অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ প্রায় ছয় মাস হতে চলল। এই সরকারের প্রতি মানুষের যে প্রত্যাশা ছিল, এই সময়ের মধ্যে সেটা কতটা পূরণ হয়েছে বলে মনে করেন?
ইফতেখারুজ্জামান: প্রথম কথা যেটা মনে রাখতে হবে, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে। বিভিন্ন খাতে গত ১৫ বছরে যে জঞ্জাল তৈরি হয়েছে, এই সরকার সেগুলো পরিষ্কার করবে—এটা অনেকের প্রত্যাশা। এ ক্ষেত্রে তাদের বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে, সেটাও স্বাভাবিক।
শুরুতে যে চ্যালেঞ্জ ছিল, এখনো যা আছে, সার্বিকভাবে তা হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা, প্রশাসনে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা—এ বিষয়গুলো আছে। এ ছাড়া বিগত সরকার অর্থনীতিকে প্রায় খাদের কিনারায় ঠেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে জনজীবনে দুর্ভোগ লাঘব এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করাও খুব সহজ কাজ নয়।
এ ছাড়া আন্দোলনে নিহত বা শহীদদের স্বীকৃতি ও সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয়টি যথাযথভাবে হচ্ছে না—এমন খবরও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব কারণে অনেকের মধ্যেই কিছু প্রশ্ন ও হতাশা হয়তো যৌক্তিক কারণেই তৈরি হয়েছে।
সরকারের ভ্যাট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকই সমালোচনা করেছেন। তা ছাড়া আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের) কাছ থেকে নতুন করে ঋণ চাওয়া হয়েছে। এসব কারণে অনেকেই বলছেন, অর্থনৈতিক নীতির ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার বিগত সরকারের নীতি অনুসরণ করছে।
ইফতেখারুজ্জামান: এ কথাটা অস্বীকার করার সুযোগ খুবই কম। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়টা বিগত সরকারের একটা সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা বলা যেতে পারে। বাস্তবতা হলো, সরকারের হাতে এখন পর্যাপ্ত টাকা নেই এবং রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ইতিবাচক নয়। এ রকম অবস্থায় সরকারের হাতে হয়তো খুব বেশি বিকল্প ছিল না। এর ফলে সরকার ভ্যাট বৃদ্ধি করে।
আমাদের দেশে বহুদিন ধরেই প্রত্যক্ষ কর আদায় না করে পরোক্ষ কর (ভ্যাট) বাড়ানোর একটি প্রবণতা রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের চাপ বাড়ে। তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, বৃহৎ করদাতাদের অনেকেই এখন কর দেওয়ার জন্য উপস্থিত নেই। এদের মধ্যে কেউ জেলাখানায়, কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে পাচার বা লুণ্ঠিত হওয়া অর্থ ফেরত আনা একটি বিকল্প হতে পারত। তবে সেটাও সময়সাপেক্ষ এবং বাস্তবে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আসলে এত স্বল্প মেয়াদে দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে ওঠা দুরূহ কাজ।
অন্তর্বতী সরকার যথেষ্ট শক্তিশালী নয়—কেউ কেউ এমন অভিযোগ করছেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
ইফতেখারুজ্জামান: অন্তর্বর্তী সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়। তাই আমলাতন্ত্র, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থার ওপর অনেকটা নির্ভর করে তাদের সরকার চালাতে হচ্ছে। গত ১৫ বছরে আমলাতন্ত্র ও পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে এগুলো নতুনভাবে সাজানোর চেষ্টা করেছে। এ রকম অবস্থায় সরকার পরিচালনা করা খুব সহজ কাজ নয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই সংস্কারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি কত দূর?
ইফতেখারুজ্জামান: রাষ্ট্র সংস্কারের যে এজেন্ডা, সে ক্ষেত্রে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই কমিশনগুলো গঠন করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি কমিশন প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলোকে ইতিবাচকই বলতে হবে।
তবে সংস্কারপ্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে শুরু থেকেই ব্যক্তিগতভাবে আমার কিছু প্রশ্ন ছিল। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সংস্কারের একটি রোডম্যাপ বা পথরেখা তৈরি করতে পারলে ভালো হতো। সেই পথরেখা অনুসারে সংস্কার কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া উচিত ছিল।
শুরুর দিকে সরকারের নিরঙ্কুশ জনসমর্থন ছিল। সেই সময়ে রাষ্ট্র সংস্কারের সুচিন্তিত পথরেখা ঘোষণা করে অগ্রসর হলে এখন যেভাবে কেউ কেউ সংস্কারকে নির্বাচনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়ে পরিণত করার চেষ্টা করছে, তা এড়ানো যেত। কিন্তু সেই সুযোগ আমরা কাজে লাগাতে পারিনি।
যেসব বিষয়ে সংস্কার কমিশন হয়েছে, সংস্কার কি শুধু সেসব বিষয় হবে? আর কোন কোন ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল বলে আপনি মনে করেন?
ইফতেখারুজ্জামান: এবারের গণ–অভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে। কিন্তু শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কারের বড় কোনো উদ্যোগ লক্ষ করা যাচ্ছে না। খুবই সীমিত আকারে অ্যাডহক–জাতীয় কিছু কাজ শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তা পথচ্যুত হয়েছে। পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু কোনো কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর চাপে সেই কমিটি বাতিল করা হয়। চাপের মুখে এভাবে নতি স্বীকারের বিষয়টি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। এর ফলে চাপের মুখে সংস্কারের আরও কিছু ইস্যু থেকে সরকারকে সরে আসতে হয়েছে।
বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনটি শক্তি বড় ভূমিকা রেখেছে এবং তাদের একটি চক্র তৈরি হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো রাজনৈতিক দল, আমলাতন্ত্র এবং বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী। সাধারণ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এই চক্রের অংশ ব্যবসায়ীরা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে কর্তৃত্ববাদের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে। তাঁদের অনেকেই বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন। একজন ব্যবসায়ীকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও ব্যবসা খাতে সংস্কারে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রয়োজন যে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, সেটা হলো রাজনৈতিক দল। কারণ, ভবিষ্যতে তারাই ক্ষমতায় আসবে, তাদেরই গণতন্ত্রের প্রধান চালিকা শক্তি হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলের সংস্কার নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার, এমনকি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাও কোনো কথা বলছে না।
রাজনৈতিক দলগুলোকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের চেহারা দেখতে হবে। বাইরে থেকে পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে, কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার তাদের ভেতর থেকেই আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার ছাড়া পরিস্থিতির সত্যিকারের কোনো উন্নতি আশা করা যায় না।
জুলাই–আগস্ট মাসে যে হত্যা ও সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর বিচারপ্রক্রিয়া কি যথাযথভাবে চলছে?
ইফতেখারুজ্জামান: গণ–অভ্যুত্থানের সময় যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে, সেগুলোর বিচারের বিষয়টি এ সরকারের একটি অগ্রাধিকার ছিল। কিন্তু বিচার নিয়ে প্রথম দিকেই কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকের দক্ষতা, যোগ্যতা, নিরপেক্ষতা এবং উদ্দেশ্য নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ–সংশয় দেখা গেছে। এর ফলে বিচারের উদ্দেশ্য কি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, না প্রতিশোধ নেওয়া—এমন প্রশ্নও উঠেছে। এই প্রশ্নগুলো আপাতত স্তিমিত থাকলেও বিচারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বিগত সরকারের আমলে মতপ্রকাশ বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা অনেকখানি সংকুচিত ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই পরিস্থিতির কতটা পরিবর্তন হয়েছে?
ইফতেখারুজ্জামান: একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, বিগত সরকারের আমলে কোনো কোনো সংবাদমাধ্যম কর্তৃত্ববাদের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে, আবার কোনো কোনো গণমাধ্যম ছিল কর্তৃত্ববাদের ভুক্তভোগী। কর্তৃত্ববাদের পতন হলেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বাক্স্বাধীনতা, বিশেষত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সতিকার অর্থে কতটুকু ফিরে এসেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
সরকারের তরফ থেকে এখন হয়তো তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। তবে নির্বিচার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে সরকার বিতর্কিত হয়েছে। এ ছাড়া একদিকে কর্তৃত্ববাদী পদ্ধতিতে কোনো কোনো গণমাধ্যমের ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন বা কর্মচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে; অন্যদিকে বিভিন্ন গোষ্ঠী সংবাদমাধ্যমের ওপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে এ রকম একটি গোষ্ঠী একাধিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। এ ধরনের মব কালচার সংবাদমাধ্যমের কাজে বাধা সৃষ্টি করে। এসব কারণে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এখনো প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি—এটা স্পষ্ট।
৫ আগস্টের পরপর সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছিল। কিছুদিন আগে বিক্ষুব্ধ আদিবাসীদের ব্যানারে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদী কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটল। এ ছাড়া অনেকগুলো মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এগুলো থামানো যাচ্ছে না কেন?
