সর্বত্র একটি পরাজিতের মনোভাব দেখা দিয়েছে

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। তিনি ১৮ বছর ধরে নতুন দিগন্ত নামে একটি সাময়িকী সম্পাদনা করে আসছেন। সমাজ রূপান্তরকামী এই লেখক-শিক্ষাবিদ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শিক্ষা, বুদ্ধিজীবীর ভূমিকা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
প্রশ্ন:

প্রথম আলো: এবারের দুর্গোৎসবে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপের ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর সংঘটিত সহিংসতা ও তাদের মন্দির-বাড়িঘরে হামলার ঘটনায় আপনারা উদ্বেগ জানিয়েছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর এ রকম হামলা বারবার কেন ঘটে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সাম্প্রদায়িক হামলার মূল বিষয়টি হচ্ছে ক্ষমতা। যার ক্ষমতা আছে, সে ক্ষমতাবঞ্চিতের ওপর হামলা করবে, এটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সত্য। সে জন্যই দেখি, মেয়েরা যত্রতত্র ধর্ষণের শিকার হয়, গরিব মানুষের ওপর সর্বক্ষণ নিষ্পেষণ ঘটে এবং সুযোগ পেলে ও সুযোগ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চলে। ঘটনা ভিন্ন ভিন্ন, কিন্তু কারণ ওই একই—ক্ষমতাপ্রয়োগ। সাম্প্রদায়িক হামলায় যারা উসকানি দেয় তারা মনে করে, তাদের যেটুকু ক্ষমতা আছে, তা প্রয়োগ করবে দুর্বলের ওপর; এ ক্ষেত্রে দুর্বল হচ্ছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। আর যারা হামলায় অংশ নেয়, তাৎক্ষণিকভাবে তারা ভাবে ক্ষমতা পেয়ে গেছে। এমনিতে এই মানুষগুলো ক্ষমতাবঞ্চিত। রাষ্ট্র ও সমাজ তাদের বঞ্চিত করে রেখেছে। ভোটাধিকার পর্যন্ত দিচ্ছে না। অর্থনৈতিকভাবে তারা নিরাপত্তাহীন। তাই উত্তেজিত জনতার অংশ হতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে তারা বলবান হয়ে ওঠে এবং নিজেদের বঞ্চনার প্রতিশোধ নেয়। চতুর্দিকে এখন হতাশা ও পরাজিতের মনোভাব বিদ্যমান। এ রকমের পরিস্থিতি অসহিষ্ণু ও হিংস্রতা বৃদ্ধির পক্ষে খুবই অনুকূল। সাম্প্রদায়িক হামলায় বলপ্রয়োগ, অসহিষ্ণুতা ও হিংস্রতার একত্র প্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সাম্প্রদায়িক বিভাজনের ভিত্তিতে সাতচল্লিশে দেশভাগ হয়েছিল। পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হলো। এরপর ৫০ বছর কেটে গেল। কিন্তু সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বন্ধ হলো না। ঘটনার পর এখন সরকারি ও বিরোধী দল একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। আসল দায়টি কার? এর সঙ্গে দেশি-বিদেশি অন্য কোনো শক্তির হাত আছে বলে মনে করেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে দায়ী করাটা আসল অপরাধীদের আড়ালে চলে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়। মূল দায়টা সামাজিক বৈষম্য ও বঞ্চনার। বিদেশি শক্তির প্রত্যক্ষ হাত কতটা আছে, সেটা তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু অপ্রত্যক্ষ ভূমিকা যে আছে, তাতে কোনো প্রকার সন্দেহ নেই। বিদেশি অনুপ্রেরণা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। পুঁজিবাদী দেশগুলোতে ক্রিয়াশীল ইসলামবিদ্বেষও কাজ করে। ভারতে হিন্দুত্ববাদের উত্থান এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের নদীর পানি, বাণিজ্যের অসমতা, সীমান্তে হত্যার ঘটনা ইত্যাদি নিয়ে বিরোধও সাম্প্রদায়িকতাকে বিলক্ষণ উৎসাহিত করে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা রোধে সমাজের অগ্রবর্তী জনগোষ্ঠী তথা বুদ্ধিজীবী-শিক্ষাবিদ, লেখক, সাংবাদিকেরা পাকিস্তান আমলে যেভাবে এগিয়ে এসেছেন, এখন সে রকমটি আসছে কি? এই নিষ্ক্রিয়তার পেছনে কারণ কী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: নিষ্ক্রিয়তার মূল কারণ পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য। পাকিস্তান আমলেও যে সামাজিক-রাজনৈতিক সংকটে সব বুদ্ধিজীবী একত্রে এগিয়ে এসেছেন, তা অবশ্য নয়। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে, সুবিধা লাভের লোভে কিছুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী তখনো নিষ্ক্রিয়ই থেকেছেন। তবে নিষ্ক্রিয়দের সংখ্যা এখন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তার কারণ, পুঁজিবাদ এখন অনেক বেশি দুরন্ত। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি তার জন্মলগ্ন থেকেই পুঁজিবাদের বিকাশের জন্য পথ প্রশস্ত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল। পাকিস্তানকে বিতাড়িত করে আমরা একটি নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছি বটে, কিন্তু পুঁজিবাদকে হটিয়ে দিতে পারিনি। তার বিকাশের পথ বরং প্রশস্তই হয়েছে। পুঁজিবাদ যা করার, এখন করছে—মানুষকে আত্মকেন্দ্রিক ও বিচ্ছিন্ন করছে। বুদ্ধিজীবীরা এই স্রোতের বাইরে যেতে পারেননি। যাওয়া উচিত ছিল, না যাওয়াটা দুঃখজনক।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় ছিল গণতন্ত্র, সমতা ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা। ৫০ বছর পর এসব ক্ষেত্রে কোনো অগ্রগতি নেই। তাহলে আমাদের সব সংগ্রাম-আন্দোলন কি ব্যর্থ হলো ধরে নেব? শ্রেণিবিভক্ত অনেক দেশেই তো গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা আছে। বাংলাদেশে সেটি হলো না কেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: না, সংগ্রাম মোটেই ব্যর্থ হয়নি। তবে সংগ্রাম তার চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে পারেনি। লক্ষ্য ছিল একটি সামাজিক বিপ্লব। অনেক পুঁজিবাদী দেশেই বুর্জোয়া গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা আছে, এটা সত্য। তবে বাংলাদেশে যে পুঁজিবাদ বিকশিত হয়েছে, সেটি অত্যন্ত নিম্নমানের। এই পুঁজিবাদ উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থানে বিশ্বাসী নয়, এর নির্ভরতা দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পার্থক্যটাও সে জন্যই।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: যেকোনো আধুনিক রাষ্ট্রের পূর্বশর্ত হলো আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার। আপনি কি মনে করেন না, আমাদের সব অধোগতির মূল কারণ আইনের শাসনহীনতা ও ন্যায়বিচার না পাওয়া?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: অবশ্যই। তবে আইনের শাসনের চাইতেও অধিক জরুরি হচ্ছে ন্যায়বিচার। ন্যায়বিচার না পেলে মানুষ ধর্মের কাছে আশ্রয় খোঁজে। ভাবে, অন্যায়ের বিচার পাবে দৈবানুগ্রহে। সেটা ঘটছে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি সারা জীবন মানুষকে আলোকিত করার চেষ্টা করেছেন শিক্ষক, সম্পাদক ও লেখক হিসেবে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পর সমাজ আদৌ আলোকিত হয়েছে? চিন্তাচেতনায় তো আরও পিছিয়ে গেছে।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সবাই যে পিছিয়ে গেছে, এটা কিন্তু সত্য নয়। অনেকেই এগিয়ে গেছে। তবে হ্যাঁ, বিপুলসংখ্যক যে পিছিয়ে পড়েছে, এটা জাজ্বল্যমান সত্য। এর একটি কারণ বৈষম্য। বড় কারণ জ্ঞান ও সংস্কৃতিচর্চার নিরুৎসাহিতকরণ। দেশে চলছে টাকার শাসন। উন্নতির জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন হয় না, জ্ঞান বরং বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। সুস্থ এবং সমাজ পরিবর্তনমুখী সংস্কৃতিচর্চার ভীষণ অভাব। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ছাত্র সংসদ নেই। সামাজিকতা কোণঠাসা হয়েছে। বিনোদনের জন্য মানুষ সামাজিক পরিসরে মিলিত হয় না, ঘরের অন্ধকারে বসে বোতাম টেপাটিপি করে। একাকী।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: আপনি সম্প্রতি একটি লেখায় সামাজিক ও রাজনৈতিক অনেক সমস্যার কারণ হিসেবে সংস্কৃতির দীনতাকে চিহ্নিত করেছেন। ষাটের দশকে রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আন্দোলনও জাগরূক ছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর সাংস্কৃতিক আন্দোলন এগোল না কেন? আপনারাও তো বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করেছেন।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সংস্কৃতি সভ্যতার চেয়েও মূল্যবান। সংস্কৃতিচর্চা না করলে আমরা এগোতে পারব না। বিশেষ করে কিশোরদের যুক্ত করা চাই সংস্কৃতিচর্চায়। এই চর্চার অভাবেই কিশোরেরা গ্যাং বানায়। অপরাধ করে। মাদকাসক্ত হয়। সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক হামলাতেও দেখা গেছে পথভ্রান্ত কিশোরের সংখ্যাই ছিল অধিক।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: একজন লেখক হিসেবে বলুন, এ সমাজে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু আছে। যদি না থাকে, তাহলে লেখক-বুদ্ধিজীবীরা কেন জোরালো প্রতিবাদ করছেন না?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব অবশ্যই ঘটেছে। লেখক-বুদ্ধিজীবীরা প্রতিবাদ করতে পারেন না। কারণ, তাঁরা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন। নিজের স্বার্থের কথা ভাবেন। ভয় পান বঞ্চনা ও লাঞ্ছনার শিকার হবেন ভেবে। সর্বত্র একটি পরাজিতের মনোভাব দেখা দিয়েছে। এর দ্বারা লেখক-বুদ্ধিজীবীরাও আক্রান্ত, যদিও সেটা প্রত্যাশিত নয়, বাঞ্ছিত তো অবশ্যই নয়। লেখক-বুদ্ধিজীবীরা এগিয়ে না এলে অন্যদের জন্য পথের সন্ধান ও অগ্রগমনের অনুপ্রেরণা পাওয়াটা তো কঠিন হতে বাধ্য। হচ্ছেও। লেখক-বুদ্ধিজীবীদের তাই ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার, সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: পাকিস্তান আমল থেকে শিক্ষা নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা আমরা পাইনি। সম্প্রতি সরকার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করার কথা বলছে, যাতে একাদশ শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখা বিভক্তির কথা আছে। বর্তমানে নবম শ্রেণি থেকেই এটি চলছে। এতে নতুন প্রজন্মের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতা বাড়বে না কমবে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: শিক্ষা চলে গেছে বাণিজ্যের অধীনে। সমস্যাটা সেখানেই। আমি সেই পুরোনো ব্যবস্থারই সমর্থক, যেখানে বিভক্তিটা ঘটত দশম শ্রেণির শেষে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: সরকার বলছে, দেশের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। মানুষের গড় আয় ও আয়ু বেড়েছে। মানবসম্পদ উন্নয়নের সূচকেও আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছি। কিন্তু সেই উন্নয়নের সুফল কারা পাচ্ছে?