কোথাও গিয়ে কি বদলে যাচ্ছে ‘বই’ ধারণা

বই। দুই মলাটের ভেতর লুকিয়ে আছে হাজার হাজার কথা। পাতা ওল্টালেই বেরিয়ে আসবে এক-একটা কাহিনি।

একটা সময় গেছে, কত মানুষ নিজের সব সঞ্চয় দিয়ে বই কিনেছেন গোটা জীবন ধরে। কত মানুষ লুকিয়ে বই এনেছেন লাইব্রেরি থেকে, ফেরত দেননি আর। নিজেকে বুঝিয়েছেন, বইয়ের জন্য সব ছাড়।

কিন্তু কোথাও গিয়ে কি বদলে যাচ্ছে ‘বই’ ধারণা?

এ প্রজন্মের হাতে তো বই দেখাই যায় না।

বইয়ের অবস্থা কি? এর উত্তর খুঁজতে গেলে অনেকেই বলছেন শুধু একবার তাকিয়ে দেখিয়ে দেখুন লাইব্রেরির দিকে। তা হলেই মিলবে যথাযথ সঠিক উত্তরটি।

আমাদের যুগে মানুষের বড় আশ্রয়ের জায়গা ছিল লাইব্রেরি। ভাবনা-তর্ক-যুদ্ধ-ভাব-ভালোবাসা সব হতো বইয়ের পাতায় লেখা অক্ষরের সঙ্গে।

লাইব্রেরি বলতে, একটা সময় স্কুলের লাইব্রেরি ক্লাস, তারপর অলস দুপুরে পাড়ার লাইব্রেরির শরৎ চন্দ্রের উপন্যাসগুলো, আরও একটু বড় হয়ে শহরের ডিস্ট্রিক্ট লাইব্রেরিতে পছন্দের বইয়ের জন্য আগাম লিখে আসা, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে লাইব্রেরিতে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নোটস বানানো।

বাড়ির মা-খালারা কিংবা সব বয়সীরা একটা সময়ে বিকেল হলেই খুলে বসতেন লাইব্রেরি থেকে আনা বই নিয়ে। বিনোদন বলতে সবারই ওইটুকুই।

কিন্তু এখন? পাড়ার লাইব্রেরি, গ্রামের লাইব্রেরি তো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। যে লাইব্রেরিগুলো টিকে আছে সেখানে পাঠক নেই। যেন কেমন একটা নিঃসঙ্গতায় ধুঁকছে। বই নেই এমনটা নয়। সরকারি লাইব্রেরি নির্দিষ্ট টাকার বই কেনে প্রতিবার একুশে বইমেলা থেকে। পুরোনো খসখসে কাঠের আলমারির বুকের ভেতর থরে থরে সাজানো থাকে সেসব বই।

বই যারা পড়বেন সেই মা-খালারা ডুব দিয়েছেন টিভি সিরিয়ালে নয়তো মোবাইলের টিকটক ভিডিওতে। যে বয়সের ছেলেমেয়েরা লাইব্রেরি থেকে সাইকেলের ঝুড়িতে করে বই নিয়ে আসত, এখন তারা অনায়াসে পথেঘাটে প্রিয় লেখকের গল্প, কিংবা উপন্যাস পড়ে ফেলতে পারছে ডিজিটাল মাধ্যমে, মোবাইলে বা ল্যাপটপে।

পাঠকের সঙ্গে কমেছে কর্মীর সংখ্যাও। অনেক জায়গায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহু স্মৃতিবিজড়িত লাইব্রেরি।

তবে এই আকালে দাঁড়িয়েও স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। তাঁরা বই কিনছেন, কেউ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বানাচ্ছেন লাইব্রেরি। নিজে বই পড়েন, আবার বই পড়তে নিকটতম উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের উৎসাহিত করে যাচ্ছে বই পড়তে।

লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা