আজ যারা শিশু, আগামী দিনে তারাই দেশের নেতৃত্ব দেবে, দেশকে গড়ে তুলবে, দেশের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে। শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আর তাই শিশুরা সঠিকভাবে গড়ে না উঠলে জাতির জন্য, দেশের জন্য অন্ধকার ঘনিয়ে আসবে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের শিশুদের একটি বড় অংশ শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা, অন্ন, বস্ত্রের মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত। পরিস্থিতির শিকার হয়ে এবং কোনো কিছু না বুঝে অনেক শিশুবিভিন্ন অপরাধের সঙ্গেও জড়িয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে যদি তাকে অন্যান্য অপরাধীর সঙ্গে একত্রে বিচার ও একই সঙ্গে কারাগারে রাখা হয়, তাহলে তা অমানবিক ও অবিচারেরই নামান্তর। তাই শিশুর জন্য আলাদা বিচারব্যবস্থার প্রচলন সারা বিশ্বেই আছে।
শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়ন করা হয়। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের বিধিমালা বাস্তবায়নের নিমিত্তে ১৯৭৪ সালের শিশু আইন রহিতপূর্বক নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়; যা শিশু আইন, ২০১৩ নামে পরিচিত। এই আইনের মূল প্রতিপাদ্য হলো শিশুদের সুরক্ষা দেওয়া ও বিকাশে সহায়তা করা্, তার ওপর সংঘটিত নির্যাতনের প্রতিকার।
এই আইনে মোট ১০০টি ধারা রয়েছে। ১ থেকে ৪ নম্বর ধারায় সংজ্ঞা, ৫ ও ৬ নম্বর ধারায় প্রবেশন কর্মকর্তা নিয়োগ এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য, ৭-১২ ধারায় শিশু কল্যাণ বোর্ড ও তার কার্যাবলি, ১৩-১৫ ধারায় শিশুবিষয়ক ডেস্ক, শিশুবিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তা ইত্যাদি, ১৬-৪৩ ধারায় শিশু আদালত ও তার কার্যাবলি, ৪৪-৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার, তদন্ত, বিকল্প পন্থা এবং জামিন, ৫৫-৫৮ ধারায় আইনগত প্রতিনিধিত্ব ও সহায়তা, ৫৯-৬৯ ধারায় শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র এবং প্রত্যয়িত প্রতিষ্ঠান, ৭০-৮৩ ধারায় শিশুসংক্রান্ত বিশেষ অধিকারসমূহের দণ্ড, ৮৪-১০০ ধারায় বিকল্প পরিচর্যা ইত্যাদি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। শিশু-কিশোরদের কল্যাণের জন্য এই আইনে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আইনটি যথাযথ প্রয়োগ করা হলে অবশ্যই ঈপ্সিত ফল লাভ করা সম্ভব।
২ নভেম্বর ২০২১ প্রথম আলো পত্রিকায় ‘কিশোর গ্যাং দমনে বাধা যখন শিশু আইন’ শিরোনামে সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালের নিবন্ধটি আমাদের বিস্মিত করেছে। তিনি এই নিবন্ধে যেসব মতপ্রকাশ করেছেন সে সম্পর্কে দ্বিমত পোষণ করছি। তিনি মন্তব্য করেছেন যে ‘আইনে অনাবশ্যকভাবে ভিকটিম শিশুকে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু এবং শিশু অপরাধীকে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু বলা হয়েছে’।
শিশু আইন, ২০১৩-এর উদ্দেশ্যটি আমাদের বুঝতে হবে। উদ্দেশ্য কিন্তু একমাত্র অপরাধের সঙ্গে জড়িত শিশুকে শাস্তি প্রদান নয়। বরং তাকে সংশোধন করে সুস্থ, সুন্দর ও উন্নত জীবনের দিকে ধাবিত করা। লক্ষ রাখতে হবে, শিশু-কিশোর অপরাধ দমনে কেবল শাস্তি দিলেই হবে না, শিশু-কিশোর যাতে অপরাধের সঙ্গে জড়িত না হয় সে ব্যাপারেও সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। আমরা মনে করি, শিশু আইন, ২০১৩ একটি যুগান্তকারী আইন।
