প্রশ্ন:
নদীতে এত পাঙাশ ধরা পড়ার কারণ কী?
লোকমান আলী: পাঙাশ মাছ স্বাদু পানি এবং আধা লবণাক্ত পানিতে বসবাস করে। পাঙাশ নদী, খাল ও মোহনায় বসবাস করে। প্রজননের জন্য নদীর উজানে স্বাদু পানিতে চলে আসে। এরপর এদের লার্ভি একটু বড় হলে আবার মোহনা এলাকায় চলে যায়।
পাঙাশ মূলত বর্ষাকালে প্রজনন করে। প্রজনন শেষে এরা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে মোহনায় চলে আসে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে উপকূলীয় নদীতে এবং মোহনায় এই মাছ বেশি ধরা পড়ে। ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে দেশি পাঙাশসহ অন্যান্য মাছ প্রজনন করার এবং বড় হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এ জন্যই বর্তমানে নদীতে পাঙাশ বেড়েছে।
এ ছাড়া কয়েক বছর ধরে নদী ও সাগর মোহনায় পাঙাশের অভয়াশ্রম চিহ্নিতের কাজ করা হচ্ছে। মৎস্য বিভাগ থেকে চাঁইয়ের মাধ্যমে পাঙাশের পোনা নিধন বন্ধে ব্যাপক প্রচারণা ও অভিযান চালানো হচ্ছে। পাঙাশের পোনা নিধনের চাঁই ধ্বংস করা হচ্ছে, পাঙাশের পোনা ধরার কাজে জড়িত ব্যক্তিদের অর্থদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। এ কারণেও নদ-নদীতে পাঙাশ বাড়ছে।
প্রশ্ন:
জেলেদের ধারণা, শীতে পাঙাশের আধিক্য থাকে। এটা কি ঠিক?
লোকমান আলী: এটা সঠিক। বর্ষা মৌসুমে পাঙাশ মাছ প্রজননের জন্য নদীর উজানে বিভিন্ন এলাকায় যায়। এ সময় পাঙাশ নদী-খাল-বিল ও বন্যাকবলিত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। প্রজনন শেষে শীতের শুরুতে আবার উপকূলীয় নদী ও মোহনা এলাকায় চলে আসে। এ জন্য শীতকালে উপকূলীয় নদী ও মোহনা এলাকায় প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ ধরা পড়ছে।
প্রশ্ন:
বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার নদীতে ইলিশের এত স্বল্পতা কেন?
লোকমান আলী: নদীতে ইলিশ স্বল্পতার অনেক কারণ আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, নদীর মোহনায় ডুবোচর জেগে ওঠা এবং মোহনার গভীরতা কমে যাওয়া। ইলিশ মাছ সাগর থেকে অন্যত্র যাওয়ার পথে মোহনার গভীরতা কম হওয়ায় এবং ডুবোচরের জন্য বাধাগ্রস্ত হয়ে সাগরে ফিরে যায়। এর ফলে অনেক মা ইলিশ ভরা প্রজনন মৌসুমে ডিম পাড়ার জন্য নদীতে আসতে পারে না। অনেক মোহনায় এলাকাজুড়ে বাধাজাল পেতে রাখা হয়। তাতেও ইলিশের নদীতে আসা বাধাগ্রস্ত হয়। আর নদীর পানি দূষণের সমস্যা তো আছেই।
প্রশ্ন:
ইলিশ রক্ষায় করণীয় কী?
লোকমান আলী: ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণালব্ধ ফলাফলের বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ কারণে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। জেলেরা যেন বাধাজাল পেতে রাখতে না পারে, এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মোহনা এলাকায় ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে নদীর গভীরতা বাড়ে। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় যে প্রতিবছর নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রথম দুই-তিন দিন জেলেরা বাজারে প্রচুর ইলিশ নিয়ে আসেন, সেগুলোর বেশির ভাগের পেট ডিমে পরিপূর্ণ থাকে। দুই-তিন দিনে এত বিপুল পরিমাণ ইলিশ কোনোভাবেই ধরা সম্ভব নয়। মূলত নিষেধাজ্ঞার সময় ইলিশ মাছ ধরে মজুত করে রাখা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে এবং নিষেধাজ্ঞা শেষ হলে তা বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। এ জন্য নদীতে নিষেধাজ্ঞার সময় আরও নজরদারি বাড়াতে হবে। জেলেরা যেন ওই সময় ইলিশ মাছ ধরে মজুত করে রাখতে না পারে।