মানুষের ঘরে খাদ্য সাহায্য পৌঁছে দিতে হবে

রিজওয়ানুল ইসলাম
রিজওয়ানুল ইসলাম
>অর্থনীতিবিদ রিজওয়ানুল ইসলাম আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এমপ্লয়মেন্ট সেক্টরের সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে দেশে উদ্ভূত জীবিকার সংকট, সরকারের করণীয় ও আনুষঙ্গিক বিষয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম।

প্রথম আলো: করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর উদ্দেশ্যে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। লোকজনকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সব মানুষের দৈনন্দিন জীবিকা বন্ধ। বিপুলসংখ্যক গরিব মানুষের রোজগার নেই। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের করণীয় কী?

রিজওয়ানুল ইসলাম: করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট স্বাস্থ্যসংকট এখন এক অর্থনৈতিক সংকটে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ঘরে থাকার জন্য কেন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলো, তা আমার বোধগম্য নয়। ঘরে বসেও কিন্তু অনেক ধরনের কাজ করা যায়। অবশ্য সব কাজ ঘরে বসে করা যায় না। রিকশা, ভ্যান বা অন্য যানবাহন চালানো, নির্মাণের কাজ, পথের ধারে চা ইত্যাদি জিনিস বিক্রি করা, এগুলো ঘরে বসে করা যায় না। কিন্তু এসব কাজের ওপরই নির্ভর করে আমাদের দেশের কোটি কোটি লোকের জীবন ও জীবিকা।

প্রথম আলো: এই শ্রেণির মানুষের সংখ্যা কত হতে পারে?

রিজওয়ানুল ইসলাম: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, এ দেশে প্রায় আড়াই কোটি লোক মজুরি বা বেতনের ভিত্তিতে কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিতদের সংখ্যা এক কোটির বেশি। আরও আছেন পোশাকশিল্পের ৪০ লাখের মতো শ্রমিক, যাঁরা দৈনিক ভিত্তিতে না হলেও প্রায় সে রকম ব্যবস্থাতেই নিয়োজিত। আছেন আরও ৫০ লাখ শিল্পশ্রমিক, যাঁদের বিরাট অংশের অবস্থা দিনমজুরদের চেয়ে ভালো নয়। আরও আছেন স্বনিয়োজিত হিসেবে চিহ্নিত মানুষ, কিন্তু যাঁরা ব্যবসা বা কাজের মাধ্যমে দিন এনে দিন খাওয়ার পর্যায়ে আছেন। এই সব সংখ্যা থেকে কৃষিশ্রমিকদের বাদ দিলেও আমার হিসাবে দুই কোটির বেশি মানুষের জীবিকা আজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

প্রথম আলো: এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের বা সরকারের করণীয় কিছু নেই?

রিজওয়ানুল ইসলাম: যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা আজ বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রচলিত, সেখানে মানুষের জীবন-জীবিকা তো নিজেকেই চালাতে হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকারের দায়িত্বের কথা অস্বীকার করা যায় না। পুঁজিবাদী অর্থনীতির দুর্গ বলে যেসব দেশ পরিচিত, সেসব দেশেও সরকার দ্রুত এগিয়ে আসছে সাধারণ মানুষকে সহায়তা দেওয়ার জন্য। কয়েকটি বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল এবং দেরিতে হলেও সরকার দু–একটি ঘোষণা দিয়েছে।

প্রথম আলো: জীবিকার সংকটের মুখোমুখি জনগোষ্ঠীর জন্য এই মুহূর্তে সরকারের অগ্রাধিকারগুলো কী হওয়া উচিত?