প্রথমেই যদি আমরা শিশুকে অপরাধী এবং যে শিশুর সঙ্গে বেআইনি ও অন্যায় আচরণ করা হয়েছে তাকে ভিকটিম হিসেবে চিহ্নিত করি, তাহলে তাদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ পড়বে। তারা যাতে নিজেদের অপরাধী ও ভিকটিম হিসেবে চিহ্নিত না করে সে জন্যই আইনে সঠিকভাবে ভিকটিম শিশুকে আইনের সংস্পর্শে আসা শিশু এবং শিশু অপরাধীকে আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু বলা হয়েছে।
উক্ত নিবন্ধে শিশু ও কিশোরের প্রভেদ স্পষ্ট নয় মর্মে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা সঠিক নয়। শিশু আইন, ২০১৩-এর মধ্যে সুস্পষ্টরূপে এ ব্যাপারে আলোকপাত করা হয়েছে এবং তা দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। দণ্ডবিধির ৮৩ ধারায় উল্লেখ আছে যে নয় বছর অপেক্ষা বেশি, কিন্তু বারো বছরের কম বয়সের এমন কোনো শিশুর কোনো কার্য অপরাধ বলে গণ্য হবে না, যে শিশু সংশ্লিষ্ট কার্যটি করার সময় তার প্রকৃতি ও ফলাফল বিচার করার পক্ষে পর্যাপ্ত বুদ্ধির পরিপক্বতা লাভ করেনি।
হাবিবুল আউয়াল তাঁর নিবন্ধে বলেছেন যে পেনাল কোড মতে নয় বছর হলেই একটি শিশু অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য পূর্ণবয়স্ক হতে পারে। ১২ বছর হলেই শিশু পুরোপুরি পূর্ণবয়স্ক। ১২ থেকে ১৮ তথা ৬ বছরের এই ব্যবধানের সমন্বয় কঠিন। কিন্তু ৫৯ ডিএলআর-এর ৭২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত রাষ্ট্র বনাম মো. রওশন মণ্ডল ওরফে হাশেম মামলার সিদ্ধান্তে উল্লেখ আছে যে ৯ বছরের ওপরের এবং ১৪ বছরের নিম্ন বয়সের শিশু তার আচরণের গুরুত্ব ও ফলাফল বুঝতে অক্ষম বিধায় ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে অব্যাহতি পাবে।
শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী গুরুতর অপরাধে কোনো শিশু, কিশোর জড়িত হলে তার শাস্তির বিধান আছে। উক্ত আইনের ৩৩ ধারায় উল্লেখ আছে যে অন্য কোনো আইনে ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো শিশুকে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা কারাদণ্ড প্রদান করা যাবে না।
৩৪ ধারায় উল্লেখ আছে, যেকোনো শিশু মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে শিশু-আদালত তাকে অনূর্ধ্ব ১০ (দশ) বৎসর এবং অন্যূন ৩ (তিন) বৎসর মেয়াদে আটকাদেশ প্রদান করে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখার জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবে।
শিশু-আদালত উপযুক্ত বিবেচনা করলে, কোনো শিশুকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক রাখার পরিবর্তে যথাযথ সতর্কীকরণের পর খালাস প্রদানের অথবা সদাচারণের জন্য প্রবেশনে মুক্তি দানের জন্য আদেশ প্রদান করতে পারবে।
আউয়াল তাঁর নিবন্ধে উল্লেখ করেন ‘১৫ ধারার বিধানমতে, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীর অভিযোগপত্র ও বিচার ভিন্ন ভিন্ন হবে। কোনো একটি অপরাধে সময়, স্থান, সংশ্লিষ্ট ঘটনাপ্রবাহ, শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীদের সমন্বিত ভূমিকা এমন অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত থাকে যে আলাদা করে বিচার অনুষ্ঠান দুষ্কর। সাক্ষী, সময়, ঘটনাস্থল, অপরাধ সবই অভিন্ন।’
শিশু আইন, ২০১৩-এর ১৭(২) ধারায় উল্লেখ আছে যে কোনো মামলায় কোনো প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে কোনো শিশু জড়িত থাকলে, ধারা ১৫-এর অধীন পৃথক চার্জশিটের ভিত্তিতে, শিশু আদালতকে উক্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট শিশুর সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব, একই দিবসে পৃথকভাবে পৃথক অধিবেশনে সম্পন্ন করতে হবে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত উহা একই নিয়মে পরবর্তী কর্মদিবসে বিরতিহীনভাবে অব্যাহত থাকবে।
