উন্নয়নের একমাত্রিক দর্শনে বাংলাদেশ আটকে গেছে

হোসেন জিল্লুর রহমান। অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে করণীয় কিছু দিক ও দেশের সামগ্রিক উন্নয়নদর্শনের সমস্যা নিয়ে।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া

হোসেন জিল্লুর রহমান

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অর্থনীতির বর্তমান কঠিন সময় নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। আপনার বিবেচনায় এই কঠিন সময়ের মূল চ্যালেঞ্জ কী কী?

হোসেন জিল্লুর রহমান: আমি বিষয়টিকে দুই ভাগে ভাগ করে দেখতে চাই। প্রথমত, বর্তমান মূল্যস্ফীতি, ইউক্রেন যুদ্ধ, খাদ্য ও জ্বালানিসংকট, রিজার্ভের ওপর চাপ বা টাকার মান কমে যাওয়ার মতো দিকগুলো সামাল দেওয়ার বিষয়টি আমাদের সরকারের ব্যবস্থাপনা ও নীতির ওপর নির্ভর করছে। নানা কৌশল অবলম্বন করে অনেক দেশ এগুলো সামাল দিচ্ছে, দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। মুদ্রার মান বা রিজার্ভ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আমাদের সরকারও কিছু কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এটা একটা দিক। এর সঙ্গে আমি যেটাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, তা হলো বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ ও এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি। শুধু সংকট মোকাবিলার দিকে সব নজর দিয়ে আমরা যেন অর্থনৈতিক উত্তরণের বিষয়টিকে বাধাগ্রস্ত না করি। আমি মনে করি, বর্তমান সংকট মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উত্তরণ, মানে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর ও এসডিজির লক্ষ্য অর্জন—এই দুটি ক্ষেত্রে সমান্তরালভাবে কাজ করতে পারাই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তবে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমি গত এক দশকের উন্নয়নপ্রক্রিয়ার কাঠামোগত সমস্যাকেও দায়ী করতে চাই।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সেগুলো কী?

হোসেন জিল্লুর রহমান: আমি মনে করি, তিনটি সংকট রয়েছে। প্রথমত, উন্নয়নের একমাত্রিক দর্শনে আমরা বাংলাদেশকে আটকে ফেলেছি। উন্নয়ন বলতে আমরা বৃহৎ অবকাঠামোকে ধরে নিয়েছি। কিন্তু উন্নয়নের অনেক সূচক রয়েছে। স্বাস্থ্য সূচকে আমরা কোথায় আছি? স্বাস্থ্যসেবা নিতে মানুষের নিজের পকেট থেকে খরচ বাড়ছে, সেবার মান খারাপ হচ্ছে। দূষণের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, শিক্ষার মানের অবনতি হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে নজর দেওয়াকে আমরা উন্নয়নদর্শনের বাইরে রেখেছি। এই যে পরিস্থিতি, এটা শুধু সংকট নয়, এটা আসলে স্ব-আরোপিত একটি ফাঁদ। সুষম উন্নয়নদর্শন থেকে আমরা দূরে সরে গেছি। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার সংকট। দীর্ঘ সময় ধরে এটা চলে আসছে। সবকিছুতে রাজনৈতিক বিচার-বিবেচনার কারণে মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন হচ্ছে না। সবকিছু হচ্ছে দলীয় বিবেচনা থেকে। মেধা ও দক্ষতার মূল্যায়ন না হওয়ায় অর্থনৈতিক ক্ষতি রয়েছে। আগে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী বা আমলাদের বেতন-ভাতা কম ছিল। যেকোনো বিবেচনায় তাঁদের এখন মাত্রাতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আমলাতন্ত্রের দক্ষতা কি বেড়েছে? এডিপি বাস্তবায়নের অবস্থা দেখলেই তা টের পাওয়া যায়। দক্ষতার ঘাটতি, লাগামহীন খরচ, যথাসময় প্রকল্প শেষ না হওয়া—এসব চলছেই। বিনিয়োগ ২২ থেকে ২৩ শতাংশে আটকে আছে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের উদ্যোগের কথা শুনেছি কত আগে। এর কোনো অগ্রগতি নেই। তৃতীয়টি হচ্ছে সামাজিক পুঁজিকাঠামোয় ধস। রাজনৈতিক কারণেই এমনটি হয়েছে। একসময় আমাদের অন্যতম পুঁজি হিসেবে বিবেচিত ছিল সামাজিক পুঁজি। উন্নয়নপ্রক্রিয়ায় এর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জনগোষ্ঠী এখন সামাজিক কোনো উদ্যোগে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে না। রাজনৈতিক বিভক্তি, সংঘাত, সহিংসতা, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য নানা ভয়ের কারণে মানুষ সতর্ক হয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বা পুলিশি হয়রানির ঝামেলা এড়াতে অনেকেই উদ্যোগহীন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সরকারব্যবস্থা সামাজিক পুঁজির অন্যতম বাহন হিসেবে কাজ করে। দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর তা ধ্বংস হয়েছে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় গরিব মানুষ চরম চাপে পড়েছে। এই চাপকে সহনীয় করতে এখনই করার মতো কী কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

