জনগণের স্বাস্থ্যসচেতনতাই সংক্রমণ কমাতে পারে

এম এ ফয়েজ মেডিসিনের অধ্যাপক। ঢাকা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্বও পালন করেছেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার নতুন আশঙ্কা এবং তা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি, সামর্থ্য ও সীমাবদ্ধতা বিষয়ে তিনি প্রথম আলোর মুখোমুখি হন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান

এম এ ফয়েজ
ছবি : সংগৃহীত

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: নীতিনির্ধারকেরা বলেছেন, শীতকালে নতুন করে করোনার সংক্রমণ ঘটতে পারে। আপনি কীভাবে দেখছেন।

এম এ ফয়েজ: বাংলাদেশে শীতের মৌসুম নভেম্বর-জানুয়ারিতে। তাপমাত্রা কিছুটা কমে কয়েক সপ্তাহ ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে চলে আসে। শীতকালে শ্বাসযন্ত্রের ভাইরাসজনিত বিভিন্ন সংক্রমণের প্রাদুর্ভাব ঘটে। আমাদের এখনো ব্যাপক আকারে বয়স্কদের ফ্লু ও অন্যান্য ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগ বাড়িতে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাও নেই। এ সময় মানুষ একসঙ্গে বদ্ধ ঘরে, কম বায়ু সঞ্চালন হয় এমন স্থানে এবং গাদাগাদি অবস্থায় থাকে। এমন পরিস্থিতি করোনা সংক্রমণের উঁচু ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীতের সময় ঠান্ডার কারণে যথাযথ পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি কমে যায়, হাত ধোয়া কমে যেতে পারে। এ ছাড়া শারীরিক দূরত্ব মেনে চলা না গেলে শীতের সময় শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ বাড়তে পারে। পরীক্ষা করা ছাড়া কোভিড-১৯ সংক্রমিতদের থেকে এদের সহজে আলাদা করা যাবে না। কিন্তু আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।

প্রশ্ন :

অনেকে বলছেন, সংক্রমণের ‘দ্বিতীয় ঢেউ’ আসতে পারে। তবে ‘স্পাইক’ বা চূড়ায় উঠবে না। মৃত্যুর সংখ্যা বা ভয়াবহতা ইউরোপের মতো হবে না।

এম এ ফয়েজ: কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণের মৌলিক আবশ্যিক কর্মকৌশলসমূহ অনুসরণ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার গুরুত্বসহকারে তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে। যেমন দ্রুত রোগ নির্ণয় করে শনাক্তকরণ, রোগী পৃথক্‌করণ (আইসোলেশন), সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের বিচ্ছিন্নকরণ (কোয়ারেন্টিন), মৃত্যু কমানোর জন্য প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে প্রেরণ করে গুরুত্ব অনুযায়ী চিকিৎসা প্রদান উল্লেখযোগ্য। এসব অনুসরণ করে অনেক দেশ সুফল পেয়েছে, রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও কার্যকর ভাইরাসবিরোধী ওষুধ ও ভ্যাকসিন এখনো প্রয়োগ করার পর্যায়ে না আসায় এ রোগের বিস্তার অব্যাহত থাকার আশঙ্কা রয়েছে। কমিউনিটি সংক্রমণ বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, তাতে জনসংস্পর্শসহ অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যত বাড়বে, সংক্রমণ তত বৃদ্ধির ভয় রয়েছে।

প্রশ্ন :

টেস্টের সংখ্যা প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার করার আর কোনো দরকার নেই। আপনি একমত?

এম এ ফয়েজ: উপসর্গের পাশাপাশি করোনা নির্ণয়ে সুনির্দিষ্ট পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। করোনা সংক্রমণ নতুন রোগ কিন্তু এরপরও দ্রুততার সঙ্গে এর নির্ণয় পদ্ধতি আবিষ্কার, ব্যবহার শুরু, অব্যাহত উন্নয়ন ও প্রয়োগ করা হচ্ছে। বাংলাদেশেরও টেস্ট করার সক্ষমতা অনেক
বেড়েছে (১০৩ পিসিআর ল্যাব)। নতুন নতুন ও দ্রুত-সহজ পরীক্ষা পদ্ধতি, অ্যান্টিজেনভিত্তিক পরীক্ষা অনুমোদন করা হয়েছে। সংক্রমণ সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে ভাইরাস নির্ণয় পরীক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সরকার সন্দেহভাজন রোগীদের পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত করছে। টেস্ট সংখ্যা যত বাড়বে, শনাক্তকরণ সংখ্যাও আনুপাতিক হারে বাড়বে। শনাক্তকরণ–পরবর্তী উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে।

