অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কীভাবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব

নিউ মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের আহাজারি
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানীতে বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা দেশে উন্নত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিল্ডিং কোড ও প্রবিধানের কঠোর প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তাকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দেশের শহরগুলোতে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের বেদনাদায়ক ইতিহাস রয়েছে। সরকার অগ্নিনিরাপত্তার প্রবিধান শক্তিশালীকরণ এবং ভবনগুলো নিয়মিত পরিদর্শন বৃদ্ধিসহ ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা রোধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ যখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে  তখন ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে বঙ্গবাজার ও নিউমার্কেটের অগ্নিনিরাপত্তা বিপর্যয়ের উৎসমূলে আঘাত করা ছাড়া এ সমস্যার সমাধান হবে না। এ দুটি ঘটনা বাংলাদেশের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয়তাকে আবারও তুলে ধরছে।

দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার সাথে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা মোটেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং অপরিকল্পিত নগরায়ণ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে দিন দিন আরো জটিল করে তুলেছে। ‘দুর্বল প্রচেষ্টা অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে উন্নত করবে না—শিরোনামে ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজ এ একটি মতামত গত ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে, শিরোনামটি বাংলা রূপই দিলাম। এতে বলা হয়েছে যে, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি গুলশানের একটি ১৪ তলা আবাসিক ভবনে আগুন লেগে অন্তত দুজন নিহত হওয়ার পর বিষয়গুলো তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একটি তদন্তে দেখা গেছে যে ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না এবং বাসিন্দারা সঠিকভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হয়েছে। তদন্ত দল আরও দেখেছে যে ভবনমালিকেরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনাপত্তি সনদ নিয়েছিলেন কিন্তু অগ্নিনিরাপত্তার সনদ পাননি।

পরিসংখ্যানে আরও দেখা যায়, ঢাকার অধিকাংশ ভবনের ক্ষেত্রে অবস্থা একই রকম । ২০১৯ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেছিলেন যে, ঢাকার প্রায় ৬৬ শতাংশ ভবন বিল্ডিং কোড লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের বেশির ভাগেরই সঠিক অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালে ঢাকায় সহস্রাধিক ভবন পরিদর্শন করে এবং ১৩৬টি ভবনকে ‘খুব ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৪৯৯টি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করে, প্রায় ৬০ শতাংশ ভবন অগ্নি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাকে উন্নত দেশের আলোকে ঢেলে সাজাতে হবে।

কানাডায় ব্যক্তি ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা একটি অপরিহার্য দিক। অগ্নিকাণ্ড যে কোনো সময় এবং যে কোনো স্থানে ঘটতে পারে এবং সঠিকভাবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে বিধ্বংসী পরিণতি ঘটাতে পারে। আগুন প্রতিরোধ করতে এবং তাদের প্রভাব প্রশমিত করতে, কানাডা বিভিন্ন অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং প্রবিধান স্থাপন করেছে যা ভবন, সরঞ্জাম এবং উপকরণের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করে। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে একটি হল প্রতিরোধ। প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোর লক্ষ্য হল সম্ভাব্য আগুনের ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করা, সেগুলো নির্মূল বা হ্রাস করার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কাকে কমিয়ে আনা। এর মধ্যে ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের অগ্নিনিরাপত্তা অনুশীলন সম্পর্কে শিক্ষিত ও সংযুক্ত করা, যেমন দাহ্য পদার্থের সঠিক স্টোরেজ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং গরম ও  রান্নার যন্ত্রপাতির নিরাপদ ব্যবহার।

কানাডীয় সরকার বিভিন্ন প্রবিধান এবং কোড প্রতিষ্ঠা করেছে যেগুলোর জন্য ভবনগুলোকে অগ্নি নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে ডিজাইন এবং নির্মাণ করা প্রয়োজন হয় কানাডার বিভিন্ন প্রাদেশিক এবং আঞ্চলিক বিধি এবং কোড রয়েছে যা অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ করে।

কানাডায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার সাথে আগুন শনাক্ত করতে এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে উন্নত প্রযুক্তি এবং সরঞ্জামের ব্যবহার করা হয় । অগ্নিনির্গমন ব্যবস্থা যেমন স্মোক ডিটেক্টর, হিট ডিটেক্টর এবং ফায়ার অ্যালার্ম ভবনগুলোতে অগ্নিকাণ্ডের বাসিন্দাদের সতর্ক করার জন্য যুক্ত করা হয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাও কানাডায় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ দিক। ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িকদের অগ্নিসুরক্ষা প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিতে উৎসাহিত করা হয় আগুন প্রতিরোধ, উচ্ছেদ পদ্ধতি এবং অগ্নি নিরাপত্তা সরঞ্জামের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে জানতে সহায়তা করা হয় ।

উপসংহারে, কানাডায় ব্যক্তি ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা যেমন একটি অপরিহার্য দিক। যেমন দেশটি আগুন প্রতিরোধ করতে এবং তাদের প্রভাব প্রশমিত করতে  বিভিন্ন প্রবিধান, কোড এবং অনুশীলন প্রতিষ্ঠা করেছে। অগ্নিপ্রতিরোধ, নকশা এবং নির্মাণ, প্রযুক্তি এবং সরঞ্জামের ব্যবহার এবং প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার সর্বোত্তম অনুশীলন গ্রহণ করে, কানাডা অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশের চাহিদা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের আলোকে এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ  না করা হলে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন,  স্বপ্নই থেকে যাবে।

  • দেলোয়ার জাহিদ সভাপতি, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক, কানাডা নিবাসী