হোসেন জিল্লুর রহমান: দরিদ্র মানুষকে সহায়তার কিছু কর্মসূচি চালু আছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু দরিদ্ররা নয়, মধ্যবিত্তরাও চাপে পড়েছে। করোনার কারণে দারিদ্র্যের পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সেই পরিসংখ্যান নেই, কিন্তু টিসিবির ট্রাকের সামনের লাইন দেখে আমরা অনেক কিছুই বুঝতে পারি। এটা হচ্ছে দারিদ্র্যের দৃশ্যমান সূচক। দেশের গ্রামাঞ্চলে সাড়ে ৬২ লাখ গরিব পরিবারকে কম দামে চাল দেওয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতে নগর দরিদ্রদের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। টিসিবির কার্যক্রম বাড়াতে হবে। এখানে দক্ষতার বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে। কারণ, সহায়তা দিতে চাইলেও কাকে দেওয়া হবে বা হবে না, তা ঠিক করা এক বড় সমস্যা। সঠিক তালিকা তৈরি করতে হবে। কাজটি দলীয়ভাবে করলে হবে না। অনেক এনজিও আছে, যাদের এসব কাজে দক্ষতা রয়েছে, তাদের কাজে লাগানো জরুরি। আরেকটি কাজ সরকার করতে পারে। বর্তমানে ৭৮ লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থীকে সরকার বৃত্তি দেয়। এই টাকা পরিবারের কাছে চলে যায় ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে। এর মানে প্রায় ৭৮ লাখ পরিবারের কাছে পৌঁছানোর মতো একটি ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। সেই বৃত্তির টাকা বাড়ানো হলে পরিবারগুলো উপকৃত হবে। অথবা সাময়িক পদক্ষেপ হিসেবে সেই পরিবারগুলোয় একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সহায়তার অর্থ পাঠানো যায়।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনার কারণে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কতটা বেড়েছে বা কত মানুষ দরিদ্র থেকে অতি দরিদ্র হয়েছে—এসব সংখ্যা ও তথ্য নিয়ে মতভেদ আছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে হলে বা তাদের জন্য বরাদ্দ রাখতে হলে তো যথাযথ তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। তথ্য-উপাত্তের ঘাটতি ও বিশ্বাসযোগ্যতার অভাবকে কীভাবে দেখছেন?

হোসেন জিল্লুর রহমান: তথ্যের ঘাটতি আছে—এটা সত্য। আবার যে তথ্য আছে, তার ওপর ভিত্তি করে সরকার কাজ করবে কি না, সেটাও একটি বিষয়। এখানে নিয়তটা বড় বিষয়। করোনার সময় দারিদ্র্যের পরিস্থিতি, সংখ্যা ও নতুন দারিদ্র্যের ধরন বোঝার জন্য আমরা নিজেদের মতো কাজ করেছি। আরও কেউ কেউ করেছে। সরকার তখন বলেছিল যে তারা একটি জরিপ করবে, কিন্তু দুই বছর পার হয়ে গেছে, তারা কিছু করেনি। আমাদের পরিসংখ্যান ব্যুরোর সক্ষমতা ও দক্ষতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অধীন তাদের চলতে হয়। সরকারের চাওয়ার সঙ্গে মিলিয়ে তাদের কাজ করতে হয়। কোনটা করবে বা কোনটা করবে না, সেই সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর নির্ভর করে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে তথ্য সরকারের উন্নয়ন বয়ানের সঙ্গে মেলে না, তা নিয়ে সরকার অস্বস্তিতে ভোগে। আসলে তথ্য নিয়ে দ্বিধা থাকা উচিত নয়। আর তথ্যের জগৎকে দুর্নীতি থেকে মুক্তি দেওয়া জরুরি।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: সামনে বাজেট আসছে। এবারের বাজেটে কোন দিকগুলো আপনার মনোযোগের কেন্দ্রে থাকবে?