প্রশ্ন :

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর কম দরকার। কারণ, হাই ফ্লো অক্সিজেন দিয়েই কাজ হচ্ছে। মন্তব্য করুন।

এম এ ফয়েজ: চিহ্নিত রোগীদের আলাদা করে তঁাদের অবস্থার স্তর অনুযায়ী চিকিৎসা নীতিমালা আছে। পর্যবেক্ষণ, ল্যাব পরীক্ষার পর রোগের ধরন অনুযায়ী ওষুধ, বিভিন্ন ধরনের অক্সিজেন সরবরাহব্যবস্থাসহ প্রয়োজনে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা অন্যতম। রোগীদের মধ্যে কারা মৃদু অবস্থা থেকে মারাত্মক বা ক্রিটিক্যাল অবস্থায় চলে যাবেন, তা সহজে বুঝতে পারার পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। মৃদু ও মাঝারি ধরনের কোভিড-১৯ রোগীদের যথাযথ পর্যবেক্ষণসহ চিকিৎসা দেওয়া গেলে অধিকতর জটিল রোগীর সংখ্যা কমতে পারে। গুরুতর রোগীদের গুণগত সেবা প্রদানে কিছুটা টেকনিক্যাল বিষয় আছে। এ জন্য নিবিড় শ্রম ও অর্থ প্রয়োজন। এসবের সংযুক্তিসহ অধিকতর সক্ষমতা বাড়ালে একই ধরনের অন্যান্য রোগীরও চিকিৎসায় সহায়ক হবে। এসব বিবেচনায় এনে সরকার জেলা পর্যায় পর্যন্ত ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে।

প্রশ্ন :

আপনার কি মনে হয়, কোনো কারণে লকডাউন পুনরায় দরকার পড়লে মানুষ তা মানবে? না কার্যকর করা গেলে কী হবে?

এম এ ফয়েজ: দেখুন, বৈশ্বিক মহামারির প্রথম পর্যায় পার করছে গোটা বিশ্ব। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। আমরা কি কল্পনা করেছিলাম, ব্যাপকভাবে দুনিয়াজুড়ে এমন জনস্বাস্থ্য কর্মযজ্ঞ অনুসরণ করতে হবে? দেখা যাচ্ছে, জনসচেতনতা বাড়িয়ে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ সম্ভব। আসলে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসাধারণের জনস্বাস্থ্যবিষয়ক ক্ষমতায়নের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু সেটা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত বলা যাবে না। অবশ্য এটাও বলব যে সংক্রামক ব্যাধি আইন ও দুর্যোগবিষয়ক আইনসমূহ (স্ট্যান্ডিং অর্ডার অব ডিজাস্টার) কার্যকরভাবে অনুসরণের সুযোগ আছে।

প্রশ্ন :

যদি ধীরে ধীরে বিমানবন্দরগুলো সচল হতে থাকে, তখন দেখা যাবে উন্নত বিশ্ব পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে। আর আমরা পারছি না। তখন তো বাইরে থেকে আসা বিপদ বাড়বে। কী করণীয়?

এম এ ফয়েজ: বিশ্বায়নের যুগে বৈশ্বিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকতে হবে সন্দেহ নেই। সম্পৃক্ততার জন্য ভ্রমণবিষয়ক পালনীয় নিয়মরীতি অনুসরণ করা বিষয়ক মৌলিক জনস্বাস্থ্য রীতিনীতি প্রবর্তন, উন্নয়ন, প্রয়োগের সুযোগ এনে দিয়েছে কোভিড-১৯।

প্রশ্ন :

হাসপাতালগুলোর বেড খালি পড়ে আছে। যখন দরকার পড়বে, তখন সেখানে সুচিকিৎসা মিলবে, তার ভরসা তৈরি হয়েছে কি না?

এম এ ফয়েজ: দ্রুত সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন মহামারিতে অভিযোজিত স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনার বাস্তবায়ন ঘটছে। যেমন অনেকগুলো শয্যা স্বাস্থ্যব্যবস্থায় যুক্ত হয়েছে। এগুলো স্থিতিশীল প্ল্যাটফর্ম (যেমন অবকাঠামো, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্যসেবাকর্মীদের প্রশিক্ষণ) ও দ্রুত পরিবর্তনশীল সূচকসমূহের (যেমন সঙ্গনিরোধ ও বিচ্ছিন্নকরণ ইউনিট) জন্য কৌশলগতভাবে এবং কৌশলের অংশ হিসেবে তৈরি তৈরি হয়েছে বলে আমি মনে করি। এতে কোভিড-১৯সহ ভবিষ্যতে আসা নতুন স্বাস্থ্য হুমকি দ্রুত নির্ণয় ও ব্যবস্থা গ্রহণে আমরা সক্ষম হব।

প্রশ্ন :

গত ছয় মাসের অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ডাক্তার, নার্সদের পেশাদারি, উৎকর্ষ, সার্বিক ব্যবস্থাপনার মানে কি উন্নতি লক্ষ করেন?