রিজওয়ানুল ইসলাম: দরিদ্র জনগণকে অনাহার থেকে রক্ষা করা। এটি সহজ কাজ না হলেও সম্ভব। দরিদ্রদের বাসস্থান চিহ্নিত করে সেখানে খাদ্যসহায়তা পৌঁছে দেওয়া উচিত। তাঁদের ঘরের বাইরে এনে সারিবদ্ধ হতে বললে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা দুষ্কর হতে পারে। সব শহরের বস্তি এলাকা এই কাজের প্রাথমিক স্থল। এ ছাড়া আমাদের দারিদ্র্য চিহ্নিত করার মানচিত্রের দিকে তাকালেও সহজেই জানা যাবে কোথায় প্রয়োজন সাহায্য নিয়ে যাওয়া।

এমন কিছু মানুষও আছে, যারা হয়তো খাদ্যসহায়তা চাইবে না বা নিতে সংকোচ বোধ করবে। তারা দারিদ্র্যসীমার একটু ওপরের লোকজন, যারা নিজেরা কিছু করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাদের প্রয়োজন নগদ সহায়তা, যেন তারা এই সংকটের সময়টা পার করতে পারে, দোকানের ভাড়াটা দিতে পারে। অর্থনীতি আবার চালু হলেই তারা আবার নিজেদের কাজ শুরু করতে পারবে।

এরপর আসবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের মালিকেরা, যাঁদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাঁদের দিতে হবে ঋণ সহযোগিতা। নিশ্চিত করতে হবে যে তাঁরা যেন দ্রুত ঋণ পান আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছাড়াই। এই ঋণ পরিশোধের সময়সীমা হতে হবে নমনীয়। যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা ইতিমধ্যে ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের ঋণ পুনঃ তফসিল করতে হবে। অন্তত ছয় মাসের জন্য ঋণ পরিশোধ স্থগিত রাখার অনুমতি দিতে হবে। যদিও কৃষিতে বর্তমান দুর্যোগের প্রভাব তেমনভাবে পড়েনি, তবু এই খাতের কথা ভুলে গেলে চলবে না। ফসল, শাকসবজি, ফল, ডিম, দুধ ইত্যাদির বাজার বন্ধ হয়ে গেছে অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অবস্থাপন্নরা ক্ষতিটা পুষিয়ে নিতে পারবে, কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের সহায়তা দিতে হবে।

প্রথম আলো: কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়, এমন পদক্ষেপ গ্রহণের আগেই সরকারের কি এ বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল? মনে কি হচ্ছে না যে পদক্ষেপটি আকস্মিক ও অপরিকল্পিতভাবে নেওয়া হয়েছে?

রিজওয়ানুল ইসলাম: সরকারের হাতে অবশ্যই সময় ছিল প্রস্তুতি নেওয়ার। চীনের উহানে রোগটি ছড়াতে শুরু করে ডিসেম্বরের শেষ থেকে। কিন্তু যেভাবে কোভিড-১৯ ছড়িয়েছে, তাতে সরকারের পক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল বলে মনে হয় না। দরিদ্র দেশগুলোর জন্য এ অবস্থা একধরনের উভয়সংকট সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নেই। সে কারণেই সাধারণ লোককে বলতে শোনা যাচ্ছে, আমরা করোনা থেকে বাঁচতে গিয়ে তো অনাহারে মারা যাব।

প্রথম আলো: কত দিন এই অবস্থা চলতে পারে? কোনো মাত্রার দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কি আছে?

রিজওয়ানুল ইসলাম: এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারও জানা আছে কি না, জানি না। জীবনযাত্রার এই বন্ধ অবস্থা বেশি দিন চালানো যাবে কি না বা চালালেও কত দিন, তা বলা দুষ্কর। উন্নত বিশ্বেও চলছে অনিশ্চিত অবস্থা। ভাইরাসটির গতিবিধি ও সংক্রমণের ধারার ওপর নির্ভর করবে কত দিন এ অবস্থা চলবে। কোনো কোনো দেশে বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করে অনুমান করার চেষ্টা চলছে সময়কালটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার। আমাদের দেশে তা করা হচ্ছে কি না, নাকি সরকার অনুমানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তা আমার জানা নেই। তবে কোনো কোনো গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, জীবনযাত্রা পুরোপুরি বন্ধ না রেখে সীমিত আকারে চালু করার চেষ্টা করা যায়। তবে সেই বিকল্পটি বিশেষভাবে নির্ভর করবে পরীক্ষার ওপর। শুধু আক্রান্তদের ওপরই নয়, সবাইকে পরীক্ষা করে জেনে নেওয়া যায় কারা আক্রান্ত হয়নি এবং তাদের ছেড়ে দিয়ে পর্যায়ক্রমে জীবনযাত্রা চালু করা যেতে পারে। আমাদের বাস্তবতায় সবার পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।

প্রথম আলো: তীব্র অভাব বা দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা?

রিজওয়ানুল ইসলাম: এই পরিস্থিতি আরও দীর্ঘায়িত হলে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা আছে কি না, এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে ফিরে যেতে হয় অমর্ত্য সেনের বক্তব্যে। প্রথমত, খাদ্যের প্রাচুর্য থাকলেও দুর্ভিক্ষ হতে পারে, যদি দরিদ্রদের সেই খাদ্যের ওপর দখল না থাকে, আর দখল সৃষ্টি হয় খাদ্য কেনার জন্য প্রয়োজনীয় সামর্থ্য থাকলে। আমাদের এখানে খাদ্যের অভাব নেই, কিন্তু জীবিকার পথ দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে দরিদ্ররা খাদ্য কেনার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলতে পারে। অমর্ত্য সেনের দ্বিতীয় বক্তব্যটিও মনে রাখতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা কম, কারণ সেখানে সরকার তথ্য গোপন করতে পারে না এবং তার ওপর চাপ থাকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। আমাদের দেশেও বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা হচ্ছে যে সমস্যাটি থেকে সরকার দৃষ্টি সরাতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক ঘোষণায় বলেছেন, মানুষকে অনাহারে থাকতে দেওয়া হবে না। বর্তমানের ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে ভোট চায় জনগণের দল হিসেবে। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে সরকারের কাজে তার প্রতিফলন ঘটবে।

প্রথম আলো: এই পরিস্থিতিতে কি আপনার মনে হচ্ছে না যে আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় গুরুতর গলদ রয়ে গেছে? অর্থাৎ এই দেশের সামাজিক নিরাপত্তা খাতটি আরও বড় ও মজবুতভাবে গড়ে তোলা উচিত ছিল? বা কল্যাণরাষ্ট্রের ধারণাটির ওপর আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত ছিল?

রিজওয়ানুল ইসলাম: এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন এবং আপনার বক্তব্যের সঙ্গে আমি সম্পূর্ণ একমত। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পরিমাপক হিসেবে আমরা জিডিপির প্রবৃদ্ধির দিকেই বেশি দৃষ্টি দিচ্ছি। অথচ অমর্ত্য সেন ও জোসেফ স্টিগলিৎসের মতো অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, জিডিপি জীবন পরিমাপের জন্য ভুল মানদণ্ড। আমরা আজ নিম্ন–মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছালেও সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারিনি। সামাজিক সুরক্ষা বলতে এখনো আমরা ভিজিডি আর ভিজিএফের কথাই বলি। এক শটির বেশি সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি থাকলেও দেশে বেকারত্ব ভাতার ব্যবস্থা নেই। শুধু তা–ই নয়, এই ভাতাকে সাধারণভাবে দান-খয়রাত বলে মনে করা হয়, এটি যে উন্নয়নের এক অপরিহার্য অঙ্গ, তা আমরা এখনো উপলব্ধি করি না। আপনি বলতে পারেন, বেকারত্ব ভাতা থাকলেও স্বনিয়োজিতদের কীভাবে সে ভাতার আওতায় আনা যাবে? ইউরোপের কোনো কোনো দেশ দেখিয়েছে যে সেটিও সম্ভব। এ ধরনের ভাতার ব্যয় শুধু যে সরকারকেই বহন করতে হবে তা নয়; কর্মী, মালিক এবং সরকার সবাই মিলে এর ব্যয়ভার বহন করতে পারে। তবে এটা ঠিক যে বিশাল অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিতদের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির অধীনে আনা সহজ হবে। কিন্তু ভারতের মতো বড় দেশেও এই খাতের সামাজিক সুরক্ষার জন্য সংসদে আইন পাস করা হয়েছে; যদিও নরেন্দ্র মোদির সরকার এসে এই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব কম দিচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে আমাদের এটা শুরু করতে হবে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় খাতের জন্য সামাজিক সুরক্ষা হতে হবে উন্নয়নের অপরিহার্য অঙ্গ।

