মাধ্যমিক শিক্ষার জাতীয়করণ আর কত দেরি

নন-এমপিও এবং নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মচারীকে জাতীয়করণ করে বেতন-ভাতা প্রদানের দাবিতে মানববন্ধনফাইল ছবি

শিক্ষকেরা শিক্ষার প্রধান শক্তি। একজন শিক্ষার্থীর মননে শিক্ষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনকে ভাবিয়ে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার চর্চা অনুশীলন করার যে মহৎ কাজ সেটি একজন আদর্শবান শিক্ষক করেন।

একজন শিক্ষক শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করেন না, শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীকে সবুজ পৃথিবীর শুভ স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকেন। এক বাক্যে বলা যায়, শিক্ষার্থীদের দেখার শুদ্ধ আলো, চিন্তা করার সঠিক পদ্ধতি শিক্ষকেরাই প্রতিস্থাপন করেন। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে শিক্ষকদের অনুরূপ কারুকার্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দৃশ্যমান হয়।

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় আমাদের দেশের শিক্ষকেরা এখনো তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদা পান না। দেশে দীর্ঘদিন ধরে মাধ্যমিক শিক্ষকেরা আন্দোলন করছেন, শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবিতে।

দেশের মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ২২ হাজারের বেশি। এর মধ্যে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাত্র ৬৮৪টি। এই সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক কোটির বেশি। তাদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন পৌনে তিন লাখের মতো।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অধিকাংশ এমপিওভুক্ত হওয়ায় শিক্ষকেরা সরকার থেকে বেতনের পাশাপাশি কিছু নামমাত্র ভাতা পেয়ে থাকেন। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের মধ্যে বিশাল বৈষম্য, অর্থাৎ একজন সরকারি শিক্ষক পূর্ণাঙ্গ বেতন, ভাতা পেলেও একজন বেসরকারি শিক্ষক তেমনটি পান না। এ ছাড়াও শিক্ষকদের ১১ দফা দাবি রয়েছে। যা নিয়ে শিক্ষকেরা লাগাতার আন্দোলন করছেন।

গত বছরের জুলাই মাসে (১৭ জুলাই ২০২৩) আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশ হামলার শিকার হয়ে অনেক শিক্ষক আহত ও লাঞ্ছিত হন। শিক্ষকেরা জাতির মেরুদণ্ড, আর সে শিক্ষককে পুলিশ দিয়ে লাঠিপেটা কিংবা লাঞ্ছিত করা খুবই নিন্দনীয়।

পরবর্তীতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকার দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও প্রকৃতপক্ষে মাধ্যমিক শিক্ষার জাতীয়করণ নিয়ে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সরকারের পক্ষ থেকে উঠে আসেনি।

শিক্ষকদের ন্যূনতম এই মৌলিক দাবি সময় উপযোগী ও যৌক্তিক। একটি গণতান্ত্রিক দেশে শিক্ষকদের সম্পূর্ণ পরিষেবার ব্যবস্থা যদি সরকার গ্রহণ না করে, এতে দেশের শিক্ষার উপর মারাত্মক আঘাত আসবে।

কেননা শিক্ষকেরা যদি তাঁর প্রাত্যহিক জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন, তাহলে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী নিয়ে শিক্ষকদের বিশেষ কোনো অনুরক্তি কিংবা গুরুত্ব থাকবে না। যার ফলে দেশের শিক্ষা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারা দেশে মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী প্রশিক্ষণ কর্মশালাও শেষ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের পরিপূর্ণ প্রশিক্ষণ ভাতা এখনো সম্পূর্ণভাবে দেওয়া হয়নি। যা নিয়ে শিক্ষকেরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।

সুতরাং সরকরের প্রতি আহ্বান থাকবে শিক্ষকদের যাবতীয় বৈষম্য দূর করুন। মাধ্যমিক শিক্ষকদের জাতীয়করণের দাবি মেনে নিয়ে, সব ধরনের বৈষম্য দূর করে তাঁদের দুশ্চিন্তামুক্ত করুন। যাতে দেশের শিক্ষকগণ প্রাণ খুলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারেন ।  

মারুফ হাসান ভূঞা
শিক্ষার্থী
ফেনী সদর, ফেনী