এম এ ফয়েজ: স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা একটি দলগত জটিল বিষয়। এর বেশ কিছু উপকরণ ও নিয়ম আছে। প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা এর অবিচ্ছেদ্য অংশ। গুণগত স্বাস্থ্য পেশাজীবী তৈরি সময়ের ব্যাপার। কোভিড-১৯ শুরুর সময় থেকে বিভিন্নমুখী কর্মসূচি, গাইডলাইন ও দলিল, অর্থের ব্যবস্থা, উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পৃক্ততা ও পেশাজীবী গোষ্ঠীর অংশগ্রহণ লক্ষণীয়। ইতিমধ্যে মহামারি প্রস্তুতি ও প্রতিক্রিয়া কর্মপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ যাতে কোভিড-১৯ রোগ ও মৃত্যুহার কমিয়ে সংক্রমণ কমাতে সক্ষম হয়, সে জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৭ আগস্ট ২০২০ মহামারি নজরদারিবিষয়ক হালনাগাদকৃত দলিল প্রকাশ করেছে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশে স্পাইক বা চূড়া উঠে নেমে গেছে—এমনটি কি বলা যায়? সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ড. বিজন কুমার শীল শনিবার আমাদের বললেন, সংক্রমণ যেহেতু চূড়া থেকে নামেনি, তাই ‘দ্বিতীয় ঢেউ’–এর কথা কোথা থেকে আসছে? গত ছয় মাস আমাদের অবস্থা মালভূমির মতো হয়ে আছে।

এম এ ফয়েজ: কী কী কারণে বাংলাদেশে চূড়ার ব্যাপকতা বেশি হয়নি, তা পর্যালোচনা ও গবেষণার বিষয়। পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তকরণ ধারণা দেবে মাত্র। রোগনির্ণয় হয়নি, এমন জনসংখ্যা কত, তা নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা চলছে, প্রকাশিত হলে আরও পরিষ্কার হওয়া যাবে। এখনো সামাজিক সংক্রমণ চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা কম রোগী শনাক্ত হচ্ছে, তাই বলে সংক্রমণ কমে গেছে বলার জন্য তথ্য–উপাত্ত যথেষ্ট সবল নয়। উল্লিখিত পদ্ধতিসমূহ প্রয়োগ করে সংক্রমণের অবস্থা, উপাত্তের ভিত্তিতে সংক্রমণের সার্বিক অবস্থা বলা যাবে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের নাগরিক জীবন দেখলে করোনা আছে বলেই মনে হবে না। অথচ বিএসএমএমইউতে প্রতিদিন গড়ে চার শ রোগী যাচ্ছে।

এম এ ফয়েজ: সরকার সংগত কারণে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসমূহে পৃথক সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ চালুর পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করতে আগ্রহী। অব্যাহত নন-কোভিড স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখাও আবশ্যক। একই হাসপাতালে অন্যান্য অনেক ধরনের বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবার মতো কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবা সংক্রামক ব্যাধি স্বাস্থ্যসেবায় রূপান্তরিত হতে পারে। বিএসএমএমইউ দেশের প্রথম বৃহত্তম বিশেষায়িত শিক্ষা, চিকিৎসা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, যাতে ইতিপূর্বে সংক্রামক রোগবিষয়ক পৃথক বিভাগ না থাকাটা দুঃখজনক। সম্প্রতি চালু করার বিষয়টি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য, যা সংক্রামক ব্যাধি বিভাগ হিসেবে অব্যাহত গুণগত চিকিৎসাসেবা, প্রশিক্ষণ ও উচ্চতর মেডিকেল শিক্ষার অংশ হতে পারে।

প্রশ্ন :

জেনেটিক ফ্যাক্টরের কারণে কি বাংলাদেশে মৃত্যু কম? হার্ড ইমিউনিটি কি সুফল দিল? এ ক্ষেত্রে সরকারি পরিকল্পনা কি সুফল দিল?

