্ধতা রয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের আদর্শিক ও অনুভূতির সম্পর্ক। আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছাত্রলীগের লড়াই-সংগ্রাম ঐক্যবদ্ধ হলেও সাংগঠনিক স্বকীয়তা ও স্বাধীনতা বজায় রয়েছে।

প্রশ্ন :

চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, মাদক, কমিটি-বাণিজ্য, শিক্ষক লাঞ্ছনা, যৌন হয়রানি, শিক্ষার্থী নির্যাতন—এ রকম ঘটনায় প্রতিনিয়ত সংবাদমাধ্যমের নেতিবাচক শিরোনাম হয় ছাত্রলীগ। সংগঠনের এই নেতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?

সাদ্দাম হোসেন: আমরা এখন একটি পোস্টট্রুথ (সত্য-উত্তর) বিশ্বে বাস করছি। এখানে ঘটনা মুখ্য নয়, মুখ্য হচ্ছে মানুষের আবেগকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক ভাবনা পরিচালনা করা। আমরা যখন সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করি, শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াই, কল্যাণধর্মী চরিত্র ধারণ করি, সেগুলোর কিন্তু সংবাদমূল্য থাকে না। ছাত্রলীগের নেতিবাচক ভাবমূর্তির বড় কারণ সংবাদমাধ্যমের এই মনোভাব। সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা আমাদের ইতিবাচক কর্মকাণ্ডকে যদি ঘটনা না মনে করেন, তাহলে এ ধরনের রাজনৈতিক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এরপরও আমরা অস্বীকার করব না, ছাত্রলীগে নেতিবাচক ঘটনা একেবারে ঘটছে না।

প্রশ্ন :

অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা তো নিতে দেখি না...

সাদ্দাম হোসেন: ছাত্রলীগ যেহেতু বৃহত্তর ছাত্রসংগঠন, সে কারণে অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড থাকে। যারা মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন, বিশেষ করে যারা যুদ্ধাপরাধ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, তারা যখন সরাসরি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না, তখন ছাত্রলীগের ভেতরে একধরনের অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ নেতিবাচক ঘটনার সঙ্গে তারাই জড়িত। এটা অবশ্যই ব্যক্তির দায়; এই দায় সংগঠনের নয়।

প্রশ্ন :

নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে অনুপ্রবেশের কথা বলছেন। সংগঠনে তাহলে নেতা-কর্মী নির্বাচনের মাপকাঠি কী?

সাদ্দাম হোসেন: ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটছে—এটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

প্রশ্ন :

আপনি বলছেন ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। কিন্তু কেউ যখন অপকর্ম করছে, সাংগঠনিক পরিচয় নিয়েই তা করছে। নেতা-কর্মীদের অপকর্মের দায় না নিলে সংগঠনে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে কীভাবে?

সাদ্দাম হোসেন: নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ পৃষ্ঠপোষকতা করে না। কিন্তু অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে এতে অভিমান তৈরি হয়। এর কারণ হলো ছাত্রলীগের প্রতি তাদের তীব্র ভালোবাসা আছে। আমাদের সাংগঠনিক কাঠামো আরও আধুনিক, আরও স্মার্ট হওয়া প্রয়োজন। আমরা যদি সংগঠনকে আরও বেশি বিকেন্দ্রীকরণ করতে পারি এবং জবাবদিহিমূলক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে নেতিবাচক ঘটনা কমে আসবে। আমরা দায়ও নিতে পারব।

প্রশ্ন :

বিরোধী মত, বিশেষ করে ছাত্রদলের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অন্যান্য বিরোধী মত দমনের অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সভা, সমাবেশ, মতপ্রকাশের অধিকার সংবিধানই নিশ্চিত করেছে। অতীতে অনেক গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ভূমিকা পালনকারী ছাত্রলীগ কেন এ ভূমিকা নিয়েছে?

সাদ্দাম হোসেন: ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে শুভ প্রতিযোগিতা হোক, তা চায়। ছাত্রলীগ মনে করে, প্রতিস্পর্ধী স্বর যত তীব্র হোক না কেন, সেটিকে স্বাগত জানানো গণতন্ত্রের ধর্ম। কিন্তু একটা বিষয় হলো, ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে সামরিক স্বৈরশাসনকে বৈধতা দেওয়ার জন্য। আমরা মনে করি, ছাত্রদল আমাদের ঐতিহ্যবাহী প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর আওতাভুক্ত নয়। আরেকটি বিষয় হলো যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চাওয়া, তাদের পুনর্বাসনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল ছাত্রদল। এসব কারণেই ছাত্রদলকে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে স্বীকার করার প্রবণতা ছাত্রসমাজের মধ্যে নেই।

প্রশ্ন :

এটা কি শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, নাকি ছাত্রলীগের...

