দুর্বলতা ঢাকতে তথ্য গোপনের প্রবণতা সাফারি পার্কের

গাজীপুরের শ্রীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে আবারও প্রাণীর মৃত্যু নিয়ে লুকোচুরির ঘটনা ঘটেছে। এবার একটি হাতির মৃত্যুর তথ্য খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেছে সিংহী ও ওয়াইল্ডবিস্টের মৃত্যুর খবর। সাফারি পার্কে কী কারণে পশুপাখি মারা যাচ্ছে এবং পশুপাখি মারা গেলে কর্তৃপক্ষ কেন গোপন রাখতে চায়, এসব বিষয় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পাখি ও বন্য প্রাণী চিকিৎসাবিশেষজ্ঞ আ ন ম আমিনুর রহমানের সঙ্গে।

প্রশ্ন :

সাফারি পার্কে পশুপাখির মৃত্যু হলে কর্তৃপক্ষ গোপন করতে চায়। এর কারণ কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আ ন ম আমিনুর রহমান: সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের কোথাও হয়তো কোনো দুর্বলতা আছে। এ কারণে তারা পশুপাখির মৃত্যুর খবর গোপন করে রাখে চায়। তবে এটি গোপন না রেখে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে সমস্যার সমাধান করা উচিত।

প্রশ্ন :

তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আ ন ম আমিনুর রহমান: সাফারি পার্কে তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা থাকা উচিত। ওই কর্মকর্তা পার্কের সব তথ্য সংরক্ষণ করে প্রয়োজনে সরবরাহ করবেন। এতে গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন সংস্থা তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সহজে সংগ্রহ করতে পারবে।

প্রশ্ন :

পার্কে দক্ষ লোকের অভাব আছে বলে কী আপনি মনে করেন?

আ ন ম আমিনুর রহমান: পার্কে অনেকেই আছেন, যাঁরা পশুপাখির বিষয়ে দক্ষ, তবে জনবলের অভাব আছে। সেই সঙ্গে পর্যবেক্ষণের অভাব রয়েছে। পশুপাখি সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা খুবই প্রয়োজন।

প্রশ্ন :

পার্কের বর্তমান পরিস্থিতিতে চিকিৎসক পর্যাপ্ত বলে মনে করেন কী?

আ ন ম আমিনুর রহমান: মোটেও পর্যাপ্ত নয়। এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রাণী আছে। এদের একেকটির বৈশিষ্ট্য একেক ধরনের। তাই নির্দিষ্ট প্রজাতির প্রাণীর জন্য ওই বিষয়ে পারদর্শী চিকিৎসক দরকার। প্রাণীগুলোকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে ক্যাটাগরি অনুযায়ী চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া দরকার।

প্রশ্ন :

সাফারি পার্ক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে কোনো ঘাটতি চোখে পড়েছে কী?

আ ন ম আমিনুর রহমান: পার্ক ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্বে কাজ করছে বন বিভাগের লোকজন। বন বিভাগের হলেও তাঁরা বেশির ভাগই গাছপালা চেনেন না, প্রাণীর স্বভাব সম্পর্কে জানেন না। এভাবে একটি সাফারি পার্ক ভালোভাবে চলতে পারে না। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়হীনতা আছে‌। আর এর প্রভাব পড়ছে প্রাণীদের ওপর।

প্রশ্ন :

গত বছর অল্প কয়েক দিনের ব্যবধানে লাগাতার প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন?

আ ন ম আমিনুর রহমান: পার্কে নতুন প্রাণী আমদানির জন্য কোনো মহল ষড়যন্ত্র করছে কি না, তা নিয়েও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বেশির ভাগ প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে বিষক্রিয়ায়, এটি চিন্তার বিষয়।

প্রশ্ন :

পার্ক কর্তৃপক্ষের সাধারণ বক্তব্য, প্রাণীর মৃত্যু স্বাভাবিক, শীতে বেশি মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?

আ ন ম আমিনুর রহমান: সাফারি পার্কে প্রাণীর জন্য হিটিং সিস্টেম থাকা দরকার। পার্কের জন্য এত টাকা বরাদ্দ, এই বরাদ্দ থেকে প্রাণীর জন্য প্রটেকশনের ব্যবস্থা করা দরকার। তা ছাড়া এটা সাইবেরিয়া নয়। বাংলাদেশের পরিবেশে শীতের জন্য প্রাণী মারা যাওয়ার কথা নয়। প্রাণীর শরীরে প্রচুর লোম থাকে। তাই ঠান্ডায় খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কারণ নেই।

প্রশ্ন :

সাফারি পার্ক নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?


আ ন ম আমিনুর রহমান: দেশের এই পরিস্থিতিতে সাফারি পার্ক বিলাসী চিন্তা। বরাদ্দ বাড়ানো উচিত সংকটাপন্ন ও বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা পশুপাখির সংখ্যা বৃদ্ধিতে। দুটি সাফারি পার্ক হয়েছে, এটাই বেশি। আরও একটি সাফারি পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো বিলাসী চিন্তা।