ঘোষিত তফসিল অনুসারে আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনটি কেমন হতে যাচ্ছে?
জয়নুল আবেদীন: একতরফাভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আমি মনে করি, কোনো সমঝোতার উদ্যোগ না নিয়ে তড়িঘড়ি করে এই নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। যেভাবে মনোনয়ন দিয়েছে শাসক দল আর যেভাবে তারা নির্বাচন করতে চাইছে, তাতে একে নির্বাচন বলা যাবে না। যে নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, তাকে কেউ নির্বাচন বলবে না। জনগণের অংশগ্রহণ না থাকলে নির্বাচন ঠেকে যায়। অধিকাংশ দল, নিবন্ধিত দল, তারা তো নির্বাচনে যাচ্ছে না। রাতারাতি গড়ে ওঠা কিছু কিংস পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করার মাধ্যমে তারা নির্বাচনটিকে অংশগ্রহণমূলক হিসেবে দেখাতে চাইছে।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কী হতে পারে?
জয়নুল আবেদীন: ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৫৩ জনের কোনো ভোটই লাগেনি। বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচন আগের রাতেই হয়ে গেছে। এবার নির্বাচনে তারা নিজেরা নিজেরা গোল দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি অতীতে কখনো দেখিওনি যে আওয়ামী লীগের মতো বড় একটি রাজনৈতিক দল প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর আবার বলে যে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে তাদের আপত্তি নেই। এটা প্রকৃত ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষণ নয়। নির্বাচন হবে বলেও মনে করি না।
বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে ভুল করল না তো?
জয়নুল আবেদীন: আমি তা মনে করি না। নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলন করছে। সেই দাবি ও নীতিতেই অটল রয়েছে। কারণ, এই সরকারের অধীন অতীতে কোনো নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়নি। আসলে সরকারও চায় না বিএনপি নির্বাচনে আসুক। সে কারণে ২৮ অক্টোবর একটি ঘটনা ঘটিয়ে সরকার হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ উচ্চপর্যায়ের অনেক নেতা এখন কারাগারে। সম্ভাব্য যাঁরা নির্বাচন করবেন, তাঁদেরও একের পর এক ভৌতিক মামলায় জেল দিচ্ছে, যাতে ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন।
বিএনপি এক দফা দাবি নিয়ে যে আন্দোলন করছে, তাকে কৌশলগতভাবে সঠিক বলে মনে করেন কি?
জয়নুল আবেদীন: এটা কৌশলের বিষয় নয়। বিএনপি জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন দেখতে চায়। সে কারণে জনগণের ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করেই এক দফার দাবি আদায়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি কি এ রকম আন্দোলন করেই যাবে? বিএনপি কীভাবে তাদের দাবি অর্জন করতে চায়?
জয়নুল আবেদীন: বিএনপির লক্ষ্য একটাই, এ দেশের জনগণ যাতে ভোট দিতে পারে, তা নিশ্চিত করা। আশা করি, অচিরেই এই সরকার জনগণের কাছে মাথানত করবে।
সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দাবি আদায়ে মাঠে জমায়েতের পরিবর্তে বিএনপি বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল এমন অভিযোগ রয়েছে। বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বিএনপি কতটুকু কী করতে পারবে?
জয়নুল আবেদীন: শাসক দলের সমর্থকেরা এমন কথা বলতেই পারেন। কিন্তু বিএনপি বিদেশিদের ওপর নির্ভরশীল নয়। বিএনপি এ দেশের জনগণের ওপর নির্ভরশীল ও আস্থাশীল। জনগণের অংশগ্রহণই হচ্ছে বড় অংশগ্রহণ। যেহেতু এই নির্বাচনে জনগণের কোনো অংশগ্রহণ নেই, কাজেই এই নির্বাচনকে নির্বাচনই বলা যায় না। এই নির্বাচনের জন্য ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। আমি মনে করি, এই টাকাটা অহেতুক খরচ করা। এটি খরচ করার কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।
৭ জানুয়ারি সরকার নির্বাচন হয়ে গেলে বিএনপি কী করবে?
জয়নুল আবেদীন: এটা বিএনপির বিষয় নয়, বিষয়টি জনগণের। জনগণই বিষয়টি দেখবে যে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশ যারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভাবে, তারাও দেখবে যে কীভাবে নির্বাচন হয়েছে। আদৌ নির্বাচন হয়েছে কি না, এটাকে নির্বাচন বলা যাবে কি না—তা নির্বাচনের পর বলা যাবে। আমরা বলছি ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ইতিমধ্যে ঠেকে গেছে। কারণ, জনগণের কোথাও কোনো অংশগ্রহণ নেই। যখনই শাসক দল মনোনয়ন দিয়েছে, আবার সঙ্গে সঙ্গে বলে দিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবেন, তখনই নির্বাচন ঠেকে গেছে। তখন আর এটাকে নির্বাচন বলা যায় না। শাসক দল নিজেরাই জনগণের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় না। তারা একটা ঘোষণার নির্বাচন চায়।
আপনাকে ধন্যবাদ।
জয়নুল আবেদীন: আপনাকেও ধন্যবাদ।