সাদ্দাম হোসেন: আমরা ছাত্রদলকে পরিশুদ্ধির আহ্বান জানাই। আমরা বলছি তো একটি সংগঠন যদি ইতিবাচক কাজের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মত প্রকাশ করে, তাহলে তাদের আমরা স্বাগত জানাই। আমরা গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই ছাত্রলীগকে বিজয়ী করতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সর্বশেষ ঘটনাগুলোয় আমরা দেখেছি, তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় এখন সেশনজটমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত। এই ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখার জন্য ছাত্রদলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ছাত্র-ঐক্য রয়েছে।

প্রশ্ন :

ছাত্রদলের সঙ্গে কি তাহলে সহাবস্থান করবে না ছাত্রলীগ?

সাদ্দাম হোসেন: আমাদের কাছে সংগঠন প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের মুখ্য প্রশ্ন হলো, সন্ত্রাসের সঙ্গে কি আমরা সহাবস্থান করব? বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে জাতীয় রাজনীতির এক্সটেনশন (সম্প্রসারণ) হিসেবে ব্যবহার করতে চায়, তাদের সঙ্গে সহাবস্থান করব? এসব প্রশ্নই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই ছাত্রদল ক্যাম্পাসগুলোয় জায়গা করে নিতে পারছে না।

প্রশ্ন :

গত কয়েক বছরে ছাত্রলীগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি খবরের শিরোনাম হলো অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘাত। এ ধরনের ঘটনা যখন বারবার ঘটতে থাকে, তখন স্বাভাবিক প্রশ্ন হলো, সংগঠনের ওপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণ নেই?

সাদ্দাম হোসেন: আমাদের সাংগঠনিক ইউনিটগুলোর কমিটি পরিচালনার ক্ষেত্রে একধরনের স্বায়ত্তশাসন রয়েছে। ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড তাদের নিজস্ব দলীয় বিষয়। কারও কর্মকাণ্ডের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ক্ষুণ্ন হোক, সেটা মেনে নেওয়া হবে না। অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা হলে সেটা সাংগঠনিকভাবে ফয়সালা করতে হবে। কিন্তু সেটিকে কেন্দ্র করে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ যদি কেউ অনিরাপদ করতে চায়, তাদের ছাত্রলীগ করার অধিকার আছে বলে মনে করি না। অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সংঘাতের ব্যাপারে আমাদের জিরো টলারেন্স অবস্থান। ভবিষ্যতে যারাই এ ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রশ্ন :

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের চাপে মঞ্চ ভেঙে পড়তে দেখলাম। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন আপনারা। একবারে এত নেতার মঞ্চে ওঠার ঘটনায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলার প্রশ্নটি সামনে চলে আসে না?

সাদ্দাম হোসেন: এটা তাৎক্ষণিক ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। এ ঘটনায় আমরা দুঃখ প্রকাশ করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, কাঠামোগত ত্রুটির কারণে মঞ্চটি ভেঙে পড়ে। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের রেওয়াজ হচ্ছে নতুন-পুরোনো নেতৃত্ব যাঁরা আসেন, সবাই মঞ্চে থাকবেন। সেখানে কারও জন্য চেয়ারও আলাদা থাকে না। একটা বিষয় হলো, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটির পরও আমরা সেদিন পরবর্তী সব কর্মসূচি সফলভাবে শেষ করেছি।

প্রশ্ন :

গেস্টরুম ও গণরুমকে শিক্ষার্থী নিপীড়নের কারখানা বলা হয়। অনেক সমালোচনার পরও সেটা বন্ধ হয় না কেন?

