বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের খোলস আছে, প্রাণ নেই

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদ দেশের উচ্চশিক্ষা নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোশতাক আহমেদ

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
ফাইল ছবি

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষায় করোনার বর্তমান মহামারির প্রভাব কী পড়ল?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: প্রভাবটি ব্যাপক ও উদ্বেগজনক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগোচ্ছি, কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিকে এক বড়সংখ্যক শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি। কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারব এবং তাতে সব শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারব, তার কোনো সুষ্ঠু উপায় এখনো নির্ধারণ করতে পারিনি। অতিমারি যে দুটি বাস্তবতা তুলে ধরল, সেগুলো হচ্ছে, সমাজের সচ্ছল অংশটিই তথ্যপ্রযুক্তির সুফল ভোগ করছে। আর আমরা কথা বলছি বটে, কিন্তু সে অনুযায়ী কাজ করছি না। এক বছর শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনা থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীদের নির্ভর করতে হয়েছে নিজেদের সক্ষমতার ওপর, কিন্তু উচ্চশিক্ষায় শ্রেণিকক্ষের বাইরেও গ্রন্থাগার ও গবেষণাগারের ভূমিকা অপরিহার্য। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধান, পরামর্শ, দলভিত্তিক পড়াশোনা, টিউটরিয়ালের মতো নিয়মিত শিক্ষার অন্যান্য কার্যক্রমও গুরুত্বপূর্ণ। এসব ক্ষেত্রে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হলো। অনেক পরিবারপ্রধান উপার্জন হারিয়েছেন, অতিমারির কারণে অনেক শিক্ষার্থী টিউশন করে নিজেদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন।

প্রশ্ন :

এসব সংকট থেকে বের হতে হলে আমাদের কী করতে হবে?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: অতিমারি দীর্ঘায়িত হলে সমস্যা জটিল হবে, সংকট উত্তরণ কঠিন হবে। বিনিয়োগ, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি ক্ষেত্রে রাষ্ট্র থেকে পরিবার সবার ঐকান্তিকতা থাকলে সংকট থেকে বেরোনো সম্ভব। শিক্ষায় বড় বিনিয়োগে রাষ্ট্রের অঙ্গীকার থাকতে হবে। আগামী কয়েক বছর জিডিপির শতাংশ হারে বর্তমান বার্ষিক বাজেট বরাদ্দের সঙ্গে অতিরিক্ত অন্তত দেড়-দুই শতাংশ বরাদ্দ যোগ করতে হবে এবং উচ্চশিক্ষায় এর যথাযথ প্রতিফলন ঘটাতে হবে। তাতে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত বৃত্তির ব্যবস্থা করা, অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে অতিমারিজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে সব শিক্ষার্থীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অনেকটাই সম্ভব হবে। কীভাবে অতিমারি-পরবর্তী শিক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে হবে, তথ্যপ্রযুক্তিকে কীভাবে ব্যাপকভাবে সহজলভ্য এবং অংশগ্রহণমূলক করা যাবে, তা নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রয়োজন। শিক্ষা কার্যক্রমের সব ক্ষেত্রে এবং বরাদ্দকৃত অতিরিক্ত তহবিলের সঠিক ব্যবস্থাপনাও উঁচু মাত্রার হতে হবে।

  • উপাচার্যদের কেউ কেউ ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু অনাবশ্যক নির্বাচন তুলে দেওয়া দরকার।

  • বড় গলদ, সংখ্যার দিকে ঝোঁক, মানের দিকে নয়।

  • শিক্ষক নিয়োগে মেধার মূল্য দেওয়া হলে গবেষণা উৎসাহিত হবে।

  • শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না বাড়ালে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৩০-৪০ ভাগ সক্ষমতা নিয়েই চলবে।

প্রশ্ন :

দীর্ঘ আলোচনার পর এবার বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ ভিত্তিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় পুরোনো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় তাতে সম্মত নয়। আপনি এই পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে পরীক্ষার্থীদের সময় ও অর্থের অপচয় এবং তাদের পরিবারের ভোগান্তি অনেকটাই কমবে। সব সময় দেখা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবার পছন্দের শীর্ষে। হয়তো এর কর্তৃপক্ষ ভাবছে, গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিলে সর্বোচ্চ মেধার শিক্ষার্থীদের তারা না-ও পেতে পারে। তারপরও গুচ্ছ পদ্ধতিতে এবার বেশিসংখ্যক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে। এটি সফলভাবে করা গেলে এবং মেধার মূল্যায়ন যথার্থ হলে হয়তো এ নিয়ে যে কিছু বিভ্রান্তি এবং বিরোধিতা আছে, তা দূর হবে। আমি নিশ্চিত, সে রকমটি হলে আগামী বছর ঢাকা ও পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এই পদ্ধতিতে অংশ নেবে।

প্রশ্ন :

ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষার সুপারিশ করেছে। এর বাস্তবতা কী দাঁড়াবে?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: এটি এখনো অনুমানের বিষয়, কারণ অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানেও আছে ব্যাপক তারতম্য। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অর্ধেকের বেশি গ্রহণযোগ্য মানে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে না। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে নিচের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মানের ক্ষেত্রেও তারতম্য আকাশ-পাতাল। এদের ক্ষেত্রে গুচ্ছ পদ্ধতির মাপকাঠি কী হবে? এসব নিয়ে ইউজিসিকে অনেক ভাবতে হবে।

প্রশ্ন :

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের মধ্যে আমরা দলাদলি দেখতে পাচ্ছি। শুধু দল নয়, উপদলও হচ্ছে। নিয়োগে দলীয়করণের অভিযোগ উঠছে। এ থেকে বেরোনোর উপায় কী?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: এটি খুবই দুঃখজনক। শিক্ষকদের প্রধান কাজের ক্ষেত্র শিক্ষা ও গবেষণা, কিন্তু যেহেতু তাঁদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা স্বীকৃত, তাঁরা ঐতিহাসিকভাবে বুদ্ধির আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন; অন্যায়-অবিচার ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, উগ্রতা ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন, স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁদের ভূমিকা দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করেছে, দেশের জন্য অনেক শিক্ষক প্রাণ দিয়েছেন। তাই সমাজ আশা করে তাঁরা মানুষের অধিকারের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে সক্রিয় থাকবেন। কিন্তু এই সক্রিয়তা কোনো ক্রমেই দলীয় রাজনীতিতে রূপ নিতে পারে না। দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়লে, শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কার্যক্রমে দলীয় প্রভাব বিস্তার করলে, তাঁদের অবস্থানটাই তো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এ থেকে বেরোনোর উপায়টি একই সঙ্গে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে খুঁজতে হবে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় যে উপায়ে চলছে, তাতে একজন শিক্ষক বিরোধী কোনো দলের অনুসারী হলে বা দলহীন ও প্রতিবাদী অবস্থানে থাকলে, তাঁর সঙ্গে সরকারপন্থীদের তুলনায় নেতিবাচক আচরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে এর কর্তাব্যক্তিরা চাইলেই দলনিরপেক্ষ অবস্থানে চলে যেতে পারেন না, যেহেতু তাতে সরকারি দলের বিরাগভাজন হবেন। আর দলগুলোও শিক্ষকদের তাদের অঙ্গসংগঠনের সদস্যের ভূমিকায় রেখে দলের স্বার্থে ব্যবহার করতে চায়। আমি মনে করি, দলগুলো যদি এই সত্যটা মেনে নেয় যে শিক্ষার একটা সংস্কৃতি আছে, শিক্ষার রাজনীতিও আছে, যা গণমুখী, উদারপন্থী, প্রাগ্রসর, যা সমাজ ও মানুষের প্রতি শিক্ষার্থীদের দায়বদ্ধ করে, যা দলীয় রাজনীতি বিনষ্ট করে, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্বায়ত্তশাসনকে তারা সম্মান করবে। যদি শুধু মেধার বিবেচনায় শিক্ষক ও কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপাচার্য নিয়োগ নিশ্চিত হয়, তাহলে দলীয় রাজনীতির শৃঙ্খল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মুক্ত হবে।

প্রশ্ন :

বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। তদন্তে অনিয়ম ধরাও পড়ছে। এত মর্যাদাবান পদের অনিয়ম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা কীভাবে মুক্ত করব?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: এর উপায় একটু আগেই উল্লেখ করেছি। উপাচার্যদের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয় এবং উপাচার্য হওয়ার জন্য অনেক শিক্ষক আদাজল খেয়ে নেমে পড়েন, অনেক ক্ষেত্রে নৈতিকতার সঙ্গে আপস করেন। উপাচার্যদের এখন পতাকাবাহী গাড়ি দেওয়া হয়, কেন কে জানে। এতে ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে কেউ কেউ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। মেধা ও যোগ্যতার নিরপেক্ষতা বিচারে বিবেকবান ও নীতিমান শিক্ষকদের উপাচার্য করা হলে এই অবস্থা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন :

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষকদের বিবেকের স্বাধীনতার কথা ভেবে ১৯৭৩ অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন। শিক্ষকেরা সে মর্যাদা রক্ষা করতে পারছেন? বর্তমান বাস্তবতায় ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ কি সংশোধন করা উচিত?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: ১৯৮০-র দশক পর্যন্ত বেশির ভাগ শিক্ষকই সেই মর্যাদা রেখেছেন। ১৯৯০ সালে দেশে গণতন্ত্র এলে দলীয় রাজনীতির প্রকোপে স্বায়ত্তশাসন শক্তি হারাল। এখন স্বায়ত্তশাসনের খোলসটা আছে—অর্থাৎ নির্বাচন আছে, কিন্তু প্রাণটা নেই। ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের তেমন সংশোধন প্রয়োজন নেই, শুধু কিছু অনাবশ্যক নির্বাচন—যেমন ডিন নির্বাচন, যা শিক্ষক নিয়োগে দলীয় প্রভাব বিস্তারের একটি মূল কারণ, তুলে দিলেই হবে। আইন সংশোধন বা নতুন আইন তৈরি কোনো কাজে আসবে না, যত দিন শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজনৈতিক দল সবাই মুক্তচিন্তা, বিবেকের স্বাধীনতা, শিক্ষাঙ্গনে দলীয় রাজনীতির ক্ষয়কারী প্রভাব সম্পর্কে একটা অভিন্ন অবস্থানে পৌঁছে স্বায়ত্তশাসনের প্রাণটাকে প্রতিষ্ঠা করতে একমত হবেন।

প্রশ্ন :

দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন ৪৬টি। আরও কয়েকটি স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া অনুমোদন হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১০৭টি। এত বিশ্ববিদ্যালয়ের কি দরকার আছে? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত মান কি আমরা রক্ষা করতে পারছি?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয়ের দরকার আছে, তবে তা হতে হবে এর অপরিহার্যতা, প্রকৃতি ও ধরন, গঠন এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ সমীক্ষার পর। যেমন আমাদের একটি গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজন, কিন্তু এটি স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক কোথায়? এ জন্য প্রথমে ওই সমীক্ষা, তারপর ক্ষেত্র প্রস্তুত, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। তা ছাড়া শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ না বাড়ালে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ৩০-৪০ ভাগ সক্ষমতা নিয়েই চলবে। তাতে শিক্ষার মান উন্নত হওয়া দূরের কথা, চলতি মানও ধরে রাখা মুশকিল।

প্রশ্ন :

বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। দু-একটি থাকলেও একেবারে তলায়। গলদ কোথায়?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ে অনেকগুলো পরিমাপক আছে, যেগুলোর মধ্যে আছে একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, শিক্ষকদের গবেষণা ও গবেষণাকাজের স্বীকৃতি এবং অন্যান্য গবেষণায় সেসবের উদ্ধৃতি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর অনুপাত প্রভৃতি। এসবের কোনোটিতেই আমরা এগিয়ে নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথাই ধরুন, অনেক বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় প্রতিবছর ১৬০-১৬৫ জন করে। এঁদের সবাইকে জায়গা দেওয়ার মতো শ্রেণিকক্ষ আছে খুবই কম। তাহলে পড়ানোর মান বাড়বে কীভাবে? একটা বড় গলদ, আমরা সংখ্যার দিকে ঝুঁকছি, মানের দিকে নয়। আমি চাই পড়ার সুযোগ সবাই পাক, কিন্তু একটা যৌক্তিক ভিত্তিতে তা হোক।

প্রশ্ন :

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ও গবেষণায় নানা অরাজকতা আমরা দেখছি। মানসম্মত শিক্ষা, মৌলিক গবেষণা, উদ্ভাবন, নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টির জন্য কী উদ্যোগ নেওয়া উচিত?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: প্রথম উদ্যোগ হতে হবে গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়ানো, বর্ধিত বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা এবং এ নিয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা। দ্বিতীয় একটি উদ্যোগ হবে শিক্ষকদের গবেষণার পর্যাপ্ত সুযোগ, উন্নত গবেষণাগার-গ্রন্থাগারের ব্যবস্থা করা। সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হয় পুকুর কাটা শেখানোর জন্য, অথচ শিক্ষকদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি দেওয়া হয় না। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে গবেষণা সহযোগিতার চুক্তি করে, দেশীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মিলে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়ানো যায়। শিক্ষক নিয়োগে মেধার মূল্য দেওয়া হলে গবেষণা উৎসাহিত হবে। ভালো গবেষণার জন্য যা যা প্রয়োজন, শিক্ষকদের তা দেওয়া গেলে গবেষণার মান বাড়বে।

প্রশ্ন :

১৯৭৩ সালে ইউজিসি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় ছিল মাত্র ছয়টি। আর এখন দেড় শতাধিক। কিন্তু বাস্তবে ইউজিসির কার্যকর কোনো ক্ষমতা নেই। এর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী করা দরকার?

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: ইউজিসির কাজের পরিধি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ জন্য শুধু এর ক্ষমতা নয়, লোকবল এবং ভৌত সুযোগ-সুবিধাও বাড়াতে হবে। ইউজিসিকে ক্ষমতাবান করে উচ্চশিক্ষা কমিশন করতে পারি এবং এর ক্ষমতায়ন এবং একে গতিশীল করে আমাদের উচ্চশিক্ষাকে কার্যকর করার উদ্যোগ নিতে পারি। এ রকম একটি প্রস্তাব সরকারের কাছে দেওয়াও হয়েছে।