নাগরিক কমিটির নেতার সাক্ষাৎকার

সিলেট নগরের বর্ধিত অংশ অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠছে

সিলেট শহরের পরিসর ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে শহরটি অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠছে বলে নগরবিশেষজ্ঞদের মত। এ ছাড়া যানজট, পানির সংকট, জলাবদ্ধতা, মশার উপদ্রবসহ নানা নাগরিক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন নগরের বাসিন্দারা। এসব বিষয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে নাগরিকদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার থাকা সংগঠন নাগরিক মৈত্রী সিলেটের আহ্বায়ক সমর বিজয় সী শেখরের সঙ্গে। তিনি সিলেট জেলা কর আইনজীবী সমিতির সহসভাপতি।

প্রশ্ন:

সিলেট নগরে প্রধান সমস্যা কোনগুলো?

সমর বিজয় সী শেখর: যানজটের সমস্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিভিন্ন এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট আছে। দিন–রাতে সমানতালে মশা কামড়ায়। অপ্রশস্ত রাস্তাঘাট, ফুটপাত বেদখল, অনেক বিপণিবিতানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকাসহ নানা ধরনের সমস্যার কথা বলা যেতে পারে। এ ছাড়া গণশৌচাগারের খুব অভাব আছে।

প্রশ্ন:

এই যে যানজট ক্রমে বাড়ছে বললেন; এর সমাধান কী?

সমর বিজয় সী শেখর: নিয়ম না থাকলেও অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, দিনের বেলা ট্রাক নগরের রাস্তা দিয়ে চলছে। এসব দূর করাসহ নগরের বিভিন্ন রাস্তা দখল করে তৈরি হওয়া অস্থায়ী সিএনজি ও মাইক্রোস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করা প্রয়োজন। বেদখল হওয়া ফুটপাত থেকেও হকারদের সরাতে হবে। এ ছাড়া নগরে যেসব অবৈধ রিকশা ও যানবাহন চলাচল করছে, এসবও ঠেকাতে হবে। পাশাপাশি অপ্রশস্ত রাস্তাঘাটও প্রশস্ত করা উচিত। তবেই যানজট অনেকটা নিরসন সম্ভব। এর চেয়েও বড় বিষয়, সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশ কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে পারে।

প্রশ্ন:

নগরবিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ হচ্ছে সিলেটে। আপনার অভিমত কী?

সমর বিজয় সী শেখর: একটা সময়ে সিলেট শহর প্রচুর গাছপালাবেষ্টিত ছিল। পাহাড়-টিলায় ভরপুর ছিল। এসব কেটে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই ইচ্ছেমতো বাসাবাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। একটি সুউচ্চ ভবন ঘেঁষে আরেকটি বহুতল ভবন তৈরি করা হচ্ছে। সেসব ভবনে যাওয়ার রাস্তাও একেবারেই সরু। মূলত, সিলেট শহর এখন অপরিকল্পিতভাবে বেড়ে উঠছে। সিটি করপোরেশন যদি কঠোরভাবে বিষয়টি দেখভাল করত, তবে অপরিকল্পিত নগরায়ণের সুযোগ খুব একটা ছিল না। সম্প্রতি সিলেট নগরের আয়তন দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বর্ধিত ওই এলাকায় যদি এখনই পরিকল্পনামাফিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করা না হয়, তবে পুরোনো নগরের এলাকার মতোই বর্ধিত এলাকার অবস্থা একটা সময় হবে।

প্রশ্ন :

মশার উপদ্রব থাকলেও নিধনের ওষুধ খুব একটা ছিটানো হয় না বলে অভিযোগ আছে...

সমর বিজয় সী শেখর: একদম সঠিক। চলতি বছর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে মশার ওষুধ ছিটাতে দেখিনি। মশার উপদ্রব যখন বাড়ে, তখন গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় সিটি কর্তৃপক্ষ ওষুধ ছিটাতে তৎপরতা চালায়। তবে নগরের অধিকাংশ এলাকাতেই মশকনিধনের ওষুধ ছিটাতে দেখা যায় না।

প্রশ্ন :

জলাবদ্ধতা, অপরিচ্ছন্নতা, তীব্র পানির সংকট নগরে আছে। এতে নগরবাসী কতটুকু ভুগছে?

সমর বিজয় সী শেখর: সামান্য বৃষ্টিতেই এখন সিলেট শহরে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ গত এক যুগে হাজার কোটি টাকারও বেশি জলাবদ্ধতা নিরসন খাতে ব্যয় করা হয়েছে। সুরমা নদীর পাড়ে স্থানীয় লোকজন ময়লা-আবর্জনা ফেলছে, বিভিন্ন রাস্তা নোংরা হয়ে দিনের পর দিন পড়ে থাকে। এ ছাড়া নগরের অসংখ্য এলাকায় পানির তীব্র সংকট আছে। এসব সমস্যায় নগরবাসী ধুঁকছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যার বিষয় জেনেও কার্যকর উদ্যোগ খুব কমই গ্রহণ করছে।

প্রশ্ন :

নাগরিক সমস্যাগুলো দূর করতে সংশ্লিষ্টরা কী কী উদ্যোগ নিতে পারে?

সমর বিজয় সী শেখর: সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলেই অসংখ্য সমস্যা দ্রুত দূর করা সম্ভব। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসন, নগরবিশেষজ্ঞ, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষকে মুক্ত আলোচনার আয়োজন করতে হবে। এতে নগরের সমস্যাগুলো উত্থাপিত হওয়ার পাশাপাশি তা সমাধানে কার্যকর বিষয়াদিও নিশ্চয়ই আলোচিত হবে। সমন্বিতভাবে এগোতে পারলে অনেক নাগরিক সমস্যার সমাধান সহজেই করা যেতে পারে।