সাদ্দাম হোসেন: গণরুম একটি প্রশাসনিক বাস্তবতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সক্ষমতা আর শিক্ষার্থীর যে সংখ্যা, তার মধ্যে তারতম্য অনেক বেশি। মফস্‌সল থেকে যেসব শিক্ষার্থী আসে, তাদের বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকার সামর্থ্য নেই। গণরুমের দায় ছাত্রলীগের নয়, গণরুম ছাত্রসংগঠন তৈরি করেনি। আমরা চাই, একজন শিক্ষার্থী যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে, সেদিনই তার সিট বরাদ্দ হোক। কে কোন সিটে থাকবে, সেটা হল প্রশাসন নির্ধারণ করবে। সেটার জন্য প্রয়োজন আবাসনসংকটের স্থায়ী সমাধান।

প্রশ্ন :

সিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ছায়া প্রশাসনের ভূমিকা পালন করে ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষার পরিবেশ তো এতে নষ্ট হচ্ছে...

সাদ্দাম হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনেক পুরোনো আইনকানুন দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। সেটা যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। প্রশাসনের কাছে সবাই শিক্ষার্থী। এ পরিচয় জোরদার করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না। রাজনৈতিক দলের পরিচয়ের কারণে কারও অধিকতর ক্ষমতা থাকবে, সেটা হতে পারে না। প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিচালনা করবে। আর ছাত্রসংগঠন শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলবে। ছাত্ররাজনীতির সীমারেখা ও প্রশাসনের সীমারেখা—এই দুয়ের মাঝে সুস্পষ্ট পার্থক্যরেখা থাকা প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

ছাত্রলীগে কেন নারী নেতৃত্বের এত সংকট? ছাত্রলীগের সংস্কৃতি কি তবে নারী শিক্ষার্থীদের সংগঠনে আসার অনুকূলে নয়?

সাদ্দাম হোসেন: নারী শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্রলীগের আবেদন কিন্তু অনেক বেশি। সর্বশেষ ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগে ২৫ জনের মধ্যে ৭ জন নারী ছিলেন। এটি বামপন্থী সংগঠন, যারা সমতার কথা বলে, তাদের প্যানেলে কিন্তু দুজনের বেশি নারী প্রার্থী ছিলেন না। আমাদের সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায়, আমাদের মিছিলে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ থাকে, সেটা অন্য সব সংগঠনের সার্বিক অবস্থার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। আমাদের অনেক নারী নেতা রয়েছেন, যাঁদের শীর্ষ পদে আসার যোগ্যতা রয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের আরও সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন, যাতে নেতৃত্বের মূলধারায় নারীদের সম্পৃক্ত করা যায়।

প্রশ্ন :

শিগগিরই ডাকসুসহ অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আশা দেখেন কি?

সাদ্দাম হোসেন: আমরা বলেছি, ডাকসু নির্বাচন একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অংশ হওয়া প্রয়োজন। তবে এটা উচিত-অনুচিতের প্রশ্ন নয়, এ ক্ষেত্রে আইনগত বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায় রয়েছে নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বাংলাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করার আহ্বান জানাই।

প্রশ্ন :

যেখানে শিক্ষার্থীদের বয়স ১৮ থেকে ২৩ বছর, সেখানে ৩০ থেকে ৩২ বছর বয়সীরা ছাত্রনেতা হচ্ছেন। এটা কতটা মানানসই?

সাদ্দাম হোসেন: ছাত্রলীগ একমাত্র সংগঠন, যারা নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি পরিচালনা করে। বয়সসীমার বিষয়ে ছাত্রলীগে গঠনতান্ত্রিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ছাত্রলীগে আমরা সেটা যথাযথভাবে অনুশীলন করার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন :

অনেকে বলেন, প্রচলিত ধারার ছাত্ররাজনীতির আর প্রয়োজন নেই। ছাত্রদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ছাত্র সংসদ থাকতে পারে। এর সঙ্গে আপনি কি একমত?

সাদ্দাম হোসেন: এটি বিরাজনৈতিকীকরণের প্রচেষ্টার একটি অংশ। আমাদের রাজনৈতিক যে ব্যবস্থা আছে, সেখানে পরিবর্তন হয়তো প্রয়োজন। কিন্তু প্রচলিত ছাত্ররাজনীতি থাকবে না—এ ধরনের চিন্তা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। আমাদের ত্রুটিবিচ্যুতি ও সীমাবদ্ধতা থাকলে সেগুলো অতিক্রম করতে হবে।

প্রশ্ন :

আপনাকে ধন্যবাদ।

সাদ্দাম হোসেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।