বিশেষ সাক্ষাৎকার: নাতালিয়া কানেম

সমাজকে বুঝতে হবে, বাল্যবিবাহ বড় ধরনের ভুল

এ বছর জনসংখ্যা ও উন্নয়নবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইসিপিডি) ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতিসংঘ ও সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সহযোগিতায় ‘জনমিতিক বৈচিত্র্য ও টেকসই উন্নয়ন’ শীর্ষক বৈশ্বিক সংলাপের দ্বিতীয় আয়োজন ছিল ঢাকায় গত ১৫ ও ১৬ মে। এ সংলাপে যোগ দিতে এসেছিলেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) নির্বাহী পরিচালক নাতালিয়া কানেম। সেই সময় তাঁর সাক্ষাৎকার নেন নাজনীন আখতার

প্রথম আলো:

নারীর প্রজনন ও যৌন স্বাস্থ্যের অধিকারকে অগ্রাধিকার দিয়ে জনসংখ্যা উন্নয়ন কর্মসূচি নেওয়ার বিষয়ে কায়রো সম্মেলনে সরকারগুলো অঙ্গীকার করেছিল। আইসিপিডি সম্মেলনের ৩০ বছরে পরিবর্তন এসেছে কতটা?

নাতালিয়া কানেম: ৩০ বছর আগের কায়রোয় অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সময়ের তুলনায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। ওই সময় সরকারগুলোকে বলা হয়েছিল, নারী ও মেয়েশিশুদের কেন্দ্রে রেখে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিলে প্রত্যেকে উপকৃত হবে। কারণ, একজন মা শিক্ষিত হলে সে তার পরিবারকে ভালোভাবে সহায়তা করতে পারে। মা উপার্জন করলে শুধু তার সন্তান নয়, পরবর্তী প্রজন্মের সন্তানেরাও ভালো থাকে। সেই সম্মেলনের সময়ের তুলনায় এখন নারীরা নিরাপদ। ২০০০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।

বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু কমাতে আরও সফল হয়েছে। বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু কমিয়েছে ৩৮ শতাংশ। ১৯৯০ সালের পর থেকে এখন পর্যন্ত বৈশ্বিকভাবে নারীদের আধুনিক জন্মনিরোধক ব্যবহারের হার দ্বিগুণ হয়েছে। ২০০০ সালের পর থেকে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী মেয়েদের সন্তান জন্ম দেওয়ার হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। ৩০ বছর আগে অনেক দেশে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে আইন ছিল না। এখন বাংলাদেশসহ অনেক অনেক দেশে এ–সংক্রান্ত আইন করা হয়েছে। এখন কেউ তার স্ত্রীকে মারধর করে পার পেয়ে যাবে না। তবে এটা ঠিক, কর্মপরিকল্পনাগুলোর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন আমরা করতে পারিনি।

প্রথম আলো:

ঢাকায় সম্মেলনের অভিজ্ঞতা কেমন হলো আপনার?

নাতালিয়া কানেম: তরুণদের ভাবনা উঠে এসেছিল সম্মেলনে। তারা শুধু আলোচনা করার জন্য নয়, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে মূলধারায় যুক্ত করতে বিতর্কের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। তরুণ জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকটের প্রভাব পড়ছে বিশ্বের প্রতিটি কোনায়। যাঁদের বয়স এখন ৩০ বছর এবং যাঁদের ৩০ বছর হয়নি, তাঁরা কায়রো সম্মেলনের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরেছেন। সম্মেলনে যাঁরা কথা বলেননি, তাঁরা বসে থেকে শুনেছেন, শিখেছেন। এখানে আমরা প্রত্যেকেই শিক্ষার্থী। এভাবে তরুণেরা তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারেন। যেসব বিষয়ে তাঁদের অসম্মতি আছে, সেসবও তাঁরা বলতে পারেন। যাতে ভবিষ্যতে আমরা আরও ভালো কোনো সমাধানের দিকে এগোতে পারি। একজন তরুণ মন্ত্রী না হতে পারেন, পিএইচডি ডিগ্রি না নিতে পারেন কিন্তু তরুণেরা হতে পারেন মুখপাত্র।