ইফতেখারুজ্জামান: সংখ্যালঘুদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। সব সরকারের আমলেই এ রকম ঘটনা ঘটেছে। যেকোনো রাজনৈতিক পালাবদল, যেমন নির্বাচনের সময় সংখ্যালঘুরা এর আগেও আক্রান্ত হয়েছেন। ৫ আগস্টের পরেও তাঁরা একধরনের চাপের মধ্যে পড়েছেন।
এবারের ঘটনাটা একটু আলাদা। শেখ হাসিনার আকস্মিক পতনকে ভারত স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেনি। এ ঘটনাটাকে তারা একই সঙ্গে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে দেখছে। এ কারণে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগগুলো অনেক ক্ষেত্রে যাচাই–বাছাই না করেই ভারত নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে।
আদিবাসী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, মাজারে হামলা, নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দেওয়া বা এ রকম আরও যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, তার জন্য বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল দায়ী। আমাদের মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলো এদের নানাভাবে ব্যবহার করেছে, তাদের শক্তি অর্জন করতে সহায়তা করেছে।
৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোনো কোনো গোষ্ঠী নিজেদের শক্তিশালী মনে করছে এবং অতি ক্ষমতায়িতের মতো আচরণ করছে। বাস্তবে এরা কতটুকু শক্তিশালী, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েছে। যাই হোক, এদের প্রতিরোধ বা নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার যথেষ্ট সক্রিয় নয়—এমনটা প্রতীয়মান হচ্ছে।
ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়কে কেন্দ্র করে যেসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড ঘটছে, সেটা কি আমাদের নতুন করে বিভাজনের দিকে ঠেলে দিতে পারে?
ইফতেখারুজ্জামান: এই ধরনের কর্মকাণ্ড সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করে এবং রাষ্ট্র হিসেবেও আমাদের দুর্বল করবে। একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, বাংলাদেশে যদি অভ্যন্তরীণভাবে অস্থিরতা বা অস্থিতিশীলতা চলতে থাকে, সেটা ভারতের জন্য সুবিধাজনক হবে এবং তারা সব সময় এটাই চায়। বাংলাদেশ বিভক্ত এবং দুর্বল থাকলে ভারতের জন্য তার স্বার্থ উদ্ধার করা অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই ধর্মীয় বা জাতিগত পরিচয়কে কেন্দ্র করে বিভক্তি না বাড়িয়ে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকা উচিত।
সংস্কারের পাশাপাশি বর্তমানে রাজনীতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো জাতীয় ঐকমত্য। সেই জাতীয় ঐকমত্য কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
ইফতেখারুজ্জামান: বাংলাদেশে যে সরকার ক্ষমতায় ছিল, সেটা সাম্প্রতিক বিশ্বের ইতিহাসে নিকৃষ্টতম কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলোর একটি। কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশবাসী বিজয়ী হয়েছেন। এখন দেশের মানুষ মোটাদাগে ‘নতুন বাংলাদেশ’ দেখতে চান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হলেও শেষ দিকে এসে সব শ্রেণি–পেশার লোক এতে যুক্ত হয়েছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ছিলেন। সবাই কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে এক কাতারে ছিলেন। এদের সবার চিন্তাভাবনা, ‘নতুন বাংলাদেশ’ নিয়ে প্রত্যাশা বা আকাঙ্ক্ষা কিন্তু একই রকম নয়। এ ক্ষেত্রে কিছু কিছু মিল যেমন আছে, তেমনি পার্থক্যও আছে। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, এদের কারও কারও মধ্যে পুরোনো কর্তৃত্ববাদের কিছু লক্ষণ বা উত্থান দেখা যাচ্ছে। এ রকম অবস্থায় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে কীভাবে, কতটুকু ঐকমত্য হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
জাতীয় ঐকমত্য একটা বেশ বড় এবং জটিল বিষয়। নিরবচ্ছিন্ন জাতীয় ঐকমত্য অর্জন সম্ভবও নয় এবং ঝুঁকিপূর্ণও বটে। কারণ, এ ধরনের ঐকমত্যের আড়ালে সংখ্যালঘু জাতি, ধর্ম ও অন্যান্য বৈচিত্র্যের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অধিকতর প্রান্তিকতার ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং অন্তর্ভুক্তির চেতনা বিপর্যস্ত হয়। এ ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য হওয়াটাই আরও অর্থবহ হবে, যদি সেটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এ ধরনের ঐকমত্য ছাড়া আমাদের জন্য সামনের দিকে এগোনো কঠিন হবে।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ইফতেখারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।