রোহিঙ্গা গণহত্যার নীলনকশা তৈরি হয় ১৯৬৬ সালে

মং জার্নি রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তাঁর এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান। প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর, প্রথম আলো অনলাইনে। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পুলম্যান হোটেলে দুজনের সরাসরি সাক্ষাৎ এবং পরে ই-মেইল যোগাযোগের ভিত্তিতে দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি তৈরি করা হয়। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে আবার প্রকাশিত হলো।

  • রোহিঙ্গাদের পরিচয় ছিল আরাকানি

  • সু চি তাঁর সরকারকে ‘নিষ্পাপ’ বলেছেন

  • জাতিসংঘ জেনোসাইডকে জেনোসাইড বলছে না

  • রোহিঙ্গারা জেনোসাইড কথাটি ১৯৭৮ সালেই ব্যবহার শুরু করেছিল

মং জার্নি
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

সম্প্রতি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে একজন বর্মি মন্ত্রী ঢাকা ঘুরে গেলেন। আপনি আশাবাদী?

মং জার্নি: ১৯৬২ সালে সামরিক বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমার তার বৃহত্তম জাতীয় সংকট মোকাবিলায় তিনজন বেসামরিক কূটনীতিককে নিয়োগ দিয়েছে। অং সান সু চির নিজ দপ্তরের মন্ত্রী এবং তাঁর মূল অনুঘটক কিউতিন স। আপনারা তাঁকে বিশ্বাস করলে ঠকবেন। ২০০৮ সালের মে মাসে বন্যাদুর্গত লোকজন যখন চরম সংকটে, তখন তাঁকে সরকারের পক্ষে ওকালতি করতেই শশব্যস্ত দেখা গেছে। এরপর আছেন থং তুন, তিনি বর্তমানে সু চির জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের উপদেষ্টা। ইতিপূর্বে আধা অবসরে যাওয়া জেনারেল থান শয়ের দোভাষীর কাজ করেছেন। আর আছেন উইন ম্রা। তিনি মিয়ানমারের বর্তমান মানবাধিকার কমিশনের প্রধান। আনান কমিশনের অন্যতম সদস্য এই ভদ্রলোকের কর্ণকুহরে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শব্দটিই প্রবেশ করেনি। বিশ্বে বর্তমানে মিয়ানমারের যে ৩০ জনের বেশি রাষ্ট্রদূত কর্মরত রয়েছেন, তাঁরা কেউ সাবেক কর্নেল, কেউ সাবেক ব্রিগেডিয়ার। তাঁরা পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। গত সপ্তাহে থং তুনকে নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো হয়েছিল। নিউইয়র্কে তিনি কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনসের মতো মার্কিন স্টাবলিশমেন্ট কাজে লাগিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছেন।

আমি মনে করি, ওই তিনজন বেসামরিক কূটনীতিকের সারা জীবন কেটেছে আন্তর্জাতিক ফোরামে সামরিক বাহিনীর পক্ষে নির্লজ্জ দালালি করে। তাঁরা প্রত্যেকে ধূর্ত এবং মুসলিমবিদ্বেষী বর্ণবাদী। তাঁদের কারও হৃদয়ে এক তোলা পরিমাণও নীতিবোধ কিংবা মানবিক অনুভূতি নেই। সু চি এসব ব্যক্তি দ্বারা পরিবেষ্টিত। তাঁদের আমি বিষধর সাপ হিসেবে চিহ্নিত করতে দ্বিধাবোধ করি না। বাংলাদেশকে প্রত্যাবাসনের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। মনে রাখতে হবে, তাঁদের চূড়ান্ত স্ট্র্যাটেজিক স্কিম হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তা, তার ইতিহাস, পরিচিতি ও আইনগত অবস্থান ধ্বংস করা। আপনাদের মনে যদি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ দানা বাঁধে, তাহলে গত ২৫ বছরের জাতিসংঘের ডকুমেন্টগুলো, মানবাধিকারের নথিপত্র এবং ১৯৭৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রেস ক্লিপিংগুলো পাঠ করুন।

প্রশ্ন :

তাহলে সু চির প্রতি আমরা ভরসা করব না?