প্রথম আলো:

গাইবান্ধা ও কক্সবাজার ঘুরে আসার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

নাতালিয়া কানেম: আপনাদের দেশটি সুন্দর। হেলিকপ্টার থেকে দেখা সবুজ এবং নদী দেখতে দারুণ লাগছিল। গাইবান্ধায় গিয়ে সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। গির্জায় গিয়েছি। গোলাপি শাড়ি পরা তিনজন তরুণী মিডওয়াইফের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তাঁদের হাতে জন্ম হয়েছে ৪৯৪ শিশুর। ওই মিডওয়াইফদের ইউএনএফপিএ প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। আগে ওই এলাকায় ৩ শতাংশ অন্তঃসত্ত্বা নারী হাসপাতালে যেতেন সন্তান প্রসবের জন্য। এক বছরের মধ্যে সেখানে এখন ২০ শতাংশ নারী হাসপাতালে প্রসবের জন্য যাচ্ছেন। অলৌকিক পরিবর্তন এসেছে। এ সময়ে মাত্র একজন মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

এখন আমাদের ‘তিন শূন্য প্রতিশ্রুতি’ পূরণ করতে হবে। এগুলো হলো পরিবার পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অপূর্ণ চাহিদা পূরণ, উচ্চ মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, পরিবার ও পরিবারের বাইরে সহিংসতা ও যৌন নির্যাতন দূরীকরণ ও বাল্যবিবাহ নিরোধ।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশের সব জায়গার পরিস্থিতি এমন নয়। বাল্যবিবাহ, কম বয়সে গর্ভধারণ হচ্ছে। এখনো প্রায় ৩৩ শতাংশ সন্তান প্রসব হয় বাড়িতে। তিন হাজারের বেশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণকেন্দ্রে চিকিৎসকের পদ নেই। কী করলে এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটবে?

নাতালিয়া কানেম: এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে বলতে হয়, এ অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন নেতৃত্ব, যা বাংলাদেশের আছে। আপনাদের এমন একজন সরকারপ্রধান রয়েছেন, যিনি বলছেন মিডওয়াইফদের উচিত সন্তান প্রসবে সহায়তা করা। এখন আমরা এটা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছি। অন্তঃসত্ত্বা নারীরা বুঝতে পারছেন, প্রসবের সময় তাঁদের বাসায় থাকা উচিত নয়। এতে তিনি বা তাঁর সন্তানের মৃত্যু হতে পারে।

আর সেবাকেন্দ্রের বিষয়ে বলতে চাই, যদি সেবাকেন্দ্র থাকে, কিন্তু মানুষ তা না জানে, তাহলে মানুষ যাবে না। এমন মানসম্মত হাসপাতাল থাকা উচিত, যেখানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও দক্ষ জনবল থাকবে। পরিবেশ হবে আন্তরিক। এটা আসলে কতটা পরিবর্তন আনতে পারে, তা কমিউনিটির লোকজনকে বুঝতে হবে। আমি চিকিৎসক হয়েও এ বিষয়ে নার্স ও মিডওয়াইফদের এগিয়ে রাখি। কারণ, এলাকার সঙ্গে তাঁদের দৃঢ় বন্ধন থাকে। আমি পানামার, কিন্তু আমি আমার এলাকায় থাকছি না। এমনভাবে কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, যেন লোকজন নার্স ও মিডওয়াইফদের সিদ্ধান্তের মর্যাদা দেয়। একটি মৃত্যু মানেই একটি পরিসংখ্যান নয়। চোখের সামনে থেকে জীবন ঝরে গেলে অসহায় লাগে। অথচ দুদিন আগে হাসপাতালে এলে গল্পটা ভিন্ন হতে পারে।

