বিসিএসে একই প্রার্থীর একই ক্যাডারপ্রাপ্তির পুনরাবৃত্তি কেন?

করোনার কারণে ৪০তম বিসিএসের চূড়ান্ত সুপারিশের আগেই ৪১তম বিসিএস আবেদন ও ক্যাডার বাছাইয়ের কাজসম্পন্ন হওয়ায় ৪০তমতে সুপারিশপ্রাপ্ত অনেক ক্যাডারই ৪১তম বিসিএসে অংশগ্রহণ ও সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অনেকেই কাঙ্ক্ষিত ক্যাডার না পাওয়ায় এই পদগুলোতে যোগদান করবেন না এবং পদ শূন্য থাকবে। অথচ মৌখিক পরীক্ষার পূর্বে পছন্দের ক্যাডার বাছাইয়ের সুযোগ দিলে এই পদশূন্যতা সৃষ্টি হতো না এবং অনেকেই পদগুলোতে সুপারিশ পেতে পারতেন। একইভাবে ৪১ থেকে ৪৬তম বিসিএস পর্যন্ত এই অবস্থার সৃষ্টি হবে।

সম্প্রতি ৪১তম বিসিএস ফলাফলে সবচেয়ে বেশি ৯৮২১ জন ভাইভা উত্তীর্ণ (ক্যাডার পদ যথেষ্ট না থাকায়) নন-ক্যাডার পদে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে কিন্তু এর মধ্যে কতসংখ্যক নন-ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হবে, সেটা এখনো পিএসসির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়নি। যার কারণে ৪১ নন-ক্যাডারপ্রার্থীরা অনেক হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

উল্লেখ্য যে নভেম্বর ২০১৯–এ ৪১তম বিসিএসের সার্কুলারের দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর পর ২০২৩ সালের আগস্টে ক্যাডারের ফল দেওয়া হয়। করোনায় ৪১–এর প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই দীর্ঘসূত্রতার পরও বিসিএসের সব ধাপে উত্তীর্ণ ৯৮২১ জন নন–ক্যাডার প্রার্থী যদি একটি সম্মানজনক চাকরি না পান, তাহলে এর চেয়ে হতাশার আর কিছু থাকবে না।

৪০তম বিসিএসের নন-ক্যাডারদের প্রায় সাড়ে চার হাজার পদে ইতোমধ্যে আবেদনের সুযোগ দেয়া হয়েছে কিন্তু কিছু আইনি জটিলতায় তা আটকে গিয়েছে। দ্রুততম সময়ে ৪০তম বিসিএসের নন–ক্যাডার নিয়োগ আগে সম্পন্ন করে তারপর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১তম বিসিএস নন–ক্যাডার সব প্রার্থীর শূন্যপদে নিয়োগ প্রদান এখন সময়ের দাবি।

আরও উল্লেখ্য, ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সর্বশেষ প্রকাশিত স্ট্যাটিসটিকস অব সিভিল অফিসার্স অ্যান্ড স্টাফস ২০২১ বইয়ের (জুন ২০২২ সালে প্রকাশিত) তথ্য অনুযায়ী সরকারের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও সরকারি কার্যালয়গুলোতে বেসামরিক জনবলের মোট শূন্যপদ ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১২৫টি।

এর মধ্যে ১ম শ্রেণির পদ ৪৩ হাজার ৩৩৬টি, দ্বিতীয় শ্রেণির ৪০ হাজার ৫৬১, তৃতীয় শ্রেণির ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৪৮ এবং চতুর্থ শ্রেণির শূন্য পদ ১ লাখ ২২ হাজার ৬৮০টি। ৪১তম বিসিএস থেকে যে ৯৮২১ জন প্রার্থী নন–ক্যাডার তালিকাভুক্ত হয়েছেন, তাঁরা এই পদগুলোতে সুপারিশপ্রাপ্ত হবার ক্ষেত্রে সর্বাধিক যোগ্যতার দাবিদার।

পাশাপাশি ৪০তম নন-ক্যাডারের আইনি জটিলতা ৪১তম নন–ক্যাডার সুপারিশের আগে নিরসন করা জরুরি, কেননা ৪১ নন-ক্যাডারের কার্যক্রম আগে হলে, ৪০তম নন–ক্যাডারের সার্কুলার দেওয়া সাড়ে চার হাজার পদের সুপারিশ পাওয়ার যোগ্য অনেকেই ৪১তমতেও সম বা নিম্ন গ্রেডে সুপারিশপ্রাপ্ত হবেন। এতে ৪০তম নন–ক্যাডারের পদগুলো শূন্য থাকবে এবং ৪১তম নন–ক্যাডার তালিকাভুক্ত অনেক প্রার্থী পদবঞ্চিত হবেন। এতে অনেকেরই খালি হাতে ফিরতে হবে, যা হবে একজন চাকরিপ্রার্থী এবং তাঁর পরিবারের জন্য চরম বিপর্যয়ের।

তাই আমরা দাবি জানাই ৪১তম বিসিএস এ তালিকাভুক্ত ৯৮২১ নন–ক্যাডারের সবাইকে এই শূন্যপদগুলোতে চাকরি প্রদান করা হোক। বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাক হাজার তাঁরা।

বর্তমানে পিএসসি বেশ কিছু সংস্কার এনেছে তাদের পদ্ধতিতে। তারই অংশ হিসেবে আমরা নিম্নের বিষয়গুলোতে সংস্কারের জন্য পিএসসির দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—

১. চলমান বিসিএসগুলোতে মৌখিক পরীক্ষার আগে আবার পছন্দের ক্যাডার বাছাইয়ের সুযোগ প্রদান।

২. একই ক্যাডার পদে, একই ব্যক্তিকে পুনরায় সুপারিশ না করা।

৩. সুপারিশপ্রাপ্তদের পিএসসির ওয়েবসাইটে উক্ত পদগুলোতে যোগদানে আগ্রহী বা অনাগ্রহী এই মর্মে ফরম পূরণের ব্যবস্থা করা।

৪. অনাগ্রহী পদগুলোতে নন–ক্যাডার থেকে পূরণের ব্যবস্থা করা ও অনতিবিলম্বে সুপারিশ প্রদান।

৫. দ্রুততম সময়ে ৪০তম বিসিএস নন–ক্যাডার নিয়োগ সম্পন্ন করা।

৬. সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৪১তম বিসিএস নন–ক্যাডার তালিকাভুক্ত সব প্রার্থীর যথাযোগ্য চাকরির ব্যবস্থা করা।

প্রধানমন্ত্রী যোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের দ্বারা সব সরকারি শূন্যপদ পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমাদের এই যৌক্তিক দাবি পূরণে আমরা পিএসসির চেয়ারম্যান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবসহ নিয়োগসম্পৃক্ত যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

শোয়াইব আবিদ
৪১তম নন–ক্যাডার তালিকাভুক্ত প্রার্থী