হোসেন জিল্লুর রহমান: বাজেটের দুটি দিক থাকে। একটি বরাদ্দের হিসাব-নিকাশ। অন্যটিকে বলা যায় বাজেট সাহিত্য বা বাজেটের বয়ান। দ্বিতীয় দিকটিতেই সরকারের নীতি-কৌশলের বিষয়টি বোঝা যায়। আগেই বর্তমান সময়ের দুটি চ্যালেঞ্জের কথা বলেছি—বর্তমান সংকট মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক উত্তরণকে ধরে রাখা। মানুষ এখন কষ্টে আছে। সামাজিক সুরক্ষার দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, খাদ্যমূল্যই একমাত্র বিষয় নয়; খাদ্যবহির্ভূত অনেক কিছুই জনগণের জন্য বড় চাপ হিসেবে হাজির আছে। বিদ্যুতের দাম বা শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে তাদের বড় খরচ করতে হচ্ছে। দেখতে হবে, এসব লাঘবের উদ্যোগ বাজেটে কতটা থাকে। এ সুযোগে আরও একটি কথা বলে নিই, জনগণের কষ্ট লাঘব করার ছোট ছোট জায়গা রয়েছে। একটি দৃষ্টান্ত দিই। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে জনগণ যে অর্থ পাঠায়, সেখানে অর্থ স্থানান্তরের খরচ সহজেই কমানো যায়। সরকার ব্যয় সংকোচনে প্রকল্প গ্রহণ ও বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়ার কথা বলেছে। এটা নিবিড়ভাবে দেখতে চাই যে সরকার কোন প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকারের মধ্যে রাখে আর কোনগুলো বাদ দেয়। দেখতে হবে, অদক্ষ খরচ কমাতে সরকার কী কী উদ্যোগ নেয় বা বিলাসদ্রব্য ও অহেতুক বিদেশ সফর বন্ধে বাজেটে কী নির্দেশনা থাকে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অনেকেই মনে করেন, আমাদের দেশে করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর একটি হচ্ছে শিক্ষা। এই ক্ষতি পূরণে কী করা উচিত বলে মনে করেন? আপনার কোনো পরামর্শ...

হোসেন জিল্লুর রহমান: শিক্ষা নিয়ে আমাদের যেমন সতর্ক থাকতে হবে, তেমনি সাহসী হতে হবে। করোনার কারণে যে শিখনঘাটতি হয়েছে, এর কারণে শিক্ষায় ঝরে পড়া বাড়ছে। শিখনঘাটতি এক বড় সমস্যা তৈরি করেছে। আমরা পিপিআরসির পক্ষ থেকে বিআইজিডির সঙ্গে মিলে একটি জরিপ করেছিলাম। সেখানে দেখেছি, প্রাথমিকে শিখনঘাটতি যেখানে ২১ ভাগ, মাধ্যমিকে তা ২৫ ভাগ। এই শিখনঘাটতি মোকাবিলায় কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এই শিখনঘাটতি মোকাবিলায় বিশেষ প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত বলে মনে করি। বাজেটে এর বরাদ্দ হয়ে যাক, বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, তা পরে ঠিক করা যাবে। আর এই শিখনঘাটতি মোকাবিলার উদ্যোগ স্কুলনির্ভর হলে হবে না; কমিউনিটি পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এসব কাজে এনজিওগুলোকে যুক্ত করলে ফল পাওয়া যাবে।