মং জার্নি: আমি বহু বছর আগে তাঁর সম্পর্কে যা লিখেছিলাম, তা তখন বিশ্বাস করতে অনেকেরই কষ্ট হতো। তাঁরা তাঁকে রোমান্টিসিজমের জায়গা থেকে প্রশ্রয় দিতেন। কিন্তু তাই বলে তাঁর সর্বাত্মক ও গভীর বর্ণবাদী মন একটুও বদলে যায়নি। আমি যখন তাঁর নৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক ও নেতৃত্বের যথাযথ সমালোচনা করেছি, তখন তাঁর সমর্থকেরা কষ্ট পেয়েছেন। একটি সামরিক পরিবারে আমার বেড়ে ওঠার সময় তাঁর বাবা ছিলেন আমার রোল মডেল। ১৯৮৮ সালের জুলাই মাসে আমি যখন আমার দেশ ত্যাগ করি, তখন আমার ওয়ালেটে তিনটি ছবি ছিল। একটি আমার পরিবারের, দ্বিতীয়টি মহামুনি বুদ্ধের এবং অপরটির অং সানের পরিবারের। এই ছবিতে সু চি ছিলেন দুই বছরের। মাঠের কর্মী হিসেবে আমি সু চির পক্ষে কথা বলেছি একটানা ১৫ বছর। তিনি যেভাবে স্বেচ্ছায় বিরোধী শিবিরে প্রবেশ করেছিলেন, তা তিন দশকের মধ্যে প্রথম গণ-অভ্যুত্থান এনেছিল। তাঁকে সমালোচনা করায় আমার কোনো ব্যক্তিগত বিদ্বেষ বা হিংসা নেই। আমি কোনো রাজনীতিবিদের আনুগত্যে বা অনুরাগী হতে বিশ্বাসী নই, কারণ তাঁরা প্রত্যেকেই খুব বেশি মনুষ্য প্রজাতির। আমি একজন কর্মী হিসেবে ‘আমার দেশ সেরা, সেটা ভুল বা শুদ্ধ যা-ই করুক’ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদী ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়াকে নাকচ করে দিই।

প্রশ্ন :

বর্মি ভাষায় তিনি তাঁর জনগণকে কী বলে থাকেন, সেটা আমাদের জানার কৌতূহল আছে।

মং জার্নি: ৬ অক্টোবর সু চি ব্রুনেইয়ে বর্মি বিশেষজ্ঞদের কাছে তাঁর সরকারকে ‘নিষ্পাপ’ বলেছেন। তাঁর কথায়, ‘আমাদের বিবেক পরিষ্কার। কিন্তু আমি বলব না যে আমরা কোনো ভুল করিনি। তবে আমরা অবশ্যই কোনো অন্যায্য কিছু করিনি। আমরা যদি অজান্তে কোনো অন্যায় করে থাকি, তাহলে প্রচলিত আইনমতে তা শুধরে নেব।’ অথচ তিনি একটিবারের জন্য বাস্তুচ্যুত কাউকে দেখতে রাখাইন সফরে যাননি। এই নারীর ঔদাসীন্য ও অমানবিকতা কী হতে পারে, তা কারও ধারণার বাইরে।

প্রশ্ন :

চীন, রাশিয়া ও ভারতের ভূমিকা কি সংকট নিরসনে বড় বাধা?

মং জার্নি: অবশ্যই। চীন ও রাশিয়া এমনকি উদ্বেগ জানিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে বিবৃতি দিতে রাজি হয়নি। ভারতে উগ্র বর্ণবাদী দল ক্ষমতায়। তারা হিন্দু মৌলবাদী জাতীয়তাবাদকে উসকে দিতে চাইছে। সু চি-মোদির যৌথ ঘোষণা বলছে, তাঁরা নাকি সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় লড়াই করতে একমত। এর মাধ্যমে ভারত কার্যত সু চির বর্ণবাদী গণহত্যার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আবার পশ্চিমা কোনো প্রভাবশালী দেশই কিন্তু এই তিন দেশের সমালোচনা করছে না। পাশ্চাত্য যারা মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি ও নাগরিক স্বাধীনতার কথা বলে, তারাই তেলের জন্য অন্যের ভূখণ্ড দখল করতে পারে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে আমি পশ্চিম ও পূর্ব ব্লকের মধ্যে কোনো ফারাক দেখি না। তাই রাশিয়া, চীন ও ভারত নয়, পাশ্চাত্যও একইভাবে ভণ্ড।

প্রশ্ন :

আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) এর বিচার হতে পারে? আশাবাদী?

মং জার্নি: না। আমি আশাবাদী নই। কিছু আন্তর্জাতিক আইনি সংগঠন রোহিঙ্গাদের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে দরখাস্ত করেছিল। তারা দুই বছর পর উত্তর দিয়েছে যে মিয়ানমারের ওপর তাদের বিচারিক এখতিয়ার নেই। ১৯৪৯ সালে বার্মা জেনোসাইড কনভেনশনে সই করেছিল, যা ১৯৫০ সালে কার্যকর হয়। কিন্তু যেটা ঘটেছে, সেটা হলো তারা তাতে শর্তসাপে‌ক্ষেÿসই করেছিল। ওই শর্তে বলা আছে, জেনোসাইডের অভিযোগে দেশটির নেতাদের বিচার করা যাবে না।

প্রশ্ন :

প্রভাবশালী স্বাধীন পশ্চিমা মিডিয়া কেন সরকারি সুরে এথনিক ক্লিনজিং শব্দ ব্যবহারের প্রবণতা দেখাচ্ছে? এটা উদ্দেশ্যমূলক?

মং জার্নি: আমি মনে করি, অনেক সাংবাদিক জেনোসাইড লিখেছেন, তার মধ্যে জেনে বা না জেনেও করছেন। কারণ, তাঁদের সময় নেই এ নিয়ে অধ্যয়ন করার। কিন্তু জাতিসংঘ সুচিন্তিতভাবে নীতি হিসেবে নিয়েই জেনোসাইডকে জেনোসাইড বলছে না। এ জন্য তারা বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে। এমনকি জাতিসংঘের শীর্ষ মানবাধিকারপ্রধান এথনিক ক্লিনজিং কথাটি ব্যবহার করছেন। এটা অসততা। তাঁরা রাজনীতির খেলা খেলছেন। তাঁরা জানেন, জেনোসাইড শব্দ উচ্চারণ করামাত্রই জাতিসংঘের ১৯০টি সদস্যরাষ্ট্র এবং তাঁদের পক্ষে মিয়ানমারের বিচার করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়বে। তাঁরা তখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগে দায়বদ্ধ হয়ে পড়বেন। ভারত ১৯৭১ সালে পশ্চিম পাকিস্তানি জেনোসাইড বন্ধে সশস্ত্র সহায়তা দিয়েছিল। জাতিসংঘ রোহিঙ্গা জেনোসাইড বন্ধে কিছু করবে, তা আমি বিশ্বাস করি না। তারা সেই সামর্থ্যও রাখে না। পলপট কম্বোডিয়ার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ চার বছরের কম সময়ের ব্যবধানে নিশ্চিহ্ন করেছিল। এর ৪০ বছর পরে জাতিসংঘ একটি হাইব্রিড ট্রাইব্যুনাল করেছিল। তাতে দেশটির সরকার ও জাতিসংঘ যৌথভাবে অংশ নিয়েছিল। দাতারা সেই বিচারের জন্য ১০ বছরে ৩০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল। তিন শীর্ষ খেমারুজ যুদ্ধাপরাধীর বিচারও হয়েছিল। কিন্তু জাতিসংঘ সেখানেও জেনোসাইড শব্দটি ব্যবহার করেনি। তাই আমি মনে করি, জাতিসংঘ বা নিরাপত্তা পরিষদ কারও ওপরই ভরসা নেই। কারণ, তারা বিশ্বের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে না। বিশ্ব যদি জনগণের আইনে চলত, তাহলে বিশ্ব আরও শান্তিপূর্ণ হতো।

প্রশ্ন :

মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ চুক্তি করেছে যে তারা রোহিঙ্গা শব্দ ব্যবহার করবে না, সেটা ভুল ছিল?

মং জার্নি: অবশ্যই ভুল ছিল। কোনো একটি জাতিগোষ্ঠীর জাতিসত্তার পরিচয় কী হবে বা হবে না, সে বিষয়ে কোনো সরকারের কোনো চুক্তি করার কোনো এখতিয়ার নেই। কারণ, আন্তর্জাতিক কোনো আইন এটা সমর্থন করবে না। জাতিগত সংখ্যালঘুরাই ঠিক করবে কী নামে তাদের ডাকা হবে। আপনার নাম মিজান, আমি আপনাকে মাইকেল বলতে পারি না। আপনি বাঙালি, আমি পূর্ব পাকিস্তানি বলতে পারি না। কেউ এ নিয়ে কোনো চুক্তি করতে পারে না। স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের মিলিটারি ধরে নিয়ে যায়, এরপর জিজ্ঞেস করে তোমার পরিচয় কী? তারা রোহিঙ্গা বলামাত্রই কিল-ঘুষি শুরু করে দেয়। তখন নাকমুখ থেকে রক্তঝরা অবস্থায় তারা বলে, আমি বাঙালি।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু (রিফিউজি) হিসেবে দেখতে অপারগ। আপনি কীভাবে দেখেন?

মং জার্নি: বাংলাদেশ সরকারের উচিত একটি নীতি ও কৌশলসংক্রান্ত ব্যাপকভিত্তিক আলোচনা। নাগরিক সমাজ, নীতিসংক্রান্ত উপদেষ্টা—সবারই এতে অংশ নেওয়া উচিত।

প্রশ্ন :

১৯৭৮ সালে কী ঘটেছিল?