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: উন্নয়ন অবশ্যই ঘটেছে। তবে সে উন্নয়ন পুঁজিবাদী চরিত্রের। যার ফল দাঁড়াচ্ছে এই যে যত উন্নতি, তত বৈষম্য বৃদ্ধি। উন্নতি পাহাড়ের মতো হলে ভীষণ বিপদ, হওয়া চাই নদীর মতো সর্বত্রগামী এবং সৃষ্টিশীল। উন্নতিতে সুবিধা পাচ্ছে অল্প কিছু মানুষ, যারা উৎপাদনে উৎসাহী নয়, উৎসাহী দেশের সম্পদ বিদেশে পাচারে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নিজেকে গড়ে তোলার জন্য, দেশকে গড়ে তোলার জন্য নতুন প্রজন্মের যে শিক্ষা পাওয়ার কথা, সেই শিক্ষা কি তারা পাচ্ছে? যদি না পেয়ে থাকে, তাহলে এ জন্য বুদ্ধিজীবী–শিক্ষাবিদেরাও কি দায়ী নন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: না, পাচ্ছে না। মুশকিলটা তো সেখানেই। হ্যাঁ, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদেরাও অবশ্যই দায়ী। কিন্তু সার্বিক দায়িত্বটা আসলে সমাজের সব বিবেকবান ও বুদ্ধিমান মানুষেরই। মিডিয়ারও কিন্তু বড় একটি ভূমিকা থাকার কথা। মালিকেরা চাইবেন না, কিন্তু কর্মীদের চাইতে হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: অনেকেই বলেন, প্রচলিত ধারার গণতন্ত্রের মতো প্রচলিত ধারার সমাজতন্ত্রও ব্যর্থ হয়েছে। তাহলে মানবজাতির মুক্তির পথ কী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: শত শত বছর ধরে পৃথিবী পুঁজিবাদের অধীনে রয়েছে। পুঁজিবাদ এসেছিল মানুষের উপকারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে। কিন্তু তার উপকারী ভূমিকা এখন নিঃশেষ হয়ে গেছে। কারণ হচ্ছে ব্যক্তিমালিকানা। ব্যক্তিমালিকানার পৃথিবীটাকে বদলানো চাই। আর বদলানোর পথ হচ্ছে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। কতিপয় দেশে নয়, পৃথিবীজুড়ে। প্রতিটি দেশেই দরকার সামাজিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সম্পদের ওপর ব্যক্তিমালিকানার জায়গায় সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা। সেটা ঘটলে মানুষের মুক্তি আসবে। সাম্প্রদায়িকতা, বর্ণবাদ, ধর্ষণ, দুর্নীতি, মাদকের ব্যবসাসহ সব বর্বরতা অতীতের ইতিহাসে পরিণত হবে।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজ বলছে, আইন করে কমিশন করতে হবে, আবার সরকার বলছে, সার্চ কমিটি করেই কমিশন হবে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী বিতর্ক থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পেল না, ভোটাধিকার নিশ্চিত হলো না। এ জন্য কাকে দায়ী করবেন?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: দায়ী তো রাষ্ট্র যাঁরা শাসন করেছেন ও করছেন, তাঁরাই। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন অবশ্যই দরকার। তবে অভিজ্ঞতা বলছে, আরও বেশি যা দরকার তা হলো, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের তত্ত্বাবধান।

প্রশ্ন:

প্রথম আলো: স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ছাড়া গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করা যায় না। কিন্তু পূর্বাপর সরকারগুলো সংবাদমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে দিতে বিভিন্ন আইন করে থাকে। সর্বশেষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে ভিন্নমত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করা হয়েছে। এসব আইনের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ না হওয়ার কারণ কী?

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: মূল কারণ ঐক্যের অভাব। সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ নন, বুদ্ধিজীবীরা ছত্রভঙ্গ। এমনকি পাকিস্তান আমলেও যে ঐক্যটা দেখা গেছে, এখন সেটা নেই। কেননা, রাষ্ট্র এখন আর আগের মতো বিদেশিদের ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে নেই, দেশি লোকেরাই রাষ্ট্র শাসন করছেন। উন্নয়নের ঊর্ধ্বগতিতে সুযোগ-সুবিধাও বেড়েছে। সম্ভাব্য প্রতিবাদকারীদের ব্যস্ততা দুই হাতে সেগুলো সংগ্রহ করাতে। প্রতিবাদের দিকে মনোযোগ দেওয়ার অবকাশ সংকীর্ণ হয়ে এসেছে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: আপনাকেও ধন্যবাদ।