এম এ ফয়েজ: সীমিত স্বাস্থ্যসেবার ক্ষমতায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে সংক্রমিত কয়েক লাখ রোগীর (৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৭) মধ্যে হাজার পাঁচেক (৫ হাজার ৯৩) আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে (২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০)। কমিউনিটি ও হাসপাতালে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা আগের তুলনায় কিছুটা উন্নতি হলেও এখন আরও ব্যাপক উন্নয়ন প্রয়োজন। তথ্যনির্ভর নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সূচক নিরীক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ। রোগী ও মৃত্যু স্বাস্থ্যব্যবস্থার সক্ষমতার তুলনায় কম কি না, তা বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির কারণে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বেড়েছে কি না (যেমন ডেঙ্গুর সঙ্গে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের কোনো সম্পর্ক আছে কি না, বিসিজি সর্বজনীন প্রচলনের কোনো ভালো দিক আছে কি না), কিংবা জেনেটিক কারণ যুক্ত করা ঢালাওভাবে গৃহীত হবে না। ‘হার্ড ইমিউনিটি’ আসতে হলে ৬০-৭০ শতাংশ জনগণের সংক্রমণ কিংবা ভ্যাকসিন প্রয়োগ হতে হবে।

প্রশ্ন :

অনেকে বলেন, আগের থেকে একটা ‘কাঠামোগত চিকিৎসা’ দাঁড়িয়ে গেছে। অক্সিজেন, ব্লাডথিনার, স্টেরয়েড, প্রটোকল সারা বিশ্বে মোটামুটি দাঁড়িয়ে গেছে। এর বাইরে প্লাজমা, রেমডিসিভির দেওয়া হয়। আপনার মূল্যায়ন কী?

এম এ ফয়েজ: ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়েছে, কোভিড-১৯–এর নতুন জ্ঞান তার চেয়ে দ্রুত ছড়াতে সাহায্য করেছেন স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা। নীতিনির্ধারক, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, স্বাস্থ্য বিভাগ, কমিউনিটি—সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে ভালো হয়। কোভিড-১৯ নির্ণয়, চিকিৎসা, ভ্যাকসিন ত্বরান্বিত করার জন্য বৈশ্বিক কর্মকাণ্ড প্রথম থেকেই শুরু হয়েছে। নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য আসার কারণে সুফলসমূহ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে সমতার ভিত্তিতে প্রয়োগের চেষ্টা অব্যাহত আছে। প্রমাণিত চিকিৎসাব্যবস্থার মধ্যে হেপারিন, ডেক্সামিথাসন উল্লেখযোগ্য। মৃত্যু কমাতে ভাইরাসবিরোধী ওষুধ এখনো প্রমাণের অপেক্ষায়।

প্রশ্ন :

স্বাস্থ্যবিধি অনেকেই মানলেন না, লকডাউন কাজে দেবে না। এটা মেনেও আমরা কি নিশ্চিন্ত থাকব? লকডাউন ভঙ্গ করলে ইংল্যান্ড তো এক হাজার পাউন্ড জরিমানা করছে।

এম এ ফয়েজ: জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে প্রয়োগ করার মতো চুম্বক অংশসমূহ জনগণ বুঝতে পারার মতো করে প্রচার করার বিকল্প নেই। স্বাস্থ্যসচেতন জনগোষ্ঠীই করতে পারে এর প্রয়োগ। যেভাবে জনসাধারণ সম্পৃক্ত হবে, অংশগ্রহণে ক্ষমতায়ন হবে, সেভাবেই নৃতাত্ত্বিক তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এটা বাড়িতে থাকার জন্য, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য, জনসমাগম এড়ানোর জন্য, হাত হাইজিন কিংবা হাঁচি-কাশি শিষ্টাচার অনুসরণ সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেবল শাস্তি ও জরিমানা করে এসব প্রয়োগ করা যাবে না। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অতিরিক্ত সুবিধা দেবে বলে মনে হয় না। কার্যকর পদক্ষেপগুলোর সম্মতি ও আনুগত্য শতভাগ হবে না। স্কুল বন্ধসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে জনগণ তো স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে।

প্রশ্ন :

টিকাদানের প্রস্তুতি নিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট লাগবে। অথচ এর কোনো প্রস্তুতি নেই। অ্যান্টিবডি থাকা লোককে টিকা দিলে কী প্রতিক্রিয়া, তা–ও আমাদের জানা নেই। টিকা আমরা কীভাবে কোন উৎস থেকে নেব?

এম এ ফয়েজ: টিকা রোগনিয়ন্ত্রণের একমাত্র উপায় নয়। টিকার গবেষণা এবং প্রয়োগে নীতিমালা তৈরি চলমান ও অব্যাহত উন্নয়ন চলছে। ভ্যাকসিনবিষয়ক তথ্যসমূহ জনগণকে সহজভাবে প্রদানের ব্যবস্থা জনস্বাস্থ্যে জনগণকে ক্ষমতায়িত ও জ্ঞানী করার অংশ বটে।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

এম এ ফয়েজ: ধন্যবাদ।