খেলাপির জন্য কি ব্যাংকাররাও দায়ী নন

আজ (২৭ এপ্রিল) প্রথম আলোর মতামত পাতায় প্রকাশিত অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খানের ‘প্রয়োজনে ঋণখেলাপিদের পাসপোর্ট স্থগিত করতে হবে’ শিরোনোমে লেখাটি পড়ে ভালোই লাগল। তবে ব্যবসায়ী হিসেবে দু–একটি বিষয়ের অবতারণা করতে চাই। জনাব আনিস মোটাদাগে ঋণখেলাপির জন্য রাজনৈতিক প্রভাব ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতাকে দায়ী করেছেন। দুটিই সত্য। তবে আমি মনে করি, খেলাপির জন্য মোটাদাগে দায়ী কতিপয় ব্যাংকার। ব্যবসায়ীদের ঋণ পাস করার কোনো ক্ষমতা নেই এবং ব্যাংকারের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবসায়ী বর্তমানে জেলে কিংবা পলাতক আছেন। তবে এটার জন্য তথ্য-উপাত্তের সমর্থন প্রয়োজন।

দেখুন, সরকারি ব্যাংকে রাজনৈতিক চাপ আছে কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকে তো রাজনৈতিক চাপ নেই, তবে কেন বেশ কয়টি বেসরকারি ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষক বসাতে হলো! গত নভেম্বরে তিন ইসলামি ব্যাংক থেকে কীভাবে ঠিকানাবিহীন মজুর-কর্মচারীদের নামে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে শত শত কোটি টাকা লোপাট হলো? যতই রাজনৈতিক চাপ থাকুক, হল–মার্ক কিংবা অ্যাননটেক্সের ঋণ ব্যাংকাররা শাখার ঋণ প্রস্তাবের মাধ্যমে পাস করেছেন, বেসিক ব্যাংকের মতো শাখার ঋণ প্রস্তাব ব্যতিত পাস হওয়ার কথা এখনো শোনা যায়নি।

জনতা ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকের দুই এমডির প্রস্থানের পর দুই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে কিন্তু কোনো এমডি তো রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ঋণ পাসে অপারগতা প্রকাশ করে পদত্যাগ করেননি। ভালো ব্যাংকার হলে সৎ সাহস দেখাতে পারতেন। শুধু তা–ই নয়, অনেক ব্যাংকারের বিরুদ্ধে কম মূল্যের জামানত বেশি মূল্যে দেখানো, বৈশ্বিক বিপদ-আপদে ব্যবসায়ীকে প্রয়োজনীয় পরিচালনা মূলধন না দিয়ে ব্যবসাকে কঠিন করে তোলা, অনেক ক্ষেত্রে ঘুষ দাবি করা ইত্যাদি অভিযোগ রয়েছে। তবে এটা ঠিক, রাজনৈতিক প্রভাবে ব্যাংকিং খাত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

নব্বইরের দশকে একটি বড় দল দীর্ঘদিন পর ক্ষমতায় এসে ছাত্রনেতাদের বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল, যা আর্থিক খাতকে ধ্বংস করে নিজেদের আখের গোছানোর মতলব ভিন্ন আর কিছু ছিল না।

কোনো সরকারই ভাবল না, আর্থিক খাত হলো দেশের প্রাণ, এটাকে নষ্ট করা মানে নিজেদের দুর্ভোগ ডেকে আনা। জনগণের বাজেটের টাকা দিয়ে ব্যাংকের মূলধন জোগান দেওয়া হচ্ছে কিন্তু ব্যাংকিং খাতকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা হচ্ছে না। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের চাপে কখনো কখনো এ খাতে কিছু সংস্কার দেখা গেলেও স্থায়ী কোনো সংস্কার এ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। তবু আশায় আছি, সরকার কোনো না কোনো সময় ব্যাংকগুলোকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে সংসদে আইন পাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

নুরুল আমিন
ব্যবসায়ী, ঢাকা।