আগেই উল্লেখ করেছি, করোনার কারণে মাধ্যমিক স্তরে শিখনঘাটতি তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি। অথচ মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর হচ্ছে মাধ্যমিক স্তর। এখান থেকেই অনেকে শ্রমবাজারে ঢোকে। আমি মনে করি, দেশে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার মান উন্নয়নে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া উচিত। দেশের প্রাথমিক স্কুলগুলোর মধ্যে ৯৭ ভাগই সরকারি অথচ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ঠিক এর উল্টো। এখানে প্রায় ৯০ ভাগই বেসরকারি। এখানে পরিবর্তন আনতে হবে। আমরা দেখছি, এমপিওভুক্তি কার্যকর কোনো ফল দিচ্ছে না। এতে বরং স্কুলগুলোয় সরকারি হস্তক্ষেপ বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, স্কুল অনেক আছে, কিন্তু সংকটটি ভালো স্কুলের। এমপিওভুক্তির বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। মাধ্যমিক পর্যায়ে শতভাগ সরকারি স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সরকার দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে ১০০০ শতভাগ সরকারি স্কুল তৈরির মেগা প্রকল্প হাতে নিতে পারে। এটা করতে পারলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাজের কাজ কিছু হতে পারে।

আরেকটি চাওয়া হচ্ছে, শিক্ষা খাতে সরকার বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়, সেখানে এটা স্পষ্ট থাকা উচিত, কতটা অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আর কতটা শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: করোনা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের অনেক সমস্যা, দুর্নীতি ও অদক্ষতার বিষয় সামনে এনেছে। বাজেট সামনে রেখে স্বাস্থ্য খাতের ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট কোনো পরামর্শ আছে কি?

হোসেন জিল্লুর রহমান: আপনি যে সমস্যাগুলোর কথা বললেন, সেগুলো আছে। আমি একটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী; সেটা হচ্ছে নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্য। নগরের দরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেই বললেই চলে। অধিকাংশ দরিদ্র মানুষকে নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে সেবা নিতে হয়। নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্প নেওয়া উচিত। ভারতের দিল্লিতে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে সফল একটি উদ্যোগ হচ্ছে নগর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার উদ্যোগ। মহল্লা ক্লিনিক হিসেবে এগুলো পরিচিত। আরেকটি বিষয় হচ্ছে আমাদের দেশে সব উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আছে, কিন্তু সদর উপজেলাগুলোয় নেই। প্রতিটি সদর উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স করা জরুরি। এ দুটি বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার বর্তমান অর্থনৈতিক ভাবনা ও ধ্যানধারণাকে কীভাবে দেখছেন? সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ও নীতিতে কী পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করেন?

হোসেন জিল্লুর রহমান: আমাদের দেশে যাঁরা অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের মনোযোগের কেন্দ্রে থাকে সামষ্টিক অর্থনীতির সূচক, জিডিপি, ব্যালান্স অব পেমেন্ট, মুদ্রার মান—এসব। মধ্যম অর্থনীতি বলে যাকে আমরা বিবেচনা করি, অর্থাৎ এসএমই খাত, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প—এগুলো যথাযথ নীতিসহায়তার বাইরে থেকে যাচ্ছে। এই শিল্পগুলো সাপ্লাই চেইনের মাঝামাঝি অবস্থান করে। সামষ্টিক অর্থনীতি দিয়ে হয়তো অতি ধনী হওয়া যাবে, কিন্তু সুষম উন্নয়ন হবে না। ভবিষ্যতের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রবৃদ্ধির নতুন চালক তৈরি করা এবং মধ্যম অর্থনীতির মাধ্যমেই তা করা যেতে পারে। কৃষিকে আমরা মূলত খাদ্যনিরাপত্তার রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচনা করি। কৃষিকে প্রবৃদ্ধির চালকে রূপান্তরিত করতে হবে এবং তা বিবেচনায় রেখে নীতিসহায়তা দিতে হবে। মধ্যম অর্থনীতি সামনে নিয়ে আসার মাধ্যমে আমাদের অর্থনৈতিক চিন্তায় বড় ধরনের বদল আনতে হবে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান ধ্যানধারণা ও উন্নয়নদর্শন পুরোপুরি বদলে ফেলার সময় এসেছে। আমাদের নতুন উন্নয়নদর্শন নিয়ে কাজ করতে হবে, একমাত্রিক উন্নয়নদর্শন থেকে সরে আসতে হবে। সুষম উন্নয়নের ঘাটতি দূর করার দিকে মনোযোগী হতে হবে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

হোসেন জিল্লুর রহমান: আপনাকেও ধন্যবাদ।