১৬ ধারা অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলা সদরে এক বা একাধিক শিশু আদালত থাকবে। বর্তমানে প্রত্যেক নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল স্বীয় অধিক্ষেত্রে শিশু আদালত হিসেবে গণ্য হবে। কোনো জেলায় এই ট্রাইব্যুনাল না থাকলে জেলা ও দায়রা জজ শিশু আদালতের দায়িত্ব পালন করবেন। সুতরাং একই মামলায় যদি অভিযুক্ত হিসেবে প্রাপ্তবয়স্ক আসামি এবং আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু থাকে, তাহলে পৃথকভাবে উভয়ের বিচার হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পৃথকভাবে উভয় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলে সাক্ষীদের মতিভ্রম হওয়ার কারণ নেই এবং উক্ত সাক্ষীদের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অসত্য বা প্যাঁচালো সাক্ষ্য প্রদানের কোনো কারণ বা আশঙ্কা থাকতে পারে না।
নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে ‘শিশুর বয়স ১৮ অতিক্রম করলে এবং সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি থাকলে এ অবস্থায় বিচার ভিন্নভাবে চলবে, না একীভূত হবে? দোষী সাব্যস্ত হলে দণ্ডারোপের মানদণ্ড কী হবে? কারাদণ্ড হবে না আটকাদেশ হবে? আইনে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই।’ কিন্তু শিশু আইনের ৩৪ ধারায় এসব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।
উক্ত নিবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে ‘বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিভক্ত বিচারের প্রয়োজন নেই। শিশু অপরাধীকে ডকে না তুলে অভিন্ন বিচারে একই আদালতে আলাদাভাবে বসতে বা দাঁড়াতে দিলেই উদ্দেশ্য অর্জিত হতে পারে।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ‘শিশু আইনের ৭০ থেকে ৮৩ পর্যন্ত ১৪টি ধারায় উল্লেখিত প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা শিশু-কিশোরদের বিরুদ্ধে কৃত অপরাধগুলো বিচার ও দণ্ড শিশু আইনের অধীন হবে। বিষয়টি বিসদৃশ। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ কার্যকর থাকতে উল্লিখিত ১৪ ধারায় অপরাধগুলো প্রয়োজনে সেখানে সন্নিবেশিত হতে পারত।’
তাঁর এই মন্তব্য শিশু আইন, ২০১৩-এর অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত। প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের একই সঙ্গে বিচারের অবস্থা যে ভয়াবহ হয়ে উঠবে, তা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের বুঝতে হবে—আমরা কি যেসব শিশু না বুঝে পঙ্কিলতার আবর্তে অন্ধকারের দিকে ধাবিত হয়েছে তাদের তা থেকে দূরে সরিয়ে এনে সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে আলোর পথে নিয়ে যাব, না এসব শিশুকে অপরাধীদের সঙ্গে একত্রে বিচার করে অন্ধকারেই নিমজ্জিত হতে দেব? তাদের সংশোধন করার সুযোগ দিয়ে উন্নত নাগরিক হওয়ার পথে নিয়ে যাওয়ার সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই তাদের পৃথক বিচারব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। পৃথকভাবে উভয় মামলার বিচার এবং সাক্ষ্য গ্রহণে কোনো অসুবিধা থাকতে পারে না। আর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর সঙ্গে শিশু আইনের অধীন আনীত অপরাধের বিচার কোনো ক্রমেই একীভূত করা যায় না। এ ক্ষেত্রে বিচারে আরও জটিলতা সৃষ্টি হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের অভিমত হলো এই যে ‘কিশোর অপরাধের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি অতীব নমনীয় না হয়ে সার্বিক জননিরাপত্তার স্বার্থে বস্তুনিষ্ঠ হওয়া বাঞ্ছনীয়।’ শিশু-কিশোরেরা জ্ঞানের ক্ষেত্রে অপরিপক্ব এবং তাদের অপরাধের গুরুত্ব, শাস্তির ভয়াবহতা ও অপরাধের পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞতা রয়েছে। সুতরাং শিশু-কিশোরদের অপরাধের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই নমনীয় থাকতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কিশোর অপরাধসংশ্লিষ্ট সব বিষয় এই আইন থেকে সরিয়ে দণ্ডবিধি আইন, ১৮৬০ এবং ফৌজদারি কার্যবিধি আইন, ১৮৯৮-এ সন্নিবেশিত করার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। তিনি একবার শিশু অপরাধের বিচার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীন আবার দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন করার জন্য বলেছেন। তাঁর বক্তব্য স্ববিরোধী।
তিনি মন্তব্য করেছেন যে ‘কিশোর অপরাধীদের নির্দোষ বা নিরপরাধ সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের সঙ্গে একত্রে শিশুকল্যাণ বোর্ডের অধীন আশ্রম বা সংশোধনকেন্দ্রে রাখা হলে তারাও অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে।’ কিন্তু সংশোধনাগার বা শিশু উন্নয়নকেন্দ্রে কারা থাকবেন, তারও ব্যাখ্যা উক্ত আইনের ৫৯ ধারায় প্রদান করা হয়েছে। তাতে বর্ণিত আছে যে সরকার বিচার প্রক্রিয়ায় আটকাদেশপ্রাপ্ত প্রয়োজনীয় শিশু এবং বিচারের আওতাধীন শিশুর আবাসন , সংশোধন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে, লিঙ্গভেদে, প্রয়োজনীয়সংখ্যক শিশু উন্নয়নকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ও রক্ষণাবেক্ষণ করবে।
সুতরাং কিশোর অপরাধীদের নির্দোষ বা নিরপরাধ শিশু-কিশোরদের সঙ্গে একত্রে সংশোধনকেন্দ্রে রাখার তাঁর মন্তব্য ও আশঙ্কা অমূলক। তিনি অভিমত প্রদান করেন যে ‘ভিন্ন ভিন্ন বিচারের বিধান রহিত করা না হলে দেশের বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বিচারব্যবস্থা আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়তে পারে।’ দেশ, জাতি, সমাজ এবং শিশু-কিশোরদের স্বার্থে শিশুদের জন্য পৃথক বিচারব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে।
শিশু-কিশোরদের প্রচলিত নিয়মে পুলিশ, আদালত এবং কারাগারের অধীন ন্যস্ত করে কিশোর অপরাধীদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিয়ে বিশেষ বিধানগুলো প্রচলিত সংশ্লিষ্ট অপরাধ আইনগুলোতে সন্নিবেশিত করা যেতে পারে মর্মে তিনি যে অভিমত ব্যক্ত করেছেন, তা যে দেশ, জাতি, সমাজ এবং শিশুদের জন্য মারাত্মক পরিণাম বয়ে আনতে পারে।
অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে তিনি শিশু আইনটি বাতিল করে দেওয়ার অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এ ক্ষেত্রে তার মন্তব্য ‘শিশু আইন’ শিরোনাম পরিবর্তন করে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য ‘শিশু কল্যাণ আইন’ করা যেতে পারে। তাহলে শিশু অপরাধের বিচারের কি হবে? আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশুদের সংশোধনেরই বা কি হবে?
শিশু-কিশোরদের কল্যাণ, সংশোধন এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে প্রণীত শিশু আইন, ২০১৩-কে প্রশ্নবিদ্ধ করা কোনো ক্রমেই সমীচীন নয়। আইনটি বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা আইন নয়, তা হলো আইনের যথাযথ প্রয়োগ—এদিকে আমাদের লক্ষ করতে হবে।
কবি সুকান্তের কণ্ঠের সঙ্গে মিলিয়ে আসুন আমরা সবাই বলি ‘এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।’
মাহমুদ জাহাঙ্গীর আলম অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