মং জার্নি: নে উইন প্রশাসন তত দিনে রোহিঙ্গা শব্দ মুছে দিয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে, রেডিওতে—মিডিয়ার কোথাও আর রোহিঙ্গা শব্দ শোনা যায়নি। তিনি একটি সন্ত্রাসী অভিযান চালালেন। ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে ব্যাংকক পোস্ট–এ খবর বেরিয়েছিল, জিয়া-নে উইন সভার সাইডলাইনে জিয়া হুমকি দিয়েছিলেন রোহিঙ্গাদের অস্ত্র দেওয়ার। তখন অস্ত্র দিলে বার্মার ওই অংশ যুদ্ধ এলাকায় পরিণত হতো। পরে সেই সময়ে কুয়ালালামপুরে আশ্রয় নেওয়া শিক্ষিত ও ধনাঢ্য রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন।

প্রশ্ন :

আপনি কি মনে করেন, সেই হুমকির কারণে এবার আমরা অধিকতর পুরুষশূন্য উদ্বাস্তু স্রোত দেখছি?

মং জার্নি: আমি তা-ই মনে করি। সেই হুমকির কথা তারা নিশ্চয় মনে রেখেছিল। আজ যারা বাংলাদেশে এসেছে, তাদের ৩০ শতাংশ শিশু, যাদের অধিকাংশই এতিম। বাকিদের বড় অংশ নারী। এবারের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে স্রেব্রেনিৎসার গণহত্যার মিল রয়েছে। সেখানেও একই ধরনের গণহত্যার পর মানুষ সব ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। নারী ও শিশুদের থেকে পৃথক করে পুরুষদের ঠান্ডা মাথায় লাইন ধরে তারা পাইকারিভাবে হত্যা করেছে। নাৎসি জার্মানিও তাই প্রত্যক্ষ করেছে। নারী ও শিশুদের থেকে পুরুষদের আলাদা করা গণহত্যাজনিত আচরণের একটি ধ্রুপদি দৃষ্টান্ত।

প্রশ্ন :

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে আপনি ও ড. অ্যালিস কাউলি যৌথভাবে যাকে ‘স্লো বার্নিং জেনোসাইড’ চলছে বলে দাবি করেছেন, তার প্রক্রিয়া মিয়ানমারে কখন, কীভাবে শুরু হয়েছিল?

মং জার্নি: ১৯৬৬ সালে। আমি আমার লেখায় বলেছি, ১৯৭৮ সালেই ব্যাপকভিত্তিক নির্যাতন করে রোহিঙ্গাবিরোধী গণহত্যার প্রথম বছরটি শুরু হয়। কিন্তু এর ১২ বছর আগে গণহত্যার নীলনকশা তৈরি করা হয়। সেই বছরে সামরিক বাহিনী উত্তর আরাকানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে কৃত্রিমভাবে বৌদ্ধ জনসংখ্যা বাড়িয়ে রোহিঙ্গাদের সংখ্যালঘুতে পরিণত করার উদ্যোগ নেয়। কারাগারে থাকা দুর্বৃত্তদের সাজা অর্ধেক কমানোর মুলা ঝুলিয়ে আরাকানে বসতি গড়ার জন্য প্রলুব্ধ করা হয়। আর এটাই কালক্রমে গণহত্যার পটভূমি তৈরি করে। তাই আমি ১৯৬৬-কে জেনোসাইডের জেনেসিস বলি। ২০১২ সালে আমি প্রথম এক নিবন্ধে এটা লিখি। ব্রিটিশ শিক্ষিত রোহিঙ্গারা জেনোসাইড কথাটি ১৯৭৮ সালেই ব্যবহার করা শুরু করেছিল।

১৯৬২-তে নে উইন ক্ষমতায় এলেন। সেটা বহু সংস্কৃতিগত বর্মি সমাজের যবনিকা টেনেছে। ১৯৪৮ সালে প্রথম নাগরিকত্ব আইনে কোনো জাতিগত সংখ্যালঘু স্বীকৃত হয়নি। কিন্তু পরে কয়েক মাসের মধ্যে আইন সংশোধন করে ১৯৪২ সালে জাপানি আগ্রাসনের আগে যারা বার্মায় ছিল, তাদের সবাইকে আপনা-আপনি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়। আরাকানি জাতিগত সংখ্যালঘু, যার মধ্যে রোহিঙ্গা, মগ, বর্মিজ, শান, কাইয়া, কাচিনসহ আটটি গোষ্ঠী ছিল। তখন রোহিঙ্গারা আরাকানের নেটিভ হিসেবে গণ্য হয়। তাদের পরিচয় ছিল আরাকানি। এখনো তাদের নাগরিক পরিচয় সেটাই থাকা উচিত।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

মং জার্নি: ধন্যবাদ।