কাবাডিকে ফেরানোর কি পথ নেই?

১৯৭২ সালে কাবাডিকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা। খেলাধুলা শিশু-কিশোরের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম সহায়ক। কিন্তু প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে গ্রামীণ নানা খেলা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিজ্ঞানের বেগে পাল্লা দিতে নিরন্তর ছুটে চলেছি আমরা। গ্রামীণ প্রকৃতিতেও লেগেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাওয়া বদল। এ অদম্য বেগ যেন কেড়ে নিচ্ছে বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যকে, হারিয়ে যেতে বসেছে আমাদের লালিত গ্রামীণ সংস্কৃতি ও চিত্তবিনোদনের প্রধান উৎস খেলাধুলা। এ বিলুপ্তির পথের সারথি হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি।

একটা সময় ছিল যখন বৃদ্ধ, শিশু-কিশোর অবসরে গ্রামের খোলা মাঠে দল বেঁধে খেলত কাবাডি। কিন্তু টিভি, মুঠোফোন, ভিডিও গেমস তথা সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এবং খেলার মাঠের অপর্যাপ্ততার কারণে আজকের শিশুরা এই খেলার স্পর্শ হারিয়েছে।

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি এখন অনেকাংশেই বইপুস্তকের পাতায় আবদ্ধ। গ্রামের পর গ্রাম হাঁটলেও দেখা মিলে না উনিশ শতকের তুমুল জনপ্রিয় খেলা কাবাডির। ২১ শতকের ছেলেমেয়েদের অনেকে হয়তো দেখেইনি কাবাডি। আবার কেউ কেউ কালেভাদ্রে হয়তো দেখে থাকতে পারে। অথচ জাতীয় এই খেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে ঝাঁকজমকভাবে।

হাডুডু নামটির পোশাকি নাম কাবাডি। ১৯৭২ সালে কাবাডিকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের অপেশাদার কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয়।

উনিশ শতকে কাবাডি ছিল গ্রামবাংলার তুমুল জনপ্রিয় একটি খেলা। বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালে আন্তস্কুল প্রতিযোগিতায় কাবাডির অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করেছিল। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন আয়োজিত টুর্নামেন্টের মধ্যে ছিল জাতীয় কাবাডি প্রতিযোগিতা, জাতীয় যুব কাবাডি প্রতিযোগিতা, প্রিমিয়ার কাবাডি, বিভাগ কাবাডি লিগ, অন্ত ও আন্তজেলা কাবাডিসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোয় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সেগুলো তার নিজস্ব ধারাবাহিকতা হারিয়েছে।

কাবাডি খেলার প্রধান ক্লাবগুলোর মধ্যে রয়েছে—দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডার্স ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মানিকনগর কাবাডি ক্লাব ও বাংলাদেশ ব্যাংক ক্লাব। তখনকার সময় কাবাডি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলে সারি সারি দর্শকের উপস্থিতি আর টানটান উত্তেজনা খেলায় নতুন মাত্রা যোগ করত। যদিও কালের বিবর্তনে তা পাঠের বস্তুতে পরিণত হয়েছে, হারিয়েছে কাবাডির সেই সোনালি অতীত।

বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিবর্তনে এগিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। প্রযুক্তির বেগে কি তাহলে পিছিয়ে থাকবে আমাদের প্রাণের জাতীয় খেলা কাবাডি? এমনই আশঙ্কা উঁকি দিচ্ছে মনে।

আমাদের দেশের মৃতপ্রায় এ কাবাডিকে বাঁচাতে চাইলে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক লিগের কোনো বিকল্প নেই। কাবাডিকে বাঁচাতে বাংলাদেশ ক্রীড়া প্রশিক্ষণ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসতে হবে, নিয়মিত স্পনসরের ব্যবস্থা করতে হবে, উন্নতমানের প্রশিক্ষণ এবং দক্ষ কোচের অধীন খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতে হবে। জনমনে কাবাডি সম্পর্কে আগ্রহের সঞ্চার করতে হবে।

সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও কাবাডি ফেডারেশনের সক্রিয় উদ্যোগ, সেই সঙ্গে আমাদের সবার প্রচেষ্টাই পারে নতুন প্রজন্মের সামনে প্রাণের জাতীয় খেলাকে আবারও মেলে ধরতে। নতুবা কাবাডি থেকে যাবে বইয়ের আবদ্ধ পাতায়। আমাদের ক্রীড়া, ঐতিহ্য আর শিকড়কে টিকিয়ে রাখতে কাবাডিকে পুনরুজ্জীবিত করতে হবে।

তামান্না আক্তার
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ই–মেইল: [email protected]