প্রথম আলো: আপনার কি মনে হচ্ছে না যে এ দেশের চিকিৎসা খাতের বৃহত্তর অংশটি লাভজনক বাণিজ্যিক খাতে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি? অর্থাৎ মানুষের স্বাস্থ্য বা চিকিৎসাসেবা অনিয়ন্ত্রিত মুনাফামুখী ব্যবসার বিষয় হওয়া উচিত নয়?

রিজওয়ানুল ইসলাম: স্বাস্থ্যসেবার জন্য ব্যক্তি খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়লে কী ফল হয়, তা বোঝা যায় যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তুলনা করলেই। আমাদের দেশে অনেক হাসপাতালে করোনাভাইরাসের রোগীকে ভর্তিই করা হচ্ছে না। তা ছাড়া প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যয় বহন করার সামর্থ্য কতজনের আছে? অন্যদিকে কয়েকটি সরকারি হাসপাতাল এ ধরনের রোগের চিকিৎসার জন্য নির্দিষ্ট করা হলেও অনেকগুলোই এখনো পুরোপুরি প্রস্তুতই নয়। এর মূল কারণ সরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার সার্বিক অবস্থা বেহাল।

প্রথম আলো: মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য কি স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় বরাদ্দ আরও অনেক বাড়ানো উচিত নয়? মাথাপিছু ডাক্তারের সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য?

রিজওয়ানুল ইসলাম: বাংলাদেশ আয়তনের তুলনায় অনেক বেশি জনসংখ্যার দেশ। জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ কম। আমাদের স্বাস্থ্যসেবাব্যবস্থার একটা বড় দুর্বলতা প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার ও নার্সের অপ্রতুলতা। এই দেশে প্রতি এক হাজার লোকের জন্য ডাক্তার আছেন মাত্র শূন্য দশমিক ৫ জন। এই ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আমরা রয়েছি সবার পেছনে। এমনকি নেপালও আমাদের ওপরে আছে। সে দেশে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য ডাক্তার আছেন শূন্য দশমিক ৭ জন। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভারতে এই সংখ্যা শূন্য দশমিক ৮, পাকিস্তানে ১ দশমিক শূন্য এবং শ্রীলঙ্কায় ১ দশমিক শূন্য। আর বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে অর্থ বরাদ্দের কথা যদি বলেন, তাহলে দেখা যাবে গত পাঁচ বছরে এ দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের অংশ একেবারেই বাড়েনি। বরং পরিসংখ্যানগতভাবে গত দুই অর্থবছরে একটু কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই অংশ ছিল ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ; আর ২০১৮–১৯ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। প্রকৃত ব্যয়ের পরিমাণ দেখলে আরও খারাপ চিত্র পাওয়া যাবে। অথচ এডিপিতে অংশ বেড়েছে পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং ভৌত অবকাঠামোর ক্ষেত্রে। স্পষ্টই দেখা যায়, আমরা সামাজিক খাতের চেয়ে ভৌত অবকাঠামোকেই গুরুত্ব দিচ্ছি বেশি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ভৌত অবকাঠামো অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু জনসাধারণের স্বাস্থ্যও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জাতির স্বাস্থ্য ভঙ্গুর হলে অগ্রগতি ব্যাহত হতে পারে। জাতীয় নীতিতে এবং অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবার প্রতি গুরুত্ব কম দিলে তার নেতিবাচক ফল তো এড়ানো যায় না। কথায় বলে—যেমন বপন করবে, তেমনি ফল পাবে। স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা দেখলে সে কথার তাৎপর্য বোঝা যায়।

প্রথম আলো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রিজওয়ানুল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।