১২ বছর বয়সী মেয়েটি মা হলে কমিউনিটির লোকজনকে অবশ্যই জিজ্ঞেস করতে হবে ২০২৪ সালে এটা কেন ঘটছে। কোথাও কোথাও ১০ বছর বয়সেও মা হয়। আমি আপনাকে বলছি বাংলাদেশসহ যেসব এলাকায় ইউএনএফপিএ কাজ করছে, সেখানে এটা ঘটছে। সমাজের মানুষকে বুঝতে হবে, বাল্যবিবাহ বড় ধরনের ভুল। তাঁদের আরও বুঝতে হবে, সন্তান জন্ম দিতে যে মা মারা যাচ্ছেন সে নারী নয়, সে একটি মেয়েশিশু।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারে শিশু জন্মের (সি সেকশন) হার প্রায় ৫১ শতাংশ। সি সেকশনের ভয়ে অনেকে হাসপাতালে যেতে চান না। মার্চ মাসে আমাদের ফুটবল খেলোয়াড় রাজিয়া সুলতানা সি সেকশনের ভয়ে হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে সন্তান প্রসবের পর মারা যান। সি সেকশনের হার কমাতে কী করা যেতে পারে?

নাতালিয়া কানেম: যথাযথ প্রয়োগে সি সেকশনে প্রাণ বাঁচে। তবে অপ্রয়োজনীয় সি সেকশন নারী ও নবজাতকের জন্য উল্টো ফল বয়ে আনতে পারে। এ অবস্থা প্রতিরোধে মিডওয়াইফারি মডেলের মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রসব বাড়ানো এবং বেশিসংখ্যক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে সেবাকেন্দ্রমুখী করা সম্ভব।

প্রথম আলো:

আপনি বলছিলেন কায়রো সম্মেলনে গৃহীত কর্মসূচির অনেক কিছুই এখনো অসমাপ্ত। এ কর্মসূচির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে বাংলাদেশের জন্য এ সময়ে সবচেয়ে বেশি কী করা প্রয়োজন?

নাতালিয়া কানেম: বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। বিপুলসংখ্যক অভিবাসী, নদীভাঙন এলাকা থেকে সমতলে আসা মানুষ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ইত্যাদি সার্বিক জনসংখ্যার ওপর প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশ সরকারের কায়রোয় নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুসারে তরুণদের ওপর বিনিয়োগ করছে ইউএনএফপিএ। পরবর্তী প্রজন্মকে প্রস্তুত করছে যেন তাঁরা প্রযুক্তি ও প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। বাল্যবিবাহ বন্ধ, তরুণদের শিক্ষা, কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে ইউএনএফপিএ।

জলবায়ু পরিবর্তনও একটি বিষয়। বাংলাদেশে বর্ষা মৌসুম দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়ায়। জরুরি মানবিক বিপর্যয়ে টিকে থাকার সক্ষমতা তৈরি করতে কাজ করছে ইউএনএফপিএ। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। সরকারের নারী ও মেয়েশিশুর সমতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে তারা। অনেক সমাজের মতো বাংলাদেশের সমাজও পুরুষতান্ত্রিক। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর মতো নারী নেতৃত্ব বড় পরিবর্তন আনতে পারে। মেয়েদের শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। মেয়েদের মাসিকের সময় তাদের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে, যাতে মাসিকের দিনগুলোয় স্কুলে অনুপস্থিত হতে না হয়। মানবাধিকার ছিল কায়রো কর্মসূচির মূল ভিত্তি, সেটাতেই এখানে জোর দেওয়া দরকার।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটকে কীভাবে দেখছেন? অন্যান্য দেশেও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনে কোনো পরিকল্পনা আপনাদের আছে কি?

নাতালিয়া কানেম: কক্সবাজারে ইউএনএফপিএ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাংলাদেশি নারী ও মেয়ে শিশুদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। শরণার্থীশিবিরের কাছে ইউএনএফপির সহায়তায় গড়া ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে সেবা নেওয়া নারীদের ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি। আপনার প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, সমাধান নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে দেশে ফিরতে পারে। তবে এ মুহূর্তে যা পরিস্থিতি, তাতে তাদের নিরাপদে ফেরা কিছুতেই সম্ভব না। আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে এই পুরো অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা আমাদের সহায়তা অব্যাহত রাখব।

প্রথম আলো:

দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় বাংলাদেশ জনমিতিক লভ্যাংশ সুবিধার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কী ব্যবস্থা নিলে এই সুবিধা পেতে পারে?

নাতালিয়া কানেম: দুটি বিষয়ের ওপর জনমিতিক লভ্যাংশ নির্ভর করে। এক. তরুণদের ওপর বিনিয়োগ। দুই. জন্মনিরোধকসামগ্রী ব্যবহার, যা মেয়েদের ক্ষমতায়িত করে। জনমিতিক লভ্যাংশ আসবে, যদি মেয়ে শিক্ষার ওপর বিনিয়োগ করা হয়। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা নয়, মেয়েটি মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে পারছে কি না। এটা অনেক বড় বিনিয়োগ। একটি মেয়ে শিক্ষিত হলে তাঁর পরিবার সুস্থ থাকে। এই বিনিয়োগের ফলে জন্মের সময় কোনো শিশুর মৃত্যু না হওয়া, নারীদের অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, অর্থ বাঁচবে। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুসারে, মেয়েদের শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ করলে তা ৯ থেকে ১০০ গুণ পর্যন্ত ফেরত আসে।

প্রথম আলো:

জনমিতিক লভ্যাংশের কথা বলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিতে এখন ভাটা রয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর ঘাটতি রয়েছে। এটা নিয়ে কী বলবেন?

নাতালিয়া কানেম: এ কারণে ইউএনএফপিএ ক্রমাগত তহবিল সংগ্রহ করছে। কিছু ভালো উদাহরণের জন্য বাংলাদেশকে আমরা বেছে নিয়েছি। কারণ, বাংলাদেশে লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার বিরুদ্ধে কাজ করতে কমিউনিটি পুলিশিং আছে। মিডওয়াইফরা জন্মনিরোধকসামগ্রী সরবরাহ করছেন নারীদের। আরও বেশিসংখ্যক মিডওয়াইফ থাকলে তাঁরা অন্যান্য জন্মনিরোধক পদ্ধতির বিষয়ে নারীদের পরামর্শ দিতে পারবেন, যাতে নারীরা নিজেদের সুবিধামতো পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারেন। দরিদ্র, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, তরুণদের মধ্যে জন্মনিরোধকসামগ্রী সরবরাহ বাড়াতে হবে।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির প্রায় ৯০ শতাংশই নারীর জন্য। এটা নারীর ওপর বোঝা বলে মনে করেন কি?

নাতালিয়া কানেম: এটা বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশের জন্যই সত্য। বেশির ভাগ জন্মনিরোধক পদ্ধতি নারীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। এটা স্বাস্থ্যগত দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ দুই দিক দিয়েই নারীর জন্য অসামঞ্জস্যপূর্ণ বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এটাও স্বীকার করতে হবে যে জন্মনিরোধক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনাসহ নিজের প্রজননস্বাস্থ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়িতও হয়। নারীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক সুযোগের জন্য এই ক্ষমতায়ন জরুরি। এরপরও বলা যায়, পরিবার পরিকল্পনায় পুরুষের সম্পৃক্ততা আরও বাড়াতে কনডম ও ভ্যাসেকটমির পাশাপাশি পুরুষের জন্য আরও বেশি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

প্রথম আলো:

নারীদের ওপরও সামাজিক দায়িত্বের বোঝাও বেশি কি না?

নাতালিয়া কানেম: এটা একটি বিষয় যে নারীদের খুব বেশি দায়িত্ব নিতে হয়। পরিবারের শিশু থেকে বৃদ্ধ সদস্যদের যত্ন নিতে হয়। পুরুষদের এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে এগিয়ে আসা উচিত। পুরুষদের লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা দূর করতে কাজ করতে হবে। বাড়িতে নারীর সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। পরিবারের নারী ও মেয়েদের প্রতি তাদের ভূমিকা আরও ভালোবাসাপূর্ণ হতে হবে। ভালোবাসা থেকে পরিবারে সুখ আসে। তাই একটি সুখী পরিবার পেতে অবশ্যই পরিবারের নারী, মেয়েশিশু ও বৃদ্ধদের দৃশ্যপটে আনতে হবে।

প্রথম আলো:

আপনাকে ধন্যবাদ।

নাতালিয়া কানেম: আপনাকেও